বিষয়বস্তুতে চলুন

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

স্থানাঙ্ক: ২৪°১৯′১১″ উত্তর ৯১°৪৭′১″ পূর্ব / ২৪.৩১৯৭২° উত্তর ৯১.৭৮৩৬১° পূর্ব / 24.31972; 91.78361
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
AishikBot (আলোচনা | অবদান)
বানান সংশোধন
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
Salim Khandoker (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
 
(৮ জন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ২১টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
৫ নং লাইন: ৫ নং লাইন:
| map = বাংলাদেশ
| map = বাংলাদেশ
| map_caption =বাংলাদেশে অবস্থান
| map_caption =বাংলাদেশে অবস্থান
| coordinates = {{স্থানাঙ্ক|24|19|11|N|91|47|1|E|region:BD|display=inline,title}}
| coordinates = {{coord|24|19|11|N|91|47|1|E|region:BD|display=inline,title}}
| location = [[মৌলভীবাজার জেলা]], [[সিলেট বিভাগ]], [[বাংলাদেশ]]
| location = [[মৌলভীবাজার জেলা]], [[সিলেট বিভাগ]], [[বাংলাদেশ]]
| nearest_city = [[শ্রীমঙ্গল]]
| nearest_city = [[শ্রীমঙ্গল]]
১৭ নং লাইন: ১৭ নং লাইন:
}}
}}


'''লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান''' [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশে]]<nowiki/>র অন্যতম জাতীয় উদ্যান<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bforest.portal.gov.bd/sites/default/files/files/bforest.portal.gov.bd/page/2df7f2df_fa89_453f_8058_7efa3bd806f1/2020-08-09-13-46-edeec5c2b5192bef749674278f5baf1f.pdf|শিরোনাম=বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৮-১৯|ওয়েবসাইট=বন অধিদপ্তর|সংগ্রহের-তারিখ=১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://bforest.portal.gov.bd/sites/default/files/files/bforest.portal.gov.bd/page/2df7f2df_fa89_453f_8058_7efa3bd806f1/ANNUAL%20REPORT_2017-18.pdf|শিরোনাম=বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৭-১৮|ওয়েবসাইট=বন অধিদপ্তর|সংগ্রহের-তারিখ=১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১}}</ref> এবং অবশিষ্ট [[চিরহরিৎ বনাঞ্চল|চিরহরিৎ বনের]] একটি উল্লেখযোগ্য নমুনা। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী [[অভয়ারণ্য]] ও ১০টি [[জাতীয় উদ্যান|জাতীয় উদ্যানের]] মধ্যে এটি অন্যতম। [[মৌলভীবাজার জেলা|মৌলভীবাজার জেলার]] [[কমলগঞ্জ উপজেলা|কমলগঞ্জ উপজেলায়]] অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের বন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর।<ref>লাউয়াছড়া উদ্যানে বাংলাদেশ বন বিভাগ কর্তৃক স্থাপিত তথ্য বোর্ড।</ref> [[গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার|বাংলাদেশ সরকার]] ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এই বনকে '[[জাতীয় উদ্যান]]' হিসেবে ঘোষণা করে।<ref>[http://209.85.129.132/search?q=cache:o9tjwuGzTIQJ:www.ruffordsmallgrants.org/files/Reza-RSG%2520Report_Oct%25202007.pdf+Lawachara+Rain+Forest&cd=76&hl=bn&ct=clnk&gl=bd&client=firefox-a Applied Research and Conservation of the Herpetofauna in Bangladesh]{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=এপ্রিল ২০১৯ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref> বিলুপ্তপ্রায় [[উল্লুক|উল্লুকের]] জন্য এ বন বিখ্যাত। [[উল্লুক|উল্লূক]] ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং [[উদ্ভিদ]]।
'''লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান''' [[বাংলাদেশ]]ের অন্যতম [[জাতীয় উদ্যান]] এবং অবশিষ্ট [[চিরহরিৎ বনাঞ্চল]]ের একটি উল্লেখযোগ্য নমুনা। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী [[অভয়ারণ্য]] ও ১০টি [[জাতীয় উদ্যান]]ের মধ্যে এটি অন্যতম। [[মৌলভীবাজার জেলা]]র [[শ্রীমঙ্গল]] [[কমলগঞ্জ উপজেলা]]য় অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের বন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। লাউয়াছড়া উদ্যানে বাংলাদেশ বন বিভাগ কর্তৃক স্থাপিত তথ্য বোর্ড। [[বাংলাদেশ সরকার]] ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এই বনকে '[[জাতীয় উদ্যান]]' হিসেবে ঘোষণা করে। বিলুপ্তপ্রায় [[উল্লুক]]ের জন্য এ বন বিখ্যাত। [[উল্লুক]] ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং [[উদ্ভিদ]]।


নিরক্ষীয় অঞ্চলের [[চিরহরিৎ]] [[বর্ষাবন]] বা রেইন ফরেষ্টের মতো এখানে প্রচুর [[বৃষ্টিপাত]] হয়। সূর্যের আলোর জন্য প্রতিযোগিতা করে এ বনের গাছপালা খুব উঁচু হয়ে থাকে, এবং অনেক ওপরে ডালপালা ছড়িয়ে চাঁদোয়ার মত সৃষ্টি করে। এই [[বন]] এতই ঘন যে মাটিতে সূর্যের আলো পড়েনা বললেই চলে।
নিরক্ষীয় অঞ্চলের [[চিরহরিৎ]] [[অতিবৃষ্টি অরণ্য]]ের মতো এখানে প্রচুর [[বৃষ্টিপাত]] হয়। সূর্যের আলোর জন্য প্রতিযোগিতা করে এ বনের গাছপালা খুব উঁচু হয়ে থাকে, এবং অনেক ওপরে ডালপালা ছড়িয়ে চাঁদোয়ার মত সৃষ্টি করে। এই [[অরণ্য]] এতই ঘন যে মাটিতে সূর্যের আলো পড়েনা বললেই চলে। এটিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় [[অতিবৃষ্টি অরণ্য]] এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।


== ইতিহাস ==
== ইতিহাস ==
[[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] বিখ্যাত বনগুলোর মধ্যে লাউয়াছড়ার বন অন্যতম। পরিচিতির দিক থেকে [[সুন্দরবন|সুন্দরবনের]] পরেই লাউয়াছড়ার বনের অবস্থান। [[সিলেট]] বিভাগে [[মৌলভীবাজার জেলা|মৌলভীবাজার]] জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় এ বন অবস্থিত।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.dcmoulvibazar.gov.bd/home/|শিরোনাম=মৌলভীবাজার ডিসি অফিস|প্রকাশক=}}{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=এপ্রিল ২০১৯ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref> ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে তদানিন্তন [[ব্রিটিশ]] সরকার এখানে বৃক্ষায়ন করলে তা-ই বেড়ে আজকের এই বনে পরিণত হয়। [[শ্রীমঙ্গল]] ও [[কমলগঞ্জ উপজেলা]]র মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২,৭৪০ হেক্টর আয়তনের পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন ছিলো এলাকাটি, সেই সুবাদে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পূর্ববতী নাম '''পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন'''। বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতি ভ্রমণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পশ্চিম ভানুগাছ বনের ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে '[[জাতীয় উদ্যান]]' হিসাবে ঘোষণা করা হয়।<ref name="KKLaw">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=চরাচর: লাউয়াছড়ায় অশুভ ছায়া |লেখক=বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন |ইউআরএল= |বিন্যাস=মুদ্রণ |সংবাদপত্র=দৈনিক কালের কন্ঠ |প্রকাশক= |অবস্থান=ঢাকা |তারিখ=মে ৪, ২০১০ |পাতাসমূহ=১৭, ২৪ |সংগ্রহের-তারিখ=জুন ৮, ২০১০ }}</ref>
[[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] বিখ্যাত বনগুলোর মধ্যে লাউয়াছড়ার বন অন্যতম। পরিচিতির দিক থেকে [[সুন্দরবন]]ের পরেই লাউয়াছড়ার বনের অবস্থান। [[সিলেট বিভাগ]] [[মৌলভীবাজার জেলা]] [[কমলগঞ্জ উপজেলা]]য় এ বন অবস্থিত। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে তদানিন্তন [[গ্রেট ব্রিটেন|ব্রিটিশ]] সরকার এখানে বৃক্ষায়ন করলে তা-ই বেড়ে আজকের এই বনে পরিণত হয়। [[শ্রীমঙ্গল]] ও [[কমলগঞ্জ উপজেলা]]র মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২,৭৪০ হেক্টর আয়তনের পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন ছিলো এলাকাটি, সেই সুবাদে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পূর্ববতী নাম '''পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন'''। বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতি ভ্রমণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পশ্চিম ভানুগাছ বনের ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে '[[জাতীয় উদ্যান]]' হিসাবে ঘোষণা করা হয়।


চিরহরিৎ এ বনে নিরক্ষীয় অঞ্চলের বর্ষাবন বা রেইনফরেষ্টের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। একসময় বৃহত্তর সিলেটের সর্বত্রই এ ধরনের বন ছিলো। তবে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চা বাগান সৃষ্টি, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ক্রমে সংকুচিত হতে হতে মাত্র কয়েকটি স্থানে চিরহরিৎ এ বর্ষাবনের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে।
চিরহরিৎ এ বনে নিরক্ষীয় অঞ্চলের বর্ষাবন বা রেইনফরেষ্টের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। একসময় বৃহত্তর সিলেটের সর্বত্রই এ ধরনের বন ছিলো। তবে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চা বাগান সৃষ্টি, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ক্রমে সংকুচিত হতে হতে মাত্র কয়েকটি স্থানে চিরহরিৎ এ বর্ষাবনের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে।


== ভূপ্রকৃতি ==
== ভূপ্রকৃতি ==
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভূপ্রকৃতি পাহাড়ি মৃত্তিকা গঠিত। উঁচু-নিচু টিলা জুড়ে এ বন বিস্তৃত। বনের মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি এবং প্রচুর পাথর দেখা যায়। বনের মাটিতে পাতা জমে জমে পুরু স্পঞ্জের মতো হয়ে থাকে, জায়গায় জায়গার মাটিই দেখা যায় না। এসব স্থানে [[জোঁক|জোঁকের]] উপদ্রপ খুব বেশি। বনের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো পাহাড়ী [[ছড়া]] বয়ে চলেছে। এসব ছড়ার কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোতে শুধু বর্ষার সময়ই পানি থাকে। ছড়ার পানি পরিষ্কার টলটলে এবং ঠান্ডা। যেসব ছড়াতে শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকে সেসব ছড়ার কাছে বন্যপ্রাণীর আনাগোনা দেখা যায়।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভূপ্রকৃতি পাহাড়ি মৃত্তিকা গঠিত। উঁচু-নিচু টিলা জুড়ে এ বন বিস্তৃত। বনের মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি এবং প্রচুর পাথর দেখা যায়। বনের মাটিতে পাতা জমে জমে পুরু স্পঞ্জের মতো হয়ে থাকে, জায়গায় জায়গার মাটিই দেখা যায় না। এসব স্থানে [[জোঁক]]ের উপদ্রপ খুব বেশি। বনের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো পাহাড়ি [[ছড়া]] বয়ে চলেছে। এসব ছড়ার কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোতে শুধু বর্ষার সময়ই পানি থাকে। ছড়ার পানি পরিষ্কার টলটলে এবং ঠান্ডা। যেসব ছড়াতে শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকে সেসব ছড়ার কাছে বন্যপ্রাণীর আনাগোনা দেখা যায়।


== জীববৈচিত্র্য ==
== জীববৈচিত্র্য ==
[[চিত্র:"nest over the bamboo" Lawachara National Park.jpg|left|thumb|200px|লাউয়াছড়ার বনে বাঁশ ঝাড় ও বেতের ঝোঁপ]]
[[চিত্র:"nest over the bamboo" Lawachara National Park.jpg|left|thumb|200px|লাউয়াছড়ার বনে বাঁশ ঝাড় ও বেতের ঝোঁপ]]
জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। আয়তনে ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। বনে প্রবেশের সাথে সাথেই নানা ধরনের বন্যপ্রাণী, পাখি এবং কীটপতঙ্গের শব্দ শোনা যায়। বনের মধ্যে প্রায় সারাক্ষণই সাইরেনের মত শব্দ হতে থাকে; প্রকৃতপক্ষে এটি এক ধরনের [[ঝিঁঝিঁ পোকা]] বা ক্রিকেটের শব্দ। লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির [[উভচর]], ৬ প্রজাতির [[সরীসৃপ]], ২৪৬ প্রজাতির [[পাখি]] এবং ২০ প্রজাতির [[স্তন্যপায়ী|স্তন্যপায়ী প্রাণী]] দেখা যায়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.world-wildlife-adventures.com/directory/bangladesh/wildlife-park.asp?sanctuary=Lawachara+National+Park&state=Sylhet+Division/|শিরোনাম=ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ এ্যাডভেঞ্চার ওয়েবপেজ|প্রকাশক=}}{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=এপ্রিল ২০১৯ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref>
জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। আয়তনে ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। বনে প্রবেশের সাথে সাথেই নানা ধরনের বন্যপ্রাণী, পাখি এবং কীটপতঙ্গের শব্দ শোনা যায়। বনের মধ্যে প্রায় সারাক্ষণই সাইরেনের মত শব্দ হতে থাকে; প্রকৃতপক্ষে এটি এক ধরনের [[ঝিঁঝিঁ পোকা]] শব্দ। লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির [[উদ্ভিদ]], ৪ প্রজাতির [[উভচর]], ৬ প্রজাতির [[সরীসৃপ]], ২৪৬ প্রজাতির [[পাখি]] এবং ২০ প্রজাতির [[স্তন্যপায়ী]] প্রাণী দেখা যায়।


এ বনে স্তন্যপায়ী আছে নানা প্রজাতির। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। বনের মধ্যে কিছু সময় কাটালেই উল্লুকের ডাকাডাকি কানে আসবে। [[উল্লুক]] ছাড়াও এখানে রয়েছে [[মুখপোড়া হনুমান]], [[বানর]], [[শিয়াল]], [[মেছোবাঘ]], [[কুকুর|বন্য কুকুর]], [[এশীয় কালো ভাল্লুক]], [[মায়া হরিণ]] সহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু। মায়া হরিণ সাধারণত উচ্চতায় ২০‌-২২ ইঞ্চি। এদের বাদামী রঙের দেহ যা পিঠের দিকে ঘিয়ে গাঢ় রং ধারণ করে।


এ বনে স্তন্যপায়ী আছে নানা প্রজাতির। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। বনের মধ্যে কিছু সময় কাটালেই উল্লুকের ডাকাডাকি কানে আসবে। [[উল্লুক]] ছাড়াও এখানে রয়েছে [[চশমাপরা হনুমান]], [[বাংলা লজ্জাবতী বানর|লজ্জাবতী বানর]], [[মুখপোড়া হনুমান]], [[বানর]], [[শিয়াল]], [[মেছোবাঘ]], [[রামকুত্তা]], [[এশীয় কালো ভাল্লুক]], [[মায়া হরিণ]] সহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু। মায়া হরিণ সাধারণত উচ্চতায় ২০‌-২২ ইঞ্চি। এদের বাদামী রঙের দেহ যা পিঠের দিকে ঘিয়ে গাঢ় রং ধারণ করে।
এ বনে সরীসৃপ আছে নানা প্রজাতির। তার ভেতর [[অজগর]] হচ্ছে অনন্য। এখানে পাওয়া যায় [[হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ]]।<ref name="Elliott, 2010-05-26">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=জীববৈচিত্র্য হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ |ইউআরএল=http://www.kalerkantho.com/print_edition/?view=details&archiev=yes&arch_date=27-04-2013&type=gold&data=news&pub_no=1225&cat_id=1&menu_id=56&news_type_id=1&index=13#.VOAKRI5HL_s |সংবাদপত্র=[[দৈনিক কালের কণ্ঠ]] |তারিখ=২৭ এপ্রিল ২০১৩ |সংগ্রহের-তারিখ=২৭ এপ্রিল ২০১৩}}</ref>


এ বনে সরীসৃপ আছে নানা প্রজাতির। তার ভেতর [[অজগর]] হচ্ছে অনন্য। এখানে পাওয়া যায় [[হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ]]।
উদ্যানের বন্য পাখির মধ্যে [[সবুজ ঘুঘু]], [[বনমোরগ]], তুর্কি বাজ, সাদা ভ্রু সাতভায়লা, [[ঈগল]], [[হরিয়াল]], [[কালোমাথা টিয়া]], কালো ফর্কটেইল. ধূসর সাত শৈলী, [[প্যাঁচা]], [[ফিঙে]], [[লেজকাটা টিয়া]], কালোবাজ, হীরামন, [[কালো-মাথা বুলবুল]], ধুমকল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সাধারণ দর্শনীয় পাখির মধ্যে [[টিয়া]], [[ছোট হরিয়াল]], সবুজ সুইচোরা, তোতা, ছোট ফিঙ্গে, সবুজ কোকিল, পাঙ্গা, [[কেশরাজ]] প্রভৃতির দেখা মিলে।


উদ্যানের বন্য পাখির মধ্যে [[সবুজ ঘুঘু]], [[লাল বনমোরগ]], [[তুর্কি বাজ]], [[সাদামাথা সাতভায়লা]], [[ঈগল]], [[হরিয়াল]], [[কালোমাথা টিয়া]], [[কালো-পিঠ চেরালেজি]], [[ধূসরাভ সাত সহেলি]], [[প্যাঁচা]], [[কালো ফিঙে]], [[বাসন্তী লটকনটিয়া]], [[কালো বাজ]], [[লালমাথা টিয়া]], [[কালো-মাথা বুলবুল]], [[পরঘুমা]] প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সাধারণ দর্শনীয় পাখির মধ্যে [[সবুজ টিয়া]], [[ছোট হরিয়াল]], [[সবুজ বাঁশপাতি]], [[তোতা]], [[পান্না কোকিল]], পাঙ্গা, [[কেশরাজ]] প্রভৃতির দেখা মিলে।
এছাড়া ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে সিতেশ রঞ্জন দেব তার [[চিড়িয়াখানা]] থেকে দুটি [[লক্ষ্মীপেঁচা]] ও একটি [[বনবিড়াল]]ও অবমুক্ত করেন এ বনে।<ref name="PA"/>

এছাড়া ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে সিতেশ রঞ্জন দেব তার [[চিড়িয়াখানা]] থেকে দুটি [[লক্ষ্মীপেঁচা]] ও একটি [[বন বিড়াল]]ও অবমুক্ত করেন এ বনে।


=== বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক ===
=== বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক ===
[[চিত্র:লাউয়াছড়ার জীবন চিত্র - মুখপোড়া হনুমান বা লালচে হনুমান 03.jpg|right|thumb|220px|হনুমান]]
[[চিত্র:লাউয়াছড়ার জীবন চিত্র - মুখপোড়া হনুমান বা লালচে হনুমান 03.jpg|right|thumb|220px|হনুমান]]
লাউয়াছড়ার বনেই রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির [[উল্লুক]] ([[:en:Hoolock Gibbon|Hoolock Gibbon]])। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে এ উল্লুক বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। লাউয়াছড়ার বনেও এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। দুই দশক আগে এই বনে কয়েক হাজার উল্লুক দেখা যেতো। কিন্তু বর্তমানে সে সংখ্যা কমতে কমতে একশোরও নিচে এসে ঠেকেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে একসময় হয়তো এই বন থেকে উল্লুক চিরতরে হারিয়ে যাবে। নির্বিচারে বন ধ্বংসের ফলে উল্লুকের বাসস্থান ও খাদ্যসংকট সৃষ্টিই এদের সংখ্যা হ্রাসের প্রধানতম কারণ। লাউয়াছড়ার বনে বর্তমানে মাত্র ৪৯ টি উল্লুক অবশিষ্ট আছে। নিকটবতী ছাউতলি ও কালাছড়ার বন মিলিয়ে এ সংখ্যা ৬০-এর মত। লাউয়াছড়া ও এর আশপাশের বনে মোট ১৬ টি উল্লুক পরিবার রয়েছে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.thedailystar.net/magazine/2006/07/03/wild.htm/|শিরোনাম=বাংলাদেশের বিপন্ন উল্লুক (The Endangered Hoolock Gibbon of Bangladesh)|প্রকাশক=}}</ref> ভোরবেলা লাউয়াছড়ার বনে গেলে অনেক সময় উল্লুকের দেখা পাওয়া যায়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.gibbons.de/main/news/0205gibbonsymposium4.html|শিরোনাম=Symposium on Gibbon Diversity and Conservation: Abstracts|প্রথমাংশ=Thomas|শেষাংশ=Geissmann|কর্ম=www.gibbons.de}}</ref> এই বনে উল্লুকের প্রিয় খাদ্য চামকাঁঠাল বা চাপালিশ ফল।
লাউয়াছড়ার বনেই রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির [[উল্লুক]]। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে এ উল্লুক বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। লাউয়াছড়ার বনেও এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। দুই দশক আগে এই বনে কয়েক হাজার উল্লুক দেখা যেতো। কিন্তু বর্তমানে সে সংখ্যা কমতে কমতে একশোরও নিচে এসে ঠেকেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে একসময় হয়তো এই বন থেকে উল্লুক চিরতরে হারিয়ে যাবে। নির্বিচারে বন ধ্বংসের ফলে উল্লুকের বাসস্থান ও খাদ্যসংকট সৃষ্টিই এদের সংখ্যা হ্রাসের প্রধানতম কারণ। লাউয়াছড়ার বনে বর্তমানে মাত্র ৪৯ টি উল্লুক অবশিষ্ট আছে। নিকটবতী ছাউতলি ও কালাছড়ার বন মিলিয়ে এ সংখ্যা ৬০-এর মত। লাউয়াছড়া ও এর আশপাশের বনে মোট ১৬ টি উল্লুক পরিবার রয়েছে। ভোরবেলা লাউয়াছড়ার বনে গেলে অনেক সময় উল্লুকের দেখা পাওয়া যায়। এই বনে উল্লুকের প্রিয় খাদ্য চামকাঁঠাল বা চাপালিশ ফল।


=== বিলুপ্তপ্রায় হনুমান ===
=== বিলুপ্তপ্রায় হনুমান ===
অতি সম্প্রতি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংগ্রহ তালিকায় যুক্ত হয়েছে একটি হনুমানের বাচ্চা। বাচ্চা হনুমানটি [[মৌলভীবাজার জেলা|মৌলভীবাজার জেলার]] [[শ্রীমঙ্গল|শ্রীমঙ্গলের]] বিশামনি গ্রামে মাছের খামারে ঘেরাজালে আটকা পড়া হনুমানটিকে [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] [[প্রাণীবিদ্যা]] বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ট্রাস্টের নির্বাহী প্রধান জনাব আনোয়ারুল ইসলাম শনাক্ত করেন যে, এটি অতিবিপন্ন প্রজাতির 'ফ্যায়র্স লাঙ্গুর' ([[:en:Phayre's Leaf Monkey|Phayre's Langur]])। হনুমানটি প্রথমে সিতেশ রঞ্জন দেবের চিড়িয়াখানায় রাখা হয়। পরে এটিকে সিলেট বন বিভাগের হেফাজতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জনকীছড়ায় রাখা হয়। ধরা পড়াকালীন সময় এর বয়স ছিলো মাত্র তিন মাস।<ref name="PA">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=শ্রীমঙ্গলে ধরা পড়া হনুমানটি ক্যাপড় লাঙ্গুর নয়, ফ্যায়র্স লাঙ্গুর |লেখক=শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি |ইউআরএল= |বিন্যাস=মুদ্রণ |এজেন্সি= |সংবাদপত্র=দৈনিক প্রথম আলো |প্রকাশক= |অবস্থান=ঢাকা |আইএসবিএন= |issn= |oclc= |pmid= |pmd= |বিবকোড= |ডিওআই= |আইডি= |তারিখ=মার্চ ১৫, ২০০৯ |পাতা=৪ |সংগ্রহের-তারিখ= |trans_title= |উক্তি= |আর্কাইভের-ইউআরএল= |আর্কাইভের-তারিখ= |সূত্র= }}</ref>
অতি সম্প্রতি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংগ্রহ তালিকায় যুক্ত হয়েছে একটি হনুমানের বাচ্চা। বাচ্চা হনুমানটি [[মৌলভীবাজার জেলা]] [[শ্রীমঙ্গল উপজেলা]]য় বিশামনি গ্রামে মাছের খামারে ঘেরাজালে আটকা পড়া হনুমানটিকে [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]ের [[প্রাণিবিজ্ঞান]] বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ট্রাস্টের নির্বাহী প্রধান জনাব আনোয়ারুল ইসলাম শনাক্ত করেন যে, এটি অতিবিপন্ন প্রজাতির 'ফ্যায়র্স লাঙ্গুর'। হনুমানটি প্রথমে সিতেশ রঞ্জন দেবের চিড়িয়াখানায় রাখা হয়। পরে এটিকে সিলেট বন বিভাগের হেফাজতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জনকীছড়ায় রাখা হয়। ধরা পড়াকালীন সময় এর বয়স ছিলো মাত্র তিন মাস।


===শকুনের নিরাপদ এলাকা===
===শকুনের নিরাপদ এলাকা===
শকুনের নিরাপদ এলাকা-১ তফসিল অনুসারে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।<ref name="শকুন">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.bforest.gov.bd/site/page/6e896fbc-0250-45ee-9fe5-772648326eb2/-|শিরোনাম=শকুনের নিরাপদ এলাকা |ভাষা=বাংলা |কর্ম=রক্ষিত এলাকা |তারিখ=২০১৭-০৯-১৪ |সংগ্রহের-তারিখ=2019-06-28 }}</ref>
শকুনের নিরাপদ এলাকা-১ তফসিল অনুসারে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।


== উদ্ভিদবৈচিত্র্য ==
== উদ্ভিদবৈচিত্র্য ==
লাউয়াছড়া বনাঞ্চলে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ। আছে [[গর্জন]], [[সেগুন]], গামার, মেনজিয়াম, [[জামরুল]], চাপালিশ, [[নাগেশ্বর]], [[শিমুল]], লোহাকাঠ, [[জাম]], [[ডুমুর]], তুন, কড়ই প্রভৃতি।<ref name="KKLaw"/> নানা প্রকারের দেশীয় গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে নানা ধরনের [[অর্কিড]] দেখতে হলেও এ বন এক অপূর্ব স্থান।
লাউয়াছড়া বনাঞ্চলে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ। আছে [[গর্জন]], [[সেগুন]], [[গামারি]], [[মিনজিরি]], [[জামরুল]], [[চাপালিশ]], [[নাগেশ্বর]], [[শিমুল]], লোহাকাঠ, [[জাম]], [[ডুমুর]], তুন, [[শিরিষ]] প্রভৃতি। নানা প্রকারের দেশীয় গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে নানা ধরনের [[অর্কিড]] দেখতে হলেও এ বন এক অপূর্ব স্থান।


== নিসর্গ প্রকল্প ও প্রকৃতি ভ্রমণ ==
== নিসর্গ প্রকল্প ও প্রকৃতি ভ্রমণ ==
[[চিত্র:Lawachara National Park06.jpg|200px|thumb|left|লাউয়াছড়ায় নিসর্গ প্রকল্পের প্রবেশদ্বার]]
[[চিত্র:Lawachara National Park06.jpg|200px|thumb|left|লাউয়াছড়ায় নিসর্গ প্রকল্পের প্রবেশদ্বার]]
[[চিত্র:Spider in its home.jpg|200px|thumb|মাকড়শা]]
[[চিত্র:Spider in its home.jpg|200px|thumb|মাকড়শা]]
নিসর্গ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য স্থানীয় জনগণ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষগুলোর সাথে বন বিভাগের অংশীদারত্বের সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সুষ্ঠ সংরক্ষণ ও ব্যবস্হাপনা। বর্তমানে ইউ এস এ আই ডি ([[:en:USAID|USAID]])-এর আর্থিক সহযোগীতায় দেশের ১৭টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এই প্রকল্প চালু আছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।
নিসর্গ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য স্থানীয় জনগণ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষগুলোর সাথে বন বিভাগের অংশীদারত্বের সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সুষ্ঠ সংরক্ষণ ও ব্যবস্হাপনা। বর্তমানে [[ইউএসএআইডি]]-এর আর্থিক সহযোগীতায় দেশের ১৭টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এই প্রকল্প চালু আছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।


নিসর্গ প্রকল্পের অধীনে লাউয়াছড়া বনের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কাজে স্থানীয় জনগনকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এর ফলে বনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং বনের সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রকৃতি ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট হারে প্রবেশ মূল্য দিয়ে এ বনের ভেতর প্রকৃতি ভ্রমণ করা যায়। প্রকৃতি ভ্রমণের জন্য বনে তিনটি ট্রেইল বা হাঁটা পথ রয়েছে। তিনটি পথের মধ্যে একটি ৩ ঘণ্টার পথ, একটি ১ ঘণ্টার পথ আর অপরটি ৩০ মিনিটের পথ। প্রশিক্ষিত গাইডের সহায়তায় বনের একেবারে ভেতর পর্যন্ত যাওয়া যায়। প্রকৃতিকে বিরক্ত না করে তৈরি করা এ তিনটি পথে চোখে পড়বে নানা প্রজাতির কীটপতঙ্গ, [[বৃক্ষ|গাছপালা]], [[পাখি]] ও [[অর্কিড]]। ভাগ্য ভালো হলে [[হনুমান]], [[বানর]] এবং [[উল্লুক|উল্লুকেরও]] দেখা মিলতে পারে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক প্রতিদিন লাউয়াছড়ায় প্রকৃতি [[ভ্রমণ|ভ্রমণে]] আসেন। বছরজুড়েই এই বনে [[পর্যটক|পর্যটকদের]] আনাগোনা থাকলেও শীতের সময় সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হয়।<ref name="KKLaw"/>
নিসর্গ প্রকল্পের অধীনে লাউয়াছড়া বনের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কাজে স্থানীয় জনগনকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এর ফলে বনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং বনের সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রকৃতি ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট হারে প্রবেশ মূল্য দিয়ে এ বনের ভেতর প্রকৃতি ভ্রমণ করা যায়। প্রকৃতি ভ্রমণের জন্য বনে তিনটি ট্রেইল বা হাঁটা পথ রয়েছে। তিনটি পথের মধ্যে একটি ৩ ঘণ্টার পথ, একটি ১ ঘণ্টার পথ আর অপরটি ৩০ মিনিটের পথ। প্রশিক্ষিত গাইডের সহায়তায় বনের একেবারে ভেতর পর্যন্ত যাওয়া যায়। প্রকৃতিকে বিরক্ত না করে তৈরি করা এ তিনটি পথে চোখে পড়বে নানা প্রজাতির কীটপতঙ্গ, [[বৃক্ষ|গাছপালা]], [[পাখি]] ও [[অর্কিড]]। ভাগ্য ভালো হলে [[হনুমান]], [[বানর]] এবং [[উল্লুক]]েরও দেখা মিলতে পারে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক প্রতিদিন লাউয়াছড়ায় প্রকৃতি [[ভ্রমণ|ভ্রমণে]] আসেন। বছরজুড়েই এই বনে [[পর্যটক|পর্যটকদের]] আনাগোনা থাকলেও শীতের সময় সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হয়।


== আদিবাসী নৃগোষ্ঠী ==
== আদিবাসী নৃগোষ্ঠী ==
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশেই রয়েছে মাগুরছড়া [[খাসিয়া|খাসিয়াপুঞ্জি]]। খাসিয়ারা বন ও প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে গড়ে তুলেছে তাদের আবাস। তাদের আবাসভূমিগুলো একাধিক টিলা অতিক্রম করে উঠে গেছে ছোট ছোট টিলার উপরে। তাদের প্রধান পেশা [[পান]] চাষ।<ref name="KKLaw"/>
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশেই রয়েছে মাগুরছড়া [[খাসিয়া|খাসিয়াপুঞ্জি]]। খাসিয়ারা বন ও প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে গড়ে তুলেছে তাদের আবাস। তাদের আবাসভূমিগুলো একাধিক টিলা অতিক্রম করে উঠে গেছে ছোট ছোট টিলার উপরে। তাদের প্রধান পেশা [[পান]] চাষ।


== জীববৈচিত্র্য, উদ্ভিদবৈচিত্র্য ও পরিবেশ বিপর্যয় ==
== জীববৈচিত্র্য, উদ্ভিদবৈচিত্র্য ও পরিবেশ বিপর্যয় ==
=== গ্যাস অনুসন্ধান ও এর ফলে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয় ===
=== গ্যাস অনুসন্ধান ও এর ফলে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয় ===
পরিবেশবাদী ও সচেতন মহলের ব্যাপক প্রতিবাদসত্ত্বেও ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের [[এপ্রিল]] মাসে বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানী শেভরন লাউয়াছড়া ও এর আশেপাশের বনভূমি এলাকায় ত্রিমাত্রিক অনুসন্ধান শুরু করে। ত্রিমাত্রিক অনুসন্ধানের জন্য বনের অভ্যন্তর ও আশপাশের এলাকায় নির্বিচারে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসময় বন এলাকায় সৃষ্ট ভূকম্পনে বন্যপ্রাণী ও স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, বনের কয়েক জায়গায় আগুন ধরে যায়, বনের আশপাশের বাড়িঘরে ফাটল দেখা দেয়। লাউয়াছড়া বনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অনুসন্ধানের অনুমতি প্রদানের জন্য তৎকালীন [[বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার|তত্বাবধায়ক সরকার]]ও দেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://nation.ittefaq.com/issues/2008/04/30/all0536.htm|শিরোনাম=ITTEFAQ.COM|কর্ম=nation.ittefaq.com|সংগ্রহের-তারিখ=৩০ অক্টোবর ২০০৯|আর্কাইভের-তারিখ=১৪ জুন ২০১১|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20110614064312/http://nation.ittefaq.com/issues/2008/04/30/all0536.htm|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref> এর আগে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে আরেক বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানী অক্সিডেন্টাল পরিচালিত এধরনের একটি অনুসন্ধানের সময় লাউয়াছড়া বনের পাশেই মাগুরছড়ায অনুসন্ধান কুপে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.thedailystar.net/law/2008/05/04/index.htm|শিরোনাম=Law and Our Rights|কর্ম=www.thedailystar.net}}</ref> এ বিস্ফোরণের ফলে কয়েক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পুড়ে যায়। মাগুরছড়ার বন এখনও সেই ক্ষত বহন করছে। মাগুরছড়া বিস্ফোরণে বাংলাদেশ সরকার ওই কোম্পানীর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করলেও তা এখনো অমিমাংসীত পর্যায়ে রয়ে গেছে।
পরিবেশবাদী ও সচেতন মহলের ব্যাপক প্রতিবাদসত্ত্বেও ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের [[এপ্রিল]] মাসে বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানী শেভরন লাউয়াছড়া ও এর আশেপাশের বনভূমি এলাকায় ত্রিমাত্রিক অনুসন্ধান শুরু করে। ত্রিমাত্রিক অনুসন্ধানের জন্য বনের অভ্যন্তর ও আশপাশের এলাকায় নির্বিচারে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসময় বন এলাকায় সৃষ্ট ভূকম্পনে বন্যপ্রাণী ও স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, বনের কয়েক জায়গায় আগুন ধরে যায়, বনের আশপাশের বাড়িঘরে ফাটল দেখা দেয়। লাউয়াছড়া বনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অনুসন্ধানের অনুমতি প্রদানের জন্য তৎকালীন [[বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার|তত্বাবধায়ক সরকার]]ও দেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এর আগে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে আরেক বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানী অক্সিডেন্টাল পরিচালিত এধরনের একটি অনুসন্ধানের সময় লাউয়াছড়া বনের পাশেই মাগুরছড়ায অনুসন্ধান কুপে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। এ বিস্ফোরণের ফলে কয়েক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পুড়ে যায়। মাগুরছড়ার বন এখনও সেই ক্ষত বহন করছে। মাগুরছড়া বিস্ফোরণে বাংলাদেশ সরকার ওই কোম্পানীর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করলেও তা এখনো অমিমাংসীত পর্যায়ে রয়ে গেছে।


=== জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য ধ্বংস ===
=== জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য ধ্বংস ===
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সরকারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সরকারের পক্ষ থেকে তাই বনরক্ষী নিয়োগ দেয়া হয়, যারা বনের সার্বিক দেখভাল করে থাকেন। কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে তাদের অবস্থাও নাজুক। প্রায়ই বনদস্যুদের দাপটে তাদের নাজেহাল হবার খবর পাওয়া যায়।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=লাউয়াছড়ায় ফের সাধু বাহিনীর হামলা: তিন বনপ্রহরী আহত |লেখক=শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি |ইউআরএল= |বিন্যাস=মুদ্রণ |এজেন্সি= |সংবাদপত্র=দৈনিক কালের কণ্ঠ |প্রকাশক= |অবস্থান=ঢাকা |আইএসবিএন= |issn= |oclc= |pmid= |pmd= |বিবকোড= |ডিওআই= |আইডি= |তারিখ=জুলাই ৫, ২০১০ |পাতাসমূহ=১৬, ২৪ |at= |সংগ্রহের-তারিখ=জুলাই ৪, ২০১০ }}</ref> এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বনদস্যুরা ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমণ করে বন থেকে গাছ কেটে নিয়ে যায়। এছাড়া অধিক জনসংখ্যার জন্য সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে আবাস গড়ার কারণেও অনেক গাছপালা হারিয়ে যাচ্ছে এই বনাঞ্চল থেকে। পাশাপাশি [[বৈশ্বিক উষ্ণায়ন|জলবায়ু পরিবর্তনের]] ঘোর প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে অনেক গাছ-গাছালি ও জীববৈচিত্র্য। অন্যদিকে বর্তমানে রেলওয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে ট্রেন চলাচলের নির্বিঘ্নতার জন্য লাইনের পাশের ২৫,০০০ গাছ কাটার জন্য । যার ফলে পুরো বন ধ্বংস হয়ে যাবে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সরকারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সরকারের পক্ষ থেকে তাই বনরক্ষী নিয়োগ দেয়া হয়, যারা বনের সার্বিক দেখভাল করে থাকেন। কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে তাদের অবস্থাও নাজুক। প্রায়ই বনদস্যুদের দাপটে তাদের নাজেহাল হবার খবর পাওয়া যায়। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বনদস্যুরা ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমণ করে বন থেকে গাছ কেটে নিয়ে যায়। এছাড়া অধিক জনসংখ্যার জন্য সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে আবাস গড়ার কারণেও অনেক গাছপালা হারিয়ে যাচ্ছে এই বনাঞ্চল থেকে। পাশাপাশি [[বৈশ্বিক উষ্ণায়ন|জলবায়ু পরিবর্তনের]] ঘোর প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে অনেক গাছ-গাছালি ও জীববৈচিত্র্য। অন্যদিকে বর্তমানে রেলওয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে ট্রেন চলাচলের নির্বিঘ্নতার জন্য লাইনের পাশের ২৫,০০০ গাছ কাটার জন্য । যার ফলে পুরো বন ধ্বংস হয়ে যাবে।


==জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে==
==জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে==
=== হলিউডের চলচ্চিত্রের শুটিং ===
=== হলিউডের চলচ্চিত্রের শুটিং ===
[[জুল ভার্ন|জুলভার্নের]] বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে করা '[[অ্যারাউন্ড দি ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ (১৯৫৬-এর চলচ্চিত্র)|অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ]]' ছবিটির একটি দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল এই বনে।<ref name="কালের কণ্ঠ">[http://www.kalerkantho.com/print_edition/?view=details&type=gold&data=Book&pub_no=666&cat_id=3&menu_id=22&news_type_id=1&index=6&archiev=yes&arch_date=09-10-2011 হলিউডি ছবিতে লাউয়াছড়া রেললাইন]।</ref> ১৩টি দেশের ১১৪টি স্থানে চিত্রায়িত হয় ছবিটি। এসব দেশের মধ্যে ছিল [[ইংল্যান্ড]], [[ফ্রান্স]], [[ভারত]], [[বাংলাদেশ]], [[স্পেন]], [[থাইল্যান্ড]] ও [[জাপান]]। আর বাংলাদেশের অংশের শুটিং হয়েছিল সিলেটের লাউয়াছড়া জঙ্গলে। বন ঘেঁষে যে রেলপথ চলে গেছে, ঠিক সেখানেই হয়েছে ছবিটির কিছু দৃশ্যের শুটিং। ছবিটির একটি দৃশ্য ছিল এ রকম ট্রেন ছুটছে। হঠাৎ চালক খেয়াল করলেন, লাইনের সামনে একপাল [[হাতি]] আপনমনে চড়ে বেড়াচ্ছে। ট্রেন থেমে যায়। কামরা থেকে নেমে আসেন নায়ক ডেভিড নিভেন, ব্যাপারটা কী দেখতে। সামনের গ্রামেই তখন হচ্ছিল [[সতীদাহ]]। নায়ক ছুটে গিয়ে মেয়েটিকে বাঁচান। মেয়েটি হলো শার্লি ম্যাক্লেইন। ছবির এই অংশটুকুই চিত্রায়িত হয়েছিল লাউয়াছড়ার রেললাইন এলাকায়।<ref name="KK">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=বনে জঙ্গলে: লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান |লেখক=রিদওয়ান আক্রাম |ইউআরএল= |বিন্যাস=মুদ্রণ |এজেন্সি= |সংবাদপত্র=দৈনিক কালের কণ্ঠ |প্রকাশক= |অবস্থান=ঢাকা |আইএসবিএন= |issn= |oclc= |pmid= |pmd= |বিবকোড= |ডিওআই= |আইডি= |তারিখ=জানুয়ারি ২৫, ২০১০ |পাতা=৯ |সংগ্রহের-তারিখ=এপ্রিল ২২, ২০১০ }}</ref>
[[জুল ভার্ন|জুলভার্নের]] বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে করা '[[অ্যারাউন্ড দি ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ (১৯৫৬-এর চলচ্চিত্র)|অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ]]' ছবিটির একটি দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল এই বনে। ১৩টি দেশের ১১৪টি স্থানে চিত্রায়িত হয় ছবিটি। এসব দেশের মধ্যে ছিল [[ইংল্যান্ড]], [[ফ্রান্স]], [[ভারত]], [[বাংলাদেশ]], [[স্পেন]], [[থাইল্যান্ড]] ও [[জাপান]]। আর বাংলাদেশের অংশের শুটিং হয়েছিল সিলেটের লাউয়াছড়া জঙ্গলে। বন ঘেঁষে যে রেলপথ চলে গেছে, ঠিক সেখানেই হয়েছে ছবিটির কিছু দৃশ্যের শুটিং। ছবিটির একটি দৃশ্য ছিল এ রকম ট্রেন ছুটছে। হঠাৎ চালক খেয়াল করলেন, লাইনের সামনে একপাল [[হাতি]] আপনমনে চড়ে বেড়াচ্ছে। ট্রেন থেমে যায়। কামরা থেকে নেমে আসেন নায়ক ডেভিড নিভেন, ব্যাপারটা কী দেখতে। সামনের গ্রামেই তখন হচ্ছিল [[সতীদাহ]]। নায়ক ছুটে গিয়ে মেয়েটিকে বাঁচান। মেয়েটি হলো [[শার্লি ম্যাকলেইন]]। ছবির এই অংশটুকুই চিত্রায়িত হয়েছিল লাউয়াছড়ার রেললাইন এলাকায়।


== চিত্রশালা ==
== চিত্রশালা ==
<gallery mode="packed">
{{কমন্স বিষয়শ্রেণী|Lawachara National Park}}
{{উইকিভ্রমণ}}
<center>
<gallery>
চিত্র:লাউ ডগা সাপ.jpg|লাউ ডগা সাপ
চিত্র:লাউ ডগা সাপ.jpg|লাউ ডগা সাপ
চিত্র:Copes frog.jpg|ব্যাঙ
চিত্র:Copes frog.jpg|ব্যাঙ
৮৫ নং লাইন: ৮৩ নং লাইন:
চিত্র:Butterfly in Lawachara national park.jpg|প্রজাপতি
চিত্র:Butterfly in Lawachara national park.jpg|প্রজাপতি
চিত্র:Spider in its home.jpg|মাকড়শা
চিত্র:Spider in its home.jpg|মাকড়শা
চিত্র:রেলগাড়ি, বাংলাদেশ রেলওয়ে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে (আলোকচিত্রীঃ প্রত্যয় হাসান).jpg|ট্রেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে
চিত্র:রেলগাড়ি, বাংলাদেশ রেলওয়ে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে (আলোকচিত্রীঃ প্রত্যয় হাসান).jpg| উদ্যানের ভিতর দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে
চিত্র:বানর, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে (আলোকচিত্রীঃ প্রত্যয় হাসান).jpg|বানর
চিত্র:বানর, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে (আলোকচিত্রীঃ প্রত্যয় হাসান).jpg|বানর
চিত্র:সারিবদ্ধ ছত্রাক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে (আলোকচিত্রীঃ প্রত্যয় হাসান).jpg|ছত্রাক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে
চিত্র:সারিবদ্ধ ছত্রাক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে (আলোকচিত্রীঃ প্রত্যয় হাসান).jpg|ছত্রাক
</gallery>
</gallery>
</center>


== তথ্যসূত্র ==
== তথ্যসূত্র ==
৯৫ নং লাইন: ৯২ নং লাইন:


== বহিঃসংযোগ ==
== বহিঃসংযোগ ==
{{কমন্স বিষয়শ্রেণী|Lawachara National Park}}
{{উইকিভ্রমণ|লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান}}
{{উইকিভ্রমণ|লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান}}
{{বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চল}}
{{বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চল}}
১০২ নং লাইন: ১০০ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের জাতীয় উদ্যান]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের জাতীয় উদ্যান]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের সংরক্ষিত এলাকা]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের সংরক্ষিত এলাকা]]
[[বিষয়শ্রেণী:কমলগঞ্জ উপজেলা]]
[[বিষয়শ্রেণী:১৯৯৬-এ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত]]

০২:৪১, ২৬ মার্চ ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
মানচিত্র লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অবস্থান দেখাচ্ছে
বাংলাদেশে অবস্থান
অবস্থানমৌলভীবাজার জেলা, সিলেট বিভাগ, বাংলাদেশ
নিকটবর্তী শহরশ্রীমঙ্গল
স্থানাঙ্ক২৪°১৯′১১″ উত্তর ৯১°৪৭′১″ পূর্ব / ২৪.৩১৯৭২° উত্তর ৯১.৭৮৩৬১° পূর্ব / 24.31972; 91.78361
আয়তন১২৫০ হেক্টর
স্থাপিত১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান এবং অবশিষ্ট চিরহরিৎ বনাঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য নমুনা। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি অন্যতম। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের এ বন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। লাউয়াছড়া উদ্যানে বাংলাদেশ বন বিভাগ কর্তৃক স্থাপিত তথ্য বোর্ড। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এই বনকে 'জাতীয় উদ্যান' হিসেবে ঘোষণা করে। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। উল্লুক ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ

নিরক্ষীয় অঞ্চলের চিরহরিৎ অতিবৃষ্টি অরণ্যের মতো এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সূর্যের আলোর জন্য প্রতিযোগিতা করে এ বনের গাছপালা খুব উঁচু হয়ে থাকে, এবং অনেক ওপরে ডালপালা ছড়িয়ে চাঁদোয়ার মত সৃষ্টি করে। এই অরণ্য এতই ঘন যে মাটিতে সূর্যের আলো পড়েনা বললেই চলে। এটিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অতিবৃষ্টি অরণ্য এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের বিখ্যাত বনগুলোর মধ্যে লাউয়াছড়ার বন অন্যতম। পরিচিতির দিক থেকে সুন্দরবনের পরেই লাউয়াছড়ার বনের অবস্থান। সিলেট বিভাগে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় এ বন অবস্থিত। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে তদানিন্তন ব্রিটিশ সরকার এখানে বৃক্ষায়ন করলে তা-ই বেড়ে আজকের এই বনে পরিণত হয়। শ্রীমঙ্গলকমলগঞ্জ উপজেলার মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২,৭৪০ হেক্টর আয়তনের পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন ছিলো এলাকাটি, সেই সুবাদে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পূর্ববতী নাম পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন। বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতি ভ্রমণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পশ্চিম ভানুগাছ বনের ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে 'জাতীয় উদ্যান' হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

চিরহরিৎ এ বনে নিরক্ষীয় অঞ্চলের বর্ষাবন বা রেইনফরেষ্টের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। একসময় বৃহত্তর সিলেটের সর্বত্রই এ ধরনের বন ছিলো। তবে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চা বাগান সৃষ্টি, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ক্রমে সংকুচিত হতে হতে মাত্র কয়েকটি স্থানে চিরহরিৎ এ বর্ষাবনের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে।

ভূপ্রকৃতি

[সম্পাদনা]

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভূপ্রকৃতি পাহাড়ি মৃত্তিকা গঠিত। উঁচু-নিচু টিলা জুড়ে এ বন বিস্তৃত। বনের মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি এবং প্রচুর পাথর দেখা যায়। বনের মাটিতে পাতা জমে জমে পুরু স্পঞ্জের মতো হয়ে থাকে, জায়গায় জায়গার মাটিই দেখা যায় না। এসব স্থানে জোঁকের উপদ্রপ খুব বেশি। বনের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো পাহাড়ি ছড়া বয়ে চলেছে। এসব ছড়ার কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোতে শুধু বর্ষার সময়ই পানি থাকে। ছড়ার পানি পরিষ্কার টলটলে এবং ঠান্ডা। যেসব ছড়াতে শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকে সেসব ছড়ার কাছে বন্যপ্রাণীর আনাগোনা দেখা যায়।

জীববৈচিত্র্য

[সম্পাদনা]
লাউয়াছড়ার বনে বাঁশ ঝাড় ও বেতের ঝোঁপ

জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। আয়তনে ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। বনে প্রবেশের সাথে সাথেই নানা ধরনের বন্যপ্রাণী, পাখি এবং কীটপতঙ্গের শব্দ শোনা যায়। বনের মধ্যে প্রায় সারাক্ষণই সাইরেনের মত শব্দ হতে থাকে; প্রকৃতপক্ষে এটি এক ধরনের ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়।


এ বনে স্তন্যপায়ী আছে নানা প্রজাতির। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। বনের মধ্যে কিছু সময় কাটালেই উল্লুকের ডাকাডাকি কানে আসবে। উল্লুক ছাড়াও এখানে রয়েছে চশমাপরা হনুমান, লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, বানর, শিয়াল, মেছোবাঘ, রামকুত্তা, এশীয় কালো ভাল্লুক, মায়া হরিণ সহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু। মায়া হরিণ সাধারণত উচ্চতায় ২০‌-২২ ইঞ্চি। এদের বাদামী রঙের দেহ যা পিঠের দিকে ঘিয়ে গাঢ় রং ধারণ করে।

এ বনে সরীসৃপ আছে নানা প্রজাতির। তার ভেতর অজগর হচ্ছে অনন্য। এখানে পাওয়া যায় হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ

উদ্যানের বন্য পাখির মধ্যে সবুজ ঘুঘু, লাল বনমোরগ, তুর্কি বাজ, সাদামাথা সাতভায়লা, ঈগল, হরিয়াল, কালোমাথা টিয়া, কালো-পিঠ চেরালেজি, ধূসরাভ সাত সহেলি, প্যাঁচা, কালো ফিঙে, বাসন্তী লটকনটিয়া, কালো বাজ, লালমাথা টিয়া, কালো-মাথা বুলবুল, পরঘুমা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সাধারণ দর্শনীয় পাখির মধ্যে সবুজ টিয়া, ছোট হরিয়াল, সবুজ বাঁশপাতি, তোতা, পান্না কোকিল, পাঙ্গা, কেশরাজ প্রভৃতির দেখা মিলে।

এছাড়া ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে সিতেশ রঞ্জন দেব তার চিড়িয়াখানা থেকে দুটি লক্ষ্মীপেঁচা ও একটি বন বিড়ালও অবমুক্ত করেন এ বনে।

বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক

[সম্পাদনা]
হনুমান

লাউয়াছড়ার বনেই রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির উল্লুক। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে এ উল্লুক বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। লাউয়াছড়ার বনেও এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। দুই দশক আগে এই বনে কয়েক হাজার উল্লুক দেখা যেতো। কিন্তু বর্তমানে সে সংখ্যা কমতে কমতে একশোরও নিচে এসে ঠেকেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে একসময় হয়তো এই বন থেকে উল্লুক চিরতরে হারিয়ে যাবে। নির্বিচারে বন ধ্বংসের ফলে উল্লুকের বাসস্থান ও খাদ্যসংকট সৃষ্টিই এদের সংখ্যা হ্রাসের প্রধানতম কারণ। লাউয়াছড়ার বনে বর্তমানে মাত্র ৪৯ টি উল্লুক অবশিষ্ট আছে। নিকটবতী ছাউতলি ও কালাছড়ার বন মিলিয়ে এ সংখ্যা ৬০-এর মত। লাউয়াছড়া ও এর আশপাশের বনে মোট ১৬ টি উল্লুক পরিবার রয়েছে। ভোরবেলা লাউয়াছড়ার বনে গেলে অনেক সময় উল্লুকের দেখা পাওয়া যায়। এই বনে উল্লুকের প্রিয় খাদ্য চামকাঁঠাল বা চাপালিশ ফল।

বিলুপ্তপ্রায় হনুমান

[সম্পাদনা]

অতি সম্প্রতি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংগ্রহ তালিকায় যুক্ত হয়েছে একটি হনুমানের বাচ্চা। বাচ্চা হনুমানটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিশামনি গ্রামে মাছের খামারে ঘেরাজালে আটকা পড়া হনুমানটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ট্রাস্টের নির্বাহী প্রধান জনাব আনোয়ারুল ইসলাম শনাক্ত করেন যে, এটি অতিবিপন্ন প্রজাতির 'ফ্যায়র্স লাঙ্গুর'। হনুমানটি প্রথমে সিতেশ রঞ্জন দেবের চিড়িয়াখানায় রাখা হয়। পরে এটিকে সিলেট বন বিভাগের হেফাজতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জনকীছড়ায় রাখা হয়। ধরা পড়াকালীন সময় এর বয়স ছিলো মাত্র তিন মাস।

শকুনের নিরাপদ এলাকা

[সম্পাদনা]

শকুনের নিরাপদ এলাকা-১ তফসিল অনুসারে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।

উদ্ভিদবৈচিত্র্য

[সম্পাদনা]

লাউয়াছড়া বনাঞ্চলে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ। আছে গর্জন, সেগুন, গামারি, মিনজিরি, জামরুল, চাপালিশ, নাগেশ্বর, শিমুল, লোহাকাঠ, জাম, ডুমুর, তুন, শিরিষ প্রভৃতি। নানা প্রকারের দেশীয় গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে নানা ধরনের অর্কিড দেখতে হলেও এ বন এক অপূর্ব স্থান।

নিসর্গ প্রকল্প ও প্রকৃতি ভ্রমণ

[সম্পাদনা]
লাউয়াছড়ায় নিসর্গ প্রকল্পের প্রবেশদ্বার
মাকড়শা

নিসর্গ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য স্থানীয় জনগণ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষগুলোর সাথে বন বিভাগের অংশীদারত্বের সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সুষ্ঠ সংরক্ষণ ও ব্যবস্হাপনা। বর্তমানে ইউএসএআইডি-এর আর্থিক সহযোগীতায় দেশের ১৭টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এই প্রকল্প চালু আছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।

নিসর্গ প্রকল্পের অধীনে লাউয়াছড়া বনের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কাজে স্থানীয় জনগনকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এর ফলে বনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং বনের সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রকৃতি ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট হারে প্রবেশ মূল্য দিয়ে এ বনের ভেতর প্রকৃতি ভ্রমণ করা যায়। প্রকৃতি ভ্রমণের জন্য বনে তিনটি ট্রেইল বা হাঁটা পথ রয়েছে। তিনটি পথের মধ্যে একটি ৩ ঘণ্টার পথ, একটি ১ ঘণ্টার পথ আর অপরটি ৩০ মিনিটের পথ। প্রশিক্ষিত গাইডের সহায়তায় বনের একেবারে ভেতর পর্যন্ত যাওয়া যায়। প্রকৃতিকে বিরক্ত না করে তৈরি করা এ তিনটি পথে চোখে পড়বে নানা প্রজাতির কীটপতঙ্গ, গাছপালা, পাখিঅর্কিড। ভাগ্য ভালো হলে হনুমান, বানর এবং উল্লুকেরও দেখা মিলতে পারে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক প্রতিদিন লাউয়াছড়ায় প্রকৃতি ভ্রমণে আসেন। বছরজুড়েই এই বনে পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও শীতের সময় সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হয়।

আদিবাসী নৃগোষ্ঠী

[সম্পাদনা]

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশেই রয়েছে মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি। খাসিয়ারা বন ও প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে গড়ে তুলেছে তাদের আবাস। তাদের আবাসভূমিগুলো একাধিক টিলা অতিক্রম করে উঠে গেছে ছোট ছোট টিলার উপরে। তাদের প্রধান পেশা পান চাষ।

জীববৈচিত্র্য, উদ্ভিদবৈচিত্র্য ও পরিবেশ বিপর্যয়

[সম্পাদনা]

গ্যাস অনুসন্ধান ও এর ফলে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়

[সম্পাদনা]

পরিবেশবাদী ও সচেতন মহলের ব্যাপক প্রতিবাদসত্ত্বেও ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানী শেভরন লাউয়াছড়া ও এর আশেপাশের বনভূমি এলাকায় ত্রিমাত্রিক অনুসন্ধান শুরু করে। ত্রিমাত্রিক অনুসন্ধানের জন্য বনের অভ্যন্তর ও আশপাশের এলাকায় নির্বিচারে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসময় বন এলাকায় সৃষ্ট ভূকম্পনে বন্যপ্রাণী ও স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, বনের কয়েক জায়গায় আগুন ধরে যায়, বনের আশপাশের বাড়িঘরে ফাটল দেখা দেয়। লাউয়াছড়া বনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অনুসন্ধানের অনুমতি প্রদানের জন্য তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারও দেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এর আগে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে আরেক বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানী অক্সিডেন্টাল পরিচালিত এধরনের একটি অনুসন্ধানের সময় লাউয়াছড়া বনের পাশেই মাগুরছড়ায অনুসন্ধান কুপে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। এ বিস্ফোরণের ফলে কয়েক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পুড়ে যায়। মাগুরছড়ার বন এখনও সেই ক্ষত বহন করছে। মাগুরছড়া বিস্ফোরণে বাংলাদেশ সরকার ওই কোম্পানীর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করলেও তা এখনো অমিমাংসীত পর্যায়ে রয়ে গেছে।

জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য ধ্বংস

[সম্পাদনা]

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সরকারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সরকারের পক্ষ থেকে তাই বনরক্ষী নিয়োগ দেয়া হয়, যারা বনের সার্বিক দেখভাল করে থাকেন। কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে তাদের অবস্থাও নাজুক। প্রায়ই বনদস্যুদের দাপটে তাদের নাজেহাল হবার খবর পাওয়া যায়। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বনদস্যুরা ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমণ করে বন থেকে গাছ কেটে নিয়ে যায়। এছাড়া অধিক জনসংখ্যার জন্য সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে আবাস গড়ার কারণেও অনেক গাছপালা হারিয়ে যাচ্ছে এই বনাঞ্চল থেকে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঘোর প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে অনেক গাছ-গাছালি ও জীববৈচিত্র্য। অন্যদিকে বর্তমানে রেলওয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে ট্রেন চলাচলের নির্বিঘ্নতার জন্য লাইনের পাশের ২৫,০০০ গাছ কাটার জন্য । যার ফলে পুরো বন ধ্বংস হয়ে যাবে।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

[সম্পাদনা]

হলিউডের চলচ্চিত্রের শুটিং

[সম্পাদনা]

জুলভার্নের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে করা 'অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ' ছবিটির একটি দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল এই বনে। ১৩টি দেশের ১১৪টি স্থানে চিত্রায়িত হয় ছবিটি। এসব দেশের মধ্যে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ভারত, বাংলাদেশ, স্পেন, থাইল্যান্ডজাপান। আর বাংলাদেশের অংশের শুটিং হয়েছিল সিলেটের লাউয়াছড়া জঙ্গলে। বন ঘেঁষে যে রেলপথ চলে গেছে, ঠিক সেখানেই হয়েছে ছবিটির কিছু দৃশ্যের শুটিং। ছবিটির একটি দৃশ্য ছিল এ রকম ট্রেন ছুটছে। হঠাৎ চালক খেয়াল করলেন, লাইনের সামনে একপাল হাতি আপনমনে চড়ে বেড়াচ্ছে। ট্রেন থেমে যায়। কামরা থেকে নেমে আসেন নায়ক ডেভিড নিভেন, ব্যাপারটা কী দেখতে। সামনের গ্রামেই তখন হচ্ছিল সতীদাহ। নায়ক ছুটে গিয়ে মেয়েটিকে বাঁচান। মেয়েটি হলো শার্লি ম্যাকলেইন। ছবির এই অংশটুকুই চিত্রায়িত হয়েছিল লাউয়াছড়ার রেললাইন এলাকায়।

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]