বিষয়বস্তুতে চলুন

সরভাজা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
পরিষ্কারকরণ
→‎শীর্ষ: সম্প্রসারণ, সংশোধন
১২ নং লাইন: ১২ নং লাইন:
}}
}}


'''সরভাজা''' হল পশ্চিমবঙ্গের একটি বিখ্যাত মিষ্টি, যা বাংলার মিষ্টিসমূহের মধ্যে অন্যতম। মিষ্টিটির নাম মিষ্টির মূল উপকরণ দুধে সর থেকে এসেছে, এবং ভাজা শব্দটি সরকে ভাজার বিষয়কে নির্দেশিত করে। সরভাজা গরুর দুধ ব্যবহার করা হয় এবং ভাজার জন্য ঘি ব্যবহার করা হয়। অধরচন্দ্র ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণনগরের নেদেরপাড়ায় সরপুরিয়ার দোকান করেন, এবং দোকানটি সরপুরিয়ার ও সরভাজার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে। দুধের সর ও ঘি দিয়ে তৈরি এই মিষ্টির সুনাম সমগ্র বাংলা ছড়িয়ে পড়েছে। হিন্দু রীতি অনুযায়ী, বিজয়া বা অন্যান্য উৎসব উপললক্ষ্যে বাড়ির প্রিয়জনেদের জন্য কৃষ্ণনগরবাসীদের মধ্যে মিষ্টি হিসাবে সরভাজা নিয়ে যাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
'''সরভাজা''' হল পশ্চিমবঙ্গের একটি বিখ্যাত মিষ্টি, যা বাংলার মিষ্টিসমূহের মধ্যে অন্যতম। মিষ্টিটির নাম মিষ্টির মূল উপকরণ দুধে সর থেকে এসেছে, এবং ভাজা শব্দটি সরকে ভাজার বিষয়কে নির্দেশিত করে। সরভাজা গরুর দুধ ব্যবহার করা হয় এবং ভাজার জন্য ঘি ব্যবহার করা হয়। দুধের সর ও ঘি দিয়ে তৈরি এই মিষ্টির সুনাম সমগ্র বাংলা জুড়ে রয়েছে।
মিষ্টিটি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের গোড়ার দিকে জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি লাভ ক্রেও করলেও, এর প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় পঞ্চদশ শতাব্দীর [[চৈতন্যচরিতামৃত]] গ্রন্থে। অধরচন্দ্র ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণনগরের নেদেরপাড়ায় সরপুরিয়ার দোকান করেন, এবং দোকানটি সরপুরিয়ার ও সরভাজার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে। শুরুরতে হিন্দু রীতি অনুযায়ী, বিজয়া বা অন্যান্য উৎসব উপললক্ষ্যে বাড়ির প্রিয়জনেদের জন্য কৃষ্ণনগরবাসীদের মধ্যে মিষ্টি হিসাবে সরভাজা নিয়ে যাওয়ার প্রচলন রয়েছে।


==ইতিহাস==
==ইতিহাস==

০৮:৪০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

সরভাজা
একটি পাত্র ভর্তি সরভাজা
অন্যান্য নামকৃষ্ণনগরের সরভাজা
উৎপত্তিস্থলকৃষ্ণনগর, পশ্চিমবঙ্গ
অঞ্চল বা রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
প্রধান উপকরণদুধের সর, ঘি

সরভাজা হল পশ্চিমবঙ্গের একটি বিখ্যাত মিষ্টি, যা বাংলার মিষ্টিসমূহের মধ্যে অন্যতম। মিষ্টিটির নাম মিষ্টির মূল উপকরণ দুধে সর থেকে এসেছে, এবং ভাজা শব্দটি সরকে ভাজার বিষয়কে নির্দেশিত করে। সরভাজা গরুর দুধ ব্যবহার করা হয় এবং ভাজার জন্য ঘি ব্যবহার করা হয়। দুধের সর ও ঘি দিয়ে তৈরি এই মিষ্টির সুনাম সমগ্র বাংলা জুড়ে রয়েছে।


মিষ্টিটি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের গোড়ার দিকে জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি লাভ ক্রেও করলেও, এর প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় পঞ্চদশ শতাব্দীর চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে। অধরচন্দ্র ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণনগরের নেদেরপাড়ায় সরপুরিয়ার দোকান করেন, এবং দোকানটি সরপুরিয়ার ও সরভাজার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে। শুরুরতে হিন্দু রীতি অনুযায়ী, বিজয়া বা অন্যান্য উৎসব উপললক্ষ্যে বাড়ির প্রিয়জনেদের জন্য কৃষ্ণনগরবাসীদের মধ্যে মিষ্টি হিসাবে সরভাজা নিয়ে যাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

ইতিহাস

কৃষ্ণনগরের সরভাজা

ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে খুব গোপনে সরভাজা তৈরির পাক তৈরি হত। এটাই রীতি। কারণ, মিষ্টি তৈরির এই গোপন পদ্ধতি যেন ফাঁস না হয়ে যায়।[] কিন্তু সে খবর ঠিকই ছড়িয়ে পড়ত শহরে। কথিত রয়েছে, মাছির ঝাঁক তখন ঘিরে ধরত অধরচন্দ্র দাসের বাড়ি। কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত সরপুরিয়া ও সরভাজা তখন তৈরি হচ্ছিল তার সেই ঘরে।

এই মিষ্টি কিন্তু খুব বেশি প্রাচীন নয়। মাত্র একশো বছর আগের কথা। তখনই এই মিষ্টিকে ঘিরে কৃষ্ণনগরের আরও একটি পরিচয় তৈরি হচ্ছিল আস্তে আস্তে। তারপরে সেই মিষ্টি সত্যিই কৃষ্ণনগরের বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। মাটির পুতুল, জগদ্ধাত্রী পুজো, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পরিবারের কথার সঙ্গে সঙ্গে সরপুরিয়া, সরভাজার কথাও ছড়িয়ে পড়ছিল। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সে কথা বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। নানা দোকানেই তৈরি হতে থাকে সরপুরিয়া, সরভাজা। শহরের নেদেরপাড়ায় অধরবাবুর পরিবারের লোকেরাই দু’টি মিষ্টির দোকান করেন। কার হাতের মিষ্টি ভাল, তাই নিয়ে তর্কাতর্কিও ছিল স্বাভাবিক। শহরের আরও কিছু দোকানেও এই মিষ্টি তৈরি করা শুরু হয়ে যায়। সিনেমা, সাহিত্যেও এই মিষ্টি নিজের স্থান করে নেয়।

উপকরণ ও প্রস্তুতি

ঐতিহ্যবাহী সরভাজা সাধারণত দুধ, ঘি, ময়দা, চিনি (গুঁড়ো করা) ও মেওয়া থেকে তৈরি করা হয়। রেসিপির উপর নির্ভর করে, এই উপাদানগুলির মধ্যে কিছু বাদ দেওয়া বা প্রতিস্থাপিত হতে পারে। সরভাজার সর তৈরিতে ব্যবহার করা হয় চিনি, জল, দারচিনি, এলাচ।

সর গরুর বিশুদ্ধ দুধ থেকে ঐতিহ্যগত কৌশলে তৈরি করা হয়, কৃষ্ণনগরের ঘোষেরা (দুগ্ধ পণ্যের ব্যবসায়ী) মূলত দুধ সরবরাহ করে। তাজা দুধ একটি আধা সমতল লোহার কড়াইতে শুকনো ঘুটের জলন্ত শিখা ব্যবহার করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ফুটানো হয়। ফোটানো দুধের উপরিভাগে সমৃদ্ধ সর তৈরির হতে আধা ঘন্টা সময়ের প্রয়োজন হয়, এই প্রক্রিয়া চলাকালে হাতা বা একটি দণ্ড ফুটন্ত দুধের মধ্যে নাড়ানো হয়। শুকনো গোবরের ঘুঁটের স্বল্প তাপ দুধকে ঘনীভূত করে তোলে এবং পৃষ্ঠে দুধের স্নেহ পদার্থ ঘন স্তর জমে; একে সার বলা হয়। সরভাজায় ব্যবহৃত সর সাধারণত ৭ থেকে ৯ ইঞ্চি ব্যাসের হয়। ৯ ইঞ্চি ব্যাসের সার পেতে প্রায় ৪০০ মিলিমিটার দুধ প্রয়োজন হয়। কড়ই থেকে সর সংগ্রহ করে ঠাণ্ডা করার জন্য সুতি কাপড়ের টুকরোর উপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়; ঠাণ্ডা করার জন্য প্রায় ২ থেকে ৩ ঘন্টা সময় প্রয়োজন হয়। সরভাজার জন্য ক্ষীর নামের আর একটি দুগ্ধজাত পণ্য প্রয়োজন হয়, যা দুধকে ফুটিয়ে তৈরির করা হয়। ক্ষীর তৈরির জন্য গরুর তাজা দুধ আধা ঘণ্টা ঘ্রে ধরে ফোটান হয় এবং এবং একটি হাতা দ্বারা অনবরত নাড়াতে হয় যাতে ঘন থকথকে আকারে ক্ষীর নামক ঘন দুধ পাওয়া যায়। দুধ ফুটানোর সময় চিনি যোগ করা হয়।

দুধ থেকে প্রস্তুত সর ও ঘন ক্ষীর পর পর স্তরে জানানো সাজানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় ক্ষীর এক টুকরো সরের উপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সরের আরেকটি স্তর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়, এই ভাবে ৩-৫টি সর ও ক্ষীরের স্তর রাখা হয়। এই স্তরে স্তরে সাজানো সর ও ক্ষীরে বস্তুটি কাঁচা সরভাজা হিসাবে পরিচিত। কাঁচা সরভজাকে ছুরির সাহায্যে চৌক আকারে কয়েক টুকরো করা হয়। কাঁচা সরভাজার টুকরোগুলো ভাজা হয় যতক্ষণ না তা হালকা সোনালি-বাদামী রঙ ধারণ করে, ভাজার জন্য খাঁটি ঘি ব্যবহার করা হয়। ভাজা সম্পন্ন হলে সরভাজার ভাজা টুকরোগুলোকে ঠাণ্ডা করার প্রয়োজন হয়। গরম সরভাজার টুকরোগুলোকে কাঠের থালায় রেখে ঠান্ডা করা হয়।

তদ্যসূত্র

  1. "সরভাজা-সরপুরিয়া 'রেসিপি' জানাতে চায় না কৃষ্ণনগর"। আনন্দবাজার প্রত্রিকা। ১৪ এপ্রিল ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৭  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)