বিষয়বস্তুতে চলুন

শতবর্ষী বাতি

স্থানাঙ্ক: ৩৭°৪০′৪৮″ উত্তর ১২১°৪৪′২২″ পশ্চিম / ৩৭.৬৮০০০° উত্তর ১২১.৭৩৯৪৪° পশ্চিম / 37.68000; -121.73944
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শতবর্ষী বাতি
লিভারমোরের শতবর্ষী বাতি
ধরনকার্বন ফিলামেন্ট
কার্যনীতিপ্রজ্বলন

শতবর্ষী বাতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত কার্বন ফিলামেন্টের তৈরি একটি বাতি। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী আলোর বাতি। এটি ৪৫৫০ ইস্ট এভিনিউ, লিভারমোর ,ক্যালিফোর্নিয়ায় আছে এবং লিভারমোর-প্লিসানটোন ফায়ার ডিপার্টমেন্ট এটি সংরক্ষণ করে।[] ফায়ার ডিপার্টমেন্টটি মতে বাতিটি কমপক্ষে ১১৩ বছরের বয়সী এবং মাত্র কিছুবারের জন্য একে নিভানো হয়েছিলো। এর দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য বাতিটি গিনেস বিশ্ব রেকর্ড [] , রিপলিস বিলিভ ইট অর নট! এবং জেনারেল ইলেকট্রিক এ স্থান করে নিয়েছে।[] এটি প্রায় পরিকল্পিত বিলোপ-প্রবণতার অস্থিত্বের প্রমাণ হিসেবে পরবর্তিতে আলোর বাতি প্রস্তুতিতে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

শতবর্ষী বাতিটি মূলত একটি ৩০ ওয়াট বা ৬০ ওয়াটের বাতি কিন্তু এখন খুব অনুজ্জ্বল ও ৪ ওয়াটের নাইটলাইটের সমান আলো নিঃসরণ করে।[][][] হাতে তৈরী কার্বন ফিলামেন্টযুক্ত এই সাধারণ বাতিটি শেলবি ইলেকট্রিক কোম্পানি দ্বারা ১৮৯০ সালে অহিও-র শেলবিতে প্রস্তুত করা হয়েছিল।[] অনেকে এর অস্থিত্ব আছে এবং এটিকে কর্মক্ষম দেখতে পছন্দ করে।[] জিলফা বার্নাল বেকের মতে বাতিটি তার বাবা , ডেনিস বার্নাল ১৯০১ সালে ফায়ার ডিপার্টমেন্টকে দান করেছিলেন।[] বার্নাল লিভারমোর পাওয়ার ও ওয়াটার কোম্পানীর মালিক ছিলেন এবং কোম্পানীটি বিক্রির সময়ে তিনি দমকল স্টেশনকে বাতিটি দান করেন। বিবরণটি তৎকালীন দমকল কর্মীদের দ্বারা সমর্থিত।[]

সাক্ষ্যমতে বাতিটি কমপক্ষে চারটি জায়গায় ছিল। ১৯০১ সালে এটা প্রথমত একটি পাজামার দোকানে ছিল,[] তারপর লিভারমোরের শহরতলিস্থ ফায়ার ও পুলিশ ডিপার্টমেন্টর একটি গ্যারেজে নিয়ে যাওয়ায় হয়।[] যখন ফায়ার ডিপার্টমেন্ট দৃঢ় করা হয় তখন একে নতুন তৈরী সিটি হল,যেখানে ডিপার্টমেন্টটি একত্রিত করা হয়েছিল , সেখানে পুনরায় স্থানান্তরিত করা হয়।

১৯৭২ সালে প্রথম এর অস্বাভাবিক আয়ু লক্ষ্য করেন রিপোর্টার মাইক ডাস্টান। সপ্তাহব্যাপী সারা জীবন লিভারমোরে বাস করেছে এমন লোকদের সাক্ষাৎকার নিয়ে তিনি লিখেছিলেন ," Light Bulb May Be World's Oldest ", যা ট্রাই-ভ্যালি হেরাল্ড পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।ডাস্টান গিনেস বিশ্ব রেকর্ড , রিপলিস বিলিভ ইট অর নট! এবং জেনারেল ইলেকট্রিকের সাথে যোগাযোগ করেন , তারা সবাই একে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বাতি বলে নিশ্চিত করে। নিবন্ধটি সিবিএস-টিভি প্রোগ্রাম On the Road with Charles Kuralt এর চার্লস  কুরাল্ট এর নজর কাড়ে।

১৯৭৬ সালে ফায়ার ডিপার্টমেন্ট বাতিটিকে ফায়ার স্টেশন #৬ এ নিয়ে যায়, ঘুরিয়ে খুলতে গেলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে বাতিটি তার কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানান্তরনের সময় এটা মাত্র ২২ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। স্থানান্তরণের জন্য অগ্নি নির্বাপক দলের সাথে একটি বিশেষভাবে পরিকল্পিত বাক্স ব্যবহৃত হয়। একজন ইলেকট্রিসিয়ানকে বাতিটি নতুন ফায়ার স্টেশনের জরুরি জেনারেটরে লাগানোর কাজ দেয়া হয়েছিল। রিপলিস বিলিভ ইট অর নট এর মতে এই সামান্য বিলম্ব বাতিটির নিরবচ্ছিন্ন প্রজ্বলনের রেকর্ড নষ্ট করবে না। ২০০১ সালে একটি কমিউনিটি বার-বি-কিউ পার্টি ও সরাসরি গানের অনুষ্টানের মধ্যে দিয়ে বাতিটির ১০০তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়।[] সেই থেকে বাতিটি টানা ৩৮ বছর জ্বলছে। পূর্বে এটা কিছুসময়ের জন্য ( ১৯৩৭ সালে পুনঃসংস্কার ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে এক সপ্তাহের জন্য) নিভানো হয়েছিল।[]

২০ শে মে ,২০১৩ সালের সন্ধ্যায় একটি ওয়েবক্যামেরার মাধ্যমে সাধারণ জনগণ দেখে যে বাতিটি সম্ভবত পুরে গেছে। পরের দিন একজন ইলেকট্রিসিয়ানকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে ডাকা হয়। এটা নির্ণিত হয় যে বাতিটি পুরে যায় নি বরং নিরবিচ্ছিন বিদ্যুৎ সংযোগটি একটি পার্শ্বপথ দিয়ে চলে যাচ্ছিল। ব্যবহৃত বিদ্যুৎ সংযোগটিতে ত্রুটি ধরা পড়ে। প্রায় সাত ঘণ্টা পরে বাতিটি পুনরায় চালু করা হয়।[১০]

লিভারমোর-প্লিসানটোন ফায়ার ডিপার্টমেন্ট, লিভারমোর হেরিটেজ গিল্ড , লরেন্স লিভারমোর ন্যাশানাল ল্যাবরেটরীস, সান্ডিয়া ন্যাশানাল ল্যাবরেটরীস এর সমন্বয়ে গঠিত সেন্টেনিয়াল লাইট বাল্ব কমিটি বাতিটির পরিচর্যা করে।যত দীর্ঘই হোক না কেন, লিভারমোর-প্লিসানটোন ফায়ার ডিপার্টমেন্ট এটিকে তার জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত জায়গা দেওয়ার ও রক্ষণাবেক্ষণ করার পরিকল্পনা করেছে। বাতিটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর এটিকে নিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই,  যদিও রিপলিস বিলিভ ইট অর নট! তাদের জাদুঘরের জন্য এটিকে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।[] বাতিটির দীর্ঘ জীবন এটির কম সক্ষমতা, নিকট স্থানান্তর ও নিরবচ্ছিন্ন বৈদুতিক সংযোগের অবদান।[১১]

প্রচার

[সম্পাদনা]

১৯৭২ সালে ফোর্ট ওয়ার্থ,টেক্সাসের আরেকটি বাতিকে প্রতিস্থাপন করে, অনুষ্টানিকভাবে এই বাতিটিকে গিনেস বিশ্ব রেকর্ড "সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বাতি" হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। পরবর্তি ১৬ টি সংস্করণে বাতিটি এই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৮৮-২০০৬ সাল পর্যন্ত কোনো কারণ উল্লেখ না করেই এটিকে তালিকাভুক্ত করা হয়নি এবং ২০০৭ সাল থেকে পুনরায় এটিকে তালিকাভুক্ত করা হয়। [১২]

২০১০ সালের ফ্রান্স-স্পেনীয় তথ্যচিত্র The Light Bulb Conspiracy যা কিনা পরিকল্পিত বিলোপ-প্রবণতার সাথে সম্পর্কযুক্ত , শতবর্ষী বাতিটিকে বিষদভাবে নির্দেশ করে।[১৩]

ফায়ার চীফের মতে, কিছু মাস পর পর দর্শক ও সাধারণ আগ্রহ সৃষ্টি করতে একটি অণুপত্রিকায় বাতিটির বিবরণ প্রকাশিত হবে এবং তারপর এটি কিছু সময়ের জন্য প্রচ্ছন্ন হয়ে থাকবে। অনেক ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্র বাতিটির বর্ণনাকারী প্রবন্ধ প্রকাশ করে।[১৪] NBC, ABC, Fox, CBS,[১৫] WB, CNN এবং NPR [] The bulb has received letters acknowledging and celebrating its longevity from the city of Shelby, Ohio,[১৬] সহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রধান নিউজ চ্যানেল[১৪] বাতিটিকে দেখতে গেছে এবং এর উপর সংবাদ প্রকাশ  করেছে। অহিও-র শেলবি শহর, আলমেডা কাউন্টি বোর্ড অব সুপারভাইজারস,[১৭] ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট এসেম্বিলি,[১৮]  ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট সিনেট,[১৯] কনগ্রেস সদস্য এলেন টাওসার,[২০] সিনেটর বারবারা বক্সার,[২১] এবং প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ. বুশের [২২] কাছ থেকে সত্যতা স্বীকার ও দীর্ঘস্থায়িত্ব উৎযাপনমূলক পত্র পেয়েছে। বাতিটি ১৩ই ডিসেম্বর ,২০০৬ সালে  মিথবাস্টারসের একটি পর্বে প্রদর্শিত হয়েছিল।[২৩][২৪] এটি পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস (PBS) এর তথ্যচিত্র লিভারমোরেও  প্রদর্শিত হয়েছিল। ওয়ারহাউজ ১৩ এর ১ম সিজনের "রিগ্রেটস" পর্বে ও সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হয়েছিল।[২৫] বাতিটি "99% Invisible" এর একটি পর্বেও প্রদর্শিত হয়েছিল।[২৬]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Century Light Bulb"National Public Radio। ২০০১-০৬-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-১৫ 
  2. Longest burning light bulb, Guinness World Records .
  3. "The Little Bulb That Could… and Does", VIA, মে ৩০, ২০১২ তারিখে মূল (article) থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৭, ২০০৭ .
  4. Benca, Jeanine (ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১১), "Tests shine light on the secret of the Livermore light bulb", Contra Costa Times .
  5. "Facts"। Livermore: Centennial Light। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-২০ 
  6. "Centennial bulb", USA Today, ২০০৩-০৪-০২, সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৭, ২০০৭ 
  7. Steve's Shelby Collection, Centennial Bulb, সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২০, ২০০৭ .
  8. Light Bulb May Be World's Oldest, Centennial Bulb, সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৪, ২০০৯ .
  9. Livermore timeline, Public Broadcasting Service .
  10. "World's Longest Burning Light Bulb Out... But Only Overnight"। Patch। জুন ১৫, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২১, ২০১৩ 
  11. Light Bulb Methuselahs, Roadside America .
  12. Guinness page, Centennial Bulb .
  13. Documentary by Cosima Dannoritzer, The Light Bulb Conspiracy, 2010. (Online)
  14. "Articles"। Livermore: Centennial Light। 
  15. "Eternal Light Bulb"Vanderbilt Television News ArchiveCBS Evening News। মার্চ ২৩, ১৯৭২। 
  16. "Proclamation: Livermore/Pleasanton California Centennial Light" (JPEG)। City of Shelby। জুন ৬, ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-১৫ 
  17. "Resolution: Congratulations Livermore's Centennial Light, 1901–2001" (JPEG)। Board of Supervisors, County of Alameda, State of California। জুন ৮, ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-১৫ 
  18. "Certificate of Recognition" (JPEG)। California State Assembly। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-১৫ 
  19. "Certificate of Recognition" (JPEG)। State of California Senate। জুন ৮, ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-১৫ 
  20. Ellen O. Tauscher (জুন ৮, ২০০১)। "Letter of congratulations" (JPEG)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-১৫ 
  21. Barbara Boxer (জুন ৮, ২০০১)। "Letter of congratulations" (JPEG)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-১৫ 
  22. George W. Bush (জুন ১, ২০০১)। "Letter from the President" (JPEG)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-১৫ 
  23. "Mythbusters Interview"। Livermore's Centennial Light। 
  24. Mythbusters episode guide, Discovery Channel .
  25. "Closed captions from Warehouse 13, Season 1, Ep. 9 Regrets, @00:04:21" 
  26. "99% Invisible Episode 144: There Is a Light That Never Goes Out" 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]