থিবি
আবিষ্কার | |
---|---|
আবিষ্কারক | স্টিফেন পি. সাইনট/ ভয়েজার ১ |
আবিষ্কারের তারিখ | ৫ই মার্চ, ১৯৭৯ |
বিবরণ | |
বিশেষণ | থিবিয়ান, এস্টোনটোনিয়ান |
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য | |
অনুসূর | ২১৮০০০ কি.মি [ক] |
অপসূর | ২২৬০০০ কি.মি [খ] |
কক্ষপথের গড় ব্যাসার্ধ | ২২৮৮৯.০ কি.মি (3.11 আরজে)[১] |
উৎকেন্দ্রিকতা | ০.০১৭৫ |
কক্ষীয় পর্যায়কাল | ০.৬৭৪৫৩৬ দৈনিক (১৬ঘণ্টা ১১.৩ মিনিট) [১] |
গড় কক্ষীয় দ্রুতি | ২৩.৯৮ কি.মি/সেকেন্ড (হিসেব করা) |
নতি | ১.০৭৬° (বৃহস্পতির বিষুবরেখার দিকে)[১] |
যার উপগ্রহ | বৃহস্পতি |
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ | |
মাত্রাসমূহ | 116 × 98 × 84 km[২] |
গড় ব্যাসার্ধ | ৪৯.৩কি.মি[২] |
আয়তন | ৫০০০০০কি.মি^৩ ≈ ৫০০০০০ কিমি৩ |
ভর | ৪.৩কে.জি {{|e=১৭|}} [গ] |
গড় ঘনত্ব | ০.৮৬ গ্রাম/সে.মি^২ (ধারণাকৃত) |
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ | ০.০১৩মি/সেকেন্ড^২ (০.০০৪জি)[২][ঘ] |
মুক্তি বেগ | ২০-৩০ মিটার/সেকেন্ড[৩][ঙ] |
ঘূর্ণনকাল | (সঙ্কালিক) |
অক্ষীয় ঢাল | শূন্য |
প্রতিফলন অনুপাত | ০.০৪৭[৪] |
তাপমাত্রা | ≈ ১২৪ ক্যালভিন |
থিবি (গ্রিক: Θήβη) বৃহস্পতি গ্রহের একটি উপগ্রহ যা জুপিটার XIV নামেও পরিচিত। এটি বৃহস্পতি গ্রহ থেকে দূরত্বের দিক বিবেচনায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ৫ই মার্চ ভয়েজার ১-এর বৃহস্পতির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তোলা ছবি থেকে স্টিফেন পি. সাইনোট সর্বপ্রথম এর অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন।[৫] ১৯৮৩ সালে গ্রিক পুরাণের দেবী চরিত্র থিবি-এর নামে উপগ্রহটির নামকরণ করা হয়।[৬]
বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহরাজির মধ্যে থিবি দ্বিতীয় বৃহত্তম। এর কক্ষপথ থিবি গোসামার চক্র মুলতঃ থিবির বাইরের পৃষ্ঠের ধুলোবালি দিয়ে তৈরি।[৩] এর আকৃতি অনির্দিষ্ট এবং কিছুটা লালচে বর্ণের। ধারণা করা হয়, এতে অ্যামেলথীয়া-এর মত অজানা পরিমাণ বিভিন্ন বস্তু, খনিজ জল ও বরফের উপস্থিতি রয়েছে। এর পৃষ্ঠে খানাখন্দ এবং উচ্চ পর্বত বিদ্যমান যার কিছু-কিছু চাঁদের সাথে তুলনা করার মত।[২]
ভয়েজার ১ ও ২ মহাকাশযানের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে প্রথম থিবির ছবি গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে মহাকাশযান গ্যালিলিও অরবিটার-এর মাধ্যমে ১৯৯০ সালে থিবির বিস্তারিত জানা যায়।[২]
আবিষ্কার ও পর্যবেক্ষণ
স্টিফেন পি. সাইনোট ভয়েজার ১ কর্তৃক প্রেরিত এক ছবিতে সর্বপ্রথম থিবির অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন ১৯৭৯ সালের ৫ই মার্চ এবং প্রাথমিকভাবে একে এস/১৯৭৯ জে ২ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[৫][৭] ১৯৮৩ সালে সরকারিভাবে গ্রিক দেবতা জিউসের প্রেমিকা থিবির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। গ্রিক পুরাণে দেবতা জিউসকে বৃহস্পতির সাথে তুলনা করা হয়, সেই থেকেই এরূপ নামকরণ।[৬]
ভয়েজার ১ কর্তৃক আবিষ্কৃত হওয়ার পর ভয়েজার ২ দ্বারা ১৯৭৯ সালে থিবির আরো কিছু আলোকচিত্র গ্রহণ করা হয়।[৩] তবে গ্যালিলিও মহাকাশযান বৃহস্পতিতে আসার পূর্বাবধি থিবির ব্যাপারে খুবই কম তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে মহাকাশযান গ্যালিলিও থিবির যেসব আলোকচিত্র পাঠায় তা থেকে এর বহিপৃষ্ঠের ব্যাপারে ধারণা পাওয়া সম্ভব হয় এবং এর গঠন সম্পর্কেও জানা যায়।[২]
কক্ষপথ
বৃহস্পতির উপগ্রহরাজির মাঝে থিবি সর্বাধিক বাইরের দিকে অবস্থান করছে এবং গ্রহটির কক্ষপথ থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২,২২,০০০কি.মি (৩.১১ জুপিটার ব্যাসার্ধ)। এর কক্ষপথের কেন্দ্রীয় উৎকেন্দ্রিকতা ০.০১৮ এবং তা বৃহস্পতি গ্রহের বিষুবরেখার তুলনায় প্রায় ১.০৮° বেঁকে,[১] যা সচরাচর একটি আভ্যন্তরীণ উপগ্রহের তুলনায় অধিক এবং শুধু গ্যালিলিয়ান উপগ্রহের মাধ্যমে থিবিকে উপগ্রহ হিসেবে ব্যাখ্যা করা সম্ভবপর হয়।[৩]
থিবির কক্ষপথ, বৃহস্পতি গ্রহের বহির্কোণ ঘেঁষা থিবি গোসামার রিং মূলতঃ ধূলিকণা দিয়ে তৈরি। এসকল ধূলিকণা থিবির বহিঃপৃষ্ঠের থেকে ধীরে ধীরে ভেসে পয়নটিং-রবার্টসন টান মেনে উপগ্রহ ঘিরে বলয় তৈরি করে।[৮]
বাহ্যিক গঠন
থিবি আকৃতিগত দিক দিয়ে অবিন্যস্ত কিছুটা উপবৃত্তাকার আয়তনে ১১৬X৯৮X৮৪ কি.মি। এর ভূপৃষ্ঠ খুব সম্ভবত ৩১,০০০ থেকে ৫৯,০০০(~৪৫,০০০) কিমি২। এর আয়তন ও ভর অজ্ঞাত তবে ধারণা করা হয় আমএলথীর মতই এর ঘনত্ব (প্রায় ০.৮৬ গ্রাম/সেমি৩),[২] এর ভর প্রায় ৪.৩X১০^১৭ কি.গ্রা হতে পারে।
বৃহস্পতির অন্যান্য উপগ্রহগুলোর ন্যায় থিবিও যুগপতভাবে ঘূর্ণায়মান। ঘূর্ণনকালে এটি গ্রহটির দিকে মুখ করে থাকে। এর স্থিতি বোধের কারণে লম্বিক অক্ষ সবসময় বৃহস্পতির দিকে নির্দেশ করা।[৩] বৃহস্পতির নিকটবর্তী ভূপৃষ্ঠ রচ লোব (Roche Lob) বলে ধারণা করা হয়। এখানে থিবির মহাকর্ষ শক্তির মান অপকেন্দ্র বলের মান অপেক্ষা কিছুটা বেশি।[৩] ফলস্বরূপ, এই দুই বিন্দুতে মুক্তিবেগ অত্যন্ত ক্ষুদ্র। যার কারণে ধূলিকণা সহজেই উল্কা প্রভাবের মাধ্যমে থিবি গোসামার বলয় তৈরিতে সক্ষম হয়।[৩]
থিবির ভূপৃষ্ঠে প্রচুর খানাখন্দ রয়েছে। শুধুমাত্র একটি গর্তের নামকরণ করা হয়েছে, তা হল জেথাস ক্রেটার (ব্যাস প্রায় ৪০ কিলোমিটার)। থিবির যে অংশ বৃহস্পতির দিকে মুখ করে আছে তার অপরদিকে কিছুটা দূরে এই গর্তের অবস্থান।[৩][৯] এটি গ্যালিলিও মহাকাশযান কর্তৃক আবিষ্কৃত এবং নামকরণ করা হয়েছে গ্রিক পুরাণের চরিত্র থিবির স্বামী জেথাসের নামানুসারে।[১০]
এই গর্তে বেশ কিছু উজ্জ্বল দাগ দৃশ্যমান।[২] থিবির পৃষ্ঠভাগ অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং লালচে রঙের।[৪] এর গোলার্ধের দুইটি অংশের মাঝে বৃহস্পতি গ্রহের দিকে মুখ করে থাকা অংশ অপর অংশের তুলনায় প্রায় ১.৩ গুণ উজ্জ্বল থাকে। সম্ভবত উচ্চ বেগ এবং সংঘর্ষ পরিবর্তন হারের জন্যই এমনটা ঘটে থাকে। ফলে উপগ্রহটির ভিতরের উজ্জ্বল বস্তু (সম্ভবত বরফ) বের হয়ে আসে।[৪]
তথ্যসূত্র
ব্যাখ্যামূলক টীকা
- ↑ Calculated as a×(1 − e), where a is semimajor axis and e is eccentricity.
- ↑ Calculated as a×(1 + e), where a is semimajor axis and e is eccentricity.
- ↑ জ্ঞাত আয়তন এবং ঘনত্ব ০.৮৬ গ্রাম/সে.মি^৩ থেকে ধারণা করা
- ↑ The estimate from Thomas, 1998 was divided by 1.5 to account for the difference in assumed densities.
- ↑ The estimate from Burns, 2004 was divided by 1.5 to account for the difference in assumed densities.
উদ্ধৃতি
- ↑ ক খ গ ঘ Cooper Murray et al. 2006।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ Thomas Burns et al. 1998।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ Burns Simonelli et al. 2004।
- ↑ ক খ গ Simonelli Rossier et al. 2000।
- ↑ ক খ Synnott 1980।
- ↑ ক খ IAUC 3872।
- ↑ IAUC 3470।
- ↑ Burns Showalter et al. 1999।
- ↑ USGS: Jupiter: Thebe: Zethus।
- ↑ "Planetary Names: Crater, craters: Zethus on Thebe"। United States Geological Survey। অক্টোবর ৩, ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৭, ২০১৫।
উদ্ধৃতিসূত্র
- Burns, Joseph A.; Showalter, Mark R.; Hamilton, Douglas P.; Nicholson, Philip D.; de Pater, Imke; Ockert-Bell, Maureen E.; Thomas, Peter C. (১৪ মে ১৯৯৯)। "The Formation of Jupiter's Faint Rings"। Science। 284 (5417): 1146–1150। ডিওআই:10.1126/science.284.5417.1146। পিএমআইডি 10325220। বিবকোড:1999Sci...284.1146B।
- Burns, Joseph A.; Simonelli, Damon P.; Showalter, Mark R.; Hamilton, Douglas P.; Porco, Carolyn C.; Throop, Henry; Esposito, Larry W. (২০০৪)। "Jupiter's Ring-Moon System" (PDF)। Bagenal, Fran; Dowling, Timothy E.; McKinnon, William B.। Jupiter: The Planet, Satellites and Magnetosphere। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 241–262। আইএসবিএন 978-0-521-81808-7। বিবকোড:2004jpsm.book..241B।
- Cooper, N. J.; Murray, C. D.; Porco, C. C.; Spitale, J. N. (মার্চ ২০০৬)। "Cassini ISS astrometric observations of the inner jovian satellites, Amalthea and Thebe"। Icarus। 181 (1): 223–234। ডিওআই:10.1016/j.icarus.2005.11.007। বিবকোড:2006Icar..181..223C।
- Marsden, Brian G. (এপ্রিল ২৮, ১৯৮০)। "Satellites of Jupiter"। IAU Circular। 3470। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-২৮।
- Marsden, Brian G. (সেপ্টেম্বর ৩০, ১৯৮৩)। "Satellites of Jupiter and Saturn"। IAU Circular। 3872। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-২৮।
- Simonelli, D. P.; Rossier, L.; Thomas, P. C.; Veverka, J.; Burns, J. A.; Belton, M. J. S. (অক্টোবর ২০০০)। "Leading/Trailing Albedo Asymmetries of Thebe, Amalthea, and Metis"। Icarus। 147 (2): 353–365। ডিওআই:10.1006/icar.2000.6474। বিবকোড:2000Icar..147..353S।
- Synnott, S. P. (১৪ নভেম্বর ১৯৮০)। "1979J2: The Discovery of a Previously Unknown Jovian Satellite"। Science। 210 (4471): 786–788। ডিওআই:10.1126/science.210.4471.786। পিএমআইডি 17739548। বিবকোড:1980Sci...210..786S।
- Thomas, P. C.; Burns, J. A.; Rossier, L.; Simonelli, D.; Veverka, J.; Chapman, C. R.; Klaasen, K.; Johnson, T. V.; Belton, M. J. S.; Galileo Solid State Imaging Team (সেপ্টেম্বর ১৯৯৮)। "The Small Inner Satellites of Jupiter"। Icarus। 135 (1): 360–371। ডিওআই:10.1006/icar.1998.5976। বিবকোড:1998Icar..135..360T।
- USGS/IAU। "Zethus on Thebe"। Gazetteer of Planetary Nomenclature। USGS Astrogeology। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-২৭।