ব্যবহারকারী:সুমিত রায়/খেলাঘর
গুরুচণ্ডা৯
গুরুচণ্ডা৯ একটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান/সামাজিক সংগঠন/প্রকাশন সংস্থা (কী লেখা হবে?) যেখান থেকে একই নামে একটি বাংলা ওয়েব পোর্টাল চালানো হয়ে, এবং মাসিক পত্রিকা, সাময়িকী, ও চটি বই প্রকাশ করা হয়। এছাড়া সংগঠনটির একটি ফেইসবুক গ্রুপ এবং ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। ২০০৪ সালে "গুরুচণ্ডা৯" নামে একটি অনলাইন ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়।[১] "গুরুচণ্ডা৯" নামটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয় "নেটের গুরুচণ্ডালি এমন এক ভার্চুয়াল স্পেস, যেখানে এক ঘাটে জল খায় তাবৎ গুরু ও চণ্ডাল।"[২]
অনলাইন ওয়েবপোর্টাল
গুরুচণ্ডা৯র অনলাইন ওয়েবপোর্টাল এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে। এর "আমাদের কথা" অংশে একে "অনলাইন ওয়ান স্টপ শপ" হিসেবে বর্ণনা করা হয়।[৩] গুরুচণ্ডা৯ এর ওয়েব পোর্টালে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে, যেমন -
বুলবুলভাজা
গুরুচণ্ডা৯র ওয়েবসাইট থেকে প্রতি সপ্তাহে এক গুচ্ছ করে লেখা প্রকাশ করা হয়, একে বুলবুলভাজা বলা হয়।[২]
হরিদাস পালেরা
একে একটি ব্লগ বলা যায়। এখানে যে কেউ বিভিন্ন বিষয়ে লেখা দিতে পারেন। এর জন্য ফেইসবুক বা গুগল থেকেই রেজিস্ট্রেশন করা যায়।[৪] এর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, "এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা।পড়তে থাকুন রোজরোজ। প্রবেশ করে দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়।"[৫]
টইপত্তর
এটাকে একটি অনলাইন ফোরাম বলা যায়, যেখানে রেজিস্ট্রেশন না করেই বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার জন্য বিষয় বা "টই" খোলা যায়, এবং আলোচনা শুরু করা যায়। আলোচনা করার জন্যও রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন হয়না, কেউ যে কোন নাম ব্যাবহার করেই আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। এছাড়া কোন ব্লগে মন্তব্য এলেও তা এখানে চলে আসে।[৬]
ভাটিয়া৯
এটি গুরুচণ্ডা৯ এর চ্যাটরুম। এখানেও ব্যক্তি নিজের যেকোন নাম ব্যাবহার করেই আড্ডায় অংশ নিতে পারেন।[৭]
বইপত্তর
এই পাতায় গুরুচণ্ডা৯ থেকে প্রকাশিত কিছু চটি বই এর ই-সংস্করণ রয়েছে।[৮]
গুরুর বই
এই পাতায়, গুরুচণ্ডা৯ থেকে ইতিমধ্যে প্রকাশিত চটি বইসমূহের মুখবন্ধ সমেত তালিকা দেয়া রয়েছে, এবং তা সন হিসেবে সাজানো রয়েছে।[৯]
পুজো ইস্পেশাল
প্রতি বছর দুর্গা পূজা উপলক্ষে এই পাতায় বিভিন্ন লেখা সংগ্রহ করা হয়।[১০]
মাসিক পত্রিকা ও সাময়িকী
গুরুচণ্ডা৯ থেকে ছাপা একটি মাসিক পত্রিকা আছে। পত্রিকাটি "গুরুচণ্ডা৯" নামে প্রকাশিত হয়। তবে এটি "কাগুজে গুরু" নামেও পরিচিত। এখানে গুরুচণ্ডা৯ এর অনলাইন পোর্টালের বুলবুলভাজা অংশের লেখা, ভাটিয়া৯ অংশের আড্ডা, লেখক ও পাঠকের কথপোকথন সহ বিভিন্ন বিষয় প্রকাশিত হয়।[২] এছাড়া গুরুচণ্ডা৯ এর একটি সাময়িকী রয়েছে, যা অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়।[২] এই সময় নামে একটি সংবাদপত্রে প্যাঁচালি নামে গুরুচণ্ডা৯ এর একটি নিজস্ব পাতা প্রকাশিত হয়। সেই সংখ্যাগুলো গুরুচণ্ডা৯র ওয়েবসাইট এর প্যাঁচা৯ অংশে দেয়া রয়েছে।[১১]
ইউটিউব চ্যানেল ও ফেইসবুক গ্রুপ
গুরুচণ্ডা৯র Late 66A নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। এখানে বিভিন্ন স্যাটায়ার ও প্যারোডি সংক্রান্ত ভিডিও আপলোড দেয়া হয়। চ্যানেলটিতে বর্তমানে ৮,০০০ এর ঊর্ধ্বে গ্রাহক রয়েছে।[১১] গুরুচণ্ডা৯র একই নামে ফেইসবুকে একটি গ্রুপ আছে। প্রায় ৪৮ হাজার সদস্যের এই গ্রুপটিতে প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।[১২]
গুরুচণ্ডা৯র চটি বই
গুরুচণ্ডা৯ এর যাত্রা ২০০৪ সালে শুরু হলেও তাদের প্রথম চটি বই বের হয় ২০১০ সালে। "বড় বড় বইয়ের ঘ্যামা ঘ্যামা বযাপার, যেমন গড়ন যেমনই দাম। গুরুচণ্ডা৯ নিয়ে এসেছে চটি বই, যা একাধারে সস্তা ও পুষ্টিকর" স্লোগান দিয়ে তারা তাদের চটি বই এর যাত্রা শুরু করে। কোন রকম বিজ্ঞাপন ছাড়াই বইগুলো প্রকাশিত হয়। প্রথম দিকের কিছু বই এর চার-পাঁচটি সংস্করন বের হয়েছে। বইমেলায় কিছু বই এর হাজার খানেক কপি বিক্রি হয়।[১] গুরুচণ্ডা৯ থেকে এপর্যন্ত প্রকাশিত মোট চটি বই এর সংখ্যা ৫৪টি (আমার এস্টিমেশন, আসল সংখ্যা কত?), এগুলোর মধ্যে কয়েকটির অনলাইন সংস্করন রয়েছে।[৯] চটি বই বের করার মাধ্যমে তাদের আপাতত উদ্দেশ্য বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া, তবে তাদের দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি বিকল্প গণমাধ্যম তৈরি করা।[১৩] তাই গুরুচণ্ডা৯র চটি বই প্রকাশ হচ্ছে তাদের একটি সামাজিক কার্যক্রম ও আন্দোলন। তাদের এই আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছে ১৫১৭ সালে প্রকাশিত মার্টিন লুথারের লেখা পুস্তিকা ৯৫ থিসিজের আনা বিপ্লব, ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত মার্ক্স এর কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার, ১৮৫৭ সালে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সংস্কৃত প্রেস থেকে প্রকাশিত চটি বই বর্ণপরিচয়, চটির মাধ্যমে সিপাহী বিদ্রোহের খবর সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়া, ১৯৩০ এর দশকে রাশিয়া থেকে প্রকাশিত সামিজ্যাট, ১৯৫০-৬০ এর দশকে চলচ্চিত্র শিল্পের নতুন আন্দোলন - ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ ইত্যাদি।[১]
"রোববার" নামক একটি পুস্তিকার .... তারিখের .... সংখ্যায় গুরুচণ্ডা৯ এর চটি বই নিয়ে বাংলা ভাষার উত্তর-জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় কবি জয় গোস্বামীর একটি লেখা প্রকাশ করা হয়। সেখানে তিনি গুরুচণ্ডা৯ থেকে প্রকাশিত চটি বইগুলোর মধ্যে রোশনারা মিশ্র ও চিরঞ্জিৎ সামন্ত এর গ্রাফিক কবিতার বই সিমোন দ্য নেলসন, অজিত রায় এর লেখা বাংলা স্ল্যাং, সমুচয় ঠিকুজিকুষ্ঠি, শাক্যজিত ভট্টাচার্যের লেখা কুরবানি অথবা কার্নিভাল ও অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত, দেবাশিস সেনগুপ্ত, প্রবাল চৌধুরী, পরমেশ গোস্বামী এর লেখা আদালত-মিডিয়া-সমাজ এবং ধনঞ্জয়ের ফাঁসি, অদ্রীশ বিশ্বাস এর লেখা মিছিলে বাদল সরকার, অন্য যৌনতা সংকলন, কুলদা রায় এর কাঠপাতার ঘর, দীপ্তেন এর আমার সত্তর এবং সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় এর হাম্বা নামক চটি সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, "গুরুচণ্ডা৯ নামক প্রকাশন সংস্থা সত্যিই অন্য ধরণের কাজ শুরু করেছে।... গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশনের জন্য অনেক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা রইল পাঠক হিসাবে।"[১৪]
সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত ও বিখ্যাত সাহিত্যিক অমর মিত্র সাপ্তাহিক বর্তমানের ১ অগাস্ট, ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত ..... সংখ্যায় 'এ সপ্তাহের বই' অংশে ইন্দ্রাণীর লেখা গুরুচণ্ডা৯ থেকে প্রকাশিত চটি বই "পাড়াতুতো চাঁদ" নিয়ে রিভিউ লেখেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, "... আসলে জীবনকে চেনেন এই লেখক, জীবনের নানা আলো-ছায়া অনুভব করতে পারেন।... আমি এঁর গল্পের জন্য অপেক্ষা করব।"[১৫]
গুরুচণ্ডা৯ এর চটি বইসমূহের তালিকা
এখানে গুরুচণ্ডা৯ থেকে প্রকাশিত চটি বইগুলোর তালিকা এগুলোর প্রকাশিত হবার সনের ভিত্তিতে উল্লেখ করা হল:[৯]
- কুরবানি অথবা কার্নিভাল - শাক্যজিত ভট্টাচার্য (কোন সালের?)
- পাড়াতুতো চাঁদ - ইন্দ্রাণী (কোন সালের?)
২০১৮ (১০টি)
- আগুনপাহাড় - পিনাকী ঠাকুর
- সিমোন দ্য নেলসন - রোশনারা মিশ্র ও চিরঞ্জিৎ সামন্ত
- দিনগুলি, রাতগুলি - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
- তক্কোগুলি, চরিতাবলী ও আখ্যানসমূহ – কল্লোল
- কাশ্মীর, রাজনৈতিক অস্থিরতা, গণতন্ত্র ও জনমত – মিঠুন ভৌমিক
- গোরা নকশাল – কল্লোল লাহিড়ি
- সর্ষেদানায়, ইচ্ছেডানায়ঃ অচল সিকির মোটরসাইকেল ডায়েরি – অচল সিকি
- স্বাস্থ্য (অ)ব্যবস্থা – সম্পাদনাঃ পুণ্যব্রত গুণ
- সবার জন্য স্বাস্থ্য-একটি স্বপ্ন যা সত্যি করা যায় – সম্পাদনাঃ পুণ্যব্রত গুণ
- বাংলা স্ল্যাং, সমুচয় ঠিকুজিকুষ্ঠি – অজিত রায়
২০১৭ (৮টি)
- নির্বাচিত গল্পপাঠ – অপার বাংলার গল্পসংকলন, গল্পকারদের গল্পকথা(প্রথম, দ্বিতীয় খণ্ড)
- এক ব্যাগ ৯০ – ১৯ টি কবিতার বই
- বস্টনে বংগে – বর্ন ফ্রি
- কামান বেবি – বিপুল দাস
- অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত – শাক্যজিত ভট্টাচার্য
- আদালত-মিডিয়া-সমাজ এবং ধনঞ্জয়ের ফাঁসি – দেবাশিস সেনগুপ্ত, প্রবাল চৌধুরী, পরমেশ গোস্বামী
- ন্যানোপুরাণ – সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
২০১৬ (৪টি)
- ওই মণিময়, তার কাহিনি – রবিশংকর বল
- অ(ন)ন্য মহীন (১) – সংকলন
- আশালতা – অমর মিত্র
- মহেঞ্জোদারো – সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
২০১৫ (৪টি)
- অবান্তর পাঠশালা – অনুবাদ: জয়া মিত্র
- নখদন্ত – মলয় রায়চৌধুরী
- মিছিলে বাদল সরকার – অদ্রীশ বিশ্বাস
- অপ্রকাশিত মরিচঝাঁপি – সম্পাদনা: তুষার ভট্টাচার্য
২০১৪ (৯টি)
- অসুখ সারান – ঈপ্সিতা পালভৌমিক
- অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা – মলয় রায়চৌধুরি
- খেরোবাসনা – সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
- অন্য যৌনতা – সংকলন
- প্রসঙ্গ ধর্ষণ – সংকলন
- বাংলা কাব্যগীতির অন্য ধারা – সংকলন
- আমার কারাবাস শাহবাগ এবং অন্যান্য – আসিফ মহিউদ্দীন
- বর্ণসংকর – বিপুল দাস
- বঙ্গমঙ্গল – প্রকল্প ভট্টাচার্য
২০১৩ (৭টি)
- অলৌকিক প্রেম ও নৃশংস হত্যার রহস্যোপন্যাস – মলয় রায়চৌধুরী
- অন্য মহীন অন্য ধারার গান – তাপস দাস (বাপি), কল্লোল, রঞ্জনপ্রসাদ
- খান্ডবদাহন – সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
- কাঠপাতার ঘর – কুলদা রায়
- পেলেকার লুঙ্গী – আনোয়ার শাহাদাত
- মহাভারত – শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ
- কোনো এক – শ্রাবণী
২০১২ (৩টি)
- কারাগার বধ্যভূমি ও স্মৃতিকথকতা – কল্লোল
- আমার উন্মন বাদ্যকর – ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
- শিন্টু ধর্মাবলম্বী রাজা সবুজ ভদ্রমহিলা এবং একজন অভদ্র সামুকামী – আবু মুস্তাফিজ
২০১১ (৪টি)
- আমার যৌনতা – সংকলন
- বন্দরের সান্ধ্যভাষা – সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
- লা জবাব দিল্লি – শমীক মুখোপাধ্যায়
- ঘেন্না পিত্তি – সোমনাথ রায়
২০১০ (৩টি)
- হাম্বা – সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় (জ)
- আমার সত্তর – দীপ্তেন
- আলোচাল – সুমন মান্না
তথ্যসূত্র
১। কী ছাপি, কেন ছাপি (লিংক লাগবে)
২। কী কেন ইত্যাদি, লিংক - https://www.guruchandali.com/amaderkatha/2013/01/21/1358747520000.html
৩। আমাদের কথা ১, লিংক - https://www.guruchandali.com/amaderkatha/2004/04/11/1081701360000.html
৪। হরিদাস পালেরা, লিংক - https://www.guruchandali.com/blog/
৫। প্রথম পাতা, লিংক - https://www.guruchandali.com/
৬। টইপত্তর, লিংক - https://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?portletId=8&porletPage=1
৭। ভাটিয়া৯, লিংক - https://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?portletId=4&porletPage=1
৮। বইপত্তর, লিংক - https://www.guruchandali.com/amaderkatha/2004/04/16/1082079540000.html
৯। গুরুর বই, বইমেলা: গুরুর গাইড, লিংক - https://www.guruchandali.com/amaderkatha/2013/01/21/1358784060000.html
১০। পুজো ইস্পেশাল, লিংক - https://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?portletId=21&porletPage=1
১১। প্যাঁচা৯, লিংক - https://www.guruchandali.com/amaderkatha/2012/11/12/1352670540000.html
১২। ফেইসবুক গ্রুপ, লিংক - https://www.facebook.com/groups/guruchandali/
১৩। গুরুর গাইড, পিডিএফ ভারশন (এটার উপরের ভূমিকা অংশ যেটা "গুরুর বই" এর লেখাটিতে নেই)
১৪। "রোববার" নামক একটি পুস্তিকার .... তারিখের .... সংখ্যা
১৫। সাপ্তাহিক বর্তমানের ১ অগাস্ট, ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত ..... সংখ্যায় 'এ সপ্তাহের বই' অংশ
অদ্বৈত অবস্থান বা সিংগুলারিটি
ভূমিকা
অদ্বৈত অবস্থান বা সিংগুলারিটি এর সম্পূর্ণ নাম হচ্ছে মহাকর্ষীয় অদ্বৈত অবস্থান বা গ্র্যাভিটেশনাল সিংগুলারিটি (Gravitational singularity)। আবার একে স্থানকাল অদ্বৈত অবস্থান বা স্পেইস-টাইম সিংগুলারিটিও বলে। দুটো ক্ষেত্রে গাণিতিকভাবে এই অদ্বৈত অবস্থান পাওয়া যায়। এক হচ্ছে, ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের মাঝে। আর এক হল মহাবিশ্বের সূচনাসময়ে, যাকে বলা হয় প্রাথমিক অদ্বৈত অবস্থান বা ইনিশিয়াল সিংগুলারিটি। দুটো ক্ষেত্রেই এই সিংগুলারিটির অস্তিত্ব পাওয়া যায় আইনস্টাইন এর সাধারণ আপেক্ষিকতার নিয়ম অনুসরণ করে।
সাধারণ আপেক্ষিকতা ও কোয়ান্টাম মহাকর্ষ নিয়ে সামান্য কিছু কথা
এক্ষেত্রে সাধারণ আপেক্ষিকতা নিয়ে কিছু বলা দরকার। সাধারণ আপেক্ষিকতা বা জেনারেল রিলেটিভিটি হচ্ছে মহাকর্ষের একটি তত্ত্ব। ১৯০৭ থেকে ১৯১৫ সালের মধ্যে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এটি প্রবর্তন করেন। এই তত্ত্বে বলা হয়েছে, দুই বা ততোধিক ভরের মধ্যে পর্যবেক্ষণকৃত মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বলের কারণ হল, তারা নিজেদের ভরের মাধ্যমে আশেপাশের স্থান-কালকে বাঁকিয়ে দেয়। ব্যাপারটি অনেকটা টানটান করে বেঁধে রাখা একটি চাদরের মাঝখানে একটি বেশ ভারী পাথর রেখে দেয়ার মত। পাথর রাখার কারণে চাদরের কেন্দ্রভাগে একটি বক্রতার সৃষ্টি হয়। এখন চাদরের উপর অপেক্ষাকৃত কম ভরের আরেকটি পাথর রাখলে তা কেন্দ্রের দিকে ঝুঁকে পড়বে বা পড়ে যেতে চাইবে। দেখা যাচ্ছে বেশী ভরের পাথরের মাধ্যমে সৃষ্ট বক্রতার কারণে কম ভরের পাথরটি তার দিকে টান অনুভব করছে। মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে এই চাদরটিই হল স্থান-কালের জালিকা। একটি বস্তুর কারণে এই জালিকায় সৃষ্ট বক্রতাই মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বলের কারণ। আইজাক নিউটন মহাকর্ষ বলকে বস্তুসমূহের মধ্যে একটি আকর্ষণ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু আইনস্টাইনের এই বক্তব্য ছিল আরও সঠিক। তাছাড়া এটি মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মত আকর্ষণীয় ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী করে।
সাধারণ আপেক্ষিকতা বেশ কিছু ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী যেগুলো নিউটনের সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়না। যেমন, বুধসহ অন্যান্য গ্রহের কক্ষপথের মিনিট ব্যত্যয়। তাছাড়া এটি আলো বাঁকিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া এবং সময় ধীরকরণসহ এ ধরণের অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হয়েছিল যা পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে। সাধারণ আপেক্ষিকতা মহাকর্ষের একমাত্র আপেক্ষিকতাভিত্তিক সূত্র না হলেও এটিই সরলতম এবং পর্যবেক্ষণের সাথে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অবশ্য কয়েকটি প্রশ্ন থেকেই যায়। সবচেয়ে গুরুত্র প্রশ্নটি হচ্ছে, কিভাবে সাধারণ আপেক্ষিকতাকে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের সাথে একত্রিত করে কোয়ান্টাম মহাকর্ষের একটি সম্পূর্ণ স্বতঃপ্রবৃত্ত সূত্র নির্ণয় করা যায়।
কোয়ান্টাম মহাকর্ষ বা কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি হচ্ছে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান এবং সাধারণ আপেক্ষিকতাকে একত্রিত করার চেষ্টা করা হয়। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান প্রকৃতির তিনটি মৌলিক বলকেই ব্যাখ্যা করতে পারে এবং সাধারণ আপেক্ষিকতা প্রকৃতির চতুর্থ মৌলিক বল তথা মহাকর্ষ বলকে ব্যাখ্যা করে। সাধারণ আপেক্ষিকতা হল সুবিশাল স্কেলে মহাবিশ্বের পদ্ধতিসমূহ ব্যাখ্যা করার জন্য এবং কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান হল অতিপারমানবিক পর্যায়ের ব্যাখ্যার জন্য। এখনও একটি দিয়ে অন্যটি ব্যাখ্যা করা যায়নি। এ দুটিকে একত্রিত করতে পারলে প্রকৃতির চারটি মৌলিক মিথস্ক্রিয়াকে একটিমাত্র কাঠামোতে ব্যাখ্যা করার উপযগী তত্ত্ব প্রদান সম্ভব হতে পারে। সেই তত্ত্বকে বলা হবে সবকিছুর তত্ত্ব বা থিওরি অফ এভরিথিং। কিন্তু এখনও কোয়ান্টাম মহাকর্ষের ধারণাটি অধরাই রয়ে গেছে। আর তাই অদ্বৈত অবস্থান বা সিংগুলারিটির ধারণাও সাধারণ আপেক্ষিকতা সর্বস্বই রয়ে গেছে, সেখানে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অবদান নেই। কিন্তু সিংগুলারিটির মত খুব ক্ষুদ্র স্থানের ধারণা যখন আসছে তখন ক্ষুদ্র স্থানের জন্য কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারটাও আসছে, আর তাই প্রশ্নও উঠেছে যে কেবল সাধারণ আপেক্ষিকতা নির্ভর এই সিংগুলারিটির ধারণা আদৌ সত্য হচ্ছে কিনা। এই প্রশ্নের থেকেই সিংগুলারিটির ধারণাটি থেকে সরে গিয়ে এসেছে স্ট্রিং তত্ত্ব, এম তত্ত্ব, লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি এর মত ধারণাগুলো। সেগুলো নিয়েও আলোচনা করা হবে কিন্তু আপাতত কেবলই সাধারণ আপেক্ষিকতা নির্ভর সিংগুলারিটি বা অদ্বৈত অবস্থানের ধারণাতেই মনোনিবেশ করা যাক।
বৈশিষ্ট্য
গ্র্যাভিটেশনাল সিংগুলারিটি বলতে স্থানকাল এর এমন একটি অবস্থান বোঝায় যেখানে সাধারণ আপেক্ষিকতার নিয়ম অনুযায়ী গাণিতিকভাবে মহাকর্ষের মান অসীম হয়ে যায়, এবং এটি এমনভাবে এটা হয় যে সেই অবস্থানের মহাকর্ষ আর স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে না। মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের শক্তি পরিমাপ করার জন্য স্থানকালের নির্দিক স্থিররাশি বক্রতাগুলিকে বা স্কেলার ইনভেরিয়েন্ট কার্ভেচারগুলোকে ব্যবহার করা হয়। এই বিশেষ স্কেলার রাসিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পদার্থের ঘনত্বের পরিমাপও। সহজভাবে বললে, পদার্থের ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে মহাকর্ষের পরিমাণ বের করা যায়, এবং স্থানকালের কোন অবস্থানে ঘনত্বের মত এই স্কেলার রাশিগুলোর মান যদি অসীম হয় তাহলে বোঝা যায় যে, সেই অবস্থানটি হল সিংগুলারিটি। গাণিতিকভাবে সিংগুলারিটির ক্ষেত্রে ঘনত্বের পরিমাণ অসীম হয়ে যাচ্ছে, আর তাই আমরা স্থানকালের ক্ষেত্রে যে স্বাভাবিক পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোকে কাজ করতে দেখি, এক্ষেত্রে সেগুলো আর কাজ করে না।[১][২]
মহাকর্ষীয় অদ্বৈত অবস্থানকে সাধারণ আপেক্ষিকতার আলোচনায় বিবেচনা করা হয় যেখানে কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রে বা সময়ের পেছন দিকে যেতে থাকলে মহাবিশ্বের শুরুতে আপাতভাবে ঘনত্ব অসীম হয়ে যায়। জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা ও মহাবিশ্বতত্ত্বের আলোচনায় মহাবিষ্ফোরণের সময়কার সর্বপ্রথম দশা হিসেবে সেই মহাকর্ষীয় অদ্বৈত অবস্থানকে বিবেচনা করা হয় যা প্রাথমিক অদ্বৈত বিন্দু নামে পরিচিত। এরকম অদ্বৈত অবস্থানকে গণনা করে পাওয়া যায় বলেই যে এর অস্তিত্ব আসলেই আছে বা ছিল (যেমন মহাবিষ্ফোরণের শুরুতে) তা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীগণ একমত হতে পারেন নি। এরকম চরম ঘনত্বে কী হবে তা ব্যাখ্যা করার জন্য বর্তমান জ্ঞান যথেষ্ট নয় এটাও অনেকে বলে থাকেন।
সাধারণ আপেক্ষিকতা ভবিষ্যদ্বাণী করে যে কোনও বস্তু একটি নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলে (যেমন কোন নক্ষত্র শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধ অতিক্রম করলে) তা কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হবে, আর তার অভ্যন্তরে মহাকর্ষীয় অদ্বৈত অবস্থান (একটি ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্ত দ্বারা আবৃত) তৈরি হবে।[৩] পেনরোজ-হকিংয়ের অদ্বৈত অবস্থান তত্ত্বগুলি একটি অদ্বৈত অবস্থানকে সংজ্ঞায়িত করে যার জিওডেসিকগুলোকে মসৃণ পদ্ধতিতে বর্ধিত করা যায় না।[৪] এরকম জিওডেসিকের সমাপ্তিকে অদ্বৈত অবস্থান বলে মনে করা হয়। জিওডেসিক হচ্ছে ডিফারেনশিয়াল জিওমেট্রি বা ব্যাবকলনীয় জ্যামিতি অনুযায়ী দুটি বিন্দুর মধ্যে সবচেয়ে ছোট পথ। এখন আমরা সাধারণ জ্যামিতির ধারণা থেকে জানি যে দুটো বিন্দুর মধ্যে ক্ষুদ্রতম পথ অবশ্যই সরলরেখা হবে। কিন্তু স্থানের সাথে যখন কাল মিলে স্থানকাল এর মাত্রা তৈরি করে, আর সাধারণ আপেক্ষিকতার নিয়ম অনুযায়ী এই স্থানকাল যখন আবার ভারি বস্তুর কারণে বেঁকেও যায়, তখন ক্ষুদ্রতম পথ আর সাধারণ ধারণার মত সরলপথ হবে তা বলা যায় না, সেটাকে তখন জিওডেসিক বলেই ডাকা হয়। কল্পনা করার জন্য ভাবতে পারেন, বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনি যদি সরলপথে যেতেও চান তখনও আপনি আসলে বক্রপথেই যাবেন, কারণ পৃথিবীর উপরিতলটাই তো গোলাকার।
মহাবিষ্ফোরণের শুরুতে মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থাকেও আধুনিক তত্ত্বগুলো অদ্বৈত অবস্থান হিসেবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।[৫] এই ক্ষেত্রে মহাবিশ্ব মহাকর্ষীয় পতনের ফলে একটি কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয় নি। কারণ মহাকর্ষীয় পতনের জন্য বর্তমানে পরিচিত গণনা এবং ঘনত্বের সীমাগুলো সাধারণত তুলনামূলকভাবে স্থির আকারের বস্তু (যেমন নক্ষত্র) উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়, মহাবিষ্ফোরণের মত দ্রুত বর্ধনশীল স্থানের ক্ষেত্রে এগুলোকে একই ভাবে প্রযুক্ত নাও হতে পারে। সাধারণ আপেক্ষিকতা বা কোয়ান্টাম বলবিদ্যা কোনটাই বর্তমানে মহাবিষ্ফোরণের শুরুর মুহূর্তগুলোকে বর্ণনা করতে পারে না।[৬] তবে সাধারণভাবে, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা কণাগুলোকে তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে কম স্থান অধিকার করার অনুমতি দেয়না।[৭]
কখন অদ্বৈত অবস্থান পাওয়া যাবে না?
পদার্থবিদ্যার অনেক তত্ত্বে কোনও না কোনও ধরনের গাণিতিক অদ্বৈত অবস্থান রয়েছে। এই তত্ত্বগুলোর সমীকরণগুলো থেকে এই পূর্বাভাস আসে যে, কিছু পরিমাণ ভর অসীম হয়ে যায় বা সীমা ছাড়াই বৃদ্ধি পায়। সাধারণভাবে এটি সেই তত্ত্বগুলোতে কোন কিছু অনুপস্থিত থাকার চিহ্ন, যেমন অতিবেগুনী বিপর্যয়, পুনঃস্বাভাবিকীকরণ, এবং লারমরের সূত্র দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা হাইড্রোজেনের অস্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তারমানে এই নয় যে সেগুলো আসলেই অদ্বৈত অবস্থান, স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা পরিবর্তন করলে এরকম অসীম মানই সসীম হয়ে যায়, তখন বোঝা যায় যে এগুলো অদ্বৈত অবস্থান বা সিংগুলারিটি নয়।
কিছু তত্ত্ব, যেমন লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি তত্ত্ব নির্দেশ করে যে অদ্বৈত অবস্থানের অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে।[৮] কিছু ধ্রুপদী ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি যেমন আইনস্টাইন-ম্যাক্সওয়েল-ডিরাক সমীকরণের ক্ষেত্রেও এটি সত্য। এই ধারণাটিকে কোয়ান্টাম মহাকর্ষের প্রভাবের আকারে বর্ণনা করা যায়। কোয়ান্টাম মহাকর্ষের ধারণা অনুসারে একটি সর্বনিম্ন দূরত্বের ব্যাপার আছে এখানে। ভরগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব এই সর্বনিম্ন দূরত্বের চেয়ে কমলেও মহাকর্ষ আর বৃদ্ধি পাবে না। সাধারনভাবে মহাকর্ষের তত্ত্ব অনুসারে দুটি বস্তুর মধ্যে দূরত্ব যত কমবে মহাকর্ষ বল তত বেশি বাড়তে থাকবে, সেখানে এই সর্বনিম্ন দূরত্বের কিছু নেই। কিন্তু কোয়ান্টাম মহাকর্ষের ধারণা একটি সর্বনিম্ন দূরত্ব এখানে এনে মহাকর্ষকে আর বাড়াতে দিচ্ছে না, তাই এক্ষেত্রে মহাকর্ষ আর অসীম হয়ে সিংগুলারিটিও তৈরি করছে না। কাজেই সাধারণ আপেক্ষিকতার মহাকর্ষের সাথে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা মিলে কোয়ান্টাম মহাকর্ষের ধারণা তৈরি করা হলেই আর অদ্বৈত অবস্থান বা সিংগুলারিটি পাওয়া যায় না, বরং অন্য কিছু পাওয়া যায়। কেন একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের চেয়ে কম দূরত্বের ক্ষেত্রে মহাকর্ষ আর বৃদ্ধি পাবে না, এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে, একে অপরের মধ্যে প্রবেশ করা কণা তরঙ্গগুলো মহাকর্ষীয় প্রভাবকে ঢেকে দেয় যার ফলে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের চেয়ে কম দূরত্বে মহাকর্ষীয় প্রভাব কাজ করে না।
প্রাথমিক অদ্বৈত অবস্থান বা মহাবিষ্ফোরণের সূচনা সময়ের অদ্বৈত অবস্থান
প্রাথমিক অদ্বৈত অবস্থান বা ইনিশিয়াল সিংগুলারিটি ছিল একটি মহাকর্ষীয় অদ্বৈত অবস্থান যার ঘনত্ব ছিল অসীম। মনে করা হয় এখান থেকে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন বা কোয়ান্টাম চাঞ্চল্যের কারণে মহাবিষ্ফোরণ ও পরবর্তিতে ঘটা দ্রুত প্রসারণের মাধ্যমে আজকের মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে।[৯] আর এই কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের পূর্বে এই প্রাথমিক অদ্বৈত অবস্থান বা ইনিশিয়াল সিংগুলারিটিতেই মহাবিশ্বের সকল স্থান-কাল ও ভর সবই বিদ্যমান ছিল।[১০] প্রাথমিক অদ্বৈত অবস্থানের তাৎক্ষণিক পরবর্তি সময়েই প্লাংক যুগ শুরু হয়, যা মহাবিশ্বের ইতিহাসের সর্বপ্রথম যুগ ছিল।
সাধারণ আপেক্ষিকতাকে ব্যবহার করে মহাবিশ্বের সূচনা সম্পর্কে ধারণা করা হয়। মহাজাগতিক স্ফীতিশীলতা নিয় আজকের সর্বোত্তম মডেলগুলো অনুসারে, মহাবিশ্বের শুরুতে মহাবিশ্বের সমস্ত ভর, শক্তি এবং স্থানকাল অসীম ঘনত্বের ঘনীভূত অবস্থায় ছিল, যাকে বলা হচ্ছে প্রাথমিক অদ্বৈত অবস্থান বা ইনিশিয়াল সিংগুলারিটি। আর সেই সিংগুলারিটির আকার বিন্দু ছিল না, বরং আধুনিক গবেষণা থেকে বের হয়ে এসেছে যে, তার আকার মানুষের মাথার আকার থেকে একটি সুউচ্চ দালান সমৃদ্ধ শহরের সমান হতে হতে পারে।[১১] প্রাথমিক অদ্বৈত অবস্থান বা আসল মহা বিষ্ফোরণ দেখা অসম্ভব, কারণ অদ্বৈত অবস্থানের মধ্যে স্থান ও কালের অস্তিত্ব থাকে না, তাই মহাবিষ্ফোরণের পূর্বে কোনভাবেই সেখান থেকে বিকিরণ নির্গত হতে পারবে না। যদিও অসীম ঘনত্বের অদ্বৈত অবস্থানের কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই, তবুও মহাবিশ্ব যে খুব উত্তপ্ত ও ঘন অবস্থা থেকে প্রসারিত হয়েছে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বা কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে তার একটি প্রমাণ।[১২]
প্রাথমিক অদ্বৈত অবস্থানের ধারণার সীমাবদ্ধতা ও বিকল্প
আগেই বলা হয়েছে যে, এই অদ্বৈত অবস্থান বা সিংগুলারিটির ধারণা আসে কেবলই সাধারণ আপেক্ষিকতা থেকে। কিন্তু মহাবিশ্বের শুরুতে কী হয়েছিল তা অনুসন্ধান করার জন্য কেবল সাধারণ আপেক্ষিকতার ব্যবহার অনেক সমালোচিত হয়েছে, কেননা প্রাথমিক মহাবিশ্বের উচ্চ-শক্তির পরিবেশের ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হয়ে ওঠে, এবং কেবল সাধারণ আপেক্ষিকতার ব্যবহার এক্ষেত্রে সঠিক হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়।[৯][১৩] মহাবিষ্ফোরণের ঐতিহ্যগত মডেলে কেবল সাধারণ আপেক্ষিকতা ব্যবহারজনিত ত্রুটির প্রতিক্রিয়া হিসেবে মহাবিশ্বের উদ্ভবের বিকল্প তাত্ত্বিক মডেল তৈরি প্রস্তাব করা হয়েছে। এদের মধ্যে একটি হল স্ট্রিং তত্ত্ব-ভিত্তিক মডেল, যেখানে দুটো ব্রেন এর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটার ফলে ভর ও শক্তির সৃষ্টি হয়।[১৪] ব্রেন হচ্ছে মহাবিশ্বের চেয়েও অনেক বড় কল্পিত ঝিল্লী।
কোয়ান্টাম বলবিদ্যার দ্বারা সৃষ্ট সমস্যার ফলে মহাবিষ্ফোরণ কেন ঘটে এবং এর পূর্বে কী ছিল তা নিয়ে বিভিন্ন নতুন মডেল প্রস্তাব করা হয়। এদের মধ্যে একটি হচ্ছে লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি। এটি মহাবিশ্বের সূচনাকে বিগ বাউন্স এর সমাহার এর দ্বারা ব্যাখ্যা করতে চায়, যেখানে কোয়ান্টাম চাঞ্চল্যের কারণে মহাবিশ্বের প্রসারণ ঘটে। এটি একই সাথে মহাবিশ্বের একটি চাক্রিক মডেলের ভবিষ্যদ্বাণী দান করে। অর্থাৎ এটি অনুসারে পুরনো মহাবিশ্বের ধ্বংসের পর নতুন মহাবিশ্বের সৃষ্টি হবে। আর এই প্রত্যেকটি নতুন মহাবিশ্বের ভৌত ধ্রুবকগুলো ভিন্ন হবে।[১৩] এম-তত্ত্ব এবং মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বা কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (সিএমবি) থেকে আসা আরেক ব্যাখ্যা অনুসারে মহাবিশ্ব আসলে বহু-মহাবিশ্ব বা মাল্টিভার্স এর অনেকগুলো মহাবিশ্বের মধ্যে একটি, এবং কোয়ান্টাম চাঞ্চল্যের ফলে আরেকটি মহাবিশ্ব থেকে আমাদের এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে। এই ব্যাখ্যাটি একটি মাত্র মহাবিশ্বের অস্তিত্বের ধারণার বিরুদ্ধে।[১৫]
কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে বিভিন্ন আকারের অদ্বৈত অবস্থান
বিভিন্ন আকারের অদ্বৈত অবস্থান রয়েছে। কোন ধরণের তত্ত্ব থেক অদ্বৈত অবস্থানটির ধারণা আসছে তার উপর নির্ভর করে এর বৈশিষ্ট্যগুলো বিভিন্ন হয়। অদ্বৈত অবস্থান বিভিন্ন আকারের হতে পারে যেমন মোচাকার ও বক্র। এই অনুকল্পও রয়েছে যে ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্ত ছাড়াও অদ্বৈত অবস্থানের অস্তিত্ব থাকতে পারে, যেখানে ঘটনা দিগন্ত হচ্ছে স্থানকালের সেই অঞ্চল যার ভেতরের কোন ঘটনা তার বাইরের অঞ্চলকে প্রভাবিত করতে পারে না। ঘটনা দিগন্ত ছাড়া অদ্বৈত অবস্থানকে নগ্ন অদ্বৈত অবস্থান বলা হয়।
মোচাকার বা কনিক্যাল
একটি মোচাকার অদ্বৈত অবস্থান তখন দেখা যায় যখন এমন একটি বিন্দু থাকে যার সকল ডিফেওমরফিজম ইনভ্যারিয়েন্ট রাশির সীমা বা সর্বোচ্চ মানই সসীম, অর্থাৎ কোন ডিফেওমরফিজম ইনভ্যারিয়েন্ট কোয়ান্টিটির সীমা বা সর্বোচ্চ মানই অসীম নয়। এই ডিফেওমরফিজম ইনভ্যারিয়েন্ট রাশিও পূর্বে বর্ণিত ঘনত্বের মত স্কেলার রাশির মতই বিশেষ ধরণের রাশি। যাই হোক, এক্ষেত্রে যে বিন্দুতে এই রাশিগুলোর সর্বোচ্চ মান বা সীমা পাওয়া যায় সেই সর্বোচ্চ মানের বিন্দুটিতে স্থানকাল মসৃণ থাকে না, মানে সেখানে হুট করে স্থানকাল পরিবর্তিত হয়ে যায়। কিন্তু বিন্দুটির চারদিকে আবার স্থানকাল মসৃণ। একটু কল্পনা করলেই বোঝা যায় যে এই ব্যাপারটা একটা কোণক বা মোচার মত আকার ধারণ করে, যেখানে কোনকের ঠিক সূচালো মাথার বিন্দুতেই স্থানকাল অমসৃণ বা হুট করে ভেঙ্গে যায়, বাদবাকি অঞ্চল মসৃণ থাকে। ফলে সেই বিন্দুর চারপাশে শঙ্কু বা মোচা বা কোণকের মত দেখা যায়, যেখানে সেই অদ্বৈত অবস্থান কোণকটির শীর্ষবিন্দুতে অবস্থান করে। এর মেট্রিকও সসীম হতে পারে, সকল ক্ষেত্রেই স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা ব্যবহার করা যায়।
মেট্রিক নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। মেট্রিক দ্বারা আসলে মেট্রিক টেনসর বোঝায়। স্কেলার ও ভেক্টর রাশির মত টেনসরও বিশেষ রকমের রাশি। মেট্রিক টেনসর দ্বারা স্থানকালের জ্যামিতিকে ব্যাখ্যা করা হয়। কোন ভর-শক্তির কারণে স্থানকাল কিভাবে পরিবর্তিত হয় তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আইনস্টাইন ১০টি পারশাল ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন প্রদান করেন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এগুলোর সমাধান করে বিভিন্ন রকম মেট্রিক তৈরি করা হয়েছে যা বিভিন্ন রকম স্থানকাল জ্যামিতির ব্যাখ্যা করে। ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের ক্ষেত্রেও আইনস্টাইনের এই ইকুয়েশনগুলোর সমাধান বের করা হয়েছিল, বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে। ব্ল্যাকহোলের দুটি ধরণের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তার মেট্রিক নির্ণয় করা হয়। একটি হচ্ছে, ব্ল্যাকহোলটি ঘুর্ণায়মান বা রোটেটিং কিনা, মানে কৌণিক ভরবেগ J এর মান শূন্য নাকি ধনাত্মক। আর একটি হচ্ছে ব্ল্যাকহোলটি চার্জড বা আহিত কিনা, মানে ব্ল্যাকহোলটিতে বৈদ্যুতিক চার্জ, Q আছে কিনা। যদি ব্ল্যাকহোলটি ঘুর্ণায়মান না হয় আর তাতে চার্জ না থাকে, তবে সেক্ষেত্রে আইনস্টাইনের সমীকরণগুলোর সমাধান করে যে মেট্রিক পাওয়া যাবে তার নাম দেয়া হয়েছে শোয়ার্জশিল্ড মেট্রিক (Schwarzschild metric)। যদি ব্ল্যাকহোলটি ঘুর্ণায়মান থাকে, কিন্তু তাতে কোন চার্জ না থাকে তবে সেই মেট্রিকটি হবে কার মেট্রিক (Kerr metric)। যদি ব্ল্যাকহোলটি ঘুর্ণায়মান না হয়, ও তাতে চার্জ থাকে তাহলে তার মেট্রিক হবে রেইসনার নর্ডস্টর্ম মেট্রিক (Reissner–Nordström metric)। আর যদি ব্ল্যাকহোলটি ঘূর্ণায়মান হয়, আর চার্জও থাকে তবে তার মেট্রিক হবে কার-নিউম্যান মেট্রিক (Kerr–Newman metric)।
এরকম মোচাকার অদ্বৈত অবস্থানের একটি উদাহরণ হচ্ছে কসমিক স্ট্রিং এবং শোয়ার্জশিল্ড কৃষ্ণগহ্বর।[১৬] শোয়ার্জশিল্ড মেট্রিকের কৃষ্ণগহ্বরই হল শোয়ার্জশিল্ড কৃষ্ণগহ্বর। মানে যে কৃষ্ণগহ্বর ঘুর্ণায়মান নয়, এবং তাতে কোন চার্জ নেই, সেটাই হল শোয়ার্জশিল্ড কৃষ্ণগহ্বর। এইরকম কৃষ্ণগহ্বরের সিংগুলারিটি বা অদ্বৈত অবস্থান হচ্ছে মোচাকার।
বক্রতা বা কার্ভেচার
সাধারণ আপেক্ষিকতার সমীকরণগুলোর সমাধান বা মহাকর্ষের অন্যান্য তত্ত্বগুলো (যেমন - অতিমহাকর্ষ সুপারগ্র্যাভিটি) থেকে প্রায়ই এমন বিন্দু পাওয়া যায় যেগুলোর মেট্রিক এর মান অসীম হয়ে যেতে পারে। কিন্তু দেখা যায়, এই বিন্দুগুলোর অনেকগুলোই সম্পূর্ণ মসৃণ বা স্বাভাবিক। কিন্তু বিন্দুগুলো মসৃণ বা স্বাভাবিক হলে তো তা আর সিংগুলারিটি হবে না। সিংগুলারিটি হতে গেলে স্থানকালের মসৃণ না হয়ে হওয়া লাগবে এবরাপ্ট বা হুট করে পরিবর্তন, যেমনটা মোচাকার সিংগুলারিটির বেলাতেও পাওয়া গিয়েছিল। দেখা যায়, হিসেবের সময় যে স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা ব্যবহার করার ফলে বিন্দুতে মেট্রিকের মান অসীম এসেছে, অন্য কোন স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা ব্যবহার করলে সেগুলোর অনেকগুলোরই মান সসীম হয়ে যায়, মানে সেগুলো সিংগুলারিটি বা অদ্বৈত অবস্থান নয়। আর সেক্ষেত্রে সেই অসীম মানের মেট্রিকগুলো নিছকই সেই বিন্দুতে কোন অনুপযুক্ত স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা ব্যবহারের ফল। একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে একটি অদ্বৈত অবস্থান রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য অবশ্যই সেই অবস্থানে ডিফেওমরফিজম ইনভ্যারিয়েন্ট রাশিগুলো (অর্থাৎ ঘনত্বের মত স্কেলার রাশিগুলোর মান) অসীম কিনা তা চেক করতে হবে। এই মানগুলোর মান অসীম হলে তবেই নিশ্চিত হওয়া যায় যে সেটি আসলে অদ্বৈত অবস্থান বা সিংগুলারিটি। প্রকৃত অদ্বৈত অবস্থানের ক্ষেত্রে এই বিশেষ রাশিগুলির মান প্রত্যেকটি স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার জন্য একই থাকে। তাই অদ্বৈত অবস্থানের অসীম মানগুলো স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার পরিবর্তন করা হলেই বাতিল হয়ে যাবে না। উল্লেখ্য, এখানে স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা হচ্ছে একটি ব্যবস্থা যার সাথে স্থানকালের বিভিন্ন অবস্থানকে নির্ণয় করা যায়, বিভিন্ন রকম স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা রয়েছে।
তাহলে শোয়ার্জশিল্ড মেট্রিক এর কৃষ্ণগহ্বরের একটি উদাহরণ হচ্ছে অ-ঘূর্ণমান ও আধানহীন কৃষ্ণগহ্বর। কৃষ্ণগহ্বর থেকে দূরের অঞ্চলগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য যে স্থানাঙ্ক ব্যবস্থাটি উপযোগী কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনা দিগন্তের মেট্রিকের বেলায় সেই স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার অবস্থানগুলোর একটি অংশের মানগুলো অসীম হয়ে যায়, কিন্তু আসলে ঘটনা দিগন্তের বেলায় এই মানগুলো অসীম হবার কথা না, অর্থাৎ স্থানকালের এরকম হুট করে পরিবর্তন না হয়ে মসৃণ থাকার কথা। এখন আগের স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার পরিবর্তে মেট্রিক সম্পূর্ণ মসৃণ থাকে এরকম অন্য স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা (যেমন ক্রুসকাল স্থানাঙ্ক) ব্যবহার করলে এই মসৃণত্ব সুস্পষ্ট হয়। অন্য দিকে, কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রে এই নতুন স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা ব্যবহারের পরও দেখা যাচ্ছে মেট্রিক অসীম থাকে। কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রের এই মেট্রিকের অসীম হওয়াটাই নির্দেশ করছে যে এখানে অদ্বৈত অবস্থানের উপস্থিতি রয়েছে। এখন এটা যে আসলেই একটি অদ্বৈত অবস্থান বা সিংগুলারিটি তা বের করার একটা উপায় আছে। ক্রেটশম্যান স্কেলার (Kretschmann scalar) নামে একটি স্কেলার রয়েছে, যাকে আকারে লেখা হয়। এই স্কেলারটি নিজে একটি ডিফেওমরফিজম ইনভ্যারিয়েন্ট, এবং এটি রাইনম্যান টেনসরের বর্গ। যে অবস্থানে এই স্কেলারের মান অসীম হবে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে সেই অবস্থানটাই আসলে একটি অদ্বৈত অবস্থান বা সিংগুলারিটি। এভাবে শোয়ার্জশিল্ড কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রেও একটি অদ্বৈত অবস্থান বা সিংগুলারিটি পাওয়া যায়।
অ-ঘূর্ণায়মান কৃষ্ণগহ্বরের ক্ষেত্রে একটি একক বিন্দুতে অদ্বৈত অবস্থান দেখা যায় যাকে "বিন্দু অদ্বৈত অবস্থান" বা "পয়েন্ট সিংগুলারিটি" বলা হয়। কিন্তু একটি ঘুর্ণায়মান ও আধানহীন কৃষ্ণগহ্বর এর ক্ষেত্রে অদ্বৈত অবস্থানের আকার বিন্দু হয় না। আগেই বলা হয়েছে এরকম ঘুর্ণায়মান ও আধানহীন কৃষ্ণগহ্বরের মেট্রিককে কার মেট্রিক বলা হয়, তাই এরকম কৃষ্ণগহ্বরকেও বলা হয় কার কৃষ্ণগহ্বর। এই কার কৃষ্ণগহ্বরের অদ্বৈত অবস্থান একটি রিং বা বলয় আকারে (বৃত্তাকার রেখা) গঠিত হয়, এবং একে "বলয় অদ্বৈত অবস্থান" বা "রিং সিংগুলারিটি" বলে। তাত্ত্বিকভাবে এরকম অদ্বৈত অবস্থান ক্ষুদ্রবিবর বা ওয়ার্মহোলেও পরিণত হয়।[১৭]
এ প্রসঙ্গে ওয়ার্মহোল বা ক্ষুদ্রবিবর নিয়ে কিছু বলা যাক। ওয়ার্মহোল আরেকটি নামেও পরিচিত, তা হল আইনস্টাইন-রোজেন ব্রিজ। আইনস্টাইন ফিল্ড ইকুয়েশনগুলোর একটা বিশেষ সমাধান থেকে এই ওয়ার্মহোলের ধারণাটি এসেছে। এটি এমন একটি জিনিস যা স্থানকালের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করতে পারে। একটি ওয়ার্মহোলকে একটি টানেল হিসেবে কল্পনা করা যায়, যার দুই প্রান্ত স্থানকালের দুটো ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। স্থানকালের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান বলতে বোঝাচ্ছে, ভিন্ন সময় এবং ভিন্ন অবস্থান। একটি প্রান্ত যে সময় ও অবস্থানে রয়েছে, আরেকটি প্রান্ত রয়েছে তার থেকে কোটি কোটি কিলোমিটার ও কোটি কোটি বছর দূরে। স্থানকালের এই দুই অবস্থানের মধ্যে সংযোগ করিয়ে দিচ্ছে একটি ওয়ার্মহোল। এই ওয়ার্মহোল কিন্তু সাধারণ আপেক্ষিকতার ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সাধারণ আপেক্ষিকতা অনুসারে এটির অস্তিত্ব থাকতেই পারে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত এটার অস্তিত্ব দেখা যায় নি। একটি ওয়ার্মহোলের দৈর্ঘ্য অনেক বিশাল হতে পারে, যেমন এক বিলিয়ন লাইট ইয়ার বা তারও বেশি, আবার এটি কয়েক মিটারেরও হতে পারে। ভিন্নভিন্ন মহাবিশ্বের মধ্যে বা ভিন্ন ভিন্ন সময়ের মধ্যেও এটি একটি সংযোগ হিসেবে কাজ করতে পারে।[১৮]
কার সিংগুলারিটিকে ওয়ার্মহোল এর "ফিল্ড লাইন প্রবলেম" নিয়ে স্টাডি করার জন্য গাণিতিক সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যদি একটি পারটিকেল একটি ওয়ার্মহোলে প্রবেশ করে তবে তরিৎ ক্ষেত্রের কন্টিনুইটি ইকুয়েশন অনুসারে ক্ষেত্রের রেখাগুলো বা ফিল্ড লাইনগুলো ভেঙ্গে যাবার কথা না। পার্টিকেলগুলোর আহিত ফিল্ড লাইনগুলো ওয়ার্মহোলের শুরুর প্রান্তে উদ্ভূত হয়, এবং এর শেষ প্রান্তে বারনৌলির সূত্র অনুসারে একটি চার্জ ডেন্সিটি ডেফিসিট বা চার্জ ঘনত্বের অভাবের সৃষ্টি হয়। (ভরের ক্ষেত্রে শুরুর প্রান্তে মাস ডেন্সিটি বা ভর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়, ও শেষ প্রান্তে মাস ডেন্সিটি ডেফিসিট বা ভর ঘনত্বের অভাব তৈরি হয়।) যেহেতু কার অদ্বৈত অবস্থানেও একই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তাই মনে করা হয় তাই কার সিংগুলারিটিরও একটি ওয়ার্মহোল হিসেবে কাজ করার কথা।
আরো সাধারণভাবে, একটি স্থানকালকে নিয়মিত বা স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেয়া হয় যদি তার জিওডেসিক অসমাপ্ত হয়ে থাকে, অর্থাৎ অবাধে পতনশীল কণাগুলির গতিবিধি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে আর নির্ধারণ করা যায় না, সেই নির্দিষ্ট সময়টি হচ্ছে অদ্বৈত অবস্থান। উদাহরণস্বরূপ, একটি অ-ঘূর্ণায়মান কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনা দিগন্তের ভেতরে থাকা যেকোন পর্যবেক্ষক একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রে পতিত হবে। মহাবিষ্ফোরণের মডেলের চিরায়ত সংস্করণ বা বিগ ব্যাং কসমোলজিকাল মডেল অনুযায়ী মহাবিশ্ব তার উৎপত্তির মুহূর্তে (t = 0) একটি কার্যকারণগত অদ্বৈত অবস্থান ধারণ করে, যেখানে সকল সময়-সদৃশ বা টাইম-লাইক জিওডেসিকেরই এই উৎপত্তি-মুহূর্তের অতীতে কোনও রকম সম্প্রসারণ নেই। সেই অনুকল্পিত মুহূর্তের পূর্বে সময়কে এক্সট্রাপোলেট করা হলে দেখা যায় সকল স্থানগত মাত্রার আকার শূন্য এবং ঘনত্ব, তাপমাত্রা ও স্থানকালের বক্রতা অসীম।
নগ্ন অদ্বৈত অবস্থান
১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হত যে, সাধারণ আপেক্ষিকতা একটি ঘটনা দিগন্তের ভেতরে প্রত্যেকটি অদ্বৈত অবস্থানকে লুকিয়ে রাখে। একে মহাজাগতিক বিবাচন অনুকল্প বা কসমিক সেন্সরশিপ হাইপোথিসিজ বলা হত।। কিন্তু ১৯৯১ সালে পদার্থবিজ্ঞানী স্টুয়ার্ট শাপিরো এবং সল তেউকোলস্কি ধুলিকণার একটি ঘূর্ণায়মান সমতল নিয়ে কম্পিউটার সিমুলেশন সঞ্চালন করেন যা নির্দেশ করেছিল, সাধারণ আপেক্ষিকতা একরমক "নগ্ন" অদ্বৈত অবস্থানের অস্তিত্বের অনুমোদন দেয়। এরকম মডেলে এই বস্তুগুলোকে আসলে কেমন দেখতে হবে তা অজানা। সিমুলেশনটি সঞ্চালনের জন্য যে সিমপ্লিফাইং এজাম্পশন বা সরলীকৃত পূর্বানুমানগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোকে বাদ দিলেও এই অদ্বৈত অবস্থানের অস্তিত্ব থাকবে কিনা তাও জানা যায়নি। কিন্তু এটি অনুমান করা গেছে যে, অদ্বৈত অবস্থানে আলো প্রবেশ করার পর একইভাবে এর জিওডেসিক সমাপ্ত হবে, এরফলে নগ্ন অদ্বৈত অবস্থানও দেখতে কৃষ্ণগহ্বরের মত হবে।[১৯][২০][২১]
কার মেট্রিকে অদৃশ্য ঘটনা দিগন্ত থাকবে যদি সেই কার মেট্রিক নির্দেশকারী ঘুর্ণায়মান ব্ল্যাকহোলটির কৌণিক ভরবেগ () যথেষ্ট বেশি হয়। কার মেট্রিককে বয়ার-লিন্ডকুইস্ট স্থানাঙ্কে স্থানান্তর করে দেখানো যায়,[২২] ঘটনা দিগন্তের স্থানাঙ্ক (যা ব্যাসার্ধ নয়) হচ্ছে, , যেখানে , এবং (এখানে r ব্যাসার্ধ নয়) । এক্ষেত্রে "অদৃশ্য ঘটনা দিগন্ত" বলতে বোঝানো হচ্ছে, তখন এর জন্য সমাধানগুলো জটিল সংখ্যা হয়, অর্থাৎ হয়। যাই হোক, এটি একটি পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে যেখানে এর মান কে অতিক্রম করে (বা প্লাংক এককে দাঁড়ায় )। অর্থাৎ, যাকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মান ধরা হয় তার সর্বোচ্চ সীমাকে এটি অতিক্রম করে।
একইভাবে, রেইসনার-নর্ডস্ট্রম জ্যামিতি দিয়েও অদৃশ্য ঘটনা দিগন্তকে দেখা যায় যদি আহিত কৃষ্ণগহ্বরের আধান () যথেষ্ট পরিমাণে বেশি থাকে। মেট্রিকে, দেখানো যায় যে,[২৩] তে অদ্বৈত অবস্থান তৈরি হয়, যেখানে এবং হয়। এবং এর বিভিন্ন মানের জন্য সম্ভাব্য তিনটি পরিস্থিতির মধ্যে পরিস্থিতির জন্য উভয় এর মানই জটিল হয়ে যায়। এর অর্থ হল এর প্রত্যেকটি ধনাত্মক মানের জন্য মেট্রিকটি স্বাভাবিক বা নিয়মিত, অন্য কথায় এই অদ্বৈত অবস্থানের কোন ঘটনা দিগন্ত নেই। যাই হোক, এটি এমন একটি পরিস্থিতির ক্ষেত্রেই কেবল সম্ভব যেখানে এর মান কে ছাড়িয়ে যায় (অথাবা প্লাংক এককে হয়)। অর্থাৎ, বাস্তব সম্ভাব্য মানগুলোর সর্বোচ্চ সীমা হিসেবে যে মানকে ধরা হয় এটি সেই মানকেও ছাড়িয়ে যায়। এছাড়াও প্রকৃত জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানগত কৃষ্ণগহ্বরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আধান থাকেও না। তাই এরকম নগ্ন অদ্বৈত অবস্থানের অস্তিত্ব আদৌ আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
তথ্যসূত্র
- ↑ "Blackholes and Wormholes"।
- ↑ Claes Uggla (২০০৬)। "Spacetime Singularities"। Einstein Online। 2 (1002)।
- ↑ Curiel, Erik & Peter Bokulich। "Singularities and Black Holes"। Stanford Encyclopedia of Philosophy। Center for the Study of Language and Information, Stanford University। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Moulay, Emmanuel। "The universe and photons" (পিডিএফ)। FQXi Foundational Questions Institute। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Wald, p. 99
- ↑ Hawking, Stephen। "The Beginning of Time"। Stephen Hawking: The Official Website। Cambridge University। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Zebrowski, Ernest (২০০০)। A History of the Circle: Mathematical Reasoning and the Physical Universe। Piscataway NJ: Rutgers University Press। পৃষ্ঠা 180। আইএসবিএন 978-0813528984।
- ↑ Rodolfo Gambini; Javier Olmedo; Jorge Pullin (২০১৩)। "Quantum black holes in Loop Quantum Gravity"। Classical and Quantum Gravity। 31 (9): 095009। arXiv:1310.5996 । ডিওআই:10.1088/0264-9381/31/9/095009। বিবকোড:2014CQGra..31i5009G।
- ↑ ক খ Wall, Mike (২১ অক্টোবর ২০১১)। "The Big Bang: What Really Happened at Our Universe's Birth?"। The History & Future of the Cosmos। Space.com। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৬, ২০১২।
- ↑ Hawking, Stephen। "The Beginning of Time"। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০১৪।
- ↑ Siegel, Ethan (৩১ মার্চ ২০১৭)। "How big was the Universe at the moment of its creation?"। Medium। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "What If the Big Bang Wasn't the Beginning? New Study Proposes Alternative"। Space.com। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১৮।
- ↑ ক খ Penn State (২ জুলাই ২০০৭)। "What Happened Before The Big Bang?"। ScienceDaily। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৬, ২০১২।
- ↑ Lamb, Robert (১২ মে ২০১০)। "Branes, Crunches, and Other Big Ideas"। What existed before the big bang?। HowStuffWorks। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৬, ২০১২।
- ↑ Atkinson, Nancy (১৩ জুন ২০০৮)। "Thinking About Time Before the Big Bang"। Universe Today। Universe Today। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৬, ২০১২।
- ↑ Copeland, Edmund J; Myers, Robert C; Polchinski, Joseph (২০০৪)। "Cosmic F- and D-strings"। Journal of High Energy Physics। 2004 (6): 013। arXiv:hep-th/0312067 । ডিওআই:10.1088/1126-6708/2004/06/013। বিবকোড:2004JHEP...06..013C।
- ↑ If a rotating singularity is given a uniform electrical charge, a repellent force results, causing a ring singularity to form. The effect may be a stable wormhole, a non-point-like puncture in spacetime that may be connected to a second ring singularity on the other end. Although such wormholes are often suggested as routes for faster-than-light travel, such suggestions ignore the problem of escaping the black hole at the other end, or even of surviving the immense tidal forces in the tightly curved interior of the wormhole.
- ↑ "Focus: Wormhole Construction: Proceed with Caution"। Physics (ইংরেজি ভাষায়)। 2। ১৯৯৮-০৮-০৩ – American Physical Society-এর মাধ্যমে।
- ↑ M. Bojowald (২০০৮)। "Loop Quantum Cosmology"। Living Reviews in Relativity। 11 (4)। ডিওআই:10.12942/lrr-2008-4। পিএমসি 5253914 । বিবকোড:2008LRR....11....4B। ২০১৫-১২-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ R. Goswami; P. Joshi (২০০৮)। "Spherical gravitational collapse in N-dimensions"। Physical Review D। 76 (8): 084026। arXiv:gr-qc/0608136 । ডিওআই:10.1103/PhysRevD.76.084026। বিবকোড:2007PhRvD..76h4026G।
- ↑ R. Goswami; P. Joshi; P. Singh (২০০৬)। "Quantum evaporation of a naked singularity"। Physical Review Letters। 96 (3): 031302। arXiv:gr-qc/0506129 । ডিওআই:10.1103/PhysRevLett.96.031302। পিএমআইডি 16486681। বিবকোড:2006PhRvL..96c1302G।
- ↑ Hobson, et al., General Relativity an Introduction for Physicists, Cambridge University Press 2007, p. 300-305
- ↑ Hobson, et al., General Relativity an Introduction for Physicists, Cambridge University Press 2007, p. 320-325
আদিনারীবাদ
ভূমিকা
নারীবাদ বা ফেমিনিজম সম্পর্কে তো সবাই মোটামুটি জানেন। আদিনারীবাদ বা প্রোটোফেমিনিজম সম্পর্কে কখনও শুনেছেন? ঠিক ধরেছেন, নারীবাদের ধারণার পূর্বে নারীর অধিকার বিষয়ক যেসব প্রতিবাদ, এক্টিভিজম, রচনা, বিপ্লব, সমাজ সংস্কার ও চিন্তাধারার অস্তিত্ব ছিল তাই আধিনারীবাদের ক্যাটাগরিতে পড়ে। আদিনারীবাদের যুগটাই এমন ছিল যেখানে "নারীবাদ" শব্দটিই প্রচলিত হয়নি, সকলের কাছে শব্দটি অজানাই ছিল[১] এভাবে হিসাব করলে বিংশ শতকের পূর্বের নারীবাদকেই আদিনারীবাদ বলা যায়।[২][৩] কিন্তু অনেকেই বলেন যে আধুনিক নারীবাদ বলতে যা বোঝানো হয় তার অনেক কিছুই অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকের নারীবাদেও ছিল। কাজেই অন্যান্য যুগবিভাগ নিয়ে যেমন পণ্ডিতদের মধ্যে অনেক বিতর্ক দেখা যায়, আদিনারীবাদ ও নারীবাদের মধে বিভেদ ঠিক কোথায়, মানে ঠিক কখন আদিনারীবাদ শেষ হয়ে নারীবাদের যাত্রা শুরু হয়েছে সেই বিষয়ে ভালই বিতর্ক রয়েছে।
অনেকেই ১৮শ ও ১৯শ শতকের নারীবাদকে আদিনারীবাদে ফেলতে চান না। আমিও এই লেখাটিতে তাদেরই পক্ষ নিয়ে ১৮শ ও ১৯শ শতকের নারীবাদকে আদিনারীবাদের আলোচনা থেকে বাদ দিয়েছি। আদিনারীবাদের আলোচনায় তাই প্রাচীন গ্রিসের সময়কাল থেকে ১৭শ শতকের নারীবাদই থাকবে। যাই হোক, আদিনারীবাদ নিয়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে রাখি। কোন কোন আধুনিক পণ্ডিত "আদিনারীবাদ" শব্দটির ব্যাবহারযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন করেন,[৪] ঠিক যেমন উত্তরনারীবাদ বা পোস্টফেমিনিজম এর ব্যাবহারযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। যাই হোক, এত এত বিতর্ক থাকার পরেও আমি স্বীকার করি যে আধিনারীবাদ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে। নারীবাদের ইতিহাস জানতে, নারীবাদ সম্পর্কে জানতে, বা এক কথায় পুরুষাধিপত্যের বিরুদ্ধে নারীর সংগ্রাম সম্পর্কে জানতে আদিনারীবাদ সম্পর্কিত আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ের নারীবাদ সম্পর্কে জানতে আমাদের ২০শ শতকের নারীবাদের পটভূমি জানতে হয়, সেটা সম্পর্কে জানতে গেলে জানতে হয় ১৯শ শতকের পতভূমি, একইভাবে ১৮শ শতকে যে নারীবাদের প্রথম বিকাশ হয় মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট সহ অন্যান্যদের হাত ধরে তার পটভূমি বুঝতেও ১৭শ শতক ও তার পূর্বের সময়ের নারীবাদী চিন্তা, তথা আদিনারীবাদী চিন্তাধারা সম্পর্কে জানার প্রয়োজন আছে। নারী অধিকার সংক্রান্ত চিন্তাধারার একটি ক্রমবিবর্তনমূলক ও ক্রমবিকাশমান ঐতিহ্য আছে, যাকে বাদ দিয়ে নারীবাদের আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাই আদিনারীবাদের আলোচনা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আদিনারীবাদের এই আলোচনায় ইতিহাসের সকল অংশে নারীর অধিকারের আন্দোলন ও সংস্কারকে এই আলোচনায় তুলে ধরা সম্ভব হবে না, তবে কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে নিয়ে আসার চেষ্টা করব।
প্রাচীন গ্রিস ও রোমে আদিনারীবাদ
প্রাচীন গ্রিসে প্লেটোর আদিনারীবাদ
অন্য অনেক দার্শনিক আন্দোলন ও চিন্তাধারার মত নারীবাদের উৎস্যও পাওয়া যায় ঐ প্রাচীন গ্রীসেই। এলেইন হফম্যান বারুচের মতে প্লেটো "নারীর পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক ও যৌন সমতার জন্য যুক্তি প্রদান করেছিলেন। প্লেটো তার আদর্শ নগর রাষ্ট্রে যে শ্রেণীগুলোর উল্লেখ করেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ শ্রেণিটিতেও তিনি নারীদেরকে সদস্য হিসেবে বিবেচনা করেন। আর এই নারীরা শাসনো করেন, যুদ্ধও করেন।"[৫] প্লেটোর দ্য রিপাবলিক গ্রন্থে নারী বিষয়ক তার ধারণাগুলো প্রকাশ পায়। প্লেটো তার দ্য রিপাবলিক গ্রন্থে নৈতিক নগর রাষ্ট্র এবং নৈতিক মানুষের নিয়ম শৃঙ্খলা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে লিখেছিলেন।[৬] এটাই প্লেটোর সর্বোত্তম রচনা হিসেবে পরিচিত, এবং এটি বৌদ্ধিক ও ঐতিহাসিক উভয় দিক থেকেই দর্শন ও রাজনৈতিক তত্ত্ব নিয়ে পৃথিবীর একটি অন্যতম প্রভাবশালী গ্রন্থ।[৭][৮]
প্লেটো তার দ্য রিপাবলিকের পঞ্চম অধ্যায়ে নারীর ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন, "কুকুর পুরুষ ও নারীতে বিভক্ত নাকি তারা সমানভাবেই শিকার করে, পাহাড়া দেয় ও অন্যান্য দায়িত্ব পালন করে থাকে? নাকি আমরা কেবল পুরুষ কুকুরদেরকেই কেবলমাত্র পাহাড়া দেবার জন্য ব্যবহার করি আর স্ত্রী-কুকুরদেরকে তাদের বাসায় রেখে দেই যাতে তারা তাদের সন্তানদেরকে দুধ খাওয়াতে পারে ও লালন পালন করতে পারে?" দ্য রিপাবলিক গ্রন্থ বলছে, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করবে, সমান শিক্ষা পাবে এবং রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে সমানভাবে অংশীদার হবে। এক্ষেত্রে নারীদের বেলায় একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে, নারী তার সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করবে যার জন্য কম শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয়।[৯]
'রিপাবলিক’ গ্রন্থের পঞ্চম খণ্ডে প্লেটো আদর্শ রাষ্ট্রে নারীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন নারীদের পুরুষদের মতই শিক্ষিত করে তুলতে হবে। আদর্শ রাষ্ট্রে তাদের কাজ শুধু ঘরে থেকে সন্তান পালন করা নয়। তারা সঙ্গীত চর্চা করবে, ব্যায়ামের অনুশীলন করবে এবং পুরুষদের মতই সামরিক নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা করবে। পুরুষদের মত সব কাজেই তারা অংশগ্রহণের উপযোগী, এমনকি প্রয়োজনীয় গুণাবলির অধিকারী হলে তাদের রাষ্ট্রের অভিভাবকদের কার্য সম্পাদন করার জন্য নির্বাচিত করা যেতে পারে। প্লেটো ব্যক্তিগত জীবন যাপনের পরিবর্তে যৌথ জীবন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেন। তিনি নারী ও পুরুষদের একই দৃষ্টিতে দেখেছেন। তার মতে, নারী ও পুরুষের ক্ষমতা সমান বলে দায়িত্ব ও কর্তব্য সমান। উভয়ের লালন-পালন ও শিক্ষা দীক্ষা হবে সমান। পুরুষেরা যেমন শিক্ষা-দীক্ষা, সংস্কৃতি ও শরীরচর্চার অধিকার পাবে নারীরাও তা পাবে। এমনকি নারীরা পুরুষদের ন্যায় যুদ্ধ বিদ্যাও শিখতে পারবে অর্থাৎ প্লেটোর মতে, নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন বৈষম্য থাকবে না।
তার মতে যে শিক্ষা একজন পুরুষকে একজন যথার্থ রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে পরিণত করতে পারে সেই একই শিক্ষা একজন নারীকেও যথার্থ অভিভাবিকায় রূপায়িত করতে পারবে। প্লেটোর মতে, নারী ও পুরুষদের মধ্যে যে পার্থক্য তা মাত্রাগত পার্থক্য, গুণগত নয়। পুরুষরা মেয়েদের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষে কোন বৈষম্য নেই। রাষ্ট্রের ঐক্য ও শক্তির স্বার্থে পুরুষের সাথে সাথে মেয়েরাও সমান এবং একই দায়িত্ব বহন করবে বলে প্লেটো উল্লেখ করেন। নারী ও পুরুষদের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের। আইনজীবী ও ম্যাজিস্ট্রেটগণ নারী পুরুষদের যোগ্যতা অনুসারে নির্বাচন করবেন কাকে কোন্ কাজ দেয়া হবে। অর্থাৎ কে হবে সৈনিক, কে হবে দার্শনিক, কে হবে শ্রমিক তা নির্ধারিত হবে আইনজীবী ও ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে। প্লেটো আরও বলেন যে, আইনজীবী এবং ম্যাজিস্ট্রেটগণ কর্তৃক নির্বাচিত নারী পুরুষগণ একই সাথে থাকবে এবং একই সাথে খাবে। তাদেরও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে কিছু থাকবে না। সকলেই একই পরিবেশে প্রতিপালিত হবে। আর এভাবে একত্রে বসবাস করার ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে ভালবাসার সৃষ্টি হবে বলে প্লেটো মত প্রকাশ করেন। নারী-পুরুষ একই সাথে বসবাস করার ফলে যাতে করে মানবিক মূল্যবোধ না হারায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের। আর এভাবে বসবাস করায় রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপিত হবে।
তবে প্লেটো বিবাহিত নারীর ভূমিকা হিসেবে সুসন্তান লাভের বিষয়টিকে অনেক বড় করে দেখেছিলেন, একই কথা বিবাহিত পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এটা করতে গিয়ে তিনি বিবাহিত দম্পতির উপর রাষ্ট্রীয় তত্বাবধান সমর্থন করেন। এই ব্যাপারটা নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই ব্যক্তিস্বাধীনতাকে খর্ব করে। তার এই চিন্তার পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল। তৎকালীন এথেন্সে পরিবার ব্যবস্থা স্থায়ী বিবাহ বন্ধনের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল না। বিবাহ বন্ধন রচনা ও সন্তান উৎপাদনে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এ ব্যাপারটি ছিল সম্পূর্ণ নাগরিকদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্লেটো এ ধরনের পরিবার ব্যবস্থাকে তার আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক বলে মনে করেন। আর তাই তিনি এরূপ স্থায়ী বিবাহভিত্তিক পরিবার প্রথার বিলোপ সাধনপূর্বক এক অভিনব প্রজনন পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন। এই অভিনব পদ্ধতি অনুসারে বংশ বৃদ্ধির ব্যাপার নিয়ন্ত্রিত হবে রাষ্ট্র কর্তৃক এ ব্যবস্থা অনুসারে রাষ্ট্র কর্তৃক নির্দেশিত উপযুক্ত মা-বাবারই সন্তান হতে পারবে এবং সন্তান সংখ্যাও নির্ধারিত হবে রাষ্ট্র কর্তৃক। রাষ্ট্র কর্তৃক নির্দেশিত নয় এমন কোন সন্তান হলে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে না এবং তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হবে। প্লেটোর সাম্যবাদ অনুসারে যেসব নারীর বয়স ২০ থেকে ৪০ বছর তারাই কেবল সন্তানের মা হতে পারবে; আর যেসব পুরুষের বয়স ২৫ থেকে ৫৫ বৎসরের মধ্যে তারাই কেবল সন্তানের বাবা হতে পারবে। এই নির্ধারিত বয়সসীমার বাইরে যাদের সন্তান হবে তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। প্লেটো আরও বলেন যে, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বাধীনে নারী-পুরুষদের মিলনের ফলে যে সন্তানের জন্ম হবে তা সকলের সন্তান হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তাদের সবাইকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে একই সাথে রাখা হবে। সন্তানদের ওপর কারও ব্যক্তিগত মালিকানা থাকবে না। এভাবেই প্লেটোর সাম্যবাদ প্রচলিত পরিবার প্রথার উচ্ছেদ সাধনপূর্বক সন্তানদের ওপর অভিভাবকদের যৌথ মালিকানা স্থাপন করে।
প্লেটোর মতে আদর্শ রাষ্ট্রে প্রজনন নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রের উচ্চতর শ্রেণীর নরনারীর বিবাহ-সম্পর্ক রাষ্ট্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। এই নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য হল যাতে রাষ্ট্রের কর্ম ভালভাবে সম্পাদিত হয় এবং সুসন্তান লাভ করা যায়। এই শ্রেণীর নর-নারীর সন্তানেরা রাষ্ট্র পরিচালনাধীন ধাত্রীগৃহে লালিত-পালিত হবে। তবে প্লেটো অনিয়ন্ত্রিত যৌন-বাসনা পূরণ করার কথা কখনও বলেননি। কারিগর শ্রেণীর লোকেরা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিক হতে পারবে। তাদের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কোন বাধা-নিষেধের কথা প্লেটো বলেননি। তার মতে একটি নারী কমিটি থাকবে যার কাজ হবে বিবাহের পর দশ বছর পর্যন্ত নব-দম্পতিদের তত্ত্বাবধান করা। বিবাহের পর দশ বছরের মধ্যে কোন সন্তান না হলে দম্পতি বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকারী হবে। পুরুষেরা ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ বৎসরের মধ্যে বিবাহ করবে। মেয়েদের বিবাহের বয়স হবে যোল থেকে কুড়ির ভেতর। দাম্পত্য জীবনে বিশ্বাস ভঙ্গ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পুরুষদের পক্ষে সামরিক বিভাগে কাজ করার বয়স কুড়ি থেকে ষাট। স্ত্রীলোকেরা সন্তানধারনের পর এবং পঞ্চাশ বছর হওয়ার আগে পর্যন্ত সামরিক বিভাগে যোগদান করতে পারবে। প্লেটো মনে করতেন, যেহেতু বিবাহিত নরনারীর কর্তব্য ভাল সন্তানের জন্মদান করা, সেহেতু রাষ্ট্র কর্তৃক বিবাহিত নর-নারীর সম্পর্কের তত্ত্বাবধান অবাঞ্ছিত মনে হলেও তাকে সমর্থন করা চলে। তার মতে, উচ্চতর শ্ৰেণীগুলোই রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য ব্যক্তিগত মালিক হতে পারবে না বা পারিবারিক জীবন-যাপন করতে পারবে না। এদের জীবন-যাপনের প্রণালী হবে অত্যন্ত কঠোর। যাদের উপযুক্ত বয়স, রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের দ্বারা তাদের যৌন জীবন নিয়ন্ত্রিত হবে এবং কাদের ঔরসজাত সন্তান তাদের পিতার অজান্তে রাষ্ট্রের দ্বারা প্রতিপালিত হবে। অনেকের মতে, প্লেটোর এই জাতীয় সিদ্ধান্ত কষ্ট-কল্পিত এবং কুরুচিপূর্ণ। তবে অনেকের মতে, এ হল আত্মীয় পােষণ এবং পারিবারিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মত অকল্যাণের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করার জন্য চরম প্রচেষ্টা।[১০]
প্রাচীন রোমে আদিনারীবাদী ধারণা
খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে স্টোইক দার্শনিক গাইয়াস মিউসোনিয়াস রুফাস (Gaius Musonius Rufus) এর লেখা ২১টি ডিসকোর্সের একটি ছিল "That Women Too Should Study Philosophy", অর্থাৎ "নারীরও দর্শন পড়া উচিৎ"। এই ডিসকোর্সে তিনি দর্শনে নারীদের সমান শিক্ষার অধিকার থাকা উচিৎ বলে যুক্তি দেন। তিনি বলেন, "... কোন পুরুষ দর্শন ছাড়া যথার্থভাবে শিক্ষিত হতে পারেনা, একই কথা নারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এছাড়া পুরুষের মতো নারীর মধ্যেও সত্য সদ্গুণের প্রতি স্বাভাবিক আগ্রহ রয়েছে, এবং এটি অর্জন করার সামর্থ রয়েছে। একজন পুরুষ যেমন ভাল ও নৈতিক কাজের দ্বারা সুখ লাভ করে ও মন্দ কাজের দ্বারা দুঃখ লাভ করে, একই কথা নারীর বেলায়ও সত্য। যদি তাই হয় তাহলে কিকরে উত্তম জীবন যাপনের উপায় সম্পর্কে জ্ঞানার্জন পুরুষের জন্য সঠিক হতে পারে, কিন্তু নারীর জন্য বেঠিক হয়ে যায়? আর এই উত্তম জীবন যাপনের জ্ঞানকেই তো দর্শন বলে।"[১১]
মুসলিম বিশ্বে আদিনারীবাদ
ইসলামের প্রথম দিকে নারী অধিকার
খ্রিস্টীয় ৭ম শতকে ইসলামের প্রথম দিকে নারী অধিকারের পরিবর্তনসমূহ বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং উত্তরাধিকারপ্রাপ্তিতে প্রভাব ফেলেছিল।[১২] অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ ইসলাম অনুসারে, সেসময় আরব সমাজগুলোতে কন্যা শিশুহত্যার নিষেধাজ্ঞার ফলে সাধারণভাবে নারীর অবস্থার উন্নতি হয়েছিল, যদিও কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে ইসলামের পূর্বে ও পরে উভয়ক্ষেত্রেই শিশুহত্যার চর্চা ছিল।[১৩] ইসলামী আইন অনুসারে, এই সময়ে বিবাহকে চুক্তি হিসেবে দেখা শুরু হয়, যেখানে নারীর সম্মতি (সক্রিয় সম্মতি বা মৌন সম্মতি) বাধ্যতামূলক ছিল।[১৪][১৫][১৬][১৭] "পূর্বে কন্যার পিতাকে বধূমূল্য (bride-price) হিসেবে যৌতুক দিতে হত, ইসলামী আইন অনুসারে বৈবাহিক উপহার হিসেবে যৌতুক প্রদান করা হয় যা স্ত্রী তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে অধিকার করতে পারে।"[১৫][১৬]
উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াট বলেন, মুহাম্মাদ তার সময়ে ও তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নারী অধিকার রক্ষায় কাজ করেছিলেন এবং নারী সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের উন্নয়ন করেছিলেন - এমনটা বলা যেতে পারে। ওয়াট ব্যাখ্যা করেন, "ইসলাম যে সময়ে শুরু হয়েছিল, নারীদের অবস্থা ভয়াবহ ছিল - তাদের সম্পত্তির অধিকার ছিল না, তাদেরকে পুরুষের সম্পত্তি হিসেবে দেখা হত, আর যদি কোন পুরুষের মৃত্যু হত তার সকল সম্পত্তি তার পুত্রদের কাছে চলে যেত"। মুহাম্মাদ "নারীদেরকে সম্পদ অধিকার, উত্তরাধিকার, শিক্ষা ও বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার দান করে তাদেরকে মৌলিক নিরাপত্তা প্রদান করেন"।[১৮] হাদ্দাদ এবং এসপোসিতো বলেন, "মুহম্মদ পারিবারিক জীবন, বিবাহ, শিক্ষা, এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী অধিকার ও বিভিন্ন সুবিধাদির সুযোগ করে দিয়ে সমাজে নারীর অবস্থার উন্নয়ন করতে সাহায্য করেন"।[১৬]
ইসলাম নারীদের অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছেন এই ধারণার নারীবাদী সমালোচনাও রয়েছে। লেইলা আহমেদ বলেন, ইসলামী ইতিহাস থেকে দেখা যায়, অন্তত কিছু নারী ইসলাম-পূর্ব যুগে সম্পদের উত্তরাধিকারী হতেন, ব্যাবসা পরিচালনা করতেন, নিজেদের স্বামী পছন্দ করে নিতেন, এবং সম্মানজনক পেশায় নিযুক্ত হতেন।[১৯] ফাতিমা মারনিসি একইভাবে যুক্তি দেখান, ইসলাম-পূর্ব যুগের রীতি নীতি নারীদের যৌনতা এবং নারীদের সামাজিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কম নয়, বরং অধিক মাত্রায় উদার ছিল।[২০]
ইসলামী স্বর্ণযুগ
৭ম শতকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কালের পরেই চলে আসে ইসলামী স্বর্ণযুগের সময়। সেসময় ইউরোপ যেখানে অন্ধকার যুগে আচ্ছন্ন, তখন প্রাচীন ইউরোপের জ্ঞানবিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে মুসলিম শাসনাধীন অঞ্চলগুলো জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চায় এগিয়ে গিয়েছিল। এই সময়টাকেই ইসলামী স্বর্ণযুগ বা গোল্ডেন এইজ অফ ইসলাম বলা হয়। পরবর্তীতে ইউরোপে রেনেসাঁ ও আধুনিক যুগের বিকাশে এই ইসলামী স্বর্ণযুগের বিশাল অবদান ছিল। ইসলামী স্বর্ণযুগের সময়কাল হল অষ্টম শতক থেকে চতুর্দশ শতক পর্যন্ত।[২১][২২][২৩] অবশ্য এই যুগের শেষ কবে তা নিয়েও পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। পরবর্তীতে যেসময়ে ইউরোপে আধুনিকতার বিকাশ ঘটতে থাকে ততদিনে এই মুসলিম বিশ্ব স্বর্ণযুগ থেকে সরে এসে অন্ধকারে নিমজ্জিত অবস্থায় প্রায়।
যাই হোক, আধুনিক যুগের পূর্বে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কোনও আনুষ্ঠানিক নারীবাদী আন্দোলন দেখা যায়নি। কিন্তু ইসলামী স্বর্ণযুগের সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন যারা নারী অধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের উন্নতির জন্য দাবি করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে মধ্যযুগীয় রহস্যবাদী ও দার্শনিক ইবনে আরাবী এর কথা বলা যায়। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, নবী হিসেবে নারীর চেয়ে পুরুষ অধিক আনুকূল্য লাভ করেছে। কিন্তু পুরুষের মত নারীও ওয়ালি হতে সক্ষম, তারাও আধ্যাত্মিক কার্যসমূহে মনোনিবেশ করতে পারেন।[২৪] ইসলামী স্বর্ণযুগে নারীদের অবস্থা বিশেষভাবে আলোচ্য। এখান থেকে বোঝা যায় ইসলামী স্বর্ণযুগে নারীরা অন্যান্য অঞ্চলের নারীদের থেকে কতটা এগিয়ে ছিলেন। সেইসময়ে নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলা যাক।
শিক্ষা
সম্পদশালী সম্ভ্রান্ত নারীগণ প্রায়ই ইসলাম ধর্মীয় এবং ইসলাম শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ দান করত, যদিও বিংশ শতকের পূর্বে এগুলোর মধ্যে খুব কম প্রতিষ্ঠানেই নারী শিক্ষার্থী ভর্তি হত। যেমন, ফাতিমা আল-ফিহরি ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে আল কারাওউইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, কিন্তু ১৯০০ এর পরেই এই বিশ্ববিদ্যালয় নারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা শুরু করে (যাদের মধ্যে ফাতিমা আল-কাব্বাজ উল্লেখযোগ্য)। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকের আইয়ুবীয় রাজবংশের বেলায়ও এই ব্যাপারটি দেখা যায়। দামেস্কোতে ১৬০টি মসজিদ ও মাদ্রাসা তৈরি করা হয়, এর মধ্যে নারীগণ ২৬টিতে ওয়াকফ ব্যবস্থায় (দাতব্য ট্রাস্ট বা ট্রাস্ট আইন) অর্থ দান করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকদের অর্ধেকই ছিল নারী।[২৫]
দ্বাদশ শতকের সুন্নি আলেম ইবনে আসাকির এর মতে, নারী শিক্ষার সুযোগ ছিল। তিনি বলেন বালিকা ও নারীরা শিক্ষাগ্রহণ করে ইজাজাহ্ (প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী) গ্রহণ করতে পারতেন এবং উলেমা ও শিক্ষিকা হতে পারতেন। এটি বিশেষ করে শিক্ষিত এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ পরিবারেই দেখা যেত, যেখানে পুত্র ও কন্যা উভয়ের জন্যই সর্বোচ্চ সাম্ভাব্য শিক্ষা নিশ্চিত করা হত।[২৬] ইবনে আসাকির নিজেই ৮০ জন ভিন্ন ভিন্ন নারী শিক্ষিকার কাছে পড়াশুনা করেছেন। মুহাম্মাদ মদিনায় নারীদেরকে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আগ্রহীদের জন্য প্রশংসা করেছিলেন:[২৭] "আনসার নারীরা কতই চমৎকার; লজ্জা তাদেরকে ধর্মশিক্ষায় শিক্ষিত হতে আটকাতে পারেনি।"
নারীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রেণীকক্ষে গিয়ে শিক্ষাগ্রহণ করা খুব বিরল ছিল। তারা অনানুষ্ঠানিক বক্তৃতা এবং মসজিদ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন ক্ষেত্রের শিক্ষা অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতেন। কোন কোন পুরুষ এই চর্চাকে অনুমোদন করতেন না, যেমন মুহাম্মাদ ইবনে আল-হাজ (মৃত্যু ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দ) সেই সময়ে নারীদের এই আচরণ ও এরকম অনানুষ্ঠানিত শিক্ষাগ্রহণের উপর বিতৃষ্ণ ছিলেন।[২৮]
মধ্যযুগে নারীর প্রসঙ্গে আব্দুল হাকিম মুরাদ লেখেন, "[ভাবুন] একজন শায়খের কাছ থেকে ধর্মগ্রন্থ [এর আবৃত্তি] শোনার সময় সকলে যখন একত্রিত হয় তখন নারীগণ কী করে। সেখানে নারীরাও ধর্মগ্রন্থের বাণী শোনার জন্য একত্রিত হয়। পুরুষেরা একদিকে বসে থাকে, নারীরা তাদের মুখোমুখি বসে। কখনও কখনও এও দেখা যায় যে, কোন নারী দাঁড়ালো, আবার বসে পড়ল, আবার উচ্চস্বরে আওয়াজ করল। এছাড়া তার আওরাহ্ সকলের সামনে চলে আসে। যেখানে নিজেদের গৃহেই নারীদের এরকম প্রকাশ নিষিদ্ধ, সেখানে মসজিদে পুরুষের সামনে এরকম আচরণ কিভাবে অনুমোদিত হতে পারে?" ('আওরাহ্' (Awra) বলতে নারীর শরীরের সেই অংশগুলোকে বোঝানো হয় যাকে ইসলাম অনুসারে ঢেকে রাখা উচিৎ।)
মধ্যযুগে নারীর প্রসঙ্গে আব্দুল হাকিম মুরাদ লেখেন, প্রাচ্যবাদী ইগনাজ গোল্ডজিহার দেখিয়েছেন যে, মধ্যযুগীয় হাদিস পণ্ডিতদের মধ্যে সম্ভবত পনের শতাংশ ছিল নারী, তারা মসজিদে শিক্ষাদান করতেন এবং নিষ্ঠার ও নৈতিকতার জন্য তারা সর্বজনীনভাবে তারা প্রশংসিত ছিলেন। কায়রোতে সাকলাতুনিয়া মাদ্রাসার মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে নারীর দ্বারা অর্থায়ন হত, এবং কেবল নারীরাই সেগুলোতে পড়াতেন ও কাজ করতেন।[২৯] পঞ্চদশ শতাব্দীতে, আল-সাখাভী তার সমগ্র ১২ খন্ডের জীবনী-সংক্রান্ত অভিধান দাও আল-লামি নামক গ্রন্থটিকে নারী পণ্ডিতদেরকে উৎসর্গ করেন, সেই গ্রন্থে ১,০৭৫ জন নারী পণ্ডিতের কথা উল্লেখ করা হয়।[৩০]
নাগরিক ও সামরিক পেশা
খিলাফতের সময় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় পটভূমি থেকে শ্রমশক্তি এসেছে, সেই সময়ে পুরুষ ও নারী উভয়ই বিভিন্ন পেশা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।[৩১] সেইসময় নারীরা প্রাইমারি সেক্টর (উদাহরণস্বরূপ কৃষক হিসাবে), সেকেন্ডারি সেক্টর (নির্মাণ শ্রমিক, বস্ত্রশিল্পে রং দেয়া ও চড়কার কাজ ইত্যাদি) এবং টারশিয়ারি সেক্টরের (বিনিয়োগকারী, চিকিৎসক, সেবিকা, গিল্ড এর প্রধান, দালাল, পাইকার, ঋণদাতা, পণ্ডিত ইত্যাদি) বিস্তৃত পরিসরের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ও বৈচিত্র্যময় পেশায় জড়িত ছিল।[৩২][৩৩] মুসলিম নারী সেই সময়কার বস্ত্রশিল্পের কিছু শাখা যেমন স্পিনিং, ডায়িং ও এমব্রয়ডারিতে একচেটিয়া ছিল।[৩২] সেই সময় বস্ত্রশিল্প ছিল সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে বেশি বিশেষায়িত ও বাজারমুখী শিল্প।
দ্বাদশ শতাব্দীতে ইসলামী দার্শনিক ও কাজি (বিচারক) ইবনে রুশদ (পাশ্চাত্যে যিনি আভেরোস নামে পরিচিত) প্লেটোর দ্য রিপাব্লিকের উপর একটি ভাষ্য রচনা করেছিলেন, যেখানে তিনি যৌনতার সমতা সম্পর্কে প্লেটোর মতামতগুলোকে পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি উপসংহারে পৌঁছেছিলেন যে, পুরুষরা নারীর চেয়ে শক্তিশালী হলেও নারীর পক্ষে পুরুষের মত কিছু কর্তব্য পালন করা সম্ভব। তিনি তার বিদায়াত আল-মুজতাহিদ (বিশিষ্ট বিচারকদের প্রথম পাঠ) গ্রন্থে তিনি আরও বলেন যে, এই কর্তব্যগুলোর মধ্য যুদ্ধে অংশগ্রহন করা অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। সমাজের নারীরা কেবল মা এবং স্ত্রী এর ভূমিকা পালন করাতে সীমাবদ্ধ রয়েছে - এই বিষয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।[৩৪] মুসলিম ইতিহাসের প্রথম দিকে, মুসলিম বিজয় ও ফিতনায় (গৃহযুদ্ধ) সৈন্য বা সেনাধ্যক্ষ হিসাবে কাজ করেছে এরকম উল্লেখযোগ্য নারীর উদাহরণ দেয়া যায়, যেমন নুসাইবাহ্ বিনতে ক্বাব আল মাজিনিয়াহ,[৩৫] আয়েশা,[৩৬] খাওলাহ্ এবং ওয়াফেইরা।[৩৭]
সম্পত্তি, বিবাহ ও অন্যান্য অধিকার
ইসলামী আইনের অধীনে নারীর উত্তরাধিকার হওয়া ও উত্তরাধিকার প্রদানের; স্বাধীনভাবে তাদের আর্থিক বিষয় পরিচালনার; এবং চুক্তির দ্বারা বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষমতা রয়েছে।[৩৮] হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর আইনের প্রফেসর নোয়া ফেল্ডম্যান লিখেছেন, "লিঙ্গবাদ এর জন্য সাধারণ আইন এর ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিবাহিত নারীদের মধ্যে সম্পত্তির অধিকার ছিল না, এবং তাদের স্বামী ব্যাতীত তাদের আইনগত ব্যক্তিত্বও ছিল না। ঔপনিবেশি আমলে যখন ব্রিটিশরা তাদের উপনিবেশগুলোতে মুসলিমদের ক্ষেত্রে শরিয়তের পরিবর্তে তাদের আইন প্রয়োগ করে, তখন মুসলিম বিবাহিত নারীরা তাদের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় যা তারা ইসলামী আইনে সবসময় লাভ করত।"[৩৯]
১৫ শতক থেকে আধুনিক যুগের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে পশ্চিমা বিশ্বে যেখানে বিবাহ বিচ্ছেদ খুব অস্বাভাবিক ছিল, সেসময় মুসলিম বিশ্বে বিবাহ বিচ্ছেদ (তালাক) এর হার তুলনামূলকভাবে সাধারণ ঘটনা ছিল। অন্তত একটি গবেষণা অনুযায়ী মামলুক সালতানাত এবং অটোমান সাম্রাজ্যে প্রথম দিকে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় বেশি ছিল।[৪০] ১৫ শতকের মিশরে আল-সাখাভী ৫০০ জন নারীর বৈবাহিক ইতিহাস নথিবদ্ধ করেছিলেন, যা মধ্যযুগের বিবাহের সবচেয়ে বড় নমুনা। সেখান থেকে দেখা যায়, মিশর ও সিরিয়ার মামলুক সালতানাতের অন্তত এক তৃতীয়াংশ নারী একাধিক বিবাহ করেছিলেন, এবং অনেকে তিনবার বা তারও বেশি বিবাহ করেছিলেন।[৪১]
মধ্যযুগীয় ইউরোপ
মধ্যযুগীয় ইউরপের আদিনারীবাদের ভূমিকা
মুসলিম বিশ্ব থেকে এবারে ইউরোপে চলে যাচ্ছি। মধ্যযুগীয় ইউরোপে মনে করা হত যে নারীরা বুদ্ধিতে ও নৈতিকতায় পুরুষের চেয়ে দুর্বল। আর মানুষেরা তাদের এই ধারণাকে জাস্টাফাই করত বাইবেলের কাহিনী দিয়ে। স্বর্গে ইভের পাপের কারণে মানুষকে পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে দুঃখ দুর্দশা সহ্য করে হয়। ইভ নারী ছিলেন, তাই মরের সব নারীর বুদ্ধি ও নৈতিকতাই "ইভের মত কম"! নারীদের উপর অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করা হত আর সেগুলোর ন্যায্যতা হিসাবে ইভের ঐ গল্পকে ব্যবহার করা হত। এইসব বিধিনিষেধগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল নারীর সম্পত্তির অধিকার না থাকা, এবং সবসময় পিতা বা স্বামী কথা মেনে চলতে বাধ্য থাকা।[৪২] কিন্তু মধ্যযুগেই এরকম দৃষ্টিভঙ্গি, ও সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি হওয়া বিভিন্ন বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তৈরি হয়েছিল। মধ্যযুগের যেসব আদিনারীবাদীগণ নারীবাদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন হ্রোৎস্ভিতা, মারি ডি ফ্রান্স, এলেনর অফ অ্যাকুইটাইন, বেত্তিসিয়া গোজ্জাদিনি, নিকোলা দে লা হেয়ি এবং ক্রিস্টিন দে পিজঁ।[৪৩]
এলেনর অফ অ্যাকুইটাইন ও ক্রিস্টিন দে পিজঁকে নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে। অন্যদের বিষয়ে কিছু কথা বলে নেয়া যাক। হ্রোৎস্ভিতা (Hrotsvitha, ৯৩৫-৯৭৩ খ্রি.) একজন জার্মান সেক্যুলার ক্যাননেস ও নান ছিলেন। তিনি অটোনিয়ান রাজ্যের রাজত্বকালে নাটক ও কবিতা লিখেছেন। তাকে জার্মানি অঞ্চলের প্রথম লেখিকা ছিলেন, সেই সাথে ছিলেন জার্মানির প্রথম নারী ঐতিহাসিক, এন্টিকুইটির যুগের পর তিনিই প্রথম পশ্চিম ইউরোপে নাটক লেখেন (নারী ও পুরুষ সকলের মধ্যেই প্রথম),[৪৪] সেই সাথে তিনি জার্মানির প্রথম নারী কবিও ছিলেন।[৪৫] তার রচিত ছয়টি ছোট নাটককে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্ম বলে বিবেচনা করা হয়। নারীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইতিহাস লিখেছেন এরকম খুব কম ঐতিহাসিকই রয়েছেন, এর মধ্যে তিনি একজন।[৪৬] তাকে তার যুগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[৪৭] তিনি জার্মান হলেও তার সব লেখাই ল্যাটিন আষায়। ১৬০০ এর শতকে তার রচনাগুলো আবিষ্কার ও অনুবাদ করা হয়।[৪৮] ১৯৭০ এর দশকে নারীবাদীরা তার কাজগুলোকে নারীবাদী ও জেন্ডার সংক্রান্ত প্রসঙ্গের আলোকে পুনরাবিষ্কার করা শুরু করে।[৪৯][৫০] তারা দেখান যে অতীতে নারীরা সমাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, কিন্তু সমাজ তাদেরকে মনে রাখেনি, বিস্মৃত হয়েছে।[৫১] তার লেখায় বাইবেলীয় ন্যারেটিভ পাওয়া যায়।[৫২] বাইবেলের মতো তিনিও ভাবতেন যে নারীরা শারীরিক ও বুদ্ধিগতভাবে পুরুষের তুলনায় হীনতর। এছাড়া এও ভাবতেন যে তার নিজের যত মহৎ কাজ আছে সব ঈশ্বরেরই, তার নয়।[৫৩] যাই হোক, তিনি মনে করতেন, নারী নিজেকে যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত রাখা ও আত্ম-নির্ণয়ের ক্ষমতা আছে, এই চিন্তাকে তখনকার দিনে খুব প্রগতিশীল হিসেবে দেখা হতো। তিনি নারীকে সৎ, সাহসী, বুদ্ধিমতী ও ঈশ্বরের নিকটতর বলে দাবি করেছেন। বলেছেন যে, নারীরা দুর্বল লিঙ্গ বলে তার মধ্যে ঈশ্বর বেশি করে প্রবেশ করতে পারে এবং তারা বেশি করে ঈশ্বরের করুণা লাভ করে। এভাবে নারীরা দুর্বল হলেও ঈশ্বরের কাছে নারীরা পুরুষেরই সমান। তিনি ভাবতেন নারীর জন্য যিশুর উদ্দেশ্যে কুমারী থাকাই সর্বোত্তম, কিন্তু তিনি যৌনকর্মীদের প্রতিও সহানুভূতিশীলতা দেখিয়েছেন।[৫৪] এখান থেক বোঝা যায় তিনি তদকালীন নারীর জীবন সম্পর্কে সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টি ধারণ করতেন।[৫৫] তার নাটকগুলো তদকালীন সমাজের বিবাহ, ধর্ষণ এবং নারীর সামগ্রিকীকরণ বা অবজেক্টিফিকেশন বা নারীকে সামগ্রী বা অবজেক্ট হিসেবে দেখার বিষয়ে আলোকপাত করে।[৫৬] তার "Dulcitius" ও "Callimach" নাটক দুটো ধর্ষণকে কেন্দ্র করে বানানো, সেই সময়ে ধর্ষণ নারীর জন্য খুব সাধারণ ধরণের নির্যাতন ছিল।[৫৭] একই সাথে তিনি নাটকদুটোতে এও দেখিয়েছেন যে ধর্ম নারীকে স্বাধীনতা ও মুক্তি দিতে পারে, তাদের ক্ষমতায়ন করতে পারে।[৫৮]
মারি ডি ফ্রান্স (Marie de France) ( ১১৬০ খ্রি. - ১২১৫ খ্রি.) ছিলেন ১২শ শতকের একজন কবি, যাকে ফ্রান্সের প্রথম নারী কবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি অনেক ফ্যাবলস বা উপদেশমূলক গল্প লিখেছিলেন যেগুলোর মধ্যে তিনি ঈশপের অনেক গল্পের ইংরেজিতে অনুবাদও ছিল। তার এই ফ্যাবলগুলোতে নারী চরিত্রগুলোকে শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, তিনি অনেক নারী-কেন্দ্রিক ফ্যাবলও লিখেছেন।[৫৯] বেত্তিসিয়া গোজ্জাদিনি (Bettisia Gozzadini ) (১২০৯ খ্রি. - ১২৬১ খ্রি.) একজন আইনজীবী ছিলেন এবং তিনি ১২৩৯ সালের দিকে বলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাসনা করতেন। তিনিই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করা প্রথম নারী হিসেবে বিবেচিত হন। গোজ্জাদিনি সম্পর্কে আরেকটি লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে তিনি পুরুষের পোশাক পড়তেন। অবশ্য জানা যায় নি যে তিনি তা সামাজিক চাপে পড়তেন নাকি ব্যক্তিগত ইচ্ছাতেই পড়তেন।[৬০] গোজ্জাদিনি একজন অসাধারণ বাগ্মীও ছিলেন। নিকোলা দে লা হেয়ি (Nicola de la Haye) (মৃত্যু ১২৩০ খ্রি.) ছিলেন একজন জমিদার ছিলেন। তিনি তার পিতার থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে কেবল ইংল্যান্ড ও নরম্যান্ডিতে জমিই লাভ করেননি, সেই সাথে লিংকনশায়ার এর শেরিফ ও লিংকন দুর্গের কনস্টেবলও হয়েছিলেন। দুর্গের প্রধান কার্যাবাহীকে কনস্টেবল বলা হত। আর তিনি দুর্গের দায়িত্বপালনরত অবস্থায় দুবার দীর্ঘকালব্যাপী অবরোধের হাত থেকে দুর্গটিকে প্রতিরক্ষা করেছিলেন। বৃদ্ধ বয়সের জন্য অবসরপ্রাপ্তির আগ পর্যন্ত তিনিই সেই দুর্গের দায়িত্ব পালন করেন।[৬১][৬২]
কোর্টলি লাভ, শিভ্যালরি ও এলেনর অফ অ্যাকুইটাইন
এলেনর অফ অ্যাকুইটাইন (১১২২ বা ১১২৪ খ্রি. - ১২০৪ খ্রি.) ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে রাণী থাকার সময়কালে সেই দুই দেশে কোর্টলি লাভ (courtly love) এর ধারণা নিয়ে এসেছিলেন। কোর্টলি লাভ হচ্ছে একটি সাহিত্যিক ধারণা যার দ্বারা সম্ভ্রান্ত নারীদের বিবাহবহির্ভূত প্রেমসর্বস্ব ভালোবাসাকে বোঝানো হয়।[৬৩][৬৪] সেই সময় সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিবাহ রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারণে হত। সম্ভ্রান্তদের এই বিয়েতে প্রেম সম্পর্কে যে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে তা সেভাবে ছিল না।[৬৫] কোর্টলি লাভকে তাই বৈবাহিক সম্পর্কে যে ভালোবাসার অভাব রয়েছে তার প্রকাশের একটা উপায় বলা যায়।[৬৬] সেই সময় লিরিক কবিতাগুলোতে কোর্টলি লাভ এর ধারণা তৈরি হয় ও সম্ভ্রান্তদের মধ্যে এই ধারণাটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই ভালোবাসায় শারীরিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ ছিল, কেবল কেবল দেহহীন প্রেমই অনুমোদিত ছিল।[৬৭] তবে কিছু কিছু সাহিত্যে দৈহিক সম্পর্কও দেখা যায়। এলেনরই যে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে কোর্টলি লাভ এর ধারণা প্রথম প্রচলন করেন তা জোড় দিয়ে বলা যায় না, কিন্তু তিনি যে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক ছিলেন ও এর পেছনে তার একটা বিশাল অবদান আছে তা স্বীকার করতেই হয়।[৬৮]
সাহিত্যে এরকম প্রেমের উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তার অস্তিত্ব ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।[৬৯] তবে কেউ কেউ মনে করেন এলেনরের পয়টিয়ের এর কোর্টে কোর্টলি লাভের চর্চা হত। এরকম সাহিত্যগুলোতে শিভালরি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। শিভালরি দ্বারা নাইটদের আচরণবিধি বোঝানো হলেও নারীদেরকে সম্মান করাও সেসময় শিভালরির অংশ হয়ে ওঠে।[৭০] আর সেটা সেই সময়ে যখন নারীদেরকে পাপী মনে করার প্রবণতা ছিল, তাদেরকে বুদ্ধিতে ও নৈতিকতায় দুর্বল মনে করা হত। মেরিওলজি (যিশুর মা মেরিকে নিয়ে স্টাডি) নামক থিওলজিকাল আইডিয়া জনপ্রিয় হবার সাথে সাথে মধ্যযুগে নারীদের সম্মান কিছুটা বৃদ্ধি পায়।[৭১] শিভালরিতে তার প্রভাব রয়েছে।
অনেক বিশ্লেষকই কোর্টলি লাভকে তদকালীন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামন্ততন্ত্র, পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে দেখে।[৭২][৭৩] আবার অনেকে একে সেইসময়কার নারীদের ভালোবাসাহীন বন্দী জীবন থেকে মুক্তি হিসেবে দেখেন। বোঝাই যাচ্ছে, তদকালীন ধর্মীয় সমাজ এই ব্যাপারটিকে ভালভাবে নেয় নি। ত্রয়োদশ শতক থেকে কোর্টলি লাভের প্রতি নিন্দা শুরু হয়। চার্চ একে "sexual rebellion" বা "যৌন বিদ্রোহ" বলে উল্লেখ করেন।[৭৪][৭৫] আরেক আদিনারীবাদী ক্রিস্টিন দে পিজঁ তার ১৪০৩ সালে প্রকাশিত কার্টেসি গ্রন্থ বুক অফ থ্রি ভারচুস (Le Livre des trois vertus)-এ কোর্টলি লাভকে অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের জাস্টিফিকেশন হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
এলেনর অফ অ্যাকুইটাইন এর পয়টিয়ের এর কোর্ট আরেকটি বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে প্রেম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। ১২শ শতকের লেখক এন্ড্রিয়াস ক্যাপেলেনাস তার দি আর্ট অফ কোর্টলি লাভ গ্রন্থে লেখেন, এলেনর, তার কন্যা মেরি, নারবোন এর ভিসকাউন্টেস আরমেনগার্দ ও ইসাবেল অফ ফ্লেন্ডার্স সেই কোর্টে বসে প্রেমিক প্রেমিকাদের ঝগড়া শুনতেন এবং বিচারকমণ্ডলী হিসেবে কাজ করতেন। এন্ড্রিয়াস এরকম ২১টি কেস নথিবদ্ধ করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে একটি কেস খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সেখানে যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছিল সেটি ছিল "বৈবাহিক সম্পর্কে কি সত্যিকারের ভালোবাসা থাকে?" বিচারকমণ্ডলী সিদ্ধান্তে আসেন, "বৈবাহিক সম্পর্কে সত্যিকারের ভালোবাসা একেবারেই সম্ভব নয়"।[৭৬] যাই হোক, ইউরোপের মধ্যযুগের আদিনারীবাদের আলোচনায় কোর্টলি লাভ ও শিভালরি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা দরকার, কিন্তু পরিসর সীমিত থাকায় এই ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।
যুক্তরাজ্যের ১৩৮১ এর কৃষক বিদ্রোহে নারীর ভূমিকা
১৩৮১ সালের কৃষক বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ ভূমিদাসত্বের বিরুদ্ধে শেষ মধ্যযুগীয় বিদ্রোহ, এবং এই বিদ্রোহে অনেক নারী বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছিল। এই বিদ্রোহের একটি অন্যতম ঘটনা সম্পর্কে জানা যাক। দিনটি ছিল ১৩৮১ সালের ১৪ জুন, সেদিন লর্ড চ্যান্সেলর এবং ক্যান্টারবেরি এর আর্চবিশপ সাইমন অফ সাডবারিকে টাওয়ার অফ লণ্ডন থেকে টানতে টানতে নিয়ে আসা হয় এবং তার শিরশ্ছেদ করা হয়। কৃষক বিদ্রোহীদের যে দলটি এই কাজ করে তাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জোহানা ফেরোউর নামে এক নারী যিনি সাডবারির মাত্রাতিরিক্ত করারোপণের জন্য এই কঠোর পদক্ষেপের আদেশ দেন।[৭৭] সাইমন অফ সাডবারির সেই নিষ্ঠুর করাদায়ে অবদান রাখার জন্য ফেরোউর লর্ড হাই ট্রিজার বা কোষাধ্যক্ষ স্যার রবার্ট হেলসের বেলাতেও শিরশ্ছেদের আদেশ দেন।[৭৮] বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ফেরোউর স্যাভয় প্রাসাদটি পুড়িয়ে দেন এবং ডিউক এর সোনা ভরা সিন্দুক চুরি করেন। প্রধান বিচারপতি জন ক্যাভেন্ডিশও শিরশ্ছেদের শিকার হয়েছিলেন। তার বেলায় সেই শিরোশ্চেদের আদেশ দিয়েছিলেন ক্যাথেরিন গামেন, তিনি এই বিদ্রোহের আরেকজন নারী নেত্রী ছিলেন।[৭৮]
বেটস কলেজের ইংরেজির সহযোগী অধ্যাপক সিলভিয়া ফেডেরিকোর মতে, বিদ্রোহে অংশগ্রহন করার ক্ষেত্রে নারীরা প্রায়শই দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করত, আর এই বিদ্রোহের বেলায় তারা অনেক বেশি আগ্রহীও ছিল। বিদ্রোহটিতে পুরুষেরা যা যা করেছিল নারীরাও তাই তাই করেছিল, তারা এই সরকার-বিরোধী বিদ্রোহে পুরুষদের মতই সহিংস ছিল। এই বিদ্রোহে নেতাদের মধ্যে কেবল জোহানা ফেরোউরই একমাত্র নারী ছিলেন না, সেখানে আরো কয়েকজন নারী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে একজন নেত্রী কেন্ট এর মেইডস্টোন কারাগারের বিরুদ্ধে একটি হামলায় উৎসাহ প্রদানের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, আরেকজন নেত্রী অনেকগুলি প্রাসাদ লুণ্ঠনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। সেই লুণ্ঠনের ক্ষেত্রে প্রাসাদগুলোর দাসগণ এতটাই ভয় পেয়েছিল যে পরবর্তীতে তারা আর কখনই সেই প্রাসাদগুলোতে ফিরে যাওয়াকে যথেষ্ট নিরাপদ বলে মনে করে নি। যদিও এই বিদ্রোহে নেত্রীদের সংখ্যা অনেক ছিল না, কিন্তু বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী উন্মত্ত জনতার মধ্যে নারীর সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে অনেক বেশি ছিল। যেমন স্যাফকে ৭০ জন নারী বিদ্রোহী ছিল।[৭৯]
এই বিদ্রোহে নারীদের অংশগ্রহণের জন্য এবং কিছু ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দানের ভূমিকা পালন করার জন্য উপযুক্ত কারণ ছিল। মধ্যযুগের ইউরোপে পোল ট্যাক্স বলে একটি বিশেষ রকমের করের চল ছিল, প্রতি ব্যক্তির উপর যে কর আরোপিত হত তাকেই পোল ট্যাক্স বলা হত। ব্যক্তি উপার্জন করুক বা না করুক, তার জমিজমা থাকুক বা না থাকুক, তার উপর এই কর আরোপিত হতই। নারী-পুরুষ সকলের উপরেই এই কর আরোপিত হত। ১৩৮০ সালে বিবাহিত নারীদের উপর আরোপিত পোল ট্যাক্স এর পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। তাই এই বিদ্রোহে পুরুষের মত নারীর সহিংস অংশগ্রহণে অবাক হবার কিছুই ছিল না। সেইসময় নারীদের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন সহিংস কর্মকাণ্ড সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ঘৃণাকে তুলে ধরে।[৭৯]
ক্রিস্তিন দে পিজঁ
ক্রিস্তিন দে পিজঁ (Christine de Pizan) (১৩৬৪ খ্রি. - ১৪৩০ খ্রি.) একজন ইতালীয় এবং ফরাসি লেখিকা ছিলেন। নারীদের জন্য তার দ্য বুক অফ দ্য সিটি অফ লেডিস এবং দ্য ট্রেজার অফ দ্য সিটি অফ লেডিস গ্রন্থের জন্য তাকে সব থেকে বেশি স্মরণ করা হয়। মধ্যযুগীয় ফ্রান্সে ক্রিস্তিন ছিলেন বিশিষ্ট নীতিবিদ ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ।
ক্রিস্তিন গদ্য ও পদ্য দুইভাবেই অনেক লেখালিখি করেছেন। তার রচনাগুলোর মধ্যে, রাজনৈতিক গ্রন্থ, মিররস ফর প্রিন্সেস (একটি সাহিত্যিক ঘরানা), চিঠি এবং কবিতা রয়েছে। ক্রিস্তিনের গ্রন্থ লে ডিত দে লা রোজ (দ্য টেল অফ দ্য রোজ) প্রকাশিত হয়েছিল ১৪০২ সালে জঁ দে মিউঁ এর অত্যন্ত জনপ্রিয় বই রোম্যান্স অফ দ্য রোজ এর প্রতিবাদ হিসেবে। রোম্যান্স অফ দ্য রোজ গ্রন্থে নারীকে প্ররোচক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ক্রিস্তিন দাবি করেছিলেন যে মিউনের দৃষ্টিভঙ্গিগুলি নারীবিদ্বেষী, অশ্লীল, অনৈতিক, এবং নারীদের অপমানজনক ছিল। এর পর শুরু হয়ে যায় ক্রিস্তিনের সাথে মিউঁ এর পত্রদ্বন্দ্ব। দুজনই অনেকবার নিজেদের মধ্যে চিঠি আদান-প্রদান করেন এবং কেউই কাউকে এতটুকু ছাড় না দিয়ে প্রত্যেকেই নিজেকেই সমর্থন করে যান। শেষে এক পর্যায় ক্রিস্তিন কুইরেলে ডু রোমান দে লা রোজ (লেটারস অন দ্য ডিবেট অফ দ্য রোজ) প্রকাশ করেন।[৮১] এখানে ক্রিস্তিন এই বিষয়ে তার সমস্ত যুক্তি তুলে ধরেন। তবে এটি নিছকই যুক্তির এপোলোজেটিক টাইপের বই ছিল না, এখানে ক্রিস্তিন তার নিজস্ব রচনাশৈলীকে ব্যবহার না করে ব্যবহার করেছিলেন এক বিশেষ রকমের আলঙ্কারিক কৌশলকে, যা আজ এন্টিফ্রাসিস নামে পরিচিত।[৮২]
১৪০৫ খ্রিস্টাব্দে ক্রিস্তিন তার সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম, দ্য বুক অফ দ্য সিটি অফ লেডিজ (Le Livre de la cité des dames) এবং দ্য ট্রেজার অফ দ্য সিটি অফ লেডিজ (Le Livre des trois vertus) গ্রন্থ দুটি প্রকাশ করেছিলেন। এগুলির মধ্যে প্রথমটি সমাজের নারীর অতীত অবদানগুলির গুরুত্বকে দেখায় এবং দ্বিতীয়টি সকল এস্টেটের নারীকে কীভাবে দরকারী গুণাবলির বিকাশ করতে হয় সেই বিষয়ে শিক্ষা দেয়।[৮৩]দ্য বুক অফ দ্য সিটি অফ লেডিস গ্রন্থে ক্রিস্তিন একটি প্রতীকী শহর তৈরি করেন যেখানে নারীদের কাজের মূল্য দেয়া হয় এবং তাদের সমর্থন করা হয়। তিনি তিনটি রূপক চরিত্র তৈরি করেন - যুক্তি, ন্যায়, এবং সততা। সেই যুগে বিভিন্ন ধারণা ও আবেগ প্রকাশের জন্য এরকম রূপক চরিত্র তৈরি করা সাহিত্যের একটি সাধারণ ধারা ছিল, এবং বিভিন্ন গ্রন্থে ও কাব্যে এই চরিত্রগুলোকে দেখা যায়। এই তিন চরিত্রদেরকে দিয়ে তিনি সংলাপ তৈরি করেন, বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর তৈরি করেন, আর পুরোটাই করা হয়েছিল নারীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।[৮৪] একসাথে তারা নারীদের সমস্যা ও পরিণতি নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন। কেবল নারীর কথা, উদাহরণ ও মতামত এই রচনায় বিভিন্ন সাখ্যপ্রমাণ হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে। সেই গ্রন্থে যুক্তি নামক চরিত্রটির মধ্য দিয়ে ক্রিস্তিন বলেছিলেন নারীদের নিয়ে স্টিরিওটাইপ বা প্রচলিত ধ্যান ধারণাগুলো ততদিন পর্যন্ত টিকে থাকবে যতদিন পর্যন্ত না তাদেরকে আলাপ আলোচনাগুলোতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হবে।[৮৫] মধ্যযুগীয় ইউরোপে নারী ও পুরুষের নৈতিকতার মধ্যে পার্থক্য একটি অন্যতম বিতর্কের বিষয় ছিল। সিটি অফ লেডিস গ্রন্থে ক্রিস্তিন এই বিতর্কটি সামনে নিয়ে এসেছিলেন। বিশেষ করে তিনি এরিস্টোটলীয় ভারচু এথিক্স ও নারী নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গিকে সেই গ্রন্থে নিয়ে আসেন।[৮৬] ক্রিস্তিন বারবার ধর্মতাত্ত্বিক যুক্তি ব্যবহার করে বলেছেন, পুরুষ এবং নারী ঈশ্বরের চিত্র অনুযায়ী তৈরি হয় এবং উভয়ের আত্মাই ঈশ্বরের সদ্গুণকে প্রাপ্ত করতে সক্ষম।
ট্রেজার অফ দ্য সিটি অফ লেডিস গ্রন্থে ক্রিস্তিন শহরের নারী সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, এবং কিভাবে নারী সদ্গুণ বা নৈতিকতা অর্জন করবে তার নির্দেশনা দেন। এই গ্রন্থে তিনি এই অবস্থান নেন যে, সকল নারী নম্রতা, অধ্যবসায় ও সততা অর্জন করতে সক্ষম, এবং যথাযথভাবে শিক্ষা গ্রহণ করা সকল নারী সিটি অফ লেইডিস এর সুযোগ্য নাগরিক হতে পারেন। তিনি নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে নারীদেরকে উপদেশ দিয়ে বলেন যে কিভাবে ১৫শ শতকের ফরাসী সমাজে নারীর উপর আসা বাঁধাগুলোকে কাটিয়ে ওঠা যায়।[৮৭] অগাস্টিন অফ হিপ্পো ও অন্যান্য সেইন্টের সূত্র দিয়ে ক্রিস্তিন সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়দেরকে উপদেশ দিয়েছেন যে কিকরে ঈশ্বরের ভালোবাসা অর্জন করা যায়। ক্রিস্তিন ঈশ্বরের কন্যা হিসেবে যুক্তি, সততা ও ন্যায়কে রূপক চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করে তাদের মধ্য দিয়ে সেই গ্রন্থে লিখেছেন। এই তিন কণ্যা সেইসব সদ্গুণের প্রতিনিধিত্ব করে যেগুলো নারীরের সাফল্যের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এইসব সদ্গুণগুলোর ধর্মনিরপেক্ষ উদাহরণ প্রদানের মাধ্যমে ক্রিস্তিন নারীদেরকে তাদের জীবনের অর্থের সন্ধান করতে এবং মূল্যবান কাজ করতে প্রেরণা দেন। ক্রিস্তিন বলেন নারীর সাফল্য তাদের কার্যকরীভাবে কথা বলতে ও লিখতে পারার মধ্য দিয়ে ব্যবস্থাপনা ও মধ্যস্থতা করার মধ্যে নিহিত থাকে।[৮৮]
ক্রিস্তিন তার জীবনকাল ৪১টি সুপরিচিত কবিতা ও গদ্য প্রকাশ করেছেন এবং তিনি প্রথম পেশাদার নারী লেখক হিসাবে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি এতটাই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছিলেন যে তার গদ্যের জন্য রয়্যালটি দেয়া হতেবং সমসাময়িক বুদ্ধিজীবীগণ তাদের গ্রন্থাগারগুলোতে ক্রিস্তিনের বইগুলোর কপি রাখতেন।[৮৯] ক্রিস্তিনের রাজনৈতিক লেখাগুলিও কিছু মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। Livre de la paix গ্রন্থটিকে মানবতাবাদী গ্যাব্রিয়েল নৌদা সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেন এবং দেনিস দিদেরো, লুই মরেরি এবং প্রোসপার মাখশঁ তাদের বিশ্বকোষে ক্রিস্তিনকে নিয়ে অনেক বড় নিবন্ধ অন্তর্ভূক্ত করেছেন।[৯০] প্রয়োজনীয় সেনাবাহিনী ও উপাদানগুলো নিয়ে লেখা গ্রন্থটি ক্রিস্তিন Livre des fais d'armes et de chevalerie নামে ১৪১০ সালে প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এই সব গ্রন্থ পরবর্তিতে বিখ্যাত হলেও পরে সেগুলো থেকে ক্রিস্তিনের নাম হারিয়ে যেতে থাকে।
ক্রিস্টিনের লেখায় প্রাচীন দর্শন এবং মানবতাবাদী আদর্শের মিশ্রণ ঘটেছিল। আর তার লেখার শৈলী ছিল সেসময়কার জনপ্রিয় লেখকদের মতই। নারীদের সমর্থনে তার স্পষ্টভাষিতা ছিল সেই সময়ের জন্য একটি ব্যতিক্রম। তিনি তার লেখায় সমাজের প্রচলিত নারীবিদ্বেষী মনোভাব এবং ওভিদের আর্ট অফ লাভ, জ্য দে মিউঁ এর রোমান্স অফ দ্য রোজ এবং ম্যাথেওলাস এর ল্যামেন্টেশনস এর মত জনপ্রিয় নারীবিদ্বেষী রচনাগুলোর প্রতিবাদ করেছেন। তার সক্রিয়তা আধুনিক নারীবাদীদেরকে মুগ্ধ করেছে ও প্রেরণা জুগিয়েছে।[৯১] নারীদের জন্য এত অবদান রাখা ক্রিস্তিন ধীরে ধীরে ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যান। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে চ্যারিটি ক্যানন উইলার্ড, আর্ল জেফ্রি রিচার্ডস এবং সিমোন দ্য বোভোয়ারের মত পণ্ডিতদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ক্রিসটিনের কাজগুলো পুনরায় মানুষের নজরে এসেছে। সিমোন দ্য বোভোয়ার ১৯৪৯ সালে লেখেন, ক্রিস্তিনের Épître au Dieu d'Amour গ্রন্থেই প্রথমবারের মত একজন নারী তার লিঙ্গের সমর্থনে কলম ধরেছিলেন।[৯২]
১৫শ ও ১৬শ শতকের আদিনারীবাদ
রেনেসাঁর সময়ে নারীর উপর আরোপিত বিধিনিষেধ
রেনেসাঁর শুরুতে, নারীর একমাত্র ভূমিকা এবং সামাজিক তাৎপর্য ছিল কেবল প্রজনন করাতেই সীমাবদ্ধ।[৯৩] এই লৈঙ্গিক ভূমিকা একজন নারীর প্রধান পরিচয় এবং জীবনের উদ্দেশ্যকে সংজ্ঞায়িত করত। রেনেসাঁ মানবতাবাদীদের কাছে জ্ঞানপ্রেমী হিসেবে একজন আদর্শ ও সুপরিচিত ব্যক্তি সক্রেটিস বলেছিলেন, তিনি তার প্রথম স্ত্রী জ্যান্থিপ্পেকে সহ্য করেছিলেন, কারণ তিনি তাকে পুত্র দান করেছিলেন, ঠিক যেভাবে একটি হংসীর কোলাহল সহ্য করতে হয় কারণ তা ডিম ও বাচ্চা দেয়।[৯৪] এই উপমাটি এই দাবিকে সমর্থন করে যে, সেইসময় একজন নারীর একমাত্র ভূমিকা ছিল প্রজনন।
রেনেসাঁর সময় বিবাহ একজন নারীকে সংজ্ঞায়িত করত। নারী কাকে বিবাহ করছে তার উপর ভিত্তি করে তার পরিচয় তৈরি হত। একজন অবিবাহিত নারী হচ্ছে তার পিতার কাছে সম্পত্তি, আর বিবাহের পর নারী তার স্বামীর সম্পত্তি হয়ে যায়। তার স্বামীর বা পিতা কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধাগুলো ছাড়া তার খুব সামান্য অধিকারই ছিল। বিবাহিত নারীদেরকে তাদের স্বামীদের প্রতি বাধ্য থাকতে হত, এবং তারা সতী, আজ্ঞাবহ, আনন্দপূর্ণ, নম্র, বিনয়ী এবং যদি মিষ্টভাষী না হয় তবে নীরব থাকবে এটাই আশা করা হত।[৯৫] উইলিয়াম শেক্সপীয়ারের ১৫৯৩ সালের নাটক দ্য টেমিং অফ দ্য শ্রু -তে ক্যাথেরিনাকে তার বুদ্ধিমত্তা ও স্পষ্টভাষিতার কারণে তার নম্র স্বভাবের বোন বিয়াংকা এর তুলনায় অবিবাহযোগ্যা হিসেবে দেখানো হয়। পেট্রুশিও তাকে 'বশে আনবার' পর দেখা যায় পেট্রুশিও যেখানে যায় তার স্ত্রী ক্যাথেরিনও অনেকটা কুকুরের মত তাকে অনুসরণ করে। ক্যাথেরিনের এই বশ্যতা প্রসংশিত হয় এবং পার্টিতে আসা জনতা তাকে 'যথাযথ নারী' হিসেবে স্বীকার করে নেয়, কেননা তখন ক্যাথেরিনা গার্হস্থ্য বিষয়গুলোর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।[৯৬]
এরকম পরিস্থিতিতে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে বেশিরভাগ নারীই খুব কমই শিক্ষিত ছিল। ১৪২৪ সালে মন্টেফেল্ট্রো এর লেডি ব্যাপতিস্তা মালেতেস্তাকে পাঠানো একটি চিঠিতে, মানবতাবাদী লিওনার্দো ব্রুনি লিখেছিলেন: "আপনি এমন এক সময়ে বাস করেন, যেখানে শিক্ষার এতদূর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যে, এখানে শিক্ষিত নারী দূরের কথা, কোন শিক্ষিত পুরুষের সাথে সাক্ষাত হওয়াই কাকতালীয় ব্যাপার"।[৯৭] ব্রুনী নিজে ভাবতেন যে, নারীদের শিক্ষার কোন প্রয়োজন নেই, কেননা শিক্ষার প্রয়োজন আছে এমন কোন সামাজিক আলোচনায় নারীরা নিয়োজিত নন। একই চিঠিতে তিনি লেখেন, "কেন হাজারটা ... সূক্ষ্ম..., প্রহেলিকাময় বিষয়ের বাগ্মিতাসংক্রান্ত আলোচনাসভায় নারীদের ক্ষমতা কাজ করবে, যেখানে নারীরা কোনদিন আলোচনাসভা দেখেই নি? আলোচনাসভার বিবাদসমূহ, যেমন রণনীতি ও যুদ্ধের বিষয়গুলো পুরুষের জায়গা। কথা বলতে শেখা, কোন সাক্ষীর পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলা, কোন শাস্তির পক্ষে বা বিপখে কথা বলা, বা কারও খ্যাতির পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলা নারীর কাজ নয় ... এক কথায় তাকে এই কঠোর ও রুক্ষ আলোচনাসভাকে পুরোপুরিভাবে পুরুষের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।"[৯৭]
রেনেসাঁর সময়ের বিখ্যাত বৈঠকখানাগুলোতে সেইসময় বৌদ্ধিক বিতর্ক সংঘটিত হত, কিন্তু সেইসব স্থানে নারীদেরকে স্বাগত জানানো হয়নি। গণ আলোচনাসভাগুলোতে নারীদেরকে প্রবেশাধিকার না থাকা শিক্ষিত নারীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে, এবং তা সেইসময়ে নারীদের শিক্ষাগ্রহণের সম্ভাব্যতাকেও কমিয়ে দেয়। রেনেসাঁস মানবতাবাদীদের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ নারীও ছিলেন, যার নাম লরা সেরেটা। লরা সেরেটা (Laura Cereta) (১৪৬৯ খ্রি. - ১৪৯৯ খ্রি.) ছিলেন ১৫শ শতকের ইতালির একজন মহান নারী মানবতাবাদী এবং নারীবাদী লেখিকা। সেরেটা সেইসময় (১৪৮৮-৯২ সালে) ব্রেসিয়া, ভেরোনা ও ভেনিসের সবচেয়ে বড় পণ্ডিতদের মধ্যে একজন ছিলেন। অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের সাথে তার পত্রযোগাযোগের দ্বারা এটি পরিষ্কার হয়ে ওঠে।[৯৮] তার পত্রগুলোতে তার ব্যক্তিগত বিষয়াবলি, শৈশবের স্মৃতি, নারীর শিক্ষা, যুদ্ধ ও বিবাহ ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে।[৯৯] পরবর্তিতে জানা যায় তার চিঠিগুলো সাধারণ পাঠকদের উদ্দেশ্যেই লেখা ছিল।[১০০]
"ডাইনি সাহিত্য"
ম্যালেয়াস ম্যালেফিকারাম (বাংলা: ডাইনিদের হাতুরি) থেকে শুরু করে রেনেসাঁ ইউরোপে উইচ বা ডাইনিদের উপর ভিত্তি করে অনেক গ্রন্থই লেখা হয়েছে। সেসব গ্রন্থে তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে, তাদেরকে চিহ্নিত, বিচার ও শাস্তি দেয়ার উপায় সম্পর্কে লেখা হয়েছে।[১০১][১০২] এই গ্রন্থগুলো নারীদেরকে নৈতিকভাবে ভ্রষ্ট ও পাপী হিসেবে ভাবা, এবং নারীদের উপর অনেক বিধি নিষেধ চাপিয়ে দেবার যে দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে প্রচলিত ছিল তাকে শক্তিশালী ও স্থায়ী করে।
নারীশিক্ষার সমর্থনে কার্যক্রম
তবে, নারী সম্পর্কে এরকম নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের উপর নিষেধাজ্ঞাগুলো নিয়ে সকলে একমত হয়নি। সিমোন দে বুভোয়ার লিখেছেন যে "প্রথমবারের মত আমরা যে নারীকে তার লিঙ্গের পক্ষ নিয়ে কলম ধরতে দেখি, তিনি হলেন ক্রিস্তিন দে পিজঁ"। তিনি ১৫শ শতকে এই বিষয়ে Épître au Dieu d'Amour (প্রেমের ঈশ্বরের কাছে চিঠি) এবং দ্য বুক অফ দ্য সিটি অফ লাভ প্রকাশিত হয়।[১০৩] নারীর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রথম দিকের পুরুষ সমর্থকদের একজন হলেন হাইনরিখ করনেলিয়াস এগ্রিপ্পা। তিনি "দ্য সুপেরিয়র এক্সেলেন্স অফ উইমেন এগেইনস্ট মেন" নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।[১০৪]
ইংল্যান্ডের রাণী ক্যাথেরিন অফ এরাগন ১৫২৩ সালে নারী শিক্ষার অধিকারের উপর লেখা হুয়ান লুইস ভিভেস এর গ্রন্থ দ্য এডুকেশন অফ এ ক্রিশ্চিয়ান উইমেন গ্রন্থটিকে কমিশন করেন। এই গ্রন্থের নারী শিক্ষার অধিকারের কথা বলা হয়ে, এবং নারীর জন্য শিক্ষাকে উৎসাহিত ও জনপ্রিয় করতে বলা হয়।
ভিভেস এবং রেনেসাঁ মানবতাবাদী এগ্রিকোলা যুক্তি দেন যে, অন্তত সম্ভ্রান্ত নারীদের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন। রজার অ্যাশকাম রাণী প্রথম এলিজাবেথকে শিক্ষিত করে তোলেন। তিনি ল্যাতিন ও গ্রীক ভাষা জানতেন এবং তিনি উপলক্ষমূলক কবিতা লিখতেন। তার একটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে "অন মশিয়েরস ডিপারচার" যা এখনও সংকলিত হয়ে আছে। রাণী প্রথম এলিজাবেথকে বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়, তার মধ্যে মেধা ছিল, কিন্তু নারীর দুর্বলতা ছিল না, পুরুষের অধ্যবসায় এর গুণ তার মধ্যে ছিল, যেকারণে তিনি অনেক পরিশ্রমী ছিলেন। তার শরীর দুর্বল ছিল, কিন্তু তার হৃদয় ও সাহস ছিল একজন রাজার মত।[১০৫] দেখা যায় কেবল পুরুষের গুণগুলো আরোপ করেই তাকে ভাল শাসক হিসেবে দেখা হচ্ছে। রেনেসাঁ এর সময় রাণী প্রথম এলিজাবেথের মত একজন ক্ষমতাশালী ও সফল নারী হওয়ার অর্থ হচ্ছে, কোন না কোন ভাবে পুরুষের মত হওয়া। সেইসময় সমাজের এরকম দৃষ্টিভঙ্গি নারীর সম্ভাবনাকে সীমিত করে দিয়েছিল।[১০৫]
সেসময় সম্ভ্রান্ত ঘরের নারীদের শিক্ষা গ্রহণের সম্ভাবনা বেশি ছিল, তবে নিম্নশ্রেণীর নারীদের শিক্ষিত হওয়াটা অসম্ভব ছিল না। রেনেসাঁর সময়, মারঘেরিতা নামে একজন নারী প্রায় ৩০ বছর বয়সে পড়তে এবং লিখতে শিখেছিলেন, যাতে তার আর তার স্বামীর মধ্যকার পত্রযোগাযোগের ক্ষেত্রে কোন মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন না হয়।[১০৬] মারঘারিতা সেই সময়ের লৈঙ্গিক ভূমিকার বিরুদ্ধে গেলেও তিনি আলোকিত ব্যক্তিতে পরিণত হবার জন্য শিক্ষিত হন নি, বরং শিক্ষিত হয়েছিলেন কেননা তিনি আরও ভাল স্ত্রী হবার জন্য এবং সরাসরি তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য।
আধুনিক যুগের প্রথম দিকের শিক্ষিত নারী
যেসব নারীরা সেইসময় শিক্ষা লাভ করেছিলেন, তারা প্রায়ই উচ্চমানের শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন এবং নারী ও তাদের অধিকার এর পক্ষে লিখেছিলেন। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে ১৬শ শতকের ভেনিসবাসী লেখক মদেস্তা দি পোজ্জ দি ফরজি (Modesta di Pozzo di Forzi) (১৫৫৫ খ্রি. - ১৫৯২ খ্রি.) , যিনি নারীর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে লিখেছেন।[১০৭] তিনি ছিলেন একজন ভেনিশীয় লেখক ও কবি,[১০৮] যিনি মডারেটা ফন্টে ছদ্মনামে লিখতেন।[১০৯] নারীদের নিয়ে তার বিখ্যাত রচনাটি হচ্ছে "দ্য ওর্থ অফ উইমেন" যা তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলো ছাড়াও তার অন্যান্য রোমান্স ও ধর্মীয় সাহিত্যও রয়েছে। চিত্রকর সোফনিসবা অ্যাঙ্গুইসোলা (প্রায় ১৫৩২-১৬২৫) ক্রেমোনার একটি আলোকপ্রাপ্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এবং তার বোনেরা পুরুষের মানদণ্ডে শিক্ষিত ছিল এবং পাঁচজন বোনের চারজন পেশাদার চিত্রশিল্পী হয়ে ওঠেন। সোফোনিসবা এই পাঁচ বোনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সফল ছিলেন, তিনি স্পেনীয় রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের সভাচিত্রকর হবার সফলতা অর্জন করেন।
ধর্মসংস্কার
নারী অধিকার ও শিক্ষা উন্নয়নের জন্য ধর্মসংস্কার ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। প্রোটেস্ট্যান্ট বিশ্বাস গড়ে উঠেছিল ঈশ্বরের সাথে প্রত্যক্ষ মিথস্ক্রিয়ায় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। এতে বাইবেল ও প্রার্থনা গ্রন্থগুলো পাঠের সক্ষমতা অর্জন সকলের জন্যই প্রয়োজনীয় হয়ে যায়, এমনকি নারীদের জন্যেও। এর ফলে প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায় সাধারণ বালক ও বালিকাদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে মৌলিক অক্ষরজ্ঞান শেখানো হত।[১১০] তাছাড়া, প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদ আর নারীকে দুর্বল ও মন্দ-পাপী হিসেবে দেখত না, বরং সংস্কারের পর নারীদেরকে পুরুষের যোগ্য সঙ্গী হিসেবে দেখা হত, এবং মনে করা হত যে, সক্ষম স্ত্রী হবার জন্য নারীদের শিক্ষিত হওয়া উচিৎ।[১১১]
লা মালিঁচে
বর্তমান নারীবাদী প্রেক্ষাপটে ১৬শ শতকের মেক্সিকান নারী লা মালিঁচে খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন চরিত্র। লা মালিঁচে (La Malinche, ১৫০০-১৫২৯ খ্রি.) ছিলেন মেক্সিকান গালফ কোস্টের একজন নাহুয়ান নারী, যিনি অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের উপর স্প্যানিশ বিজয়ে ভূমিকা পালন করেন। তিনি স্প্যানিশ বিজেতা হার্নান কর্টেজের জন্য ইন্টেরপ্রেটার, উপদেষ্টা এবং দোভাষী হিসেবে কাজ করেছিলেন।[১১২] ১৫১৯ সালে স্প্যানিয়ার্ডদেরকে টোবাসকোর আদিবাসীগণ যে ২০ জন দাসীকে দান করেছিলেন তার মধ্যে লা মালিঁচে ছিলেন একজন।[১১৩] পরবর্তীতে তিনি কর্টেজের প্রথম পুত্র মার্টিনের জন্ম দেন যাকে প্রথম মেস্টিজো (ইউরোপীয় ও আমেরিকান আদিবাসীর মিশ্রণ) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেক দিন ধরেই মেক্সিকোতে মালিঁচেকে দেশদ্রোহী ও বিশ্বাসঘাতক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে,মালিঞ্চিসমো বা মালিঞ্চিসতা নামে শব্দ তৈরি হয়েছে যার দ্বারা তাদেরকে বোঝায় যারা মেক্সিকান সংস্কৃতিকে ত্যাগ করে বিদেশী সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে। মেক্সিকান স্প্যানিশ ভাষায় মালিঁচের নামে " কিন্তু ১৯৬০ এর দশক থেকে নারীবাদীদের কাছে মালিঁচে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে ওঠে, মেক্সিকোর নারীবাদীগণ তাকে বিশ্বাসঘাতক নয় বরং ভিক্টিম হিসেবে তুলে ধরেন।[১১৪] তাকে দুটো সংস্কৃতির মধ্যে বন্দি হিসেবে তারা দেখান যাকে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছিল, যিনি শেষ পর্যন্ত একটি নতুন "রেস" বা বর্ণের মা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন।
১৭শ শতক
ননকনফরমিজম, প্রোটেক্টরেট, রিস্টোরেশন
১৭শ শতকে কোয়াকারসদের মত অনেক ননকনফরমিস্ট ধারা তৈরি হয়, যেগুলো প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলোর তুলনায় নারীদেরকে অধিক পরিমাণে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিত। কোয়াকাররা ফ্রেন্ড নামেও পরিচিত। এরা একটি ঐতিহাসিক খ্রিস্টীয় ধর্মীয় গোষ্ঠী যা রেলিজিয়াস সোসাইটি অফ ফ্রেন্ডস নামে পরিচিত। বিভিন্ন কোয়াকার আন্দোলনের সদস্যগণ সাধারণত এই বিশ্বাস করেন যে, প্রত্যেকটি মানুষই তার ভেতরের “আলোর” সন্ধান পেতে সক্ষম, অর্থাৎ তারা বিশ্বাস করেন, “সকলের মধ্যেই ঈশ্বরের আলো রয়েছে”। ইংল্যান্ডে চার্চের ইতিহাসে যেসব প্রোটেস্ট্যান্ট দেশটির প্রতিষ্ঠিত চার্চগুলোর শাসন মেনে চলত না বা স্বীকার করত না। যুক্তরাজ্যে ১৬০০ সালের সংস্কারের পর মূলত এগুলোর উৎপত্তি হয়। ধর্ম নিয়ে সেসময়কার বিশিষ্ট নারীবাদী লেখকেরা হচ্ছেন র্যাচেল স্পেইট, ক্যাথরিন ইভান্স, সারাহ্ শেভার্স, মার্গারেট ফেল (তিনি কোয়াকারস এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন), এবং সারহ্ ব্ল্যাকবরো।[১১৫][১১৬][১১৭] মারগারেট ফেল বা মারগারেট (Margaret Fell, ১৬১৪/২৩ – ১৭০২ খ্রি.) ছিলেন রেলিজিয়াস সোসাইটি অফ ফ্রেন্ডস এর একজন প্রতিষ্ঠাতা। তিনি “মাদার অফ কোয়াকারিজম” নামে পরিচিত ছিলেন। কোয়াকার ধর্মপ্রচারকদের মধ্যে সবচেয়ে নির্ভিক ও গুরুত্বপূর্ণ ৬০ জন প্রথমদিকের ধর্মপ্রচারকদের মধ্যে একজন হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। তার কন্যা সারাহ ফেলও একজন নেতৃস্থানীয় কোয়াকার ছিলেন। র্যাচেল স্পেইট (Rachel Speght) (জন্ম ১৫৯৭ খ্রি.) একজন কবী ও তার্কিক ছিলেন। তিনিই প্রথম ইংরেজ নারী যিনি নিজেকে একজন তার্কিক (পোলেমিসিস্ট) এবং জেন্ডার আইডিওলজি এর সমালোচক হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। একজন নারীবাদী ও কেলভিনপন্থী হয়ে স্পেইট বাইবেলের প্রোটেস্ট্যন্টদের দেয়া এক্সেজেসিস বা ভাষ্যে অবদান রাখেন, তিনি সেই ভাষ্যে নারীদের সমর্থনে ব্যাখ্যা দেয়, এবং নারীজাতির গুরুত্বকে তুলে ধরেন। তিনি জোসেফ সুইটনাম এর একটি নারীবিদ্বেষী পুস্তিকার বিরুদ্ধে আরেকটি পুস্তিকে লিখেছিলেন যার জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। এগুলো ছাড়াও তিনি মরটালিটিস মেমোরেন্ডাম নামে একটি কাব্যসমগ্র লিখেছিলেন যেখানে নারী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। সারাহ ব্ল্যাকবোরো (Sarah Blackborow, ১৬৫০ এর দশক থেকে ১৬৬০ এর দশক) খ্রিস্টধর্মীয় টীকা-ভাষ্যের একজন ইংরেজি লেখক ছিলেন। এগুলো সামাজিক সমস্যাসমূহ এবং নারীর ধর্মতাত্ত্বিক অবস্থান নিয়ে কোয়াকার চিন্তাধারায় শক্তিশালী প্রভাব রাখে। তিনি সোসাইটি অফ ফ্রেন্ডস এর প্রথম দশকগুলোর কতিপয় নারী এক্টিভিস্টদের মধ্যে তিনি অন্যতম প্রধান ছিলেন। লন্ডনে যেসব কোয়াকারকে চার্চ অফ ইংল্যান্ড এর আধিপত্য মেনে না নেয়ায় যেসব কোয়াকারকে বন্দী করা হয় তাদেরকে সাহায্য পাঠাবার পরিকল্পনা তৈরির জন্য তিনি একটি পরিকল্পনা করেছিলেন, যার জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন।
যাই হোক নারী বিষয়ক এদের এই প্রবণতার ফলে কোয়াকারবাদের প্রথম দশকগুলোতে কিছু নারী মন্ত্রী ও লেখিকার উদ্ভব হয়, যেমন মেরি মলিনিউ ও বারবারা ব্লগডন।[১১৮] তবুও সাধারণভাবে যেসব নারী ধর্মপ্রচার করতেন বা ধর্ম বিষয়ে মতামত দিতেন তারা পাগলামি ও ডাইনবিদ্যার জন্য সন্দেহভাজন হওয়ার বা এর অভিযোগের শিকার হবার বিপদের মুখে ছিলেন। মেরি মলিনিউ (Mary Mollineux, ১৬৫১ – ১৬৯৬) একজন কোয়াকার কবি ছিলেন। ল্যাতিন ও গ্রিক ভাষা, বিজ্ঞান ও পাটিগণিতে শিক্ষা তাকে অন্যান্য কোয়াকারদের থেকে ভিন্ন মর্যাদা প্রদান করেছিল। একটি কোয়াকার সভায় অংশগ্রহণ করার জন্য ১৬৮৪ সালে তাকে ও তার স্বামীকে ল্যাংকাস্টার দূর্গে বন্দী করা হয়। বারবারা ব্লগডন (Barbara Blaugdone, ১৬০৯ – ১৭০৪) একজন ইংরেজ কোয়াকার ধর্মপ্রচারক ছিলেন। তিনি তার ভ্রমণ, এভাঞ্জেলিজম, এবং তার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তার আত্মজীবনী গ্রন্থে যোগ করেছিলেন। তিনি তার ননকনফর্মিস্ট ধর্মবিশ্বাসের প্রচারের জন্য কয়েকবার বন্দিত্ব বরণ করেন। এন এস্কিউ (Anne Askew, ১৫২১ – ১৫৪৬) একজন ইংরেজ লেখক, কবি ও প্রোটেস্ট্যান্ট শহীদ ছিলেন যাকে ইংল্যান্ডের অষ্টম হেনরির শাসনামলে ধরমবিরোধিতার জন্য নিন্দা করা হয়। পরে তাকে নির্যাতন ও খুঁটিতে বেঁধে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। অ্যান এসকিউ এর মত অনেককেই তখন "পিতৃতান্ত্রিক নিয়মকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিরোধিতা করার কারণে"[১১৯] খুটিতে বেঁধে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল।[১২০]
ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে, নারীবাদী ধারণাগুলি অরথোডক্স বা প্রচলিত ধর্মমতের বদলে ওয়ালডেনসিয়ানস ও ক্যাথারিস্টদের এর মত হেটেরোডক্সি বা প্রচলিত ধর্মমতের বিরোধী হিসেবে বিবেচিত হয়। লেভেলারস এর মত ধর্মীয় সমানাধিকারবাদী সংগঠনগুলো লৈঙ্গিক সাম্যের পক্ষে ছিল, এবং তাই তাদের রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল। লেভেলারস নারীরা বিশালাকারে মিছিল বের করে, এবং সমানাধিকারের আবেদন করেন। কিন্তু সেইসময়ের কর্তৃপক্ষ সেই আবেদনকে খারিজ করে দেয়।[১২১]
যুক্তরাজ্যের ১৭শ শতকের আদিনারীবাদীগণ
১৭শ শতক অনেক উদীয়মান লেখিকারই সাক্ষী হয়েছিল, যেমন অ্যান ব্র্যাডস্ট্রিট, বাথসুয়া মেকিন, মারগারেট ক্যাভেন্ডিশ, ডাচেস অফ নিউক্যাসল, লেডি মেরি রথ,[১২২][১২৩] ইউজেনিয়া নামে একজন বেনামী নারী, মেরি শাডলেই, এবং মেরি অ্যাস্টেল। অ্যান ব্র্যাডস্ট্রিট আমেরিকার আদিনারীবাদী, তার কথা পরে লেখা হচ্ছে, অন্যেরা ইংল্যান্ডের আদিনারীবাদী ছিলেন। তারা অনেকটা একই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে সংগ্রাম করেছেন বলে তাদের কথা আলাদাভাবে লেখা হচ্ছে। এরা সকলে তদকালীন নারীদের পরিবর্তিত ভূমিকা সম্পর্কে তুলে ধরেন, এবং নারীশিক্ষার দাবি জানান। তবে তাদেরকে নানা ধরণের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, ২০শ শতকের পূর্বে ক্যাভেন্ডিশ এবং রথের লেখা প্রকাশিত হয়নি।
বাথসুয়া রেজিনাল্ড মাকিন ( Bathsua Reginald Makin, আনু. ১৬০০ - আনু ১৬৭৫ খ্রি.) ছিলেন একজন শিক্ষক যিনি ১৭শ শতাব্দীর ইংল্যান্ডে গৃহজীবন ও পাবলিক-জীবনে নারীর অবস্থানের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করেন, এবং এবং এই বিষয়ক আলোচনায় অবদান রাখেন। তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত নারী ছিলেন, বলতে গেলে তিনি ছিলেন সেই সময়ের ইংল্যান্ডের সবচেয়ে শিক্ষিত নারী; গ্রিক, ল্যাটিন, হিব্রু, জার্মান, স্প্যানিশ, ফরাসি এবং ইতালীয় ভাষায় ছিলেন তিনি দক্ষ। মাকিন প্রাথমিকভাবে নারী এবং বালিকাদের সমান অধিকারের পক্ষে যুক্তি দেখান, তিনি বলেন আমাদের পরিবেশ বা সংস্কৃতিতে নারীদেরকে শিক্ষা লাভের জন্য যোগ্য বলে মনে করা হয়না, এদেরকে সবসময় পুরুষের অধীনস্থ হিসেবেই দেখা হয়, মনে করা হয় নারীরা কখনই শিক্ষিত হতে পারেনা। মাকিন ধর্ম, আচরণ, কলা ও বাগ্মিতায় ভদ্র সমাজের নারীদের মধ্যে শিক্ষাকে প্রাচীন যুগের মতো পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ১৬৭৩ সালে একটি বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনা করেন, যার জন্য তিনি সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন। প্রবন্ধটির নাম "An Essay To Revive the Ancient Education of Gentlewomen, in Religion, Manners, Arts & Tongues, with an Answer to the Objections against this Way of Education"।[১২৪]
মারগারেট ক্যাভেন্ডিশ (Margaret Lucas Cavendish, ১৬২৩-৭৩) ছিলেন ১৭শ শতকের একজন ইংরেজ অভিজাত, দার্শনিক, কবি, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার ও নাট্যকার। কিছুকালের জন্য তিনি ফ্রান্সের চতুর্দশ লুই এর রাজসভায়ও ছিলেন। তখনকার বেশিরভাগ নারী যখন ছদ্মনামে নিজের লেখা প্রকাশ করতেন, তিনি তখন নিজের নামেই লেখা প্রকাশ করেছেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন যার মধ্যে লিঙ্গ, ক্ষমতা, আচরণ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও দর্শন রয়েছে, প্রকাশ করেছেন প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক দর্শন (বিজ্ঞানের পূর্বপুরুষ বলা যায়) ও প্রাথমিক আধুনিক বিজ্ঞান সংক্রান্ত লেখা। তার অরিজিনাল ওয়ার্কের সংখ্যা এক ডজনেরও বেশি, রিভাইসড ওয়ার্কগুলো যোগ করলে তার মোট পাবলিকেশনের সংখ্যা হবে ২১টি।[১২৫] "দ্য ব্লেইজিং ওয়ার্ল্ড" নামে তিনি যে ইউটোপিয়ান রোমান্স লিখেছিলেন তা ছিল সর্বপ্রথম সায়েন্স ফিকশনগুলোর মধ্যে অন্যতম।[১২৬] নারী লেখক হিসেবে তার অবস্থান ইউনিক ও গ্রাউন্ডব্রেকিং লেভেলের। তিনি ১৭শ শতকের এরিস্টোটলবাদ ও মেকানিকাল ফিলোসফিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এবং এর বদলে ভাইটালিস্ট বা প্রাণশক্তিবাদী মডেলকেই গ্রহণ করেন। তিনিই ১৬৬৭ সালে লন্ডনের রয়াল সোসাইটিতে যোগ দেন, রয়াল সোসাইটিতে যোগ দেয়া প্রথম নারী তিনিই ছিলেন। তিনি সেখানকার সদস্য ও থমাস হবস, রেনে দেকার্ত ও রবার্ট বয়েলের মত দার্শনিকদের সাথে আলোচনা ও বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন।[১২৭] প্রাণী নিয়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষায় যারা বিরোধিতা করেছিল তাদের মধ্যে তিনি তাদের মধ্যে একজন ছিলেন।[১২৮] একজন নারী হবার পরও লেখিকা হওয়ার জন্য, পুরুষের সাথে প্রাকৃতিক দর্শন বা নেচারাল ফিলোসফি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ও তার নাটকীয় ড্রেস-সেন্সের জন্য তাকে "ম্যাড ম্যাজ" নাম দিয়ে হেয়ো করা হতো। অনেকে তার এক্সেন্ট্রিক বা উৎকেন্দ্রিক আচরণের জন্য সমালোচনা করেন। যাই হোক, তার কাজগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ স্বীকৃতি পায়নি। ১৯৮০ এর দশকে তাকে পুনরাবিষ্কার করা হয় ও ফেমিনিস্ট ও নন-ফেমিনিস্ট স্টাডিজে তাকে ও তার রচনাসমূহকে কেন্দ্র করে আলোচনা শুরু হয়। তাকে ও তার কাজ ও অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে বর্তমানে ডিজিটাল ক্যাভেন্ডিশ প্রোজেক্ট নামে একটি প্রোজেক্ট কাজ করছে যা অনলাইনেও বিদ্যমান। লেডি মেরি রথ (Lady Mary Wroth, ১৫৮৭-১৬৫৩ খ্রি.) একজন রেনেসাঁস ইংরেজ কবি ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রথম কয়েকজন নারীর অন্যতম যারা লেখিকা হিসেবে প্রভূত সম্মান ও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
ইউজেনিয়া (Eugenia (Lady of Quality)) নামটি ছদ্মনাম। নামটি ব্যবহার করে ১৭০০ সালে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, যা সেই সময় খুব আলোড়নের সৃষ্টি করে। কিন্তু ইউজেনিয়ার আসল পরিচয় যে কি তা আজও জানা যায়নি। ১৬৯৯ সালে ইংল্যান্ডের ডরসেটের শেরবোর্নে একটি বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে চার্চের যাজক ও ধর্মতাত্ত্বিক রেভারেন্ড জন স্প্রিন্ট "দ্য ব্রাইড উইমেন'স কাউন্সেলর" নামে নিজের লেখা একটি সারমন বা ধর্মীয় বক্তৃতা পাঠ করেন।[১২৯][১৩০] এতে নারীদের নিয়ে অফেন্সিভ কথা ছিল। এরই প্রতিবাদ হিসেবে লন্ডনে ১৭০০ সালে ইউজেনিয়া ছদ্মনামে এর প্রতিবাদমূলক বা প্রত্যুত্তরমূলক লেখা বা রাপোস্ট প্রকাশ করা হয়, যার সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ছিল "দ্য ফিমেল অ্যাডভোকেট"। পরে এটি জনপ্রিয় হলে "দ্য ফিমেল প্রিচার" নামেও তা প্রকাশ করা হয়। তবে পুস্তিকাটির পূর্ণ শিরোনামটা ছিল এরকম - "The Female Advocate: Or, a plea for the just liberty of the tender sex, and particularly of married women. Being reflections on a late rude and disingenuous discourse, delivered by Mr. John Sprint, in a sermon at a wedding... at Sherburn... By a Lady of Quality"। এই পুস্তিকাটিরকে ১৮শ শতকের অন্যতম শক্তিশালী আদিনারীবাদী লেখা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেকেই মনে করেন এটা তদকালীন প্রবন্ধকার মেরি শাডলেই এর লেখা, আবার অনেকে এই মতের বিরোধিতাও করেন।[১৩১] মেরি শাডলেই (Mary Chudleigh, ১৬৫৬-১৭১০ খ্রি.) ছিলেন একজন ইংরেজ কবি ও প্রবন্ধকার। সেই সময় আরও বেশ কয়েকজন নারী ইন্টেলেকচুয়াল নিয়ে একটি চক্র ছিল, যার মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। তিনি ছাড়াও এই চক্রটিতে ছিলেন মেরি অ্যাস্টেল, এলিজাবেথ থমাস, জুডিথ ড্রেক, এলিজাবেথ এলস্টব, লেডি মারি ওর্টলি মনটেগু এবং জন নরিস।[১৩২] এদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে এখানেই লেখা হবে। যাইহোক, মেরি শাডলেই এর কবিতা নিয়ে একটি ভল্যুম ও তার প্রবন্ধসমূহ নিয়ে দুটো ভল্যুম প্রকাশিত হয়েছে। তার সব লেখাই ছিল নারীবাদী থিম দ্বারা সমৃদ্ধ। তার দুটো গ্রন্থ চারটি এডিশনে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন অ্যান্থোলজিতে তার মানুষের সম্পর্ক ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত কবিতাগুলো প্রকাশিত হয়েছে। তার নারীবাদী প্রবন্ধগুলো এখনও প্রকাশিত হয়।[১৩৩]
মেরি অ্যাস্টেল (Mary Astell, ১৬৬৬-১৭৩১ খ্রি.) ছিলেন একজন ইংরেজ আদিনারীবাদী, লেখক, দার্শনিক ও আলঙ্কারিক (রেটোরিশিয়ান)। তিনি নারীর শিক্ষার সমানাধিকারের পক্ষে যে লেখালিখি করেন তার কারণে তিনি "প্রথম ইংরেজ নারীবাদী" খেতাব অর্জন করেন।[১৩৪] অ্যাস্টেল কখনও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেননি, তিনি মনে করতেন নারীকে সমাজ থেকে দূরে কেবল নারীদের মধ্যে থেকেই আধ্যাত্মিক পরিবেশে শিক্ষা লাভ করা উচিৎ। তার মতে পুরুষ আধিপত্যের কারণে সমাজ কলূষিত হয়ে আছে, তাই পুরুষ প্রভাবের বাইরে গিয়ে নারীর শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ।[১৩৫] তিনি নারীদের উদ্দেশ্যে একটি বিদ্যালয় তৈরির প্রস্তাব করেন, কিন্তু তার জীবদ্দশায় কখনও নারীদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অ্যাস্টেল বলেন নারীর পুরুষের সমান শিক্ষা লাভ করা উচিৎ, এবং যদি তার বিবাহ করার ইচ্ছা না থাকে তবে তার বিবাহ থেকে বিরত থাকার অধিকার থাকা উচিৎ। অবশ্য তিনি এও বলেন যে, যদি নারীর বিবাহ হয়ে যায় তাহলে তাকে স্বামীর ইচ্ছানুসারেই চলা উচিৎ।[১৩৬] ১৮শ শতকের চিন্তা-ঐতিহ্যে অ্যাস্টেলের একটি অন্যতম অবদান হলো নারী-বন্ধুত্ব বা ফিমেল ফ্রেন্ডশিপের ধারণা। অ্যারিস্টোটলের মতো তিনিও বন্ধুত্বে নৈতিক মূল্যবোধে গুরুত্ব দেন, কিন্তু এরিস্টোটলের বাইরে গিয়ে তিনি এই বন্ধুত্বের ঐশ্বরিক প্রেমের বিষয়টিও নিয়ে আসেন।[১৩৭] নারী বন্ধুত্ব সহ তার বিভিন্ন নারীবাদী চিন্তায় ধর্মের গুরুত্ব আধুনিক সমালোচকদের সমালোচনার মুখে পড়েছে। যাইহোক, অ্যাস্টেল নিজেকে একজন আত্মনির্ভর, স্বাবলম্বী নারী মনে করতেন, এবং পুরুষের শোষণ থেকে নারীমুক্তির জন্য তিনি সোচ্চার ছিলেন। মেরি অ্যাস্টেলকে প্রায়শই প্রথম নারীবাদী লেখক হিসাবে বর্ণনা করা হয়। যাইহোক, তাকে নিয়ে এমনটা বলতে গেলে তিনি তার লেখাগুলোর জন্য তার যে পূর্ববর্তী যেমন আনা মারিয়া ফন শারম্যান, বাথসুয়া মেকিন-দের কাছে ঋণী তাদেরকে অস্বীকার করা হয় (আনা মারিয়া ফন শারম্যান এর কথা পরে উল্লেখ করা হবে)। তিনি অবশ্যই ইংরেজি ভাষার প্রথম দিককার নারীবাদী লেখিকাদের মধ্যে একজন, যার বিশ্লেষণগুলো কেবল তার সময়ের জন্যই নয়, আজও প্রাসঙ্গিক, এবং যার নারীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করায় উদ্যম পূর্ববর্তীদেরকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল।[১৩৮][১৩৯] অ্যাস্টেল ও আফরা বেন একসাথে মিলে ১৭শ শতকে নারীবাদী তত্ত্বের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তী আরেক শতক পর্যন্ত কোন নারীই আর এত জোড়ালোভাবে আওয়াজ তোলেননি। ঐতিহাসিক নথিগুলোতে দেখা যায়, অ্যাস্টেল প্রায়ই তার চেয়ে বয়সে ছোট এবং আরও আলোচ্য বন্ধু ও পত্রযোগাযোগকারী লেডি মারি ওর্টলি মনটেগু এর ছায়ায় ছায়াবৃত হয়ে গেছেন।
লেডি মারি ওর্টলি মনটেগু (Lady Mary Wortley Montagu, ১৬৮৯-১৭৬২ খ্রি.) ছিলেন একজন ইংরেজ অভিজাত, লেখক ও কবি। তিনি জীবনের একটা বড় সময় অটোমান রাজধানী ইস্তাম্বুলে কাটিয়েছেন। বর্তমানে তিনি সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় তার চিঠিগুলোর জন্য, বিশেষ করে অটোমান সাম্রাজ্য থেকে তার পাঠানো চিঠিগুলোর জন্য, যেখানে উঠে এসেছে অটোমান সাম্রাজ্যে তার অভিজ্ঞতার কথা। এই অভিজ্ঞতাকে তিনি বিস্তৃত পরিসরে উল্লেখ করেছেন তার চিঠিগুলোতে, যাকে মুসলিম অঞ্চলের কোন নারীর লেখা সেক্যুলার কাজগুলোর প্রথম হিসেবে ধরা হয়, সেই সাথে এটি ছিল মুসলিম জগৎ সম্পর্কে প্রথম দিকের সেক্যুলার লেখাগুলোর মধ্যে একটি। লেখালিখি ছাড়াও তিনি ইংল্যান্ডে স্মল পক্স এর টীকার পক্ষে কাজ করার জন্যেও স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাছাড়া তার লেখাগুলো নারী বিষয়ে, বিশেষ করে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক অগ্রগতি নিয়ে তদকালীন পশ্চাদপন্থী চিন্তাধারাকে চ্যালেঞ্জ করে। পাশ্চাত্যের নারী ভ্রমণকারীরা তাদের রচনাগুলোতে বহুবার মন্টেগুর তুর্কী লেখাগুলোর কথা তুলে ধরেছেন। তারা মন্টেগুর উদাহরণ টেনে বলেছেন নারী ভ্রমণকারীদের পক্ষে তুর্কী জীবনের যে ঘনিষ্ঠ অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা সম্ভব, তা পুরুষ ভ্রমণকারীর পক্ষে সম্ভব নয়।[১৪০] "সোফিয়া, এ পারসন অফ কোয়ালিটি" নামে একটি ছদ্মনাম ব্যবহার করে ১৭৩৯ সালে "উইম্যান নট ইনফেরিয়র টু ম্যান" নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়, অনেকেই মনে করেন বইটি এই লেডি মেরিরই লেখা।[১৪১] যাই হোক, অনেকের মতে তিনি নারী হবার কারণে তার কাজের পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি লাভ করেননি।[১৪২]
সামাজিক মূল্যবোধের উদারীকরণ এবং যুক্তরাজ্যে শাসনব্যবস্থার পুনরুদ্ধারের ধর্মনিরপেক্ষীকরণ শিল্পে নারীদেরকে সুযোগ প্রদান করেছিল। এটি নারীদের জন্য তাদের উদ্দেশ্যের প্রতি এগিয়ে যাবার একটা সুযোগ করে দেয়। কিন্তু নারী নাট্যকারগণ একই রকম শত্রুভাবাপন্নতার শিকার হন। যারা এর শিকার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন ক্যাথেরিন ট্রটার ককবার্ন, মেরি ম্যানলে এবং মেরি পিক্স। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন আফরা বেন।[১৩৯][১৪৩][১৪৪] তিনি প্রথম ইংরেজ নারী যিনি পেশাদার লেখকের মর্যাদা অর্জন করেছিলেন।[১৪৫] তিনি একজন ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং রাজনৈতিক প্রচারক ছিলেন।[১৪৬] তার জীবদ্দশায় তিনি সফল হলেও, হেনরি ফিল্ডিং ও স্যামুয়েল রিচার্ডসনের মত লেখকগণ তাকে অবজ্ঞা করে "অনারীসুলভ" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।[১৪৬] একইভাবে, ১৯শ শতকের সমালোচক জুলিয়া ক্যাভানাফ বলেন, "পুরুষকে নারীর নৈতিক মানদণ্ডে উন্নীত না করে বেন নিজে পুরুষের স্থূলতাতেই নিজেকে নিমজ্জিত করেছেন।"[১৪৭] বিংশ শতকে বেন আরও বিস্তৃত পরিসরে পাঠক লাভ করেন, এবং সেইসাথে বিশ্লেষণী স্বীকৃতি লাভ করেন। ভারজিনিয়া উল্ফ তার কর্মজীবনের প্রশংসা করেন এবং লেখেন, "সকল নারীরই এক সঙ্গে মিলে আফরা বেনের সমাধিতে পুষ্প নিবেদন করা উচিৎ ... কারণ তার কারণেই নারীরা তাদের মনের কথা বলার অধিকার লাভ করেছেন।"[১৪৮]
আফরা বেন (Aphra Behn, ১৬৪০-১৬৮৯ খ্রি.) ছিলেন ইংল্যান্ডের রেস্টোরেশন যুগের একজন ইংরেজ নাট্যকার, অনুবাদক ও কথাসাহিত্যিক। ইউরোপে যেসব নারী লেখালিখির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি তাদের মধ্যে প্রথম দিকের একজন ছিলেন। তিনি পরবর্তী প্রজন্মগুলোর নারী লেখকদের জন্য একজন রোল মডেল ছিলেন। তবে জীবনে কেবল তিনি লেখিকা বা নাট্যকারই ছিলেন না। তিনি স্পাই হয়েও কাজ করেছিলেন, আবার জেইলও খেটেছেন। তিনি কবিদের ও রোচেস্টারের আর্ল জন উলমটের মত খ্যাতিমান লিবারটাইনদের একটি চক্রের সদস্য ছিলেন। লিবার্টাইনবাদ বা লিবার্টাইনিজম হলো হেডোনিজমের একটি চূড়ান্ত রূপ। লিবার্টাইনরা বেশিরভাগ নৈতিক নীতি, দায়িত্ববোধ, যৌনতা সংক্রান্ত বাধা সহ বিভিন্ন প্রত্যাশিত নৈতিক ও সামাজিক রীতি-নীতি-আচরণকে অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত ধরে নিয়ে সেগুলোকে বর্জন করে। জন উইলমট ছাড়াও আরেকজন বিখ্যাত লিবারটাইন হচ্ছেন মারকুইস দে সাদে, যার দ্বারা পরবর্তীতে ফ্রয়েড, লাকাঁ, ফুকো, ক্যামিল পালিয়া, গাই ডিবোর্ড সহ প্রভৃতি চিন্তাবিদগণ প্রভাবিত হন। আফরা বেন অ্যাস্ট্রিয়া (Astrea) ছদ্মনামে লিখতেন। যাই হোক, এদের সংস্পর্শে এসে আফরা বেন নারী ও পুরুষ উভয়েরই, বিশেষ করে নারীর যৌন স্বাধীনতা নিয়ে লেখালিখি করেন। এগুলোর মধ্যে দুটি বিখ্যাত রচনা হলো দ্য ডাচ লাভার ও দ্য ডিজ্যাপয়েন্টমেন্ট। দ্য ডাচ লাভারে তিনি নারীর যৌনাকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরেন। আর দ্য ডিজ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল একটি কমিক রচনা, সেখানে তিনি পুরুষের যৌন অক্ষমতা বা ইম্পোটেন্সকে নারীর দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রকাশ করেন। ১৬৭৯-১৬৮১ সালের ইংল্যান্ডের এক্সক্লুশন ক্রাইসিসের উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি যেসব লেখালিখি করেছিলেন সেগুলোর কারণে তিনি আইনি সমস্যার সম্মুখীন হন। এরপর তিনি মূলত গদ্য সাহিত্য ও অনুবাদে মন দেন। আফরা বেন মোট ১৯টি নাটক লিখেছেন। নাটক রচনায় তিনি ১৬৭০-৮০ এর দশকে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে প্রোডাক্টিভ লেখকদের মধ্যে একজন ছিলেন। কেবল পোয়েট লরিয়েট জন ড্রাইডেন ছাড়া এক্ষেত্রে কেউই তার উপরে ছিলনা।[১৪৯] নাটক ছাড়াও তিনি শেষ জীবনে উপন্যাসও লিখেছেন। তার লেখায় নারী অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়গুলো ফুটে ওঠে। মৃত্যুর আগে আগে তিনি খুব দারিদ্র্য ও ঋণের দায়ে দিন কাটিয়েছেন, শেষ দিকে তার কলম ধরতেও অসুবিধা হতো, তাও তিনি ১৬৮৯ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত লিখে গেছেন। তিনি ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্রে স্টুয়ার্ট বংশের সমর্থক ছিলেন, তাই বিশপ বার্নেট তাকে নতুন রাজা ৩য় উইলিয়ামের অভ্যর্থনা উপলক্ষে কবিতা লিখতে আমন্ত্রণ করেছিলেন। সেসময় তিনি দরিদ্র, অসুস্থ ও ঋণের দায়ে জর্জরিত ছিলেন, আদর্শের সাথে আপোশ করে কবিতাটি লিখলে তার অবস্থায় হয়তো উন্নতি হতো, কিন্তু তিনি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এর কিছু দিন পরই তিনি মারা যান।[১৫০] মাত্র ৪৮ বয়সে তার মৃত্যু হয়। ভার্জিনিয়া ওলফ তার প্রবন্ধ "আ রুম অফ ওয়ান্স ওন"-এ লেখেন, প্রত্যেক নারীরই উচিৎ আফরা বেনের সমাধিতে ফুল দিয়ে আসা... কেননা তিনিই তাদের কথা বলার অধিকার দিয়ে গেছেন"।[১৫১]
ক্যাথেরিন ট্রটার ককবার্ন (Catharine Trotter Cockburn, ১৬৭৯ - ১৭৪৯ খ্রি.) ছিলেন একজন ইংরেজ ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, কবি এবং দার্শনিক। তিনি নীতি দর্শন, ধর্মতত্ত্ব নিয়েও লেখালিখি করেছেন, আর সেই সাথে রয়েছে তার লেখা বিশাল সংখ্যক চিঠিপত্র। নীতি দর্শন বিষয়ে তার খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে, এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো "আ ডিফেন্স অফ মি. লক" যেখানে তিনি জন লকের দর্শনের সমালোচনাগুলোর জবাব দেন। এটি পরে জন লক তার অনেক প্রশংসা করেছিলেন।[১৫২] কবি হিসেবেও তিনি খ্যাত ছিলেন। জন ড্রাইডেনের মৃত্যুর পর কয়েকজন মহিলা কবি মিলে তার গ্রিক পুরাণের ৯ জন মিউজের নাম ছদ্মনাম হিসেবে ব্যবহার করে কবিতা রচনা করেছিলেন (গ্রিক ধর্ম ও পুরাণে শিল্প, সাহিত্য ও বিজ্ঞানের দেবীদেরকে মিউজ বলা হয়)। এই নয়টি ছদ্মনামকে একত্রে দ্য নাইন মিউজ বলা হয়। ক্যাথারিন ছিলেন এই দ্য নাইন মিউজের একজন, যিনি বাগ্মীতা ও মহাকাব্যের মিউজ ক্যালিওপি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিলেন।[১৫৩] তার কবিতা, নাটক ও উপন্যাসে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়। যাই হোক, তিনি তার কাজের তুলনায় খুব কমই সম্মান ও খ্যাতি পেয়েছেন, তিনি প্রায় হারিয়েই যাচ্ছিলেন, কিন্তু সাম্প্রতিক কালে নারীবাদীরা তাকে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন।[১৫৪] বর্তমানে তার অনেক রচনাই জেন্ডার স্টাডিজের অংশ হয়ে উঠেছে। ক্যাথারিন নিজে তার লিঙ্গের জন্য নানান ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়েছিলেন যার প্রতিবাদ তার রচনাগুলোতেই উঠে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ ১৬৯৮ সালে তার লেখা "ফাটাল ফ্রেন্ডশিপ"-এ তিনি বলেন, "যখন একজন নারী সমাজে প্রসিদ্ধি লাভ করে, তবে সমাজ তাকে নেতিবাচক চরিত্রে স্থাপন করতে চায়..."। ক্যাথারিন ট্রটারের সাহিত্যকর্মে নারী চরিত্রগুলোকে শক্তিশালী ভূমিকায় দেখা যায়। তার সাহিত্যকর্ম ও ব্যক্তিগত জীবন উভয়ই নারীবাদী সমালোচনাকে সমৃদ্ধ করেছে।
মেরি পিক্স (Mary Pix, ১৬৬৬-১৭০৯ খ্রি.) ছিলেন একজন ইংরেজ সাহিত্যিক ও নাট্যকার। তিনি আফরা বেনের ভক্ত ও অনুসারী ছিলেন। বলা হয় মেরি মিক্স ছিলেন রেস্টোরেশন ও অগাস্টান যুগের নারী লেখকদের মধ্যকার যোগসূত্র বা লিংক, কেননা তার রচনায় দুই ধারারই বৈশিষ্ট্য প্রকট হয়েছে।[১৫৫] জন ড্রাইডেন নিয়ে শোকগাঁথায় ক্যাথারিন ট্রটার ক্যালিওপির নাম নিয়ে কবিতা লেখেন বলা হয়েছে, মেরি পিক্সও এই দ্য নাইন মিউজের কাজে অংশ নিয়েছিলেন, তিনি লিখেছিলেন ইতিহাস ও লায়ার বাদ্যযন্ত্রের দেবী ক্লিও এর নাম নিয়ে। ইংল্যান্ডে সেই সময়কার, অর্থাৎ রেস্টোরেশন পিরিয়ডের দিকে নারী নাট্যকারদের প্রসঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে তদকালীন পরিস্থিতি সম্পর্কে দুই একটা কথা বলা প্রয়োজন। এলিজাবেথের সময়ে নারীরা নাটকের কাজে অংশগ্রহণ করতে পারতো না। কিন্তু রেস্টোরেশন পিরিয়ডে অবস্থার পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। তখন নারীরাও নাটকের কাজে লেখক, অভিনেত্রী সহ বিভিন্ন ভূমিকায় কাজ করা শুরু করে। এই সময়েই ইংল্যান্ডে আফরা বেন, ক্যাথারিন ট্রট, মেরি পিক্সের মতো নাট্যকাররা তাদের কৃতিত্ব দেখান। তবে সমাজ ছিল পশ্চাদপন্থী, অনেক রক্ষণশীল মানুষ নারী লেখিকাদের নাটক দেখতে চাইতেন না। হয়তো তাই সেই সময়ে নাটকের বিজ্ঞাপনে নাট্যকারের নামের উল্লেখ থাকতো না, সেই সুযোগ নিয়ে সহজেই নারীরা নাটক লিখতে পারতেন। দেখা যেত সেই সময় নারী নাট্যকার ও পুরুষ নাট্যকার উভয়ের নাটকের বাজারই সমান সমান, অর্থাৎ নারী নাট্যকারেরা পুরুষদের তুলনায় কোন অংশেই পিছিয়ে ছিলেন না তখন। মেরি পিক্স একটি উপন্যাস ও ৭টি নাটক লেখেন, এছাড়াও ৪টি ছদ্মনামে লেখা নাটক তারই লেখা ছিল বলে দাবি করা হয়। তার রচনাগুলোতে তদকালীন নারী নির্যাতন ও নারীর উপর নিপীড়ন ফুটে উঠেছে।[১৫৬] এছাড়া তার নাটকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে তার নাটকে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অনেকগুলো নারী চরিত্র থাকতো। সেই সময়কার পুরুষদের রচিত নাটকে যেখানে দুই থেকে তিনটি নারী চরিত্র থাকতো সেখানে মেরি পিক্সের নাটকে থাকতো আট থেকে নয়টি নারী চরিত্র।[১৫৭]
১৭শ শতকের শেষের দিকে নারীর, বিশেষ করে শিক্ষিত নারীর লেখা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেই শতকের শেষের দশকগুলোর সাহিত্যকে কখনও কখনও "ব্যাটল অফ দ্য সেক্সেস" বা "লিঙ্গসমূহের যুদ্ধ" বলা হয়ে থাকে,[১৫৮] এবং প্রায়ই সেই সাহিত্যগুলো প্রায়ই অদ্ভুতভাবে অনেক বেশি তর্কময় ছিল, যেমন হানাহ্ উলি এর "দ্য জেন্টলউইমেনস কম্প্যানিয়ন"।[১৫৯] হানাহ্ উলি (Hannah Woolley, ১৬২২-১৬৭৫ খ্রি.) ছিলেন একজন ইংরেজ লেখক যিনি হাউজহোল্ড ম্যানেজমেন্ট বা গার্হস্থ্য ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রথম দিকের গ্রন্থগুলো প্রকাশ করেছিলেন। তিনিই সম্ভবত প্রথন ব্যক্তি যিনি এই বিষয়ে গ্রন্থ লিখে জীবিকা নির্বাহ করেছেন।[১৬০] প্রথম জীবনে তিনি ভৃত্য হিসেবে কাজ করেছিলেন, সেই সময়ে তিনি চিকিৎসা শাস্ত্র ও রন্ধনপ্রণালী সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন।[১৬১] একজন স্কুলশিক্ষকের সাথে তার বিবাহ হয়, স্বামীর সাথে তিনি ইংল্যান্ডের এসেক্সের নিউপোর্টে একটি বিদ্যালয় পরিচালনা করতেন।[১৬২] কয়েক বছর পর তিনি লন্ডনে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।[৪] ১৬৬১ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি হাউজহোল্ড ম্যানেজমেন্ট বা গার্হস্থ্য ব্যবস্থা বিষয়ে গ্রন্থ প্রকাশ করেন। গ্রন্থগুলোতে তিনি রন্ধনপ্রণালী, সূচশিল্প, ঘর সামলানো বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়, শিষ্ঠাচার, পত্রলিখন, ঔষধ বিষয়ক বিভিন্ন নির্দেশনা, সুগন্ধী উৎপাদন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে লেখেন। গ্রন্থগুলো খুব বিখ্যাত হয়।[১৬৩] সেই সময় নারী চিকিৎসকদের জন্য পরিবেশ প্রতিকূল হলেও নানান প্রতিকূলতা কাটিয়ে তিনি একজন সফল চিকিৎসক হিসেবেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেন।[১৬৪] যাইহোক, নারীগণ এইসব রচনার থেকে মিশ্র বার্তা লাভ করেন। কারণ তাদের লেখার প্রতিক্রিয়ায় তাদেরকে কর্কশ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুনতে হয়। এমনকি অনেক নারীও তাদের বিরুদ্ধে লিখে আত্ম-অবমাননাকেই সমর্থন করেছিল। একই সাথে তারা দুটি দ্বন্দ্বময় সামাজিক চাপের মুখে পড়েছিলেন। কারণ বাসার বাইরের অল্প সংখ্যক শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন নারীর স্বাধীন চিন্তাকে উৎসাহিত করেছিল, কখনও কখনও আবার এগুলো সামাজিক নিয়মকেই বলবৎ করত।
কন্টিনিন্টাল ইউরোপ ও নিউ ওয়ার্ল্ডের ১৭শ শতকের আদিনারীবাদীগণ
১৭শ শতাব্দীর ফ্রান্সেও উচ্চবিত্ত বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ এর উদ্ভব দেখা যায় যেগুলো নারীর দ্বারাই চালিত হত এবং যেখানে নারীরা শিল্পী হিসেবে অংশগ্রহণ করতেন।[১৬৫] কিন্তু নারীদেরকে আলোচনাসভাগুলোর সদস্যপদ দেয়ার পরও নারীরা পেছনে পড়ে যান। নারীরা লিখতেন, কিন্তু তাদের লেখা ছাপানো হত না।[১৬৬] আলোচনা সভাগুলোতে নারীদের সীমিত ভূমিকা থাকার পরও জঁ-জাক রুশো নারীদেরকে "পুরুষের 'স্বাভাবিক' আধিপত্যের প্রতি হুমকি" বলে মনে করতেন।[১৬৭] কনটিনেন্টাল ইউরোপে গুরুত্বপূর্ণ নারীবাদী লেখকদের মধ্যে আছেন মারগুয়েরিত দে নাভার, মেরি দে গর্নে, আনা মারিয়া ফন শারম্যান, যারা নারীবিদ্বেষের বাঁধা অতিক্রম করে নারীশিক্ষার জন্য লড়াই করেছেন। সুইজারল্যান্ডে ১৬৯৪ সালে প্রথম কোন নারীর লেখা ছাপানো হয়। লেখাটির নাম ছিল গ্লবেনস-রেশেন্সশাফট। এখানে হরটেনসিয়া ফন মুস নারীদের চুপ করে থাকা উচিৎ - এই ধারণার বিরুদ্ধে লেখেন। তার আগের বছর ১৬৯৪ সালে "রোজ ডার ফ্রেহাইট" (রোজ অফ ফ্রিডম) শিরোনামে একটি লেখা বেনামে ছাপানো হয়েছিল। সেখানে লেখক পুরুষ আধিপত্যবাদ ও নারী নির্যাতনকে নিন্দা করেছিলেন।[১৬৮]
মারগুয়েরিত দে নাভার (Marguerite de Navarre, ১৪৯২-১৫৪৯ খ্রি.) ছিলেন ফ্রান্সের একজন রাজকন্যা, নাভারের রাণী এবং এলেংকন ও বেরির ডাচেস।[১৬৯] নাভারের ২য় হেনরির সাথে তার বিয়ে হয়, তার ভাই ১ম ফ্রান্সিস নাম নিয়ে ফ্রান্সের রাজা হন। মারগুয়েরিত একজন লেখক ছিলেন, সেই সাথে ছিলেন রেনেসাঁর মানবতাবাদী ও ধর্মসংস্কারকদের পৃষ্ঠপোষক। তিনি ছিলেন ফ্রান্সের রেনেসাঁর একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব। স্যামুয়েল পুটনাম তাকে "প্রথম আধুনিক নারী" হিসেবে আখ্যায়িত করেন।[১৭০] নাভারের রাণী হিসেবে কূটনীতিতে তিনি দক্ষতা দেখান। মারগুয়েরিত কবিতা ও নাটক লিখেছেন, তবে তার হেপ্টামেরন নামে তার ছোটগল্পের সংকলন ও তার ধর্মীয় কবিতা Miroir de l'âme pécheresse (Mirror of the Sinful Soul বা পাপাত্মার দর্পন) তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে। ইংল্যান্ডের প্রোটেস্ট্যান্ট রিফরমেশনে তার প্রভাব ছিল। তার লেখা Miroir de l'âme pécheresse নামক কবিতাটি ইংল্যান্ডের রাণী এলিজাবেথ বাল্যবয়সে অনুবাদ করেছিলেন এবং এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, আর এই প্রভাব তাকে ইংল্যান্ডের প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন আনার দিকে নিয়ে যায়। মারগুয়েরেত শিল্পেরও একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, অনেক শিল্পীর সাথেই তার বন্ধুত্ব ছিল এবং তিনি তাদেরকে রক্ষা করেন। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি মৃত্যুর সময় তার অতিথি ছিলেন। বিখ্যাত ডাচ মানবতাবাদী বলেছেন, মারগুয়েরিতের যে গুণ ছিল তা পাদ্রী ও সন্যাসীদের মধ্যেও মেলা দুষ্কর। নাভারের রাণী থাকাকালীন তিনি দরিদ্রদের জন্য অনেক কাজ করেছিলেন, তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থপ্রদান করেন।
মেরি দে গর্নে (Marie de Gournay, ১৫৬৫-১৬৪৫ খ্রি.) ছিলেন একজন ফরাসী লেখিকা, যিনি একটি উপন্যাস সহ বিভিন্ন রকমের সাহিত্য রচনা করেছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো ১৬২২ সালে প্রকাশিত দ্য ইকুয়ালিটি অফ মেন অ্যান্ড উইমেন[১৭১] এবং ১৬২৬ সালে প্রকাশিত দ্য লেইডিস গ্রিভেন্স।[১৭২] তিনি জোর দিয়ে বলেন যে নারীর শিক্ষিত হওয়া উচিৎ। এছাড়াও গর্নে দার্শনিক মিশেল দে মনটেইনের রচনার সম্পাদক ও ভাষ্যকার ছিলেন। মনটেইনের মৃত্যুর পর তিনি তার রচনাগুলো সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। তিনি নিজ গৃহে একা একা শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি হিউম্যানিটিজ বিষয়সমূহে দক্ষ হয়ে ওঠেন ও ল্যাটিন ভাষা শেখেন। এই জ্ঞানই তাকে মনতেইনের রচনাসমূহ পড়ার সুযোগ করে দেয়। এরপর তিনি প্যারিসে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন ও মনতেইন তাকে দত্তক কন্যা হিসেবে গ্রহণ করেন।[১৭৩] প্যারিসে গর্নে আরও অনেক পণ্ডিতের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি স্যালাস্ট, ওভিড, ভার্জিল ও ট্যাসিটাসের রচনাসমূহের অনুবাদ করেছিলেন। দ্য ইকুয়ালিটি অফ মেন অ্যান্ড উইমেন গ্রন্থে তিনি ক্রিস্টিন দে পিজাঁর মতই নারী শিক্ষার পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সমাজে নারীকে অশিক্ষিত, অযোগ্য, দেহ নিয়েই কেবল মনোনিবেশী হিসেবে দেখা হয়, আর তাই ধরে নেয়া হয় যে নারী সামান্য শিক্ষা লাভ করলেই চলে। গর্নে যুক্তি দেখানে, যদি নারী পুরুষের মতই সমান সুযোগ, সুবিধা ও শিক্ষা লাভ করে তাহলে সে পুরুষের সমান অর্জন করতে সক্ষম হবে। দ্য লেডিস গ্রিভেন্স গ্রন্থে তিনি অভিযোগ করে বলেন নারী সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করেনা, স্বাধীনতার চর্চা করতে পারেনা বা পাবলিক অফিসেও কাজ করতে পারেনা। তিনি যুক্তি দেখান, একজন শিক্ষিত পুরুষের কথা যেমন সকলে শোনে, ঠিক তেমনি একজন শিক্ষিত নারীর কথাতেও সকলের মনোযোগ দেয়া উচিৎ। রেনে দেকার্তের মত তিনি দেহ ও মনকে আলাদা বিবেচনা করেন, এবং তার ভিত্তিতে যুক্তি দেন যে নারীরা পুরুষের মতই সক্ষম।[১৭৪]
আনা মারিয়া ফন শারম্যান (Anna Maria van Schurman, ১৬০৭-১৬৭৮ খ্রি.) ছিলেন একজন ডাচ চিত্রকর, খোদাইকারক, কবি ও পণ্ডিত, যিনি তার অসাধারণ জ্ঞান ও নারী শিক্ষার পক্ষে অবস্থানের কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি ছিলেন একজন উচ্চশিক্ষিতা নারী যিনি একই সাথে চিত্রকর্ম, সঙ্গীত ও সাহিত্যে পারদর্শী ছিলেন, একই সাথে তিনি ল্যাটিন, গ্রিক, হিব্রু, আরবী, সিরিয়াক, আরামায়িক, একটি ইথিওপিয় ভাষা ও সমসাময়িক ইউরোপের বিভিন্ন ভাষা সহ মোট ১৪টি ভাষায় দক্ষ ছিলেন।[১৭৫] তিনিই ছিলেন প্রথম নারী যিনি একটি ডাচ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেছিলেন।[১৭৬] প্রথম জীবনে তিনি বাড়িতে বসেই পড়াশুনা করেন এবং বিভিন্ন ধরণের শিল্পচর্চা করেন। বাসায় বসেই পড়াশুনা করে তিনি বিস্তর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন এবং তদকালীন লিডেন বিশ্ববিদ্যালয় ও উট্রেখট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের সাথে তার পত্রযোগাযোগ হতো। এনগ্রেভিং ও ক্যালিগ্রাফিতে তিনি অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন এবং এই দুটোকে একত্রে মিশিয়ে তিনি ক্যালিফ্রাফি এনগ্রেভিং এর নতুন টেকনিক আবিষ্কার করেন, এবং সমসাময়িক শিল্পীদের থেকে অনেক প্রশংসা অর্জন করেন।[১৭৭][১৭৮] তিনি বাড়িতে বসে পড়াশুনা করেই ল্যাটিন ভাষায় দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। তাই ১৬৩৪ সালে উট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে তাকে একটি কবিতা লিখতে অনুরোধ করা হয়। তিনি কবিতাটি লেখেন যেখানে উট্রেখ্ট নগরের গুণকীর্তন করা হয় ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকে সেলিব্রেট করা হয়। সেখানে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে নগরকে সহায়তা করতে পারে, কিভাবে রাইন নদীর গতিপথকে পরিবর্তন করে বন্যার প্রকোপ কমিয়ে নগরের অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে পারে এই বিষয়েও উল্লেখ করেন। কিন্তু সেই সাথে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন একজন নারী পড়াশুনা করতে পারবে না সেই বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেন। তার এই প্রতিবাদের ফলে শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে প্রোফেসর ভোয়টিয়াসের লেকচার গ্রহণে অনুমোদন করেন।[১৭৯] এভাবে ১৬৩৬ সালে তিনি উট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের, বা যেকোন ডাচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী শিক্ষার্থী হন। সেই সময়ে প্রোটেস্ট্যান্ট নেদারল্যান্ডসে নারীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার অনুমোদন দেয়া হতো না, তাই পর্দার আড়ালে লুকিয়ে লেকচার শুনতেন, যাতে পুরুষেরা তাকে দেখতে না পায়।[১৮০] এই বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি হিব্রু, আরবী, ক্যালডি, সিরিয়াক ও ইথিওপীয় ভাষা শেখেন। দর্শন, ধর্মতত্ত্বে পাণ্ডিত্য ও শিল্পে প্রতিভার জন্য তিনি "স্টার অফ উট্রেখ্ট" বা উট্রেখ্টের তারকার খ্যাতি লাভ করেন। ১৬৪০ এর দশকে তিনি ল্যাটিন, গ্রিক, হিব্রু, ইতালীয়, ফরাসী, আরবী, ফারসি, ইথিওপীয়, জার্মান ও ডাচ সহ ১৪টি ভাষায় অনর্গল বলতে ও লিখতে পারতেন।[১৮১] ১৬৩৮ সালে তিনি নারী শিক্ষার পক্ষে প্যারিসে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন, এরপর ১৬৪১ সালে তিনি এই বিষয়ে ল্যাটিন ভাষায় একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। ১৬৫৭ সালে এটি ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়।[১৮২] এছাড়া তিনি নারী শিক্ষার পক্ষে অনেকের সাথে পত্রযোগাযোগ করেন, এই পত্রগুলোতে তার নারীশিক্ষার পক্ষের যুক্তি, দাবি ও আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।[১৮৩] অন্যান্য কাজের মধ্যে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল তিনি ইথিওপীয় ভাষার একটি অভিধান তৈরি করেছিলেন। ৬০ বছর বয়সের পর তিনি লাবাডিস্ট ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
হরটেনসিয়া ফন মুস (Hortensia von Moos, ১৬৫৯-১৭১৫ খ্রি.) ছিলেন একজন সুইস পণ্ডিত, যিনি হরটেনসিয়া ফন সালিস নামেও পরিচিত ছিলেন। ধর্মতত্ত্ব ও চিকিৎসাশাস্ত্র সহ বিভিন্ন বিষয়ে তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল, কিন্তু নারীর অবস্থা নিয়ে লেখালিখির কারণেই তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত হন। প্রথম গৃহশিক্ষক ও পরে নিজে নিজে পড়াশুনার মাধ্যমে তিনি পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। নেচারাল হিস্টোরি বিষয়ে তিনি অনেক পড়াশুনা করেন ও বিভিন্ন পণ্ডিতদের সাথে তিনি পত্র যোগাযোগ করেন। তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রের চর্চা করতেন এবং দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা তার কাছে চিকিৎসার জন্য আসতো। বলা হয় তিনিই প্রথম নারী যিনি তার ভৃত্যের মৃত্যুর পর তার পোস্ট-পর্টেম পরীক্ষা করেছিলেন। তার বাড়ি ছিল বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের মিলনস্থল। "এরিস্টোক্রেটিক লেডি" বা "সম্ভ্রান্ত নারী" ছদ্মনামে তার লেখা প্রকাশিত হতো। তিনি নারী ও পুরুষ উভয়েরই চিন্তার স্বাধীনতা ও সমতার বিষয়ে লিখেছেন।[১৮৪] সুইজারল্যান্ডের নারী আন্দোলনে তাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা হয়।[১৮৫]
নিউ ওয়ার্ল্ড বা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে মেক্সিকো এর নান হুয়ানা ইনেস দে লা ক্রুজ (Juana Inés de la Cruz, ১৬৪৮-১৬৯৫ খ্রি.) তার রচনা "রিপ্লাই টু সর ফিলোতেয়া"-তে নারীশিক্ষার সমর্থনে লেখেন।[১৮৬] হুয়ানা ইনেস দে লা ক্রুজ ছিলেন বারক পিরিয়ডের একজন মেক্সিকান লেখক, দার্শনিক, কম্পোজার, কবি ও হিয়েরোনিমাইট নান। তার স্পষ্টভাষী মতের কারণে তিনি "দ্য টেনথ মিউজ" ও "দ্য ফিনিক্স অফ মেক্সিকো" নামে খ্যাত হন।[১৮৭] তিনি মেক্সিকোর কলোনিয়াল যুগের নার, তিনি প্রথম যুগের স্প্যানিশ সাহিত্য ও স্প্যানিশ গোল্ডেন এজে অবদান রাখেন। বাল্যবয়সেই তিনি পড়াশুনা শুরু করেন, তিনি ল্যাটিনে অনর্গল কথা বলতে আপ্রতেন, সেই সাথে তিনি নাহুয়াতি ভাষায়ও লিখতে পারতেন। কৈশোরে তিনি দর্শনশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। নানের পেশায় যোগদান করার পর তিনি প্রেম, নারীবাদ ও ধর্মের বিষয়ে কবিতা ও গদ্যসাহিত্য রচনা শুরু করেন। তার নান কোয়ার্টার একটি সেলোনে পরিণত হয় যেখানে নগরের বুদ্ধিজীবীদের আনাগোনা লেগেই থাকতো। নারীবিদ্বেষ ও পুরুষের কপটতা নিয়ে তার সমালোচনার কারণে তিনি পুয়েবলার বিশপের নিন্দার পাত্রী হয়ে ওঠেন, এবং এর ফলে তিনি তার বই এর কালেকশনকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এর পর তিনি দরিদ্রদেরকে চ্যারিটি প্রদানের কাজে মন দেন ও তার পরের বছরে প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।[১৮৮] তিনি হারিয়ে গেছিলেন, আধুনিক সময়ে তাকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়।[১৮৯] চার্চে ও ধর্মে কেবল পুরুষের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে ও নারীর কর্তৃত্বের পক্ষে তিনি অনেক লেখালিখি করেছেন বলে তাকে ধর্মীয় নারীবাদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে এখন বিবেচনা করা হয়। এছাড়া তিনি বাধ্যতামূলক বিষমকামিতা বা হেটেরোসেক্সুয়ালিটিরও বিরুদ্ধে ছিলেন। তাকে সেই সময়ের লেসবিয়ান মুভমেন্ট ও চিকানা মুভমেন্টের সাথে সম্পর্কিত করা হয়।[১৯০] পণ্ডিতরা সর হুয়ানাকে একজন আদিনারীবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করেন, এছাড়া তিনি উপনিবেশবাদ, শিক্ষার অধিকার, নারীর ধর্মীয় কর্তৃত্ব সহ বৈচিত্র্যময় বিষয় নিয়ে লেখালিখি করেছেন।
নিউওয়ার্ল্ডের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ আদিনারীবাদী হলে অ্যান ব্র্যাডস্ট্রিট (Anne Bradstreet, ১৬১২ – ১৬৭২ খ্রি.)। তিনি উত্তর আমেরিকার প্রথম দিকের ইংরেজ কবিদের মধ্যে সবচেয়ে বিশিষ্ট, সেই সাথে তিনি ইংল্যান্ডের উত্তর আমেরিকান উপনিবেশের প্রথম লেখক। তিনি আমেরিকান সাহিত্যের প্রথম পিউরিটান ব্যক্তিত্ব। তিনি তার লেখা প্রচুর সংখ্যক কবিতা ও মরণোত্তর প্রকাশিত ব্যক্তিগত রচনাসমূহের জন্য সাহিত্যের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছেন। সে সময় লেখকের পেশাকে নারীদের জন্য সেভাবে গ্রহণযোগ্য কাজ বলে বিবেচনা করা হতো না, তাই ব্র্যাডস্ট্রিট সমালোচনার সম্মুখীন হন। এর প্রমাণ আমরা পাই যখন সেই সময়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি জন উইনথ্রপ যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাট কলোনি গভর্নর এডওয়ার্ড হপকিন্সের স্ত্রী অ্যান হপকিন্সের লেখালিখিকে নিন্দা করে বলেছিলেন তার পুরুষের মতো এরকম লেখালিখি ছহেড়ে গৃহিনীর কাজেই ফিরে যাওয়া উচিৎ। যাই হোক, সেইরকম একটা সময়ে ব্র্যাডস্ট্রিট তার লেখালিখি চালিয়ে গিয়েছেন, যার মাধ্যমে তিনি সেই সময়ের সামাজিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। শুধু সমাজ নয় তাকে লড়তে হয়েছিল তার পিউরিটান ধর্মের বিরুদ্ধেও, কেননা পিউরিটান আদর্শ অনুসারে নারীরা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি নিকৃষ্ট।[১৯১]
জ্ঞানীয় পক্ষপাতসমূহের তালিকা
Name | Description |
---|---|
অ্যাম্বিগুইটি এফেক্ট অস্পষ্টতা ক্রিয়া | একাধিক বিকল্প বা অপশনের মধ্যে যে অপশনের অনুকূল ফলাফলের সম্ভাবনা জানা আছে তাকে নির্বাচিত করার, ও যে অপশনের অনুকূল ফলাফলের সম্ভাবনা জানা নেই তাকে এড়িয়ে যাবার প্রবণতা[১৯২] |
অ্যাংকরিং বা ফোকালিজম বা নোঙ্গরকরণ | কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় অনেকগুলো তথ্য ও বৈশিষ্ট্যের মাঝে কোন একটির উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হবার (বিশেষ করে সবার প্রথমে যে তথ্যটি গ্রহন করা হয় তার উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হবার) প্রবণতা।[১৯৩][১৯৪] |
এনথ্রোপোসেন্ট্রিক থিংকিং বা মানবকেন্দ্রিক চিন্তা | শিশুদের মধ্যে একটি প্রবণতা দেখা যায় যে তারা বিভিন্ন বিষয়, এবং তাদের কাছে কম পরিচিত জীববিজ্ঞানগত বিষয়কে উপলব্ধি করার জন্য সেগুলোর সাথে মানুষের তুলনা দাঁড় করায়।[১৯৫] |
এনথ্রোপোমরফিজম বা পারসোনিফিকেশন | বিভিন্ন প্রাণী, বস্তু এবং বিমূর্ত ধারণাকে মানবসদৃশ বৈশিষ্ট্য, আবেগ এবং উদ্দেশ্য দ্বারা চিহ্নিত করা।[১৯৬] |
এটেনশনাল বায়াস বা মনোযোগ পক্ষপাত | আমাদের উপলব্ধি বা প্রত্যক্ষকরণের দ্বারা আমাদের সেই সময়কার চিন্তা ভাবনার প্রভাবিত হবার প্রবণতা, যার কারণে একটি চিন্তা পরপর অনেকগুলো চিন্তাকে একটি নির্দিষ্ট উপায়ে সজ্জিত হতে নির্দেশ দেয় এবং তার ফলে মানুষ বিকল্প সম্ভাবনাসমূহকে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়।[১৯৭] |
অটোমেশন বায়াস বা স্বয়ংক্রীয় পক্ষপাত | স্বয়ংক্রীয় ব্যবস্থার উপর অতিমাত্রায় নির্ভর করার প্রবণতা যার ফলে ব্যক্তি সঠিক সিদ্ধান্তের বদলে ভুল স্বয়ংক্রীয় তথ্যকে সঠিক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।[১৯৮] |
এভেইলেবিলিটি হিউরিস্টিক বা প্রাপ্যতা অনুসন্ধিৎসা | স্মৃতিতে যে ঘটনার "উপস্থিতি" বেশি, সেই ঘটনার সম্ভাবনাকে অধিক মূল্যায়ন করার প্রবণতা। স্মৃতিটি যত বেশি সাম্প্রতিক হবে ও যত বেশি অস্বাভাবিক বা আবেগময় হবে তার প্রভাব তত বেশি হবে।[১৯৯] |
এভেইলেবিলিটি ক্যাসকেড বা প্রাপ্যতা জলপ্রপাত | একটি আত্ম-বলবর্ধন প্রক্রিয়া যেখানে সামষ্টিক বিশ্বাসকে অধিক পরিমাণে সম্ভাব্য বলে মনে হয়, এবং এর সম্ভাব্যতা গণ-আলোচনায় যত বৃদ্ধি পায় বা যত বেশি করে এটি আলোচিত হয়, একে তত বেশি সত্য বলে মনে হয়।[২০০] |
ব্যাকফায়ার এফেক্ট বা ব্যাকফায়ার ক্রিয়া | কোন ব্যক্তিকে তার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ দেয়া হলে তার পূর্ববর্তী বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হবার প্রবণতা।[২০১] তুলনীয়: কন্টিনিউড ইনফ্লুয়েন্স এফেক্ট বা অবিরত প্রভাব ক্রিয়া। |
ব্যান্ডওয়াগন এফেক্ট বা ব্যান্ডওয়াগন ক্রিয়া | অনেক মানুষই একটি কাজ করে বা একটি বিষয় বিশ্বাস করে বলে অন্যদের সেই কাজটি করার বা বিশ্বাস করার প্রবণতা। দলীয় চিন্তন এবং সামষ্টিক আচরণ এর সাথে সম্পর্কিত।[২০২] |
বেজ রেট হেত্বাভাস (বেজ রেট ফ্যালাসি) বা বেজ রেট উপেক্ষা (বেজ রেট নেগলেক্ট) | সাধারণ বা সার্বিক (Base rate) তথ্যকে এড়িয়ে গিয়ে বিশেষ তথ্যে (কোন নির্দিষ্ট পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত তথ্য) মনোনিবেশ করার প্রবণতা।[২০৩] |
বিলিফ বায়াস বা বিশ্বাস পক্ষপাত | কোন যুক্তিতে যৌক্তিক শক্তির মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যুক্তির সঠিকতার দিকে মনোনিবেশ না করে উপসংহারের বিশ্বাসযোগ্যতার দিকে মনোনিবেশ করার প্রবণতা।[২০৪] |
বেন ফ্রাংকলিন এফেক্ট বা বেন ফ্রাংকলিন ক্রিয়া | কোন ব্যক্তির কারও থেকে সাহায্য পাবার পর তাকে পাল্টা সাহায্য করার প্রবণতার চেয়ে, সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে যাকে ইতিমধ্যেই সাহায্য করা হয়ে গেছে তাকেই পুনরায় সাহায্য করার প্রবণতা বেশি থাকে। অর্থাৎ 'খ' 'ক'কে সাহায্য করলে 'ক' এর 'খ'কে সাহায্য করার প্রবণতার চেয়ে 'খ' এরই 'ক'কে সাহায্য করার প্রবণতা বেশি হবে।[২০৫] |
বার্কসনস প্যারাডক্স বা বার্কসনের আপাতবৈপরীত্য | শার্তাধীন সম্ভাবনার ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানগত পরীক্ষণকে ভুলব্যাখ্যা করার প্রবণতা |
বায়াস ব্লাইন্ড স্পট বা অন্ধবিন্দু পক্ষপাত | অন্যদের তুলনায় নিজেকে কম পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে করা, বা নিজের তুলনায় অন্যদের মধ্যে বেশি চেতনাগত পক্ষপাত সনাক্ত করার প্রবণতা।[২০৬] |
চিয়ারলিডার এফেক্ট বা চিয়ারলিডার ক্রিয়া | একা কোন ব্যক্তির তুলনায় দলবদ্ধ ব্যক্তিবর্গকে অধিকতর আকর্ষণীয় বলে মনে হবার প্রবণতা।[২০৭] |
চয়েস-সাপোর্টিভ বায়াস বা নির্বাচন-সহায়ক পক্ষপাত | কোন ব্যক্তির নিজের পছন্দ বা বাছাই বা নির্বাচনকে যতটুকু ভাল তার চেয়েও ভাল হিসেবে মনে রাখা।[২০৮] |
ক্লাস্টারিং ইল্যুশন বা গুচ্ছকরণ বিভ্রম | যাদৃচ্ছিক উপাত্তের বিশাল নমুনার মধ্যে ছোট ছোট গুচ্ছকে অধিক মূল্যায়ন করা (অর্থাৎ, ভুতুরে নকশা বা প্যাটার্ন দেখা)।[১৯৪] |
কনফারমেশন বায়াস বা নিশ্চিতকরণ পক্ষপাত | কোন তথ্যকে এমনভাবে অনুসন্ধান করা, ব্যাখ্যা করা, মনোনিবেশ করা বা মনে রাখবার প্রবণতা যা সেই ব্যক্তির নিজের পূর্বের কোন ধারণাকে নিশ্চিত করে।[২০৯] |
কংগ্রুয়েন্স বায়াস বা সঙ্গতি পক্ষপাত | কোন অনুকল্পকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যক্ষভাবে পরীক্ষা করা ও সম্ভাব্য অন্যান্য বিকল্প পরোক্ষ পরীক্ষণকে উপেক্ষা করার প্রবণতা।[১৯৪] |
কনজাংকশন ফ্যালাসি বা সংযোগ হেত্বাভাস | সাধারণ অবস্থার তুলনায় নির্দিষ্ট অবস্থাকে অধিক সম্ভাবনাময় হিসেবে ধরে নেবার প্রবণতা।[২১০] |
কনজারভেটিজম (বিলিফ রিভিশন) বা রক্ষণশীলতা (বিশ্বাস সংশোধন) | নতুন সাক্ষ্যপ্রমাণ পাবার পরও কোন ব্যক্তির পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্বাস সংশোধন না করবার প্রবণতা।[২১১][২১২][২১৩] |
কন্টিউনিউড ইনফ্লুয়েন্স এফেক্ট বা অবিরত প্রভাব ক্রিয়া | পূর্বে শেখা ভুল তথ্যে বিশ্বাস করা চালিয়ে যাওয়া, এমনকি সেই ভুলটি ধরিয়ে দিয়ে সঠিকটি দেখিয়ে দেয়া বা ভুলটি ঠিক করে দেবার পরেও। ভুলকে ঠিক করে দেবার পরও তখনও ভুল তথ্য ব্যক্তির তৈরি করা অবধারণকে প্রভাবিত করে যেতে পারে।[২১৪] তুলনীয়: ব্যাকফায়ার এফেক্ট বা ব্যাকফায়ার ক্রিয়া |
Contrast effect | The enhancement or reduction of a certain perception's stimuli when compared with a recently observed, contrasting object.[২১৫] |
Courtesy bias | The tendency to give an opinion that is more socially correct than one's true opinion, so as to avoid offending anyone.[২১৬] |
Curse of knowledge | When better-informed people find it extremely difficult to think about problems from the perspective of lesser-informed people.[২১৭] |
Declinism | The belief that a society or institution is tending towards decline. Particularly, it is the predisposition to view the past favourably (rosy retrospection) and future negatively.[২১৮] |
Decoy effect | Preferences for either option A or B change in favor of option B when option C is presented, which is similar to option B but in no way better. |
Denomination effect | The tendency to spend more money when it is denominated in small amounts (e.g., coins) rather than large amounts (e.g., bills).[২১৯] |
Disposition effect | The tendency to sell an asset that has accumulated in value and resist selling an asset that has declined in value. |
Distinction bias | The tendency to view two options as more dissimilar when evaluating them simultaneously than when evaluating them separately.[২২০] |
Dunning–Kruger effect | The tendency for unskilled individuals to overestimate their own ability and the tendency for experts to underestimate their own ability.[২২১] |
Duration neglect | The neglect of the duration of an episode in determining its value |
Empathy gap | The tendency to underestimate the influence or strength of feelings, in either oneself or others. |
Endowment effect | The tendency for people to demand much more to give up an object than they would be willing to pay to acquire it.[২২২] |
Exaggerated expectation | Based on the estimates,[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] real-world evidence turns out to be less extreme than our expectations (conditionally inverse of the conservatism bias).টেমপ্লেট:Unreliable-source-inline[২১১][২২৩] |
Experimenter's or expectation bias | The tendency for experimenters to believe, certify, and publish data that agree with their expectations for the outcome of an experiment, and to disbelieve, discard, or downgrade the corresponding weightings for data that appear to conflict with those expectations.[২২৪] |
Focusing effect | The tendency to place too much importance on one aspect of an event.[২২৫] |
Forer effect or Barnum effect | The observation that individuals will give high accuracy ratings to descriptions of their personality that supposedly are tailored specifically for them, but are in fact vague and general enough to apply to a wide range of people. This effect can provide a partial explanation for the widespread acceptance of some beliefs and practices, such as astrology, fortune telling, graphology, and some types of personality tests. |
Framing effect | Drawing different conclusions from the same information, depending on how that information is presented |
Frequency illusion | The illusion in which a word, a name, or other thing that has recently come to one's attention suddenly seems to appear with improbable frequency shortly afterwards (not to be confused with the recency illusion or selection bias).[২২৬] This illusion may explain some examples of the Baader-Meinhof Phenomenon, when someone repeatedly notices a newly learned word or phrase shortly after learning it. |
Functional fixedness | Limits a person to using an object only in the way it is traditionally used. |
Gambler's fallacy | The tendency to think that future probabilities are altered by past events, when in reality they are unchanged. The fallacy arises from an erroneous conceptualization of the law of large numbers. For example, "I've flipped heads with this coin five times consecutively, so the chance of tails coming out on the sixth flip is much greater than heads." |
Hard–easy effect | Based on a specific level of task difficulty, the confidence in judgments is too conservative and not extreme enough[২১১][২২৭][২২৮][২২৯] |
Hindsight bias | Sometimes called the "I-knew-it-all-along" effect, the tendency to see past events as being predictable[২৩০] at the time those events happened. |
Hostile attribution bias | The "hostile attribution bias" is the tendency to interpret others' behaviors as having hostile intent, even when the behavior is ambiguous or benign. |
Hot-hand fallacy | The "hot-hand fallacy" (also known as the "hot hand phenomenon" or "hot hand") is the fallacious belief that a person who has experienced success with a random event has a greater chance of further success in additional attempts. |
Hyperbolic discounting | Discounting is the tendency for people to have a stronger preference for more immediate payoffs relative to later payoffs. Hyperbolic discounting leads to choices that are inconsistent over time – people make choices today that their future selves would prefer not to have made, despite using the same reasoning.[২৩১] Also known as current moment bias, present-bias, and related to Dynamic inconsistency. |
Identifiable victim effect | The tendency to respond more strongly to a single identified person at risk than to a large group of people at risk.[২৩২] |
IKEA effect | The tendency for people to place a disproportionately high value on objects that they partially assembled themselves, such as furniture from IKEA, regardless of the quality of the end result. |
Illusion of control | The tendency to overestimate one's degree of influence over other external events.[২৩৩] |
Illusion of validity | Belief that furtherly acquired information generates additional relevant data for predictions, even when it evidently does not.[২৩৪] |
Illusory correlation | Inaccurately perceiving a relationship between two unrelated events.[২৩৫][২৩৬] |
Illusory truth effect | A tendency to believe that a statement is true if it is easier to process, or if it has been stated multiple times, regardless of its actual veracity. These are specific cases of truthiness. |
Impact bias | The tendency to overestimate the length or the intensity of the impact of future feeling states.[২৩৭] |
Information bias | The tendency to seek information even when it cannot affect action.[২৩৮] |
Insensitivity to sample size | The tendency to under-expect variation in small samples. |
Irrational escalation | The phenomenon where people justify increased investment in a decision, based on the cumulative prior investment, despite new evidence suggesting that the decision was probably wrong. Also known as the sunk cost fallacy. |
Law of the instrument | An over-reliance on a familiar tool or methods, ignoring or under-valuing alternative approaches. "If all you have is a hammer, everything looks like a nail." |
Less-is-better effect | The tendency to prefer a smaller set to a larger set judged separately, but not jointly. |
Look-elsewhere effect | An apparently statistically significant observation may have actually arisen by chance because of the size of the parameter space to be searched. |
Loss aversion | The disutility of giving up an object is greater than the utility associated with acquiring it.[২৩৯] (see also Sunk cost effects and endowment effect). |
Mere exposure effect | The tendency to express undue liking for things merely because of familiarity with them.[২৪০] |
Money illusion | The tendency to concentrate on the nominal value (face value) of money rather than its value in terms of purchasing power.[২৪১] |
Moral credential effect | The tendency of a track record of non-prejudice to increase subsequent prejudice. |
Negativity bias or Negativity effect | Psychological phenomenon by which humans have a greater recall of unpleasant memories compared with positive memories.[২৪২][২৪৩] (see also actor-observer bias, group attribution error, positivity effect, and negativity effect).[২৪৪] |
Neglect of probability | The tendency to completely disregard probability when making a decision under uncertainty.[২৪৫] |
Normalcy bias | The refusal to plan for, or react to, a disaster which has never happened before. |
Not invented here | Aversion to contact with or use of products, research, standards, or knowledge developed outside a group. Related to IKEA effect. |
Observer-expectancy effect | When a researcher expects a given result and therefore unconsciously manipulates an experiment or misinterprets data in order to find it (see also subject-expectancy effect). |
Omission bias | The tendency to judge harmful actions as worse, or less moral, than equally harmful omissions (inactions).[২৪৬] |
Optimism bias | The tendency to be over-optimistic, overestimating favorable and pleasing outcomes (see also wishful thinking, valence effect, positive outcome bias).[২৪৭][২৪৮] |
Ostrich effect | Ignoring an obvious (negative) situation. |
Outcome bias | The tendency to judge a decision by its eventual outcome instead of based on the quality of the decision at the time it was made. |
Overconfidence effect | Excessive confidence in one's own answers to questions. For example, for certain types of questions, answers that people rate as "99% certain" turn out to be wrong 40% of the time.[২১১][২৪৯][২৫০][২৫১] |
Pareidolia | A vague and random stimulus (often an image or sound) is perceived as significant, e.g., seeing images of animals or faces in clouds, the man in the moon, and hearing non-existent hidden messages on records played in reverse. |
Pessimism bias | The tendency for some people, especially those suffering from depression, to overestimate the likelihood of negative things happening to them. |
Planning fallacy | The tendency to underestimate task-completion times.[২৩৭] |
Post-purchase rationalization | The tendency to persuade oneself through rational argument that a purchase was good value. |
Pro-innovation bias | The tendency to have an excessive optimism towards an invention or innovation's usefulness throughout society, while often failing to identify its limitations and weaknesses. |
Projection bias | The tendency to overestimate how much our future selves share one's current preferences, thoughts and values, thus leading to sub-optimal choices.[২৫২][২৫৩][২৪৩] |
Pseudocertainty effect | The tendency to make risk-averse choices if the expected outcome is positive, but make risk-seeking choices to avoid negative outcomes.[২৫৪] |
Reactance | The urge to do the opposite of what someone wants you to do out of a need to resist a perceived attempt to constrain your freedom of choice (see also Reverse psychology). |
Reactive devaluation | Devaluing proposals only because they purportedly originated with an adversary. |
Recency illusion | The illusion that a word or language usage is a recent innovation when it is in fact long-established (see also frequency illusion). |
Regressive bias | A certain state of mind wherein high values and high likelihoods are overestimated while low values and low likelihoods are underestimated.[২১১][২৫৫][২৫৬]টেমপ্লেট:Unreliable-source-inline |
Restraint bias | The tendency to overestimate one's ability to show restraint in the face of temptation. |
Rhyme as reason effect | Rhyming statements are perceived as more truthful. A famous example being used in the O.J Simpson trial with the defense's use of the phrase "If the gloves don't fit, then you must acquit." |
Risk compensation / Peltzman effect | The tendency to take greater risks when perceived safety increases. |
Selective perception | The tendency for expectations to affect perception. |
Semmelweis reflex | The tendency to reject new evidence that contradicts a paradigm.[২১৩] |
Sexual overperception bias / sexual underperception bias | The tendency to over-/underestimate sexual interest of another person in oneself. |
Social comparison bias | The tendency, when making decisions, to favour potential candidates who don't compete with one's own particular strengths.[২৫৭] |
Social desirability bias | The tendency to over-report socially desirable characteristics or behaviours in oneself and under-report socially undesirable characteristics or behaviours.[২৫৮] |
Status quo bias | The tendency to like things to stay relatively the same (see also loss aversion, endowment effect, and system justification).[২৫৯][২৬০] |
Stereotyping | Expecting a member of a group to have certain characteristics without having actual information about that individual. |
Subadditivity effect | The tendency to judge probability of the whole to be less than the probabilities of the parts.[২৬১] |
Subjective validation | Perception that something is true if a subject's belief demands it to be true. Also assigns perceived connections between coincidences. |
Surrogation | Losing sight of the strategic construct that a measure is intended to represent, and subsequently acting as though the measure is the construct of interest. |
Survivorship bias | Concentrating on the people or things that "survived" some process and inadvertently overlooking those that didn't because of their lack of visibility. |
Time-saving bias | Underestimations of the time that could be saved (or lost) when increasing (or decreasing) from a relatively low speed and overestimations of the time that could be saved (or lost) when increasing (or decreasing) from a relatively high speed. |
Third-person effect | Belief that mass communicated media messages have a greater effect on others than on themselves. |
Triviality / Parkinson's Law of | The tendency to give disproportionate weight to trivial issues. Also known as bikeshedding, this bias explains why an organization may avoid specialized or complex subjects, such as the design of a nuclear reactor, and instead focus on something easy to grasp or rewarding to the average participant, such as the design of an adjacent bike shed.[২৬২] |
Unit bias | The tendency to want to finish a given unit of a task or an item. Strong effects on the consumption of food in particular.[২৬৩] |
Weber–Fechner law | Difficulty in comparing small differences in large quantities. |
Well travelled road effect | Underestimation of the duration taken to traverse oft-traveled routes and overestimation of the duration taken to traverse less familiar routes. |
"Women are wonderful" effect | People associate more positive attributes with women compared to men. |
Zero-risk bias | Preference for reducing a small risk to zero over a greater reduction in a larger risk. |
Zero-sum bias | A bias whereby a situation is incorrectly perceived to be like a zero-sum game (i.e., one person gains at the expense of another). |
- ↑ Botting Eileen H, Houser Sarah L. "Drawing the Line of Equality: Hannah Mather Crocker on Women's Rights". American Political Science Review (2006), 100, pp. 265–278.
- ↑ Nancy F. Cott, 1987. The Grounding of Modern Feminism. New Haven: Yale University Press.
- ↑ Karen M. Offen, 2000. European Feminisms, 1700–1950: A Political History. Stanford: Stanford University Press.
- ↑ Ferguson, Margaret. Feminism in time. Modern Language Quarterly 2004 65(1), pp. 7–27
- ↑ Baruch, Elaine Hoffman, Women in Men's Utopias, in Rohrlich, Ruby, & Elaine Hoffman Baruch, eds., Women in Search of Utopia, op. cit., p. [209] and see p. 211 (Plato supporting "child care" so women could be soldiers), citing, at p. [209] n. 1, Plato, trans. Francis MacDonald Cornford, The Republic (N.Y.: Oxford Univ. Press, 1973), Book V.
- ↑ Brickhouse, Thomas and Smith, Nicholas D. Plato (c. 427–347 BC), The Internet Encyclopedia of Philosophy, University of Tennessee, cf. Dating Plato's Dialogues.
- ↑ National Public Radio (August 8, 2007). Plato's 'Republic' Still Influential, Author Says. Talk of the Nation.
- ↑ Plato: The Republic. Plato: His Philosophy and his life, allphilosophers.com
- ↑ Plato। "The Republic"। classics.mit.edu। Translated by Benjamin Jowett। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ মোহাম্মদ, নূরনবী (২০১৪)। পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)। ঢাকা: কাকলী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১৮৪–২৮১। আইএসবিএন ISBN 984-70133-0363-3
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)। - ↑ "Musonius: The Roman Socrates"। Classical Wisdom। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-১৪।
- ↑ ""Women and Islam" in ''Oxford Islamic Studies Online''"। Oxfordislamicstudies.com। ২০০৮-০৫-০৬। ডিওআই:10.1093/0198297688.003.0006। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-৩০।
- ↑ Giladi, Avner (মে ১৯৯০)। "Some Observations on Infanticide In Medieval Muslim Society"। International Journal of Middle East Studies। 22 (2): 185–200। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৮।
- ↑ "Sahih al-Bukhari » Book of Wedlock, Marriage (Nikaah)"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-০২।
- ↑ ক খ Khadduri, Majid. Socialist Iraq: A Study in Iraqi Politics since 1968. Washington: Middle East Institute, 1978. Print.
- ↑ ক খ গ Esposito, John L. Islam: The Straight Path. New York: Oxford UP, 1998. Print
- ↑ Esposito, John L. Islam: The Straight Path. New York: Oxford UP, 1998. N. page 339. Print.
- ↑ Watt, W. Montgomery. Islamic Creeds: A Selection. Edinburgh: Edinburgh UP, 1994. Print.
- ↑ Leila Ahmed, Women and the Advent of Islam, Signs: Journal of Women in Culture and Society, Vol. 11, No. 4, pp. 665-691
- ↑ Mernissi, Fatima (১৯৭৫)। Beyond the Veil: Male-female Dynamics in Modern Muslim Society। Saqi Books। পৃষ্ঠা 66। আইএসবিএন 9780863564413।
- ↑ George Saliba (1994), A History of Arabic Astronomy: Planetary Theories During the Golden Age of Islam, pp. 245, 250, 256–57. New York University Press, আইএসবিএন ০-৮১৪৭-৮০২৩-৭.
- ↑ King, David A. (১৯৮৩)। "The Astronomy of the Mamluks"। Isis। 74 (4): 531–55। ডিওআই:10.1086/353360।
- ↑ Hassan, Ahmad Y (১৯৯৬)। "Factors Behind the Decline of Islamic Science After the Sixteenth Century"। Sharifah Shifa Al-Attas। Islam and the Challenge of Modernity, Proceedings of the Inaugural Symposium on Islam and the Challenge of Modernity: Historical and Contemporary Contexts, Kuala Lumpur, August 1–5, 1994। International Institute of Islamic Thought and Civilization (ISTAC)। পৃষ্ঠা 351–99। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Hakim, Souad (২০০২), "Ibn 'Arabî's Twofold Perception of Woman: Woman as Human Being and Cosmic Principle", Journal of the Muhyiddin Ibn 'Arabi Society, 31: 1–29
- ↑ Lindsay, James E. (২০০৫), Daily Life in the Medieval Islamic World, Greenwood Publishing Group, পৃষ্ঠা 197, আইএসবিএন 978-0-313-32270-9
- ↑ Lindsay, James E. (২০০৫), Daily Life in the Medieval Islamic World, Greenwood Publishing Group, পৃষ্ঠা 196 & 198, আইএসবিএন 978-0-313-32270-9
- ↑ Lindsay, James E. (২০০৫), Daily Life in the Medieval Islamic World, Greenwood Publishing Group, পৃষ্ঠা 196, আইএসবিএন 978-0-313-32270-9
- ↑ Lindsay, James E. (২০০৫), Daily Life in the Medieval Islamic World, Greenwood Publishing Group, পৃষ্ঠা 198, আইএসবিএন 978-0-313-32270-9
- ↑ Abdal Hakim Murad। "Islam, Irigaray, and the retrieval of Gender"। Masud.co.uk। ২০১২-০৫-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-১৩।
- ↑ Guity Nashat, Lois Beck (২০০৩), Women in Iran from the Rise of Islam to 1800, University of Illinois Press, পৃষ্ঠা 69, আইএসবিএন 978-0-252-07121-8
- ↑ Maya Shatzmiller, pp. 6–7.
- ↑ ক খ Maya Shatzmiller (1994), Labour in the Medieval Islamic World, Brill Publishers, আইএসবিএন ৯০-০৪-০৯৮৯৬-৮, pp. 400–1
- ↑ Maya Shatzmiller, pp. 350–62.
- ↑ Belo, Catarina (২০০৯)। "Some Considerations on Averroes' Views Regarding Women and Their Role in Society"। Journal of Islamic Studies। 20 (1): 6-15। ডিওআই:10.1093/jis/etn061।
- ↑ "ABCNEWS.com : The Cost of Women in Combat"। realnews247.com। ২০১০-১২-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ Black, Edwin (২০০৪), Banking on Baghdad: Inside Iraq's 7,000 Year History of War, Profit, and Conflict, John Wiley and Sons, পৃষ্ঠা 34, আইএসবিএন 978-0-471-70895-7
- ↑ Hale, Sarah Josepha Buell (১৮৫৩), Woman's Record: Or, Sketches of All Distinguished Women, from "The Beginning Till A.D. 1850, Arranged in Four Eras, with Selections from Female Writers of Every Age, Harper Brothers, পৃষ্ঠা 120
- ↑ Badr, Gamal M.; Mayer, Ann Elizabeth (১৯৮৪), "Islamic Criminal Justice", The American Journal of Comparative Law, 32 (1): 167–169, জেস্টোর 840274, ডিওআই:10.2307/840274
- ↑ Noah Feldman (মার্চ ১৬, ২০০৮)। "Why Shariah?"। New York Times। ২০১২-১১-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-০৫।
- ↑ Rapoport, Yossef (২০০৫), Marriage, Money and Divorce in Medieval Islamic Society, Cambridge University Press, পৃষ্ঠা 2, আইএসবিএন 978-0-521-84715-5
- ↑ Rapoport, Yossef (২০০৫), Marriage, Money and Divorce in Medieval Islamic Society, Cambridge University Press, পৃষ্ঠা 5–6, আইএসবিএন 978-0-521-84715-5
- ↑ "Women in medieval society"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-২৭।
- ↑ Blain, Virginia, et al. The Feminist Companion to Literature in English (Yale UP, 1990)
- ↑ "Hrotsvitha - Name's Meaning of Hrotsvitha"। Name-Doctor.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০৩।
- ↑ Bayerschmidt, Carl F. (১৯৬৬-১১-০১)। "Hroswitha of Gandersheim. Her Life, Times and Works, and a Comprehensive Bibliography. Edited by Anne Lyon Haight"। The Germanic Review: Literature, Culture, Theory। 41 (4): 302–303। আইএসএসএন 0016-8890। ডিওআই:10.1080/19306962.1966.11754646।
- ↑ Frankforter, A. Daniel (ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯)। "Hroswitha of Gandersheim and the Destiny of Women"। The Historian। 41 (2): 295–314। আইএসএসএন 0018-2370। ডিওআই:10.1111/j.1540-6563.1979.tb00548.x।
- ↑ Emily McFarlan Miller (২০১৯-০৩-২০)। "Hrotsvitha vs. Gobnait"। Lent Madness (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২৩।
- ↑ Frankforter, A. Daniel (ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯)। "Hroswitha of Gandersheim and the Destiny of Women"। The Historian। 41 (2): 295–314। আইএসএসএন 0018-2370। ডিওআই:10.1111/j.1540-6563.1979.tb00548.x।
- ↑ Case, Sue-Ellen (ডিসেম্বর ১৯৮৩)। "Re-Viewing Hrotsvit"। Theatre Journal। 35 (4): 533–542। জেস্টোর 3207334। ডিওআই:10.2307/3207334।
- ↑ Homans, Margaret (১৯৯৪)। "Feminist Fictions and Feminist Theories of Narrative"। Narrative। 2 (1): 3–16। আইএসএসএন 1063-3685। জেস্টোর 20107020।
- ↑ Case, Sue-Ellen (ডিসেম্বর ১৯৮৩)। "Re-Viewing Hrotsvit"। Theatre Journal। 35 (4): 533–542। জেস্টোর 3207334। ডিওআই:10.2307/3207334।
- ↑ Butler, Colleen (২০১৬)। "Queering The Classics: Gender, Genre, and Reception In The Works of Hrotsvit of Gandersheim"।
- ↑ Frankforter, A. Daniel (ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯)। "Hroswitha of Gandersheim and the Destiny of Women"। The Historian। 41 (2): 295–314। আইএসএসএন 0018-2370। ডিওআই:10.1111/j.1540-6563.1979.tb00548.x।
- ↑ Frankforter, A. Daniel (ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯)। "Hroswitha of Gandersheim and the Destiny of Women"। The Historian। 41 (2): 295–314। আইএসএসএন 0018-2370। ডিওআই:10.1111/j.1540-6563.1979.tb00548.x।
- ↑ Case, Sue-Ellen (ডিসেম্বর ১৯৮৩)। "Re-Viewing Hrotsvit"। Theatre Journal। 35 (4): 533–542। জেস্টোর 3207334। ডিওআই:10.2307/3207334।
- ↑ Case, Sue-Ellen (ডিসেম্বর ১৯৮৩)। "Re-Viewing Hrotsvit"। Theatre Journal। 35 (4): 533–542। জেস্টোর 3207334। ডিওআই:10.2307/3207334।
- ↑ Case, Sue-Ellen (ডিসেম্বর ১৯৮৩)। "Re-Viewing Hrotsvit"। Theatre Journal। 35 (4): 533–542। জেস্টোর 3207334। ডিওআই:10.2307/3207334।
- ↑ Case, Sue-Ellen (ডিসেম্বর ১৯৮৩)। "Re-Viewing Hrotsvit"। Theatre Journal। 35 (4): 533–542। জেস্টোর 3207334। ডিওআই:10.2307/3207334।
- ↑ Gilbert, Dorothy (২০১৫)। Marie de France Poetry। New York: W W Norton & Co। পৃষ্ঠা 191–3। আইএসবিএন 9780393932683।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;museo
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Johns, Susan M. (২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৪)। "Haie, Nicola de la (d. 1230)"। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ডিওআই:10.1093/ref:odnb/47223। (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন।)
- ↑ Golding, Brian (২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬)। "Canville [Camville], Gerard de (d. 1214)"। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ডিওআই:10.1093/ref:odnb/4543। (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন।)
- ↑ Stevens, John (১৯৭৯)। Music & Poetry in the Early Tudor Court। New York: Cambridge University Press।
- ↑ Newman, F. X. (১৯৬৮)। The Meaning of Courtly Love। Albany: State University of New York।
- ↑ "Courtly love"। Middle Ages.com। ২০০৭-০৫-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-১৮।
- ↑ "Courtly Love and the origins of romance"। Wsu.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-১৮।
- ↑ "A History of Women: Silences of the Middle Ages"। Employees.oneonta.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-১৮।
- ↑ Kelly, Amy (১৯৩৭-০১-০১)। "Eleanor of Aquitaine and Her Courts of Love"। Speculum। 12 (1): 3–19। আইএসএসএন 0038-7134। ডিওআই:10.2307/2848658।
- ↑ John F. Benton, "The Evidence for Andreas Capellanus Re-examined Again", in Studies in Philology, 59 (1962); and "The Court of Champagne as a Literary Center", in Speculum, 36(1961).
- ↑ Sweeney (1983)
- ↑ Tucker (1987), পৃ. 168
- ↑ "Deirdre O'Siodhachain, The Practice of Courtly Love"। Eleanorofaquitaine.net। ২০০৮-০৮-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-১৮।
- ↑ This analysis is heavily informed by the Chivalric–Matriarchal reading of courtly love, put forth by critics such as Thomas Warton and Karl Vossler. This theory considers courtly love as the intersection between the theocratic Catholic Church and "Germanic/Celtic/Pictish" matriarchy. For more on this theory, see The Origin and Meaning of Courtly Love, Roger Boase, pg 75.
- ↑ Roger Boase (1986). "Courtly Love," in Dictionary of the Middle Ages, Vol. 3, pp. 667–668.
- ↑ Deirdre O'Siodhachain, The Practice of Courtly Love ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৮-০৮-২০ তারিখে
- ↑ Black, Joseph; Conolly, Leonard; Flint, Kate; Grundy, Isobel; LePan, Don; Liuzza, Roy; McGann, Jerome J.; Prescott, Anne Lake; Qualls, Barry V. (২০১৪-১২-০৮)। The Broadview Anthology of British Literature Volume 1: The Medieval Period - Third Edition (ইংরেজি ভাষায়)। Broadview Press। আইএসবিএন 9781770485549।
- ↑ "Peasants' Revolt: The Time When Women Took Up Arms"। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৩। ,
- ↑ ক খ "Peasants' Revolt: The Time When Women Took Up Arms"। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৩।
- ↑ ক খ Hogenboom, Melissa. "Peasants' Revolt: The time when women took up arms." BBC News. BBC News Magazine, 14 June 2012. Web. 7 March 2013.
- ↑ "Christine de Pizan and the Book of the Queen"। British Library। ২৭ জুন ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৮।
- ↑ "Christine de Pisan"। Brooklyn Museum। Elizabeth A. Sackler Center for Feminist Art। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভে ২০১৭।
- ↑ Redfern, Jenny (১৯৯৫)। "Christine de Pisan and the Treasure of the City of Ladies: a medieval rhetorician and her rhetoric"। Lunsford, Andrea A.। Reclaiming Rhetorica: Women and in the Rhetorical Tradition। Pittsburgh: University of Pittsburgh Press। পৃষ্ঠা 80।
- ↑ Charity C. Willard, Christine de Pizan: Her Life and Works (New York: Persea Books, 1984, p.135
- ↑ Campbell, Karlyn K., Three Tall Women: Radical Challenges to Criticism, Pedagogy, and Theory, The Carroll C. Arnold Distinguished Lecture National Communication Association November 2001 Boston: Pearson Education Inc, 2003, p. 6
- ↑ Campbell, Karlyn K., Three Tall Women: Radical Challenges to Criticism, Pedagogy, and Theory, The Carroll C. Arnold Distinguished Lecture National Communication Association November 2001 Boston: Pearson Education Inc, 2003, p. 7
- ↑ Bejczy, Istvan P. (২০১১)। "Chapter 1: Does Virtue Recognise Gender? Christine de Pizan's City of Ladies in the Light of Scholastic Debate"। Green, Karen; Mews, Constant। Virtue Ethics for Women 1250–1500। Springer। পৃষ্ঠা 1–2। আইএসবিএন 9789400705296।
- ↑ Redfern, Jenny R. (১৯৫৫)। "Chapter 5: The Treasure of the City of Ladies: A Medieval Rhetorical and Her Rhetoric"। Lunsford, Andrea A.। Virtue Ethics for Women 1250–1500। University of Pittsburgh Press। পৃষ্ঠা 73। আইএসবিএন 978-0-8229-7165-8।
- ↑ Redfern, Jenny R. (১৯৫৫)। "Chapter 5: The Treasure of the City of Ladies: A Medieval Rhetorical and Her Rhetoric"। Lunsford, Andrea A.। Virtue Ethics for Women 1250–1500। University of Pittsburgh Press। পৃষ্ঠা 74। আইএসবিএন 978-0-8229-7165-8।
- ↑ Redfern, Jenny R. (১৯৫৫)। "Chapter 5: The Treasure of the City of Ladies: A Medieval Rhetorical and Her Rhetoric"। Lunsford, Andrea A.। Virtue Ethics for Women 1250–1500। University of Pittsburgh Press। পৃষ্ঠা 74–75। আইএসবিএন 978-0-8229-7165-8।
- ↑ Altmann, Barbara K.; McGrady, Deborah L. (২০০৩)। Christine de Pizan: A Casebook। Routledge। পৃষ্ঠা 57। আইএসবিএন 978-0-415-93909-6।
- ↑ Redfern, Jenny R. (১৯৫৫)। "Chapter 5: The Treasure of the City of Ladies: A Medieval Rhetorical and Her Rhetoric"। Lunsford, Andrea A.। Virtue Ethics for Women 1250–1500। University of Pittsburgh Press। পৃষ্ঠা 75। আইএসবিএন 978-0-8229-7165-8।
- ↑ Schneir, Miriam (১৯৯৪)। Feminism: The Essential Historical Writings। Vintage Books। আইএসবিএন 978-0-679-75381-0।
- ↑ Bridenthal, Renate; Koonz, Claudia; Stuard, Susan Mosher (১৯৮৭-০১-০১)। Becoming Visible: Women in European History (ইংরেজি ভাষায়)। Houghton Mifflin। পৃষ্ঠা 167। আইএসবিএন 9780395419502।
- ↑ [Manetti, Giannozzo. "Life of Socrates"]
- ↑ Bridenthal, Renate; Koonz, Claudia; Stuard, Susan Mosher (১৯৮৭-০১-০১)। Becoming Visible: Women in European History (ইংরেজি ভাষায়)। Houghton Mifflin। পৃষ্ঠা 159–160। আইএসবিএন 9780395419502।
- ↑ Shakespeare, William (১৮৯৮-০১-০১)। Taming of the shrew (ইংরেজি ভাষায়)। American Book Co.।
- ↑ ক খ [Bruni, Leonardo. "Study of Literature to Lady Baptista Maletesta of Montefeltro," 1494.]
- ↑ Cereta, Laura, and Diana Maury Robin. Collected letters of a Renaissance feminist. (Chicago: University of Chicago Press, 1997), 3.
- ↑ Cereta, Laura. "Letter to Augustinus Aemilius, Curse against the Ornamentation of Women." Bizzell and Herzberg: 493-495. https://scholar.google.com/scholar?cluster=17399369654017720318&hl=en&as_sdt=20005&sciodt=0,9/ (accessed October 24, 2014).
- ↑ King, Margaret L. "Petrarch, the Self-Conscious Self, and the First Women Humanists." Journal of Medieval & Early Modern Studies 35, no. 3 (Fall2005 2005): 537,546. http://eds.b.ebscohost.com/eds/pdfviewer/pdfviewer?vid=5&sid=7a26072c-ef21-4f96-970c-66b0d6134d73%40sessionmgr114&hid=120/[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] (December 14, 2014).
- ↑ Boguet, Heneri (১৬০৩)। Discours Execrable Des Sorciers: Ensemble leur Procez, faits depuis 2. ans en çà, en diuers endroicts de la France. Avec une instruction pour un Juge, en faict de Sorcelerie...। Rouen।
- ↑ Guazzo, Francesco (১৬০৮)। Compendium maleficarum। Milan।
- ↑ de Beauvoir, Simone, English translation 1953 (১৯৮৯), The Second Sex, Vintage Books, পৃষ্ঠা 105, আইএসবিএন 0-679-72451-6
- ↑ Schneir, Miram, 1972 (১৯৯৪), Feminism: The Essential Historical Writings, Vintage Books, পৃষ্ঠা xiv, আইএসবিএন 0-679-75381-8
- ↑ ক খ Bridenthal, Renate; Koonz, Claudia; Stuard, Susan Mosher (১৯৮৭-০১-০১)। Becoming Visible: Women in European History (ইংরেজি ভাষায়)। Houghton Mifflin। পৃষ্ঠা 167। আইএসবিএন 9780395419502।
- ↑ Bridenthal, Renate; Koonz, Claudia; Stuard, Susan Mosher (১৯৮৭-০১-০১)। Becoming Visible: Women in European History (ইংরেজি ভাষায়)। Houghton Mifflin। পৃষ্ঠা 160। আইএসবিএন 9780395419502।
- ↑ Spencer, Anna Garlin and Mitchell Kennerly, eds. The Drama of a Woman of Genius. NY: Forum Publications, 1912.
- ↑ Spencer, Anna Garlin in Kennerley, Mitchell (ed.) (১৯১২)। "The Drama of the Woman of Genius"। The Forum। New York: Forum Pub. Co.। 47: 41।
- ↑ Paola Malpezzi Price, "Pozzo, Modesto," Mary Hays, Female Biography; or, Memoirs of Illustrious and Celebrated Women, of All Ages and Countries (1803). Chawton House Library Series: Women’s Memoirs, ed. Gina Luria Walker, Memoirs of Women Writers Part II (Pickering & Chatto: London, 2013), vol. 10, 79-80, editorial notes, 571.
- ↑ "The protestant education in the 16th century"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-২৭।
- ↑ "Women in the Protestant reform"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-২৭।
- ↑ Hanson, Victor Davis (২০০৭-১২-১৮)। Carnage and Culture: Landmark Battles in the Rise to Western Power (ইংরেজি ভাষায়)। Knopf Doubleday Publishing Group। আইএসবিএন 978-0-307-42518-8।
- ↑ Thomas (1993), p. 171–172.
- ↑ Rolando Romero (২০০৫-০১-০১)। Feminism, Nation and Myth: La Malinche। Arte Publico Press। পৃষ্ঠা 28–। আইএসবিএন 978-1-61192-042-0।
- ↑ Fraser, Antonia. The weaker vessel: Women's lot in seventeenth century England. Phoenix, London 1984.
- ↑ Marshall-Wyatt, Sherrin. Women in the Reformation era. In, Becoming visible: Women in European history, Renate Bridenthal and Claudia Koonz (eds.) Houghton-Mifflin, Boston 1977.
- ↑ Thomas, K. Women and the Civil War sects. 1958 Past and Present 13.
- ↑ Persecution and Pluralism: Calvinists and Religious Minorities in Early.... By Richard Bonney, David J. B. Trim. [১]
- ↑ Lerner, Gerda. "Religion and the creation of feminist consciousness". Harvard Divinity Bulletin November 2002 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৮-০৫-০৬ তারিখে
- ↑ Moses, Claire Goldberg. French Feminism in the 19th Century. 1984, p. 7.
- ↑ "British Women's Emancipation Since the Renaissance"। ২৬ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৩।
- ↑ The poems of Lady Mary Roth. Roberts, Josephine A (ed.) Louisiana State University 1983
- ↑ Greer, Germaine. Slip-shod sybils Penguin 1999, at 15-6
- ↑ An Essay To Revive the Ancient Education of Gentlewomen, in Religion, Manners, Arts & Tongues, with an Answer to the Objections against this Way of Education at upenn.edu
- ↑ O'Neill, Eileen (২০০১)। Margaret Cavendish, Duchess of Newcastle, Observations upon Experimental Philosophy। Oxford, England: Oxford University Press। পৃষ্ঠা xi। আইএসবিএন 978-0521776752।
- ↑ Khanna, Lee Cullen. "The Subject of Utopia: Margaret Cavendish and Her Blazing-World." Utopian and Science Fiction by Women: World of Difference. Syracuse: Syracuse UP, 1994. 15–34.
- ↑ Akkerman, Nadine and Marguérite Corporaal 'Mad science beyond flattery. The correspondence of Margaret Cavendish and Constantijn Huygens' in: Early Modern Literary Studies 14(may, 2004), 2.1–21
- ↑ Shevelow, Kathryn. For the love of animals: the rise of the animal protection movement, Henry Holt and Company, 2008, chapter 1.
- ↑ Virginia Blain, Patricia Clements and Isobel Grundy, eds: The Feminist Companion to Literature in English. Women Writers from the Middle Ages to the Present Day (London: Batsford, 1990), p. 346.
- ↑ Title page Retrieved 25 May 2018.
- ↑ The Ladies Defense: Or, the Bride-woman's Counsellor Answer'd. A Poem written as a Dialogue... Written by a Lady.Retrieved 25 May 2018.
- ↑ "Mary Astell (Stanford Encyclopedia of Philosophy)"। Plato.stanford.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০১-২১।
- ↑ Sandra M. Gilbert and Susan Gubar, "Lady Mary Chudleigh." The Norton Anthology of Literature by Women: The Traditions in English, New York: W. W. Norton, 1996, p. 161.
- ↑ Batchelor, Jennie, "Mary Astell". The Literary Encyclopedia. 21 March 2002. Accessed 6 July 2008.
- ↑ Cohen, Simona (২০১৪)। "Animal Imagery in Renaissance Art"। Renaissance Quarterly। 67 (1): 164–180। আইএসএসএন 0034-4338। ডিওআই:10.1086/676155।
- ↑ Perry, Ruth (১৯৮৬)। The Celebrated Mary Astell। Chicago: University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 41–42। আইএসবিএন 978-0-226-66093-6।
- ↑ Anderson, Penelope (১৫ অক্টো ২০১৮)। "Covert Politics and Separatist Women's Friendship: Margaret Cavendish and Mary Astell"। Friendship's Shadow's। 10 (3366): 222–259। জেস্টোর 10.3366/jctt3fgrcv.11।
- ↑ Kinnaird, Joan. "Mary Astell: Inspired by ideas" in D.Spender, ed., Feminist Theories, p. 29.
- ↑ ক খ Walters, Margaret. "Feminism: A very short introduction". Oxford University 2005 (আইএসবিএন ০-১৯-২৮০৫১০-X)
- ↑ Melman, Billie. Women's Orients: English Women and the Middle East, 1718–1918. University of Michigan Press. 1992. Print.
- ↑ South American Independence: Gender, Politics, Text. Eds. Catherine Davies, Claire Brewster, and Hilary Owen. Liverpool University Press, 2006. 29.Print.
- ↑ Backscheider, Paula R., and Catherine E. Ingrassia, eds. British Women Poets of the Long Eighteenth Century. Baltimore, Maryland: The Johns Hopkins University Press, 2009. 881. Print.
- ↑ Goreau, Angeline. Aphra Behn: A scandal to modesty (c. 1640-1689) in Spender op. cit., pp. 8-27,
- ↑ Woolf, Virginia. A room of one's own. 1928, at 65.
- ↑ Janet Todd. The Secret Life of Aphra Behn. New Brunswick, NJ: Rutgers UP, 1997, p. 4.
- ↑ ক খ Janet Todd, p. 2.
- ↑ Kavanagh, Julia. English Women of Letters. (London, 1863), p. 22.
- ↑ Woolf, Virginia. A Room of One's Own. NY: Penguin Books, 1989, p. 71.
- ↑ Todd, Janet (2013) The Secret Life of Aphra Behn; Rutgers University Press; আইএসবিএন ৯৭৮-০৮১৩৫২৪৫৫৯
- ↑ Janet Todd, "Behn, Aphra (1640?–1689)", Oxford Dictionary of National Biography, Oxford University Press, 2004
- ↑ "Westminster Abbey"। Westminster Abbey। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ Waithe, edited by Mary Ellen (১৯৯১)। A history of women philosophers.। Dordrecht: Kluwer। পৃষ্ঠা 104–105। আইএসবিএন 0792309308। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ Virtue and Company 1875, পৃ. 172।
- ↑ See Catharine Trotter: an early modern writer in the vanguard of feminism, Aldershot: Ashgate, 2002
- ↑ Melinda C. Finberg (ed.) (২০০১)। Eighteenth-century Women Dramatists। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 11, 13।
- ↑ Melinda C. Finberg (ed.) (২০০১)। Eighteenth-century Women Dramatists। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 11, 13।
- ↑ Schoenberg, Thomas (২০০৮)। Literature Criticism from 1400 to 1800। Detroit: Gale। পৃষ্ঠা 223।
- ↑ Upman AH. "English femmes savantes at the end of the seventeenth century". Journal of English and Germanic Philology 12 (1913)
- ↑ Woolley, Hannah. The Gentlewoman's Companion. London, 1675.
- ↑ Hobby, Elaine (১৯৮৮)। Virtue of necessity : English women's writing, 1649–1688। London: Virago। আইএসবিএন 0860688313।
- ↑ Hobby, Elaine (১৯৮৮)। Virtue of necessity : English women's writing, 1649–1688। London: Virago। আইএসবিএন 0860688313।
- ↑ Ogilvie, Marilyn; Harvey, Joy, সম্পাদকগণ (২০০০)। The biographical dictionary of women in science : pioneering lives from ancient times to the mid-20th century। Routledge। আইএসবিএন 041592040X।
- ↑ Ogilvie, Marilyn; Harvey, Joy, সম্পাদকগণ (২০০০)। The biographical dictionary of women in science : pioneering lives from ancient times to the mid-20th century। Routledge। আইএসবিএন 041592040X।
- ↑ Hobby, Elaine (১৯৮৮)। Virtue of necessity : English women's writing, 1649–1688। London: Virago। আইএসবিএন 0860688313।
- ↑ Goldberg, Claire Moses. French Feminism in the 19th Century. Syracuse: State University of New York, 1985, p. 4.
- ↑ Bodek, Evelyn Gordon. "Salonieres and Bluestockings: Educated Obsolescence and Germinating Feminism." Feminist Studies 3 (Spring-Summer 1976), p. 185.
- ↑ Goldberg, Claire Moses, p. 4.
- ↑ Färber, Silvio (২০১১)। ""Die Rose der Freyheit": eine radikal-feministische Streitschrift von "Camilla" aus dem Jahre 1693"। Jahrbuch der Historischen Gesellschaft Graubünden: 85–174 – e-periodica.ch-এর মাধ্যমে।
- ↑ Marie Dentiére, Epistle to Marguerite de Navarre and Preface to a Sermon by John Calvin (Chicago: University of Chicago Press, 2004), 51.
- ↑ Patricia F. Cholakian and Rouben C. Cholakian, Marguerite de Navarre: Mother of the Renaissance (2006).
- ↑ Égalité des hommes et des femmes by Marie de Gournay, in French
- ↑ Grief des dames by Marie de Gournay, in French
- ↑ Anne R. Larsen & Colette H. Winn (২০০০)। Writings by Pre-revolutionary French Women। Psychology Press। পৃষ্ঠা 237। আইএসবিএন 9780815331902।
- ↑ Monique Frize, Peter R. D. Frize & Nadine Faulkner (২০০৯)। The Bold and the Brave: A History of Women in Science and Engineering। University of Ottawa Press। পৃষ্ঠা 78। আইএসবিএন 9780776607252।
- ↑ "About Anna Maria van Schurman"। www.annamariavanschurman.org (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৯-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-১৪।
- ↑ "Anna Maria van Schurman"। Oxford Bibliography। Oxford University Press। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ Honig, Elizabeth Alice. "The Art of Being "Artistic": Dutch Women's Creative Practices in the 17th Century." Woman's Art Journal 22, no. 2 (2001): 31-39. doi:10.2307/1358900.
- ↑ Moore, Cornelia Niekus. "Anna Maria van Schurman (1607–1678)." Canadian Journal of Netherlandic Studies 11, no. 32 (1990): n5.
- ↑ Laurie J. Churchill, Phyllis R. Brown & Jane E. Jeffrey (২০১৪)। Women Writing Latin: Early Modern Women Writing Latin। Routledge। পৃষ্ঠা 271। আইএসবিএন 9781135377564।
- ↑ Van Beek 2010: 60 and n. 97, who points out that we know this from reports by Van Schurman's fellow students Descartes and Hoornbeeck.
- ↑ Laurie J. Churchill, Phyllis R. Brown & Jane E. Jeffrey (২০১৪)। Women Writing Latin: Early Modern Women Writing Latin। Routledge। পৃষ্ঠা 271। আইএসবিএন 9781135377564।
- ↑ Melissa Smith (২০০৪)। Reading Early Modern Women: An Anthology of Texts in Manuscript and Print, 1550-1700। Psychology Press। পৃষ্ঠা 79। আইএসবিএন 9780415966467।
- ↑ Laurie J. Churchill, Phyllis R. Brown & Jane E. Jeffrey (২০১৪)। Women Writing Latin: Early Modern Women Writing Latin। Routledge। পৃষ্ঠা 275। আইএসবিএন 9781135377564।
- ↑ Strohmeier
- ↑ Seidel
- ↑ Juana Inés de la Cruz, Sor. Respuesta a Sor Filotea 1691. pub posthum. Madrid 1700
- ↑ Murray, Stuart (2009). The Library: An Illustrated History. Chicago: Skyhorse Publishing. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৩৮৯-০৯৯১-১.
- ↑ Leonard, Irving A. (১৯৬০)। Baroque Times in Old Mexico: Seventeenth-Century Persons, Places, and Practices (ইংরেজি ভাষায়) (12th সংস্করণ)। University of Michigan Press। পৃষ্ঠা 191–192। আইএসবিএন 9780472061105।
- ↑ Bergmann, Emilie L.; Schlau, Stacey (২০১৭)। The Routledge Research Companion to the Works of Sor Juana Inéz de la Cruz। Routledge। আইএসবিএন 9781317041641।
- ↑ Allatson, Paul (২০০৪)। "A Shadowy Sequence: Chicana Textual/Sexual Reinventions of Sor Juana"। Chasqui (ইংরেজি ভাষায়)। 33 (1): 3–27। জেস্টোর 29741841। ডিওআই:10.2307/29741841।
- ↑ White, Elixabth Wade 'The Tenth Muse:An Appraisal of Anne Bradstreet' William & Mary Quarterly Review V111 July 1951
- ↑ Baron 1994, পৃ. 372
- ↑ Zhang, Yu; Lewis, Mark; Pellon, Michael; Coleman, Phillip (২০০৭)। "A Preliminary Research on Modeling Cognitive Agents for Social Environments in Multi-Agent Systems" (পিডিএফ): 116–123।
- ↑ ক খ গ Iverson, Grant; Brooks, Brian; Holdnack, James (২০০৮)। "Misdiagnosis of Cognitive Impairment in Forensic Neuropsychology"। Heilbronner, Robert L.। Neuropsychology in the Courtroom: Expert Analysis of Reports and Testimony। New York: Guilford Press। পৃষ্ঠা 248। আইএসবিএন 9781593856342।
- ↑ Coley, John D; Tanner, Kimberly D (২০১২)। "Common Origins of Diverse Misconceptions: Cognitive Principles and the Development of Biology Thinking"। CBE-Life Sciences Education (ইংরেজি ভাষায়)। 11 (3): 209–215। আইএসএসএন 1931-7913। ডিওআই:10.1187/cbe.12-06-0074।
- ↑ "The Real Reason We Dress Pets Like People"। LiveScience.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১১-১৬।
- ↑ Bar-Haim, Y., Lamy, D., Pergamin, L., Bakermans-Kranenburg, M.J., & van IJzendoorn, M.H. (2007). "Threat-related attentional bias in anxious and non-anxious individuals: A meta-analytic study." Psychological Bulletin.
- ↑ Goddard, Kate; Roudsari, Abdul; Wyatt, Jeremy C. (2011). "Automation Bias – A Hidden Issue for Clinical Decision Support System Use." International Perspectives in Health Informatics. Studies in Health Technology and Informatics. IOS Press. ডিওআই:10.3233/978-1-60750-709-3-17
- ↑ Schwarz, N.; Bless, Herbert; Strack, Fritz; Klumpp, G.; Rittenauer-Schatka, Helga; Simons, Annette (১৯৯১)। "Ease of Retrieval as Information: Another Look at the Availability Heuristic" (পিডিএফ)। Journal of Personality and Social Psychology। 61 (2): 195–202। ডিওআই:10.1037/0022-3514.61.2.195। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টো ২০১৪।
- ↑ Kuran, Timur; Cass R Sunstein (১৯৯৮)। "Availability Cascades and Risk Regulation"। Stanford Law Review। 51: 683। ডিওআই:10.2307/1229439।
- ↑ Sanna, Lawrence J.; Schwarz, Norbert; Stocker, Shevaun L. (২০০২)। "When debiasing backfires: Accessible content and accessibility experiences in debiasing hindsight." (পিডিএফ)। Journal of Experimental Psychology: Learning, Memory, and Cognition। 28 (3): 497–502। আইএসএসএন 0278-7393। ডিওআই:10.1037/0278-7393.28.3.497।
- ↑ Colman, Andrew (২০০৩)। Oxford Dictionary of Psychology। New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 77। আইএসবিএন 0-19-280632-7।
- ↑ Baron 1994, পৃ. 224–228
- ↑ Klauer, K. C.; Musch, J; Naumer, B (২০০০)। "On belief bias in syllogistic reasoning"। Psychological Review। 107 (4): 852–884। ডিওআই:10.1037/0033-295X.107.4.852। পিএমআইডি 11089409।
- ↑ "Harness the power of the 'Ben Franklin Effect' to get someone to like you"। Business Insider। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-১০।
- ↑ Pronin, Emily; Matthew B. Kugler (জুলাই ২০০৭)। "Valuing thoughts, ignoring behavior: The introspection illusion as a source of the bias blind spot"। Journal of Experimental Social Psychology। Elsevier। 43 (4): 565–578। আইএসএসএন 0022-1031। ডিওআই:10.1016/j.jesp.2006.05.011।
- ↑ Walker, Drew; Vul, Edward (২০১৩-১০-২৫)। "Hierarchical Encoding Makes Individuals in a Group Seem More Attractive"। Psychological Science। 25 (11): 230–235। ডিওআই:10.1177/0956797613497969। পিএমআইডি 24163333।
- ↑ Mather, M.; Shafir, E.; Johnson, M.K. (২০০০)। "Misrememberance of options past: Source monitoring and choice" (পিডিএফ)। Psychological Science। 11 (2): 132–138। ডিওআই:10.1111/1467-9280.00228। পিএমআইডি 11273420।
- ↑ Oswald, Margit E.; Grosjean, Stefan (২০০৪)। "Confirmation Bias"। Pohl, Rüdiger F.। Cognitive Illusions: A Handbook on Fallacies and Biases in Thinking, Judgement and Memory। Hove, UK: Psychology Press। পৃষ্ঠা 79–96। আইএসবিএন 978-1-84169-351-4। ওসিএলসি 55124398।
- ↑ Fisk, John E. (২০০৪)। "Conjunction fallacy"। Pohl, Rüdiger F.। Cognitive Illusions: A Handbook on Fallacies and Biases in Thinking, Judgement and Memory। Hove, UK: Psychology Press। পৃষ্ঠা 23–42। আইএসবিএন 978-1-84169-351-4। ওসিএলসি 55124398।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Martin Hilbert (২০১২)। "Toward a synthesis of cognitive biases: How noisy information processing can bias human decision making" (পিডিএফ)। Psychological Bulletin। 138 (2): 211–237। ডিওআই:10.1037/a0025940। পিএমআইডি 22122235। lay summary।
- ↑ DuCharme, W. M. (১৯৭০)। "Response bias explanation of conservative human inference"। Journal of Experimental Psychology। 85 (1): 66–74। ডিওআই:10.1037/h0029546।
- ↑ ক খ Edwards, W. (১৯৬৮)। "Conservatism in human information processing"। Kleinmuntz, B.। Formal representation of human judgment। New York: Wiley। পৃষ্ঠা 17–52।
- ↑ Johnson, Hollyn M.; Colleen M. Seifert (নভেম্বর ১৯৯৪)। "Sources of the continued influence effect: When misinformation in memory affects later inferences"। Journal of Experimental Psychology: Learning, Memory, and Cognition। 20 (6): 1420–1436। ডিওআই:10.1037/0278-7393.20.6.1420।
- ↑ Plous 1993, পৃ. 38–41
- ↑ Ciccarelli, Saundra; White, J. (২০১৪)। Psychology (4th সংস্করণ)। Pearson Education, Inc.। পৃষ্ঠা 62। আইএসবিএন 0205973353।
- ↑ Ackerman, Mark S., সম্পাদক (২০০৩)। Sharing expertise beyond knowledge management (online সংস্করণ)। Cambridge, Massachusetts: MIT Press। পৃষ্ঠা 7। আইএসবিএন 9780262011952।
- ↑ Steven R. Quartz, The State Of The World Isn’t Nearly As Bad As You Think, Edge Foundation, Inc., সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-১৭
- ↑ Why We Spend Coins Faster Than Bills by Chana Joffe-Walt. All Things Considered, 12 May 2009.
- ↑ Hsee, Christopher K.; Zhang, Jiao (২০০৪)। "Distinction bias: Misprediction and mischoice due to joint evaluation"। Journal of Personality and Social Psychology। 86 (5): 680–695। ডিওআই:10.1037/0022-3514.86.5.680। পিএমআইডি 15161394।
- ↑ Kruger, Justin; Dunning, David (১৯৯৯)। "Unskilled and Unaware of It: How Difficulties in Recognizing One's Own Incompetence Lead to Inflated Self-Assessments"। Journal of Personality and Social Psychology। 77 (6): 1121–34। ডিওআই:10.1037/0022-3514.77.6.1121। পিএমআইডি 10626367। সাইট সিয়ারX 10.1.1.64.2655 ।
- ↑ (Kahneman, Knetsch এবং Thaler 1991, পৃ. 193) Richard Thaler coined the term "endowment effect."
- ↑ Wagenaar, W. A.; Keren, G. B. (১৯৮৫)। "Calibration of probability assessments by professional blackjack dealers, statistical experts, and lay people"। Organizational Behavior and Human Decision Processes। 36 (3): 406–416। ডিওআই:10.1016/0749-5978(85)90008-1।
- ↑ Jeng, M. (২০০৬)। "A selected history of expectation bias in physics"। American Journal of Physics। 74 (7): 578–583। ডিওআই:10.1119/1.2186333।
- ↑ Kahneman, Daniel; Alan B. Krueger; David Schkade; Norbert Schwarz; Arthur A. Stone (২০০৬-০৬-৩০)। "Would you be happier if you were richer? A focusing illusion" (পিডিএফ)। Science। 312 (5782): 1908–10। ডিওআই:10.1126/science.1129688। পিএমআইডি 16809528।
- ↑ Zwicky, Arnold (২০০৫-০৮-০৭)। "Just Between Dr. Language and I"। Language Log।
- ↑ Lichtenstein, S.; Fischhoff, B. (১৯৭৭)। "Do those who know more also know more about how much they know?"। Organizational Behavior and Human Performance। 20 (2): 159–183। ডিওআই:10.1016/0030-5073(77)90001-0।
- ↑ Merkle, E. C. (২০০৯)। "The disutility of the hard-easy effect in choice confidence"। Psychonomic Bulletin & Review। 16 (1): 204–213। ডিওআই:10.3758/PBR.16.1.204।
- ↑ Juslin, P; Winman, A.; Olsson, H. (২০০০)। "Naive empiricism and dogmatism in confidence research: a critical examination of the hard-easy effect"। Psychological Review। 107 (2): 384–396। ডিওআই:10.1037/0033-295x.107.2.384।
- ↑ Pohl, Rüdiger F. (২০০৪)। "Hindsight Bias"। Pohl, Rüdiger F.। Cognitive Illusions: A Handbook on Fallacies and Biases in Thinking, Judgement and Memory। Hove, UK: Psychology Press। পৃষ্ঠা 363–378। আইএসবিএন 978-1-84169-351-4। ওসিএলসি 55124398।
- ↑ Laibson, David (১৯৯৭)। "Golden Eggs and Hyperbolic Discounting"। Quarterly Journal of Economics। 112 (2): 443–477। ডিওআই:10.1162/003355397555253।
- ↑ Kogut, Tehila; Ritov, Ilana (২০০৫)। "The 'Identified Victim' Effect: An Identified Group, or Just a Single Individual?" (পিডিএফ)। Journal of Behavioral Decision Making। Wiley InterScience। 18: 157–167। ডিওআই:10.1002/bdm.492। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৫, ২০১৩।
- ↑ Thompson, Suzanne C. (১৯৯৯)। "Illusions of Control: How We Overestimate Our Personal Influence"। Current Directions in Psychological Science। Association for Psychological Science। 8 (6): 187–190। আইএসএসএন 0963-7214। জেস্টোর 20182602। ডিওআই:10.1111/1467-8721.00044।
- ↑ Dierkes, Meinolf; Antal, Ariane Berthoin; Child, John; Ikujiro Nonaka (২০০৩)। Handbook of Organizational Learning and Knowledge। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 22। আইএসবিএন 978-0-19-829582-2। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ Tversky, Amos; Daniel Kahneman (সেপ্টেম্বর ২৭, ১৯৭৪)। "Judgment under Uncertainty: Heuristics and Biases"। Science। American Association for the Advancement of Science। 185 (4157): 1124–1131। ডিওআই:10.1126/science.185.4157.1124। পিএমআইডি 17835457।
- ↑ Fiedler, K. (১৯৯১)। "The tricky nature of skewed frequency tables: An information loss account of distinctiveness-based illusory correlations"। Journal of Personality and Social Psychology। 60 (1): 24–36। ডিওআই:10.1037/0022-3514.60.1.24।
- ↑ ক খ Sanna, Lawrence J.; Schwarz, Norbert (২০০৪)। "Integrating Temporal Biases: The Interplay of Focal Thoughts and Accessibility Experiences"। Psychological Science। American Psychological Society। 15 (7): 474–481। ডিওআই:10.1111/j.0956-7976.2004.00704.x। পিএমআইডি 15200632।
- ↑ Baron 1994, পৃ. 258–259
- ↑ (Kahneman, Knetsch এবং Thaler 1991, পৃ. 193) Daniel Kahneman, together with Amos Tversky, coined the term "loss aversion."
- ↑ Bornstein, Robert F.; Crave-Lemley, Catherine (২০০৪)। "Mere exposure effect"। Pohl, Rüdiger F.। Cognitive Illusions: A Handbook on Fallacies and Biases in Thinking, Judgement and Memory। Hove, UK: Psychology Press। পৃষ্ঠা 215–234। আইএসবিএন 978-1-84169-351-4। ওসিএলসি 55124398।
- ↑ Shafir, Eldar; Diamond, Peter; Tversky, Amos (২০০০)। "Money Illusion"। Kahneman, Daniel; Tversky, Amos। Choices, values, and frames। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 335–355। আইএসবিএন 978-0-521-62749-8।
- ↑ Haizlip, Julie; ও অন্যান্য। "Perspective: The Negativity Bias, Medical Education, and the Culture of Academic Medicine: Why Culture Change Is Hard"। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৩, ২০১২।
- ↑ ক খ Trofimova, IN (২০১৪)। "Observer bias: an interaction of temperament traits with biases in the semantic perception of lexical material."। PLoS ONE। 9 (1): e85677.। ডিওআই:10.1371/journal.pone.0085677। পিএমআইডি 24475048। পিএমসি 3903487 ।
- ↑ Sutherland 2007, পৃ. 138–139
- ↑ Baron 1994, পৃ. 353
- ↑ Baron 1994, পৃ. 386
- ↑ Baron 1994, পৃ. 44
- ↑ Hardman 2009, পৃ. 104
- ↑ Adams, P. A.; Adams, J. K. (১৯৬০)। "Confidence in the recognition and reproduction of words difficult to spell"। The American Journal of Psychology। 73 (4): 544–552। ডিওআই:10.2307/1419942। পিএমআইডি 13681411।
- ↑ Hoffrage, Ulrich (২০০৪)। "Overconfidence"। Rüdiger Pohl। Cognitive Illusions: a handbook on fallacies and biases in thinking, judgement and memory। Psychology Press। আইএসবিএন 978-1-84169-351-4।
- ↑ Sutherland 2007, পৃ. 172–178
- ↑ Hsee, Christopher K.; Hastie, Reid (২০০৬)। "Decision and experience: why don't we choose what makes us happy?" (পিডিএফ)। Trends in Cognitive Sciences। 10 (1): 31–37। ডিওআই:10.1016/j.tics.2005.11.007। পিএমআইডি 16318925। ২০১৫-০৪-২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Trofimova, IN (১৯৯৯)। "How people of different age sex and temperament estimate the world."। Psychological Reports। 85/2: 533–552। ডিওআই:10.2466/pr0.1999.85.2.533।
- ↑ Hardman 2009, পৃ. 137
- ↑ Attneave, F. (১৯৫৩)। "Psychological probability as a function of experienced frequency"। Journal of Experimental Psychology। 46 (2): 81–86। ডিওআই:10.1037/h0057955। পিএমআইডি 13084849।
- ↑ Fischhoff, B.; Slovic, P.; Lichtenstein, S. (১৯৭৭)। "Knowing with certainty: The appropriateness of extreme confidence"। Journal of Experimental Psychology: Human Perception and Performance। 3 (4): 552–564। ডিওআই:10.1037/0096-1523.3.4.552।
- ↑ Garcia, Stephen M.; Song, Hyunjin; Tesser, Abraham (নভেম্বর ২০১০)। "Tainted recommendations: The social comparison bias"। Organizational Behavior and Human Decision Processes। 113 (2): 97–101। আইএসএসএন 0749-5978। ডিওআই:10.1016/j.obhdp.2010.06.002। lay summary – BPS Research Digest (২০১০-১০-৩০)।
- ↑ Dalton, D. & Ortegren, M. (২০১১)। "Gender differences in ethics research: The importance of controlling for the social desirability response bias"। Journal of Business Ethics। 103 (1): 73–93। ডিওআই:10.1007/s10551-011-0843-8।
- ↑ Kahneman, Knetsch এবং Thaler 1991, পৃ. 193
- ↑ Baron 1994, পৃ. 382
- ↑ Baron, J. (in preparation). Thinking and Deciding, 4th edition. New York: Cambridge University Press.
- ↑ Forsyth, Donelson R (২০০৯)। Group Dynamics (5th সংস্করণ)। Cengage Learning। পৃষ্ঠা 317। আইএসবিএন 978-0-495-59952-4।
- ↑ "Penn Psychologists Believe 'Unit Bias' Determines The Acceptable Amount To Eat". ScienceDaily (Nov. 21, 2005)