মীর আহমদ বিন কাসেম
মীর আহমেদ বিন কাসেম | |
---|---|
জন্ম | ঢাকা |
অন্যান্য নাম | আরমান |
পেশা | ব্যারিস্টার |
পরিচিতির কারণ | বাংলাদেশে গুম/অপহরণের শিকার |
পিতা-মাতা | মীর কাসেম আলী (পিতা) খন্দকার আয়েশা খাতুন (মাতা) |
মীর আহমদ বিন কাসেম, যিনি আরমান নামেও পরিচিত, একজন বাংলাদেশী ব্যারিস্টার এবং মানবাধিকার কর্মী, যিনি বাংলাদেশ সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বলপূর্বক গুমের শিকার বলে অভিযোগ রয়েছে।[১] মীর আহমেদ বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামীর বিশিষ্ট নেতা প্রয়াত মীর কাসেম আলীর ছেলে এবং অপহরণের পূর্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তার বাবার আইনজীবী দলের সদস্য ছিলেন।[২][৩][৪]
আগস্ট ৬, ২০২৪ মীর আহমদ মুক্তি পেয়ে পরিবারের কাছে ফিরে আসেন।[৫]
প্রাথমিক ও শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]মীর আহমদের ঢাকার মিরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। দুই ভাই তিন বোনের মাঝে তিনি তৃতীয়।
মীর আহমদে মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ইংলিশ মিডিয়ামে ও-লেভেল এবং এ-লেভেল পাশ করেন।[৬] পরবর্তীতে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (অনার্স) এবং ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত লিনকন ইন থেকে বার-এট-ল সম্পন্ন করেন। এর পর বার অফ ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসে ডাক পেয়ে ব্যারিস্টার উপাধি অর্জন করেন।[৭][৮]
অপহরণ ও মুক্তি
[সম্পাদনা]মীর আহমেদের স্ত্রী তাহমিনা আখতারের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০১৬, রাত পৌনে ১২টার দিকে মিরপুর ডিওএইচএসের ৭ নম্বর সড়কের বাসা থেকে সাদা পোশাকের কয়েকজন লোক এসে কোন ওয়ারেন্ট ছাড়াই ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেমকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়।[৯][৬][১০]
আগস্ট ৬, ২০২৪, ঢাকার উত্তরা এলাকায় মীর আহমদ কে ফেলে রেখে যাওয়া হয়। তারপর তিনি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে ঘরে ফিরে আসেন।[৫]
মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতি
[সম্পাদনা]অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা তার অপহরণের বিষয়ে রিপোর্ট এবং তার মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে।[৩][৪] আগস্টে ২০২১ এ প্রকাশিত ৫৭ পৃষ্টার এক প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশে বলপূর্বক গুমের শিকার হওয়া ৮৬ জনের মধ্যে মীর আহমেদের নাম উল্লেখ করেছেন।[১১]
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় অপহরণের খবর
[সম্পাদনা]২০১৯ সালের ১ মার্চ আল-জাজিরার হেড টু হেড অনুষ্ঠানে, মীর আহমদের আইনজীবী মাইকেল পোলাক, বাংলাদেশি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভীকে মীর আহমদের অপহরণ মামলার বিষয়ে প্রশ্ন করেন, যখন তিনি অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক মেহেদী হাসান-এর সাথে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। মিস্টার রিজভী প্রতিশ্রুতি দেন যে, জোরপূর্বক গুমের সব অভিযোগের তদন্ত করা হবে এবং তিনি ব্যক্তিগতভাবে মীর আহমদের মামলার সাহায্য করবেন।[১২]ফরেন পলিসি মীর আহমদের অপহরণের বিষয়ে রিপোর্ট করেছে, যেখানে বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।[১৩] ডেভিড বার্গম্যান, দ্য ওয়্যার-এ একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লিখেছেন যে মীর আহমদকে সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদেশে অপহরণ করা হতে পারে। হাসিনা নাকি বাংলাদেশি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) কে মীর আহমদকে অবৈধভাবে তুলে নেওয়ার “ছাড়পত্র” দিয়েছেন, যা দেশের বিরোধী দলগুলোর ওপর সরকারের ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়নের অংশ।[১৪] মীর আহমদের মামলা আন্তর্জাতিক শিরোনামেও উঠে আসে, যখন চ্যানেল ৪ নিউজের উপস্থাপক অ্যালেক্স থমসন হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্নের এমপি তুলিপ সিদ্দিক, যিনি বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজি, তাকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি কি বাংলাদেশের সরকারকে প্রভাবিত করে মীর আহমদকে মুক্ত করতে সহায়তা করবেন কিনা।[১৫][১৬] এএফপি-এর একটি প্রতিবেদনে, যা ইয়াহু নিউজ-এ উদ্ধৃত হয়েছে, একজন বাংলাদেশি আইনজীবী মীর আহমদের গুমের ঘটনা এবং বাংলাদেশের সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগের বিবরণ দিয়েছে।[১৭]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাশেম আলীর ছেলেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ পরিবারের"। বিবিসি বাংলা। ২০১৬-০৮-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-১৬।
- ↑ "Third Anniversary of Mir Ahmad bin Quasem's Abduction"। Free Arman - Ahmad Bin Quasem (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১৯।
- ↑ ক খ "Bangladesh: Halt imminent execution of Mir Quasem Ali after unfair trial"। Amnesty International Australia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৮-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১৯।
- ↑ ক খ "Bangladesh: Man Released From Long Secret Detention"। Human Rights Watch (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৩-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১৯।
- ↑ ক খ উল্লাহ, আরীব (আগস্ট ৬, ২০২৪)। "Bangladesh: Barrister abducted eight years ago reemerges a day after Sheikh Hasina flees"। মিডল ইস্ট আয়। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৬, ২০২৪।
- ↑ ক খ "ফিরে আসুক আরমান – বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, নারায়ণগঞ্জ মহানগরী" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-০৯।
- ↑ "Barrister abducted without trace for two years"। Counsel Magazine (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২০।
- ↑ "Mir Ahmad Bin Quasem Profile"। Linkedin।
- ↑ প্রতিবেদক, জ্যেষ্ঠ। "মীর কাসেমের ছেলেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ"। bdnews24। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-০৯।
- ↑ "ফিরে এলেন গুম হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাশেমপুত্র ব্যারিস্টার আরমান"। দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "Bangladesh: 86 Victims of Enforced Disappearance Still Missing; UN Should Ban Death Squad from Peacekeeping Missions"। Human Rights Watch। ১৬ আগস্ট ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ Digital, C. H. C. (১১ মার্চ ২০১৯)। "Church Court Chambers | Michael Polak on Al Jazeera's Head to Head to Demand Release of Disappeared Barrister"। churchcourtchambers.co.uk (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১৯।
- ↑ McPherson, Poppy। "Bangladesh Is Vanishing The Opposition"। Foreign Policy (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১৯।
- ↑ "Sheikh Hasina Complicit in Secret Detentions by Bangladesh Intelligence, Says Source"। The Wire। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১৯।
- ↑ Polak, Michael (২০১৭-১২-০৪)। "Why will Tulip Siddiq not speak out on Bangladesh's 'disappeared' innocents? | Michael Polak"। The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১৯।
- ↑ Tulip Siddiq: MP quizzed over abducted man in Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়), ২৮ নভেম্বর ২০১৭, সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১৯
- ↑ "Disappeared Bangladeshi Lawyer Recounts Hasina's Involvement"। Yahoo News। AFP। ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪। ২০২৪-০৯-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-০২।