সুধাকর
ধরন | সাপ্তাহিক |
---|---|
সম্পাদক | শেখ আব্দুর রহিম মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমদ |
প্রতিষ্ঠাকাল | ৮ নভেম্বর ১৮৮৯ |
ভাষা | বাংলা |
প্রকাশনা স্থগিত | ১৯১০ |
সদর দপ্তর | কলকাতা, বাংলা, ব্রিটিশ ভারত |
সুধাকর ছিল ব্রিটিশ ভারতের একটি বাংলা ভাষার ইসলামি পত্রিকা। ১৮৮৯ সালে এটি যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে এটি মিহির পত্রিকার সাথে একীভূত হয়ে মিহির ও সুধাকর নামে প্রকাশিত হয়। ১৯১০ সাল পর্যন্ত পত্রিকাটি চালু ছিল।[১]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৯৮৬ সালে কলকাতায় মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমদের সম্পাদনায় নব-সুধাকর নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা যাত্রা শুরু করে। কিন্তু ৫–৬ সপ্তাহ পরেই এটি বন্ধ হয়ে যায়।[২]
১৮৮৯ সালের ৮ নভেম্বর (বাংলা ১২৯৬ সালের ২৩ কার্তিক) শেখ আবদুর রহিমের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক সুধাকর পত্রিকা চালু হয়। পরবর্তীতে মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমদ পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব পান। কলকাতার ৭, সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট থেকে এটি প্রকাশিত হতো।[২]
১৮৯২ সালের ২৭ জানুয়ারি শেখ আবদুর রহিম মিহির নামে একটি মাসিক পত্রিকা চালু করেন, যা অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হতো। ১৮৯৫ সালে মিহির এবং সুধাকর একীভূত হয়ে মিহির ও সুধাকর নাম ধারণ করে। প্রথমে কলকাতার ২৫, রায়বাগান স্ট্রিট থেকে এটি প্রাশিত হতো। পরবর্তীতে তা ৪২, মেটকাফ স্ট্রিটে স্থানান্তরিত হয়। শেখ আবদুর রহিমের পর সৈয়দ ওসমান আলী পত্রিকাটির সম্পাদক হন।[২] ১৯১০ সাল পর্যন্ত এটি চালু ছিল।
মতাদর্শ
[সম্পাদনা]সুধাকর পত্রিকা প্রকাশের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের অতীত গৌরব ও ইসলামের মাহাত্ম্য প্রচার করা,[১] প্রাচ্যবাদী ও স্থানীয় সাম্প্রদায়িক হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা মুসলমানদের অবমাননা থেকে রক্ষা করা, বাঙালি মুসলমানদেরকে ইসলামি নীতির সাথে পরিচিত করা এবং খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া রোধ করা।[৩] বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখ হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব লেখা লিখতেন, সুধাকর পত্রিকায় তার প্রতিবাদ করা হতো।[৪] এতে ধর্ম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ প্রভৃতি বিষয়ক রচনার পাশাপাশি মৌলিক সাহিত্যকর্মও প্রকাশ করা হত। সুধাকর পত্রিকাকে কেন্দ্র করে মুসলমান লেখকদের একটি দল গড়ে ওঠে, যা সুধাকর দল নামে পরিচিত।[৫]
খ্রিস্টান মিশনারিদের পরিচালিত খ্রীষ্টিয় বান্ধব নামক একটি পত্রিকার সাথে সুধাকরের ধর্ম নিয়ে বেশ কিছু বিতর্ক হয়। এর মধ্যে জন জমিরুদ্দীন ও মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহর মধ্যকার বিতর্ক উল্লেখযোগ্য। ১৮৯২ সালে জন জমিরুদ্দীন খ্রীষ্টিয় বান্ধব পত্রিকায় "আসল কোরাণ কোথায়" শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। এর জবাবে মুনশী মেহেরুল্লাহ "ঈসাই বা খৃষ্টানী ধোঁকাভঞ্জন" শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন যা সুধাকর পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এর প্রেক্ষিতে, জন জমিরুদ্দীন সুধাকরে আরেকটি ছোট প্রবন্ধ লেখেন। মুনশি মেহেরুল্লাহ "সর্ব্বত্রই আসল কোরআন" শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখে এর জবাব দেন। পরবর্তীতে জমিরুদ্দীন ইসলাম গ্রহণ করেন।[৬]
মীর মশাররফ হোসেন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি রক্ষায় গরু কোরবানির বিরোধীতা করলে মৌলভী মোহাম্মদ নইমুদ্দীন-সহ অনেকেই এর প্রতিবাদ করেন। এ বিতর্কে সুধাকর পত্রিকা মৌলভী নইমুদ্দীনের পক্ষে অবস্থান নেয়।[১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ওয়াকিল আহমদ (২০১২)। "সুধাকর"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ ক খ গ আনিসুজ্জামান (১৯৬৯)। মুসলিম বাংলার সাময়িক পত্র (১৮৩১–১৯৩০)। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ৬, ৭, ১০, ১২।
- ↑ নূরুল কবির। "Colonialism, politics of language and partition of Bengal PART XVI" (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ মুহম্মদ আব্দুল হাই; সৈয়দ আলী আহসান (১৯৭৯)। "ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতিমূলক রচনা"। বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত। ঢাকা: আহমদ পাবলিশিং হাউস। পৃষ্ঠা ১০০। আইএসবিএন 984 11 0434 X।
- ↑ আহমদ মনসুর (২৪ জানুয়ারি ২০১৩)। "বাংলা গদ্যসাহিত্যে মুসলমান সম্পাদিত সাময়িক পত্রিকার অবদান"। দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ আবুল আহসান চৌধুরী (১৯৮৯)। মুন্শী শেখ জমিরুদ্দীন। জীবনী গ্রন্থমালা। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ২৬।