বিষয়বস্তুতে চলুন

দগ্ধমৃত্তিকা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
তথ্যসূত্র
→‎দগ্ধমৃত্তিকা উৎপাদনের মূলনীতি: সংখ্যা ইংরেজি থেকে বাংলা
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
 
(৬ জন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ৮টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{কম সংযুক্ত}}
'''কুমোরের মাটি''' বা ইংরেজি পরিভাষায় '''সিরামিক''' এমন এক ধরনের ধাতব, অধাতব ও ধাতুকল্প বিভিন্ন অজৈব পদার্থের মিশ্রণে প্রস্তুত কৃত্রিম উপাদান, যাকে উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে কঠিন পদার্থে পরিণত করে শিল্পকর্ম, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সামগ্রী, গৃহস্থালি কাজে প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং শোভাবর্ধক সামগ্রী নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। সিরামিক পণ্যের মধ্যে আছে কাচ, পোড়ামাটির বাসনপত্র, চীনামাটির বাসন, চীনামাটির এনামেলস, ইটের টালি, টেরাকোটা, রিফ্রাকটরিজ, সিমেন্ট, চুন এবং জিপসাম।<ref name=":0">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95_%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA|শিরোনাম=সিরামিক শিল্প - বাংলাপিডিয়া|ওয়েবসাইট=bn.banglapedia.org|সংগ্রহের-তারিখ=2019-08-14}}</ref>
{{multiple image|perrow = 3|total_width=400
| image1 = AMI - Kamaresvase 1.jpg
| image2 = Terracotta Panathenaic prize amphora MET DP245711.jpg
| image3 = Getty Villa - Mixing Vessel with a deceased youth - inv.96.AE.117.jpg
| image4 = Codex-Style Vase with Mythological Scene MET DP-579-002.jpg
| image5 = SFEC BritMus Asia 023.JPG
| image6 = Two flasks with dragons.jpg
| image7 = Sèvres Porcelain Manufactory - Covered Tureen (Terrine du roi) - 1949.15 - Cleveland Museum of Art.tif
| image8 = The Music Lesson MET DP-14272-001 (cropped).jpg
| image9 = Vase with cover (vase des âges) (one of a pair) MET DP-13079-025.jpg
| footer = Short timeline of ceramic in different styles
}}
'''দগ্ধমৃত্তিকা''' বা ইংরেজি পরিভাষায় "সিরামিক" (Ceramic) এমন এক ধরনের ধাতব, অধাতব ও ধাতুকল্প বিভিন্ন [[অজৈব যৌগ|অজৈব]] পদার্থের মিশ্রণে প্রস্তুত কৃত্রিম উপাদান, যাকে উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে কঠিন পদার্থে পরিণত করে শিল্পকর্ম, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সামগ্রী, গৃহস্থালি কাজে প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং চিত্তাকর্ষক সামগ্রী নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। একে '''কুমোরের মাটি'''ও বলা হতে পারে। [[দগ্ধমৃত্তিকা শিল্প|দগ্ধমৃত্তিকা]]জাত পণ্যের মধ্যে আছে [[কাচ]], [[পোড়ামাটির ভাস্কর্য ও ম্যুরাল|পোড়ামাটির]] বাসনপত্র, চীনামাটির বাসন, চীনামাটি, [[ইট|ইটের]] টালি, [[টেরাকোটা]], রিফ্রাকটরিজ, [[সিমেন্ট]], [[চুন (খনিজ)|চুন]] এবং জিপসাম।<ref name=":0">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95_%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA|শিরোনাম=সিরামিক শিল্প - বাংলাপিডিয়া|ওয়েবসাইট=bn.banglapedia.org|সংগ্রহের-তারিখ=2019-08-14}}</ref>


== ইতিহাস ==
== ইতিহাস ==
মৃৎকর্ম সম্ভবত মানব সভ্যতার সবচেয়ে পুরাতন শিল্প। প্রথমদিকে মাটি দিয়ে শিল্পকর্ম শুরু হয়ে পরবর্তীকালে তা বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে অন্যান্য মাধ্যম, যেমন কাঠ, পাথর, ঝিনুক, ধাতব পদার্থ ইত্যাদির শিল্পকর্মে রূপ লাভ করে। সিরামিকের যুগ শুরু হওয়ার পূর্বে বাংলাও এ সমস্ত স্তর অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশে আধুনিক সিরামিক শিল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৮ সালে, বগুড়ায় তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি. প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এর উৎপাদন অত্যন্ত সীমিত ছিল এবং উৎপাদিত পণ্যের মানও তেমন একটা ভাল ছিল না। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি. প্রতিষ্ঠিত হয় প্রধানত স্থানীয় বাজারে পণ্য সরবরাহের জন্য এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই কারখানার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় পিপলস সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড । কারখানাটি ১৯৬৬ সালে উৎপাদন শুরু করেছিল।<ref name=":0" />
মৃৎকর্ম সম্ভবত মানব সভ্যতার সবচেয়ে পুরাতন শিল্প। প্রথমদিকে মাটি দিয়ে শিল্পকর্ম শুরু হয়ে পরবর্তীকালে তা বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে অন্যান্য মাধ্যম, যেমন কাঠ, পাথর, ঝিনুক, ধাতব পদার্থ ইত্যাদির শিল্পকর্মে রূপ লাভ করে। সিরামিকের যুগ শুরু হওয়ার পূর্বে বাংলাও এ সমস্ত স্তর অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশে আধুনিক সিরামিক শিল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৮ সালে, বগুড়ায় তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি. প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এর উৎপাদন অত্যন্ত সীমিত ছিল এবং উৎপাদিত পণ্যের মানও তেমন একটা ভাল ছিল না। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি. প্রতিষ্ঠিত হয় প্রধানত স্থানীয় বাজারে পণ্য সরবরাহের জন্য এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই কারখানার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় পিপলস সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড । কারখানাটি ১৯৬৬ সালে উৎপাদন শুরু করেছিল।<ref name=":0" />


== সিরামিক উৎপাদনের মূলনীতি ==
== দগ্ধমৃত্তিকা উৎপাদনের মূলনীতি ==
মূল উপাদানগুলো মিশিয়ে উত্তপ্ত করা হয়। 600°-650°Cএর মাঝে চায়না ক্লের পানি শুকিয়ে অদানাদার পদার্থ অ্যালুমিনা ও সিলিকার মিশ্রণ উৎপন্ন হয়। 1000&nbsp;°C তাপমাত্রায় দানাদার অ্যালুমিনা ও সিলিকা ফেলস্পারের উপস্থিতিতে বিগলিত হয়ে মুলাইট গঠন করে। 1400°-1500&nbsp;°C তাপমাত্রায় অবশিষ্ট সিলিকা ক্রিস্টোবেলাইটে পরিণত হয়। '''মুলাইট''' ও '''ক্রিস্টোবেলাইটের''' মিশ্রণকে বিস্কুট বলে।
মূল উপাদানগুলো মিশিয়ে উত্তপ্ত করা হয়। ৬০০°-৬৫০°Cএর মাঝে চায়না ক্লের পানি শুকিয়ে অদানাদার পদার্থ অ্যালুমিনা ও সিলিকার মিশ্রণ উৎপন্ন হয়। ১০০০°C তাপমাত্রায় দানাদার অ্যালুমিনা ও সিলিকা ফেলস্পারের উপস্থিতিতে বিগলিত হয়ে মুলাইট গঠন করে। ১৪০০°-১৫০০°C তাপমাত্রায় অবশিষ্ট সিলিকা ক্রিস্টোবেলাইটে পরিণত হয়। '''মুলাইট''' ও '''ক্রিস্টোবেলাইটের''' মিশ্রণকে বিস্কুট বলে।


(১) চীনামাটি নিরুদন:
(১) চীনামাটি নিরুদন:
২৫ নং লাইন: ৩৮ নং লাইন:
Na₂O+SiO₂ → Na₂SiO₃
Na₂O+SiO₂ → Na₂SiO₃


গলিত সোডিয়াম সিলিকেট ছিদ্র বন্ধ করে মসৃণ করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://10minuteschool.com/hsc/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%9a-%e0%a6%93-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa/|শিরোনাম=কাঁচ ও সিরামিক শিল্প|তারিখ=2018-06-14|ওয়েবসাইট=10 Minute School: HSC Section|ভাষা=en-US|সংগ্রহের-তারিখ=2019-08-14}}</ref>
গলিত সোডিয়াম সিলিকেট ছিদ্র বন্ধ করে মসৃণ করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://10minuteschool.com/hsc/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%9a-%e0%a6%93-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa/|শিরোনাম=কাঁচ ও সিরামিক শিল্প|তারিখ=2018-06-14|ওয়েবসাইট=10 Minute School: HSC Section|ভাষা=en-US|সংগ্রহের-তারিখ=2019-08-14|আর্কাইভের-তারিখ=২০২০-০৬-৩০|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20200630075159/https://10minuteschool.com/hsc/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%9a-%e0%a6%93-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa/|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref>


== বাংলাদেশে সিরামিক শিল্প ==
== বাংলাদেশের দগ্ধমৃত্তিকা শিল্প ==
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে সফল সিরামিক কোম্পানি হচ্ছে মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি.। এটি উৎপাদন শুরু করে ১৯৮৫ সনে এবং খুবই উন্নতমানের চীনামাটির টেবিল-সরঞ্জাম উৎপাদন করে। এই কোম্পানি রপ্তানি বাজারে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছে। লন্ডনে এর একটি বিক্রয় অফিস রয়েছে এবং ফ্রাঙ্কফুর্টে হাউজওয়্যার শো নামে এর একটি স্থায়ী স্টল রয়েছে। বিশ্বখ্যাত বোন চায়না এবং চীনামাটির টেবিল সরঞ্জাম প্রস্ত্ততের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৭ সনে শাইনপুকুর সিরামিক লি. প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই কোম্পানির অবস্থান গাজীপুরের বেক্সিমকো শিল্পনগরীতে। কোম্পানিটি চীনামাটির বাসন এবং চায়না উৎপাদন শুরু করেছিল যথাক্রমে এপ্রিল ১৯৯৯ এবং নভেম্বর ১৯৯৯-তে। ১৯৯৯ সনে বাণিজ্যিক উৎপাদনের শুরুতেই এটিকে দ্রুত উৎপাদনক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কোম্পানিটি অভ্যন্তরীণ বাজারের প্রায় ৬০% দখল করেছে এবং এর সিরামিক টেবিল সরঞ্জাম বিশ্ববাজারেও সমাদৃত।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে সফল দগ্ধমৃত্তিকাজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এটি উৎপাদন শুরু করে ১৯৮৫ সনে এবং খুবই উন্নতমানের চীনামাটির টেবিল-সরঞ্জাম উৎপাদন করে। এই কোম্পানি রপ্তানি বাজারে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছে। লন্ডনে এর একটি বিক্রয় অফিস রয়েছে এবং ফ্রাঙ্কফুর্টে হাউজওয়্যার শো নামে এর একটি স্থায়ী স্টল রয়েছে। বিশ্বখ্যাত বোন চায়না এবং চীনামাটির টেবিল সরঞ্জাম প্রস্ত্ততের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৭ সনে শাইনপুকুর সিরামিক লি. প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই কোম্পানির অবস্থান গাজীপুরের বেক্সিমকো শিল্পনগরীতে। কোম্পানিটি চীনামাটির বাসন এবং চায়না উৎপাদন শুরু করেছিল যথাক্রমে এপ্রিল ১৯৯৯ এবং নভেম্বর ১৯৯৯-তে। ১৯৯৯ সনে বাণিজ্যিক উৎপাদনের শুরুতেই এটিকে দ্রুত উৎপাদনক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কোম্পানিটি অভ্যন্তরীণ বাজারের প্রায় ৬০% দখল করেছে এবং এর সিরামিক টেবিল সরঞ্জাম বিশ্ববাজারেও সমাদৃত।


বাংলাদেশে উৎপাদিত ও রপ্তানিকৃত সিরামিক পণ্যের প্রায় ৯৫% কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। যে সমস্ত দেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি হয় সেগুলি হচ্ছে জাপান, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারত। সিরামিক পণ্যের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে সাদা মাটি ও বালি। ১৯৫৭ সালে বাংলাদেশ সাদামাটির বৃহৎ মজুত আবিষ্কৃত হয় ময়মনসিংহের বিজয়পুর এলাকায়। উক্ত এলাকায় সাদামাটির রিজার্ভ-এর পরিমাণ নিরূপিত হয় ২.৭ মিলিয়ন টন। সিলেটের জাফলং এলাকাতেও সাদামাটির সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু উক্ত এলাকাসমূহে মাটি বা বালি পরিশোধনের কোন প্লান্ট নেই।
বাংলাদেশে উৎপাদিত ও রপ্তানিকৃত সিরামিক পণ্যের প্রায় ৯৫% কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। যে সমস্ত দেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি হয় সেগুলি হচ্ছে জাপান, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারত। সিরামিক পণ্যের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে সাদা মাটি ও বালি। ১৯৫৭ সালে বাংলাদেশ সাদামাটির বৃহৎ মজুত আবিষ্কৃত হয় ময়মনসিংহের বিজয়পুর এলাকায়। উক্ত এলাকায় সাদামাটির মজুদের পরিমাণ নিরূপিত হয় ২৭ লক্ষ টন। সিলেটের জাফলং এলাকাতেও সাদামাটির সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু উক্ত এলাকাসমূহে মাটি বা বালি পরিশোধনের কোন কারখানা নেই।


বাংলাদেশের প্রায় সবকয়টি সিরামিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সঠিক মান বজায় রাখা এবং সুনাম ধরে রাখার জন্য উন্নতমানের কাঁচামাল ব্যবহার করে। এসবের মেশিনারিযন্ত্রপাতি আধুনিক এবং উন্নত মানের। প্রতিটি সিরামিক ইউনিটের নিজস্ব ল্যাবরেটরি সুবিধা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে যে সমস্ত পণ্য বাজারজাত হচ্ছে সেগুলি হলো ডিনার সেট, টি সেট, কফি সেট, স্যুপ সেট, ফলের সেট, বাসন, পেয়ালা, ফুলদানি, মগ এবং বিভিন্ন ধরনের স্যুভেনির জাতীয় পণ্য। অধিকাংশ সিরামিক পণ্যই ওভেনপ্রুফ ও ডিশওয়াশার প্রুফ এবং এসবের কোন রাসায়নিক ক্ষতিকর প্রভাব নেই। বর্তমানে বাংলাদেশ ৪৫টিরও বেশি দেশে সিরামিক পণ্য রপ্তানি করছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং সুইডেন।<ref name=":0" />
বাংলাদেশের প্রায় সবকয়টি দগ্ধমৃত্তিকা পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সঠিক মান বজায় রাখা এবং সুনাম ধরে রাখার জন্য উন্নতমানের কাঁচামাল ব্যবহার করে। এসবের যন্ত্রসরঞ্জাম আধুনিক এবং উন্নত মানের। প্রতিটি দগ্ধমৃত্তিকা কেন্দ্রে নিজস্ব গবেষণাগার সুবিধা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে যে সমস্ত পণ্য বাজারজাত হচ্ছে সেগুলি হলো নৈশভোজসামগ্রী (ডিনার সেট), চা পরিবেশন-সামগ্রী (টি সেট), কফি পরিবেশন-সামগ্রী (কফি সেট), সুরুয়া পরিবেশন সামগ্রী (স্যুপ সেট), ফল পরিবেশন সামগ্রী (ফলের সেট), বাসন, পেয়ালা, ফুলদানি, মগ এবং বিভিন্ন ধরনের স্মৃতিচিহ্ন (সুভনির) জাতীয় পণ্য। অধিকাংশ দগ্ধমৃত্তিকাজাত পণ্যই বদ্ধ রন্ধনচুল্লীর তাপসহনশীল (ওভেনপ্রুফ)বাসনধৌতযন্ত্র-সহনশীল (ডিশওয়াশার প্রুফ) এবং এসবের কোন রাসায়নিক ক্ষতিকর প্রভাব নেই। বর্তমানে বাংলাদেশ ৪৫টিরও বেশি দেশে দগ্ধমৃত্তিকাজাত পণ্য রপ্তানি করছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং সুইডেন।<ref name=":0" />


==তথ্যসূত্র==
==তথ্যসূত্র==
৩৯ নং লাইন: ৫২ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:কৃত্রিম উপাদান]]
[[বিষয়শ্রেণী:কৃত্রিম উপাদান]]
[[বিষয়শ্রেণী:মৃৎশিল্প]]
[[বিষয়শ্রেণী:মৃৎশিল্প]]
[[বিষয়শ্রেণী:নির্মাণ সামগ্রী]]

১৭:৫১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

Short timeline of ceramic in different styles

দগ্ধমৃত্তিকা বা ইংরেজি পরিভাষায় "সিরামিক" (Ceramic) এমন এক ধরনের ধাতব, অধাতব ও ধাতুকল্প বিভিন্ন অজৈব পদার্থের মিশ্রণে প্রস্তুত কৃত্রিম উপাদান, যাকে উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে কঠিন পদার্থে পরিণত করে শিল্পকর্ম, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সামগ্রী, গৃহস্থালি কাজে প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং চিত্তাকর্ষক সামগ্রী নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। একে কুমোরের মাটিও বলা হতে পারে। দগ্ধমৃত্তিকাজাত পণ্যের মধ্যে আছে কাচ, পোড়ামাটির বাসনপত্র, চীনামাটির বাসন, চীনামাটি, ইটের টালি, টেরাকোটা, রিফ্রাকটরিজ, সিমেন্ট, চুন এবং জিপসাম।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

মৃৎকর্ম সম্ভবত মানব সভ্যতার সবচেয়ে পুরাতন শিল্প। প্রথমদিকে মাটি দিয়ে শিল্পকর্ম শুরু হয়ে পরবর্তীকালে তা বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে অন্যান্য মাধ্যম, যেমন কাঠ, পাথর, ঝিনুক, ধাতব পদার্থ ইত্যাদির শিল্পকর্মে রূপ লাভ করে। সিরামিকের যুগ শুরু হওয়ার পূর্বে বাংলাও এ সমস্ত স্তর অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশে আধুনিক সিরামিক শিল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৮ সালে, বগুড়ায় তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি. প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এর উৎপাদন অত্যন্ত সীমিত ছিল এবং উৎপাদিত পণ্যের মানও তেমন একটা ভাল ছিল না। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি. প্রতিষ্ঠিত হয় প্রধানত স্থানীয় বাজারে পণ্য সরবরাহের জন্য এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই কারখানার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় পিপলস সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড । কারখানাটি ১৯৬৬ সালে উৎপাদন শুরু করেছিল।[]

দগ্ধমৃত্তিকা উৎপাদনের মূলনীতি

[সম্পাদনা]

মূল উপাদানগুলো মিশিয়ে উত্তপ্ত করা হয়। ৬০০°-৬৫০°Cএর মাঝে চায়না ক্লের পানি শুকিয়ে অদানাদার পদার্থ অ্যালুমিনা ও সিলিকার মিশ্রণ উৎপন্ন হয়। ১০০০°C তাপমাত্রায় দানাদার অ্যালুমিনা ও সিলিকা ফেলস্পারের উপস্থিতিতে বিগলিত হয়ে মুলাইট গঠন করে। ১৪০০°-১৫০০°C তাপমাত্রায় অবশিষ্ট সিলিকা ক্রিস্টোবেলাইটে পরিণত হয়। মুলাইটক্রিস্টোবেলাইটের মিশ্রণকে বিস্কুট বলে।

(১) চীনামাটি নিরুদন:

Al₂O₃.2SiO₂.2H₂O → Al₂O₃ + 2SiO₂ + 2H₂O (650 °C তাপমাত্রায়)

চায়না ক্লে অ্যালুমিনা সিলিকা

(২) মুলাইট গঠন:

3Al₂O₃ + 4SiO₂ → 3Al₂O₃.2SiO₂ (1000°Cতাপমাত্রায়)

মুলাইট

(৩) ক্রিস্টোবেলাইট গঠন: 4nSiO₂ → n(4SiO₂) (1500°Cতাপমাত্রায়) সিলিকা ক্রিস্টোবেলাইট গ্লেজিং : পোড়া কাদামাটির তৈরি সিরামিক দ্রব্য শক্ত, ভঙ্গুর ও সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত অমসৃণ হয়। সেজন্য দ্রব্য মসৃণ ও উজ্জ্বল করার জন্য গ্লেজিং করা হয়। সাধারণ গ্লেজ মিশ্রণ হল- সিলিকা, এলুমিনা এবং পর্যায় সারণির গ্রুপ-IIA এর ধাতুর অক্সাইড। এসবের মিশ্রণ দিয়ে উত্তপ্ত করে গলিত কাচের পাতলা আবরণ তৈরি করা হয়। উচ্চ তাপমাত্রায় NaCl ছিটিয়ে গ্লেজ করা যায়। জলীয়বাষ্পের উপস্থিতিতে NaCl বিয়োজিত হয়ে Na₂O ও HCl উৎপন্ন করে।

Na₂O+SiO₂ → Na₂SiO₃

গলিত সোডিয়াম সিলিকেট ছিদ্র বন্ধ করে মসৃণ করে।[]

বাংলাদেশের দগ্ধমৃত্তিকা শিল্প

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে সফল দগ্ধমৃত্তিকাজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এটি উৎপাদন শুরু করে ১৯৮৫ সনে এবং খুবই উন্নতমানের চীনামাটির টেবিল-সরঞ্জাম উৎপাদন করে। এই কোম্পানি রপ্তানি বাজারে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছে। লন্ডনে এর একটি বিক্রয় অফিস রয়েছে এবং ফ্রাঙ্কফুর্টে হাউজওয়্যার শো নামে এর একটি স্থায়ী স্টল রয়েছে। বিশ্বখ্যাত বোন চায়না এবং চীনামাটির টেবিল সরঞ্জাম প্রস্ত্ততের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৭ সনে শাইনপুকুর সিরামিক লি. প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই কোম্পানির অবস্থান গাজীপুরের বেক্সিমকো শিল্পনগরীতে। কোম্পানিটি চীনামাটির বাসন এবং চায়না উৎপাদন শুরু করেছিল যথাক্রমে এপ্রিল ১৯৯৯ এবং নভেম্বর ১৯৯৯-তে। ১৯৯৯ সনে বাণিজ্যিক উৎপাদনের শুরুতেই এটিকে দ্রুত উৎপাদনক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কোম্পানিটি অভ্যন্তরীণ বাজারের প্রায় ৬০% দখল করেছে এবং এর সিরামিক টেবিল সরঞ্জাম বিশ্ববাজারেও সমাদৃত।

বাংলাদেশে উৎপাদিত ও রপ্তানিকৃত সিরামিক পণ্যের প্রায় ৯৫% কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। যে সমস্ত দেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি হয় সেগুলি হচ্ছে জাপান, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারত। সিরামিক পণ্যের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে সাদা মাটি ও বালি। ১৯৫৭ সালে বাংলাদেশ সাদামাটির বৃহৎ মজুত আবিষ্কৃত হয় ময়মনসিংহের বিজয়পুর এলাকায়। উক্ত এলাকায় সাদামাটির মজুদের পরিমাণ নিরূপিত হয় ২৭ লক্ষ টন। সিলেটের জাফলং এলাকাতেও সাদামাটির সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু উক্ত এলাকাসমূহে মাটি বা বালি পরিশোধনের কোন কারখানা নেই।

বাংলাদেশের প্রায় সবকয়টি দগ্ধমৃত্তিকা পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সঠিক মান বজায় রাখা এবং সুনাম ধরে রাখার জন্য উন্নতমানের কাঁচামাল ব্যবহার করে। এসবের যন্ত্র ও সরঞ্জাম আধুনিক এবং উন্নত মানের। প্রতিটি দগ্ধমৃত্তিকা কেন্দ্রে নিজস্ব গবেষণাগার সুবিধা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে যে সমস্ত পণ্য বাজারজাত হচ্ছে সেগুলি হলো নৈশভোজসামগ্রী (ডিনার সেট), চা পরিবেশন-সামগ্রী (টি সেট), কফি পরিবেশন-সামগ্রী (কফি সেট), সুরুয়া পরিবেশন সামগ্রী (স্যুপ সেট), ফল পরিবেশন সামগ্রী (ফলের সেট), বাসন, পেয়ালা, ফুলদানি, মগ এবং বিভিন্ন ধরনের স্মৃতিচিহ্ন (সুভনির) জাতীয় পণ্য। অধিকাংশ দগ্ধমৃত্তিকাজাত পণ্যই বদ্ধ রন্ধনচুল্লীর তাপসহনশীল (ওভেনপ্রুফ) ও বাসনধৌতযন্ত্র-সহনশীল (ডিশওয়াশার প্রুফ) এবং এসবের কোন রাসায়নিক ক্ষতিকর প্রভাব নেই। বর্তমানে বাংলাদেশ ৪৫টিরও বেশি দেশে দগ্ধমৃত্তিকাজাত পণ্য রপ্তানি করছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং সুইডেন।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "সিরামিক শিল্প - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৪ 
  2. "কাঁচ ও সিরামিক শিল্প"10 Minute School: HSC Section (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৬-১৪। ২০২০-০৬-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৪