ধর্ম অবমাননা
ধর্ম অবমাননা বা ধর্মনিন্দা বা ব্লাসফেমি হল পরমেশ্বর, পবিত্র জিনিস, কিংবা পবিত্র বা অলঙ্ঘনীয় বিবেচিত এমন কোন কিছুর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা, ঠাট্টা করা বা অশালীন ভাষায় আক্রমণ করা।
উদ্ভব
ধর্ম অবমাননার উদ্ভব হয়েছিল প্রাচীন ও মধ্যযুগে। এখন থেকে এক হাজার ৪৫০ বছর আগে রোমের সামন্ত রাজারা প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী খ্রিষ্টান ক্যাথলিক চার্চের যাজকদের সহায়তায় জনগণের ওপর ধর্মের নামে অত্যাচারের হাতিয়ার হিসেবে ‘ধর্ম অবমাননা’র ব্যবহার শুরু করেছিল। আধুনিক যুগে এসে যখন চার্চ ও রাষ্ট্রকে আলাদা করা হয়, তখন থেকে এ আইনের বিবর্তন ঘটে। বিভিন্ন দেশের আইনে ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও আচরণের জন্য আইন থাকলেও তার আর প্রয়োগ সেভাবে নেই।[১]
ইসলামে ধর্ম অবমাননা
ইসলামি প্রধান ধর্মগ্রন্থ কুরআনের সূরা মায়েদার ৩৩ আয়াতে এবং সূরা আহযাবের ৫৭ থেকে ৬১ নং আয়াতে ধর্ম অবমাননা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে[২][৩][৪]।উদাহরণস্বরূপ,[২]
যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা-সমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। কিন্তু যারা তোমাদের গ্রেফতারের পূর্বে তওবা করে; জেনে রাখ, আল্লাহ ক্ষমাকারী, দয়ালু।
নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় - আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব জীবনে এবং পরকালে অভিশাপ দেন, এবং তাদের জন্য অবমাননাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। যদি এই প্রতারকেরা , আর ঐ সব লোকেরা যাদের অন্তরে কলুষতা আছে, এবং ঐ সকল লোকেরা যারা শহরে মিথ্যা সংবাদ রটিয়ে থাকে তারা, (তাদের এসব কাজ থেকে) বিরত না হয়, তাহলে আমি অবশ্যই আপনাকে তাদের উপর শক্তিশালী করে দেবো: এরপর তারা শহরে আপনার কাছে অতি অল্পকালই অবস্থান করতে পারবে: তারা তাদের নিজেদেরকে অভিশপ্ত অবস্থায় পাবে: যেখানে তাদের পাওয়া যাবে, তাদেরকে আটক করা হবে এবং মারধর করা হবে (নির্দয়ভাবে)।
এছাড়া অনেক আলেম ধর্ম অবমাননা আইনের সমর্থন হিসেবে বেশ কিছু হাদিসের প্রতিও ইঙ্গিত করে থাকেন, যেখানে আল্লাহ, নবীর প্রতি কটুক্তি বা তিরষ্কারমূলক বক্তব্য প্রদান করার অপরাধে ব্যক্তিবিশেষকে দন্ড দেয়া হয়েছিল, এই হাদিসগুলোর মধ্যে কা'ব ইবনে আশরাফ নামক ইহুদি নেতাকে হত্যার নির্দেশ দেয়ার হাদিসটি উল্লেখযোগ্য, যিনি বদর যুদ্ধে নিহত মুসলিম পুরুষদের তিরস্কার করেছিল এবং মুসলিম নারীদের সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করেছিল[৫]। তবে, পাকিস্তানের প্রখ্যাত ইসলামিক পণ্ডিত জাভেদ আহমদ ঘাদামি বলেছেন, ইসলামের কোথাও ধর্ম অবমাননা আইনের সমর্থনে কিছু বলা নেই। [৬] অনেক মুসলিম আইনবিদেরা একে ‘শরিয়ার’ অংশ হিসেবে দেখিয়েছেন।[৭][৮][৯][১০][১১]
তথ্যসূত্র
- ↑ জামায়াতের দাবিই উত্থাপন করল হেফাজত,রাশেদ খান মেনন, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৩-০৪-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ ক খ Siraj Khan, Blasphemy against the Prophet, in Muhammad in History, Thought, and Culture (ed: Coeli Fitzpatrick Ph.D., Adam Hani Walker), আইএসবিএন ৯৭৮-১৬১০৬৯১৭৭২, pp. 59-67
- ↑ See:
- Siraj Khan, Blasphemy against the Prophet, in Muhammad in History, Thought, and Culture (ed: Coeli Fitzpatrick Ph.D., Adam Hani Walker), আইএসবিএন ৯৭৮-১৬১০৬৯১৭৭২, pp. 59-67;
- Hassner, R. E. (2011). Blasphemy and Violence. International Studies Quarterly, 55(1), pages 23-4;
- Lewis, Bernard. "Behind the Rushdie affair." The American Scholar 60.2 (1991), pages 185-196;
- Stanfield-Johnson, R. (2004). The tabarra'iyan and the early Safavids. Iranian Studies, 37(1), pages 47-71
- ↑ Talal Asad, in Hent de Vries (Ed.), Religion: Beyond a Concept, Fordham University Press (2008), আইএসবিএন ৯৭৮-০৮২৩২২৭২৪২; pages 589-592
- ↑ সহীহ বুখারী, ৪:৫২:২৭০ (ইংরেজি) সহীহ বুখারী, ৫:৫৯:৩৬৯ (ইংরেজি), সহীহ মুসলিম, ১৯:৪৪৩৬ (ইংরেজি) সহীহ বুখারী, ৩:৪৫:৬৮৭ (ইংরেজি) সহীহ বুখারী, ৪:৫২:২৭১ (ইংরেজি)
- ↑ Islamic scholar attacks Pakistan's blasphemy laws Guardian 20 January 2010. Retrieved 23 January 2010
- ↑ "Ruling for blassphemy in Islam: Zakir Naik"। Islamic Voice। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ Association of Islamic Charitable Projects, The Types of Blasphemy (2010)
- ↑ Lawton, D. (1993). Blasphemy. Univ of Pennsylvania Press
- ↑ CW Ernst, in Eliade (Ed), Blasphemy - Islamic Concept, The encyclopedia of religion, New York (1987)
- ↑ Marshall and Shea (2011), Silenced, Oxford University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৯৮১২২৮৮