বলবিজ্ঞান
বলবিজ্ঞান (গ্রিক: Μηχανική, ইংরেজি: Mechanics) (অথবা বলবিজ্ঞান) পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে কোনো বল প্রযুক্ত হওয়ার ফলে ভৌত বস্তুর সরণ বা অন্যান্য আচরণ এবং পরিবেশের উপর তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। এটি গণিত শাস্ত্রেও অধীত হয়ে থাকে। মূলত বস্তুর স্থির বা গতিশীল অবস্থা নিয়ে এতে আলোচনা করা হয়।
পদার্থবিজ্ঞানের এই শাখাটির সূচনাকাল বলা যেতে পারে প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার স্বর্ণযুগকে। সেসময় অ্যারিস্টটল বিভিন্ন বস্তু, যেমন: পাথর, বাতাসে নিক্ষেপ করলে কেমন আচরণ করে, তা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বলবিজ্ঞানর ভিত্তি স্থাপনে অবদান রেখেছেন গ্যালিলিও ও ইয়োহানেস কেপলার এবং সবশেষে নিউটন বলবিজ্ঞানর মৌলিক তত্ত্বগুলোর অবতারণা করেন। অবশ্য নিউটনের উদ্ভাবিত নীতিগুলোকে নিয়ে নিউটনীয় বলবিজ্ঞান নামে একটি পৃথক শাখা গড়ে উঠেছে। যিনি বলবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা এবং গবেষণা করেন, তাঁকে বলবিজ্ঞানী বলা হয়।
তাৎপর্য
[সম্পাদনা]বলবিজ্ঞান পদার্থবিজ্ঞানের মূল শাখা যা মানুষের চোখে দৃশ্যমান বৃহৎ জগৎ নিয়ে আলোচনা করে। সেই হিসেবে প্রাকৃতিক বিশ্ব সম্বন্ধে এটিই মূল তত্ত্ব প্রণয়নের দাবী করতে পারে। বলবিজ্ঞান মহাবিশ্বের যেকোন বস্তুর উপর চারটি মৌলিক বলের প্রভাব বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করে। মৌলিক বল চারটি হল: মহাকর্ষ, সবল নিউক্লিয়, দূর্বল নিউক্লিয় এবং তাড়িতচৌম্বক বল।
বলবিজ্ঞান প্রযুক্তির জগতেও একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি ভৌত জ্ঞানসমূহকে মানুষের কাজে লাগানোর উপযোগী করে তৈরি করে থাকে। এজন্য অনেক সময় এই শাখাটিকে প্রকৌশল বা ফলিত বলবিজ্ঞান নামকরণ করা হয়ে থাকে যদিও অধুনা এ নামে একটি শাখা গড়ে উঠেছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে বলবিজ্ঞানই অবয়ব, যন্ত্রের গঠন এবং যন্ত্রসমূহের ব্যবহার ও প্রয়োগবিধি নির্দেশ করে। যন্ত্র প্রকৌশল, মহাকাশ প্রকৌশল (aerospace), পুর প্রকৌশল, জৈব বলবিজ্ঞান, structural engineering, materials engineering, biomedical engineering ইত্যাদি অধ্যয়নে এটি সাহায্য কে থাকে।
প্রকারভেদ
[সম্পাদনা]চিরায়ত বলবিজ্ঞান
[সম্পাদনা]নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ নিয়ে চিরায়ত বলবিজ্ঞানর ভিত রচিত হয়:
- নিউটনীয় বলবিজ্ঞান, গতি (সৃতিবিজ্ঞান) এবং বলের (গতিবিজ্ঞান) মৌলিক আলোচনা করে।
- ল্যাগ্রাঞ্জীয় বলবিজ্ঞান: (Lagrangian mechanics) একটি তাত্ত্বিক আচারপ্রিয়তা (formalism)।
- হ্যামিল্টনীয় বলবিজ্ঞান: আরেকটি তাত্ত্বিক আচারপ্রিয়তা।
- খ বলবিজ্ঞান, তারা: ছায়াপথ]] ইত্যাদির গতি।
- জ্যোতির্গতিবিজ্ঞান: নভোযান চালনা।
- কঠিন বলবিজ্ঞান: স্থিতিস্থাপকতা এবং দৃঢ় ও অল্প দৃঢ় বস্তুর আলোচনা।
- শব্দবিজ্ঞান: কঠিন এবং তরলে শব্দের আচরণ।
- স্থিতিবিজ্ঞান: যান্ত্রিক সাম্যাবস্থা।
- প্রবাহী বলবিজ্ঞান, তরল পদার্থের গতি।
- Continuum mechanics, mechanics of continua (both solid and fluid)
- তরল স্থিতিবিজ্ঞান (hydraulics): সাম্যাবস্থায় তরল।
- ফলিত বলবিজ্ঞান
- জৈব বলবিজ্ঞান
- পরিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞান
- অপেক্ষবাদিক অথবা আইনস্টাইন বলবিজ্ঞান।
কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান
[সম্পাদনা]নিম্নোক্ত বিষয়গুলো কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানর অংশ:
- কণা পদার্থবিজ্ঞান
- পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান
- ঘনীভূত পদার্থ বিজ্ঞান: কোয়ান্টাম গ্যাস, কঠিন এবং তরল।
- কোয়ান্টাম পরিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞান: কণাসমূহের বৃৎ সমন্বয়।
চিরায়ত বলবিজ্ঞান বনাম কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান
[সম্পাদনা]বলবিজ্ঞানর দুটি প্রধান শ্রেণী হচ্ছে চিরায়ত বলবিজ্ঞান এবং কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান। এই দুটির মধ্যে মূলনীতিগত বেশ ভালো রকমের পার্থক্য রয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে দেখলে চিরায়ত বলবিজ্ঞানই প্রথমে এসেছে আর কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানকে বলা যায় নব্য বলবিজ্ঞান। চিরায়ত বলবিজ্ঞানর ইতিহাস মানুষের ইতিহাস রচনার ইতিহাসের চেয়েও পুরনো, অন্যথায় কোয়ান্টাম অংশটির অস্তিত্ব ১৯০০ সালের পূর্বেই ছিলনা। তবে এই দুটি বিজ্ঞান একসাথেই ভৌত প্রকৃতির সমগ্র অংশের ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হয়।
পেশাদার সংগঠনসমূহ
[সম্পাদনা]- ফলিত বলবিজ্ঞান বিভাগ, আমেরিকান সোসাইটি অফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স
- তরল গতিবিজ্ঞান বিভাগ, আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- আইমেকানিয়া: বলবিজ্ঞান বিশারদদের ওয়েবসাইট (ইংরেজি)
- ভার্জিনিয়া টেক-এর বলবিজ্ঞান বিষয়ক অনুষ্ঠান (ইংরেজি)
- নব্য বলবৈজ্ঞানিক প্রভাব (ইংরেজি)