সারদা দেবী
সারদা দেবী | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | সারদামণি মুখোপাধ্যায় ২২ ডিসেম্বর ১৮৫৩ |
মৃত্যু | ২০ জুলাই ১৯২০ উদ্বোধন কার্যালয় ভবন (মায়ের বাড়ি) কলকাতা, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) | (বয়স ৬৬)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
দাম্পত্য সঙ্গী | রামকৃষ্ণ পরমহংস |
সারদা দেবী (২২ ডিসেম্বর ১৮৫৩ – ২০ জুলাই ১৯২০) ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি হিন্দু ধর্মগুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসের পত্নী ও সাধনাসঙ্গিনী এবং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সঙ্ঘজননী। ভক্তগণ তাঁকে শ্রীশ্রীমা নামে অভিহিত করে থাকেন। রামকৃষ্ণ আন্দোলনের বিকাশ ও প্রসারে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
জয়রামবাটী গ্রামে সারদা দেবীর জন্ম। তার বিবাহপূর্ব নাম ছিল সারদামণি মুখোপাধ্যায়।[১] মাত্র পাঁচ বছর বয়সে শ্রীরামকৃষ্ণের সহিত তার বিবাহ হয়। তবে কৈশোরের উপান্তে উপনীত হওয়ার পূর্বে তিনি স্বামীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাননি। তার জীবনীকারদের মতে, গার্হস্থ্য ও সন্ন্যাস জীবনের আদর্শ স্থাপন করার জন্য তারা উভয়ে অবিচ্ছিন্ন ব্রহ্মচর্যের অনুশীলন করে জীবনযাপন করতেন। শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর অবশিষ্ট জীবন সারদা দেবী অতিবাহিত করেন জয়রামবাটি ও কলকাতার উদ্বোধন ভবনে। তার সমগ্র জীবন ছিল স্বামী, ভ্রাতা ও ভ্রাতৃ-পরিবারবর্গ এবং তার আধ্যাত্মিক সন্তানদের প্রতি সেবা ও আত্মত্যাগে উৎসর্গিত। শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যগণ তাঁকে আপন জননীর আসনে বসাতেন। গুরুর প্রয়াণের পর উপদেশ ও উৎসাহলাভের আশায় ছুটে আসতেন তার কাছে। সামান্য গ্রাম্য নারীর জীবন অতিবাহিত করলেও তিনি তার জীবৎকালে এবং পরবর্তীকালে ভক্তদের নিকট মহাশক্তির অবতার রূপে পূজিত হন।
জীবনী
[সম্পাদনা]জন্ম ও পরিবার
[সম্পাদনা]১৮৫৩ সালের ২২ ডিসেম্বর (বাংলা ১২৬০ সনের ৮ পৌষ, হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, অগ্রহায়ণ কৃষ্ণা সপ্তমী তিথি[২]) পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমার অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম জয়রামবাটীর এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে সারদা দেবীর জন্ম হয়। তার পিতা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৮১০ - ১৮৭৪) ও মাতা শ্যামাসুন্দরী দেবী অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ছিলেন। সারদা দেবীর পিতৃকূল মুখোপাধ্যায়-বংশ পুরুষানুক্রমে রামের উপাসক ছিলেন।[৩] সারদা দেবী ছিলেন তাদের জ্যেষ্ঠা কন্যা তথা প্রথম সন্তান।[৪] জন্মের পর প্রথমে সারদা দেবীর নাম রাখা হয়েছিল "ক্ষেমঙ্করী"। রাশ্যাশ্রিত নাম রাখা হয়েছিল "ঠাকুরমণি"।[২] পরে "ক্ষেমঙ্করী" নামটি পালটে "সারদামণি" রাখা হয়।[৫] রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কৃষিকাজ ও পুরোহিতবৃত্তি করে জীবিকানির্বাহ করতেন এবং তিন ভাইকে প্রতিপালন করতেন। দরিদ্র হলেও রামচন্দ্র ছিলেন পরোপকারী ও দানশীল ব্যক্তি।[৩] কথিত আছে, সারদা দেবীর জন্মের আগে রামচন্দ্র ও শ্যামাসুন্দরী উভয়েই দিব্যদর্শনে দেখেছিলেন যে মহাশক্তি তাদের কন্যারূপে জন্ম নিতে চলেছেন।[৪] সারদা দেবীর জন্মের পর রামচন্দ্র ও শ্যামাসুন্দরীর কাদম্বিনী নামে এক কন্যা এবং প্রসন্নকুমার, উমেশচন্দ্র, কালীকুমার, বরদাপ্রসাদ ও অভয়চরণ নামে পাঁচ পুত্রের জন্ম হয়।[৬]
বাল্যকাল
[সম্পাদনা]বাল্যকালে সাধারণ গ্রামবাসী বাঙালি মেয়েদের মতো সারদা দেবীর জীবনও ছিল অত্যন্ত সরল ও সাদাসিধে। ঘরের সাধারণ কাজকর্মের পাশাপাশি ছেলেবেলায় তিনি তার ভাইদের দেখাশোনা করতেন, জলে নেমে পোষা গোরুদের আহারের জন্য দলঘাস কাটতেন, ধানখেতে মুনিষদের (ক্ষেতমজুর) জন্য মুড়ি নিয়ে যেতেন, প্রয়োজনে ধান কুড়ানোর কাজও করেছেন। সারদা দেবীর প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষা একেবারেই ছিল না। ছেলেবেলায় মাঝে মাঝে ভাইদের সঙ্গে পাঠশালায় যেতেন। তখন তার কিছু অক্ষরজ্ঞান হয়েছিল। পরবর্তী জীবনে কামারপুকুরে শ্রীরামকৃষ্ণের ভ্রাতুষ্পুত্রী লক্ষ্মী দেবী ও শ্যামপুকুরে একটি মেয়ের কাছে ভাল করে লেখাপড়া করা শেখেন। ছেলেবেলায় গ্রামে আয়োজিত যাত্রা ও কথকতার আসর থেকেও অনেক পৌরাণিক আখ্যান ও শ্লোক শিখেছিলেন।[৭] ছেলেবেলায় পুতুলখেলার সময় লক্ষ্মী ও কালীর মূর্তি গড়ে খেলাচ্ছলে পূজা করতেন। বলতেন, ছোটোবেলা থেকেই মহামায়ার ধ্যান অভ্যাস করেন তিনি। এও কথিত আছে, সেই সময় থেকেই তার বিবিধ দিব্য দর্শন ও অভিজ্ঞতা হত।ছোটোবেলার কথা বলতে গিয়ে সারদা দেবী বলেছিলেন, "ছেলেবেলায় দেখতুম, আমারই মতো মেয়ে সর্বদা আমার সঙ্গে সঙ্গে থেকে আমার সকল কাজের সহায়তা করত-আমার সঙ্গে আমোদ-আহ্লাদ করত; কিন্তু অন্য লোক এলেই আর তাকে দেখতে পেতুম না। দশ এগারো বছর পর্যন্ত এরকম হয়েছিল.
বিবাহ
[সম্পাদনা]১৮৫৯ সালের মে মাসে, সেকালে প্রচলিত গ্রাম্য প্রথা অনুসারে মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই রামকৃষ্ণ পরমহংসের সঙ্গে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়। শ্রীরামকৃষ্ণের বয়স তখন তেইশ। এই সময় শ্রীরামকৃষ্ণ কঠোর ব্রহ্মচর্য অনুশীলন করছিলেন। তাই তার মা ও দাদারা মনে করেন এই বিবাহের ফলে তার সাংসারিক ক্ষেত্রে মন স্থিত হবে। বলা হয়, শ্রীরামকৃষ্ণই তার মাকে পাত্রীর সন্ধান দিয়ে বলেছিলেন – তোমরা বৃথাই পাত্রী খুঁজে বেড়াচ্ছ। জয়রামবাটীর রামচন্দ্র মুখুজ্যের বাড়ি যাও। সেখানেও চালকলা বাঁধা (পাত্রী স্থির করা) আছে।[৮]
বিবাহের পরেও সারদা দেবী তার পিতামাতার তত্ত্বাবধানেই রইলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ ফিরে গেলেন দক্ষিণেশ্বরে।[৮] এরপর চোদ্দো বছর বয়সে প্রথম সারদা দেবী স্বামী সন্দর্শনে কামারপুকুরে আসেন। এই সময় তিনি যে তিন মাস শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে বাস করেছিলেন, তখনই ধ্যান ও অধ্যাত্ম জীবনের প্রয়োজনীয় নির্দেশ তিনি পান তার স্বামীর থেকে।[৯] আঠারো বছর বয়সে তিনি শোনেন, তার স্বামী পাগল হয়ে গেছেন। আবার এও শোনেন যে তার স্বামী একজন মহান সন্তে রূপান্তরিত হয়েছেন।[১০] তখন তিনি দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন।[৯] পদব্রজে দক্ষিণেশ্বরে আসতে গিয়ে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কথিত আছে কালীর মতো ঘোর কৃষ্ণবর্ণা এক নারী দিব্যদর্শনে তাকে সুস্থ হয়ে ওঠার অভয়বাণী শোনান।[১১]
দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে
[সম্পাদনা]১৮৭২ সালের ২৩ মার্চ পিতার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে আসার পর তার ভয় ও সন্দেহ অপসারিত হয়। তিনি বুঝতে পারেন, তার স্বামী সম্পর্কে যে সব গুজবগুলি রটেছিল তা কেবলই সংসারী লোকের নির্বোধ ধারণামাত্র। তিনি দেখলেন, শ্রীরামকৃষ্ণ তখন সত্যিই এক মহান আধ্যাত্মিক গুরু।[১২] দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে এসে নহবতের একতলার একটি ছোটো ঘরে তিনি বাস করতে শুরু করলেন। ১৮৮৫ সাল অবধি তিনি দক্ষিণেশ্বরেই ছিলেন। তবে মাঝে মাঝে তার গ্রাম জয়রামবাটিতে গিয়েও স্বল্প সময়ের জন্য বাস করতেন।[১২]
এই সময় সারদা দেবী ও দিব্য মাতৃকাকে অভিন্ন জ্ঞান করে শ্রীরামকৃষ্ণ ষোড়শী পূজার আয়োজন করেন। কালীর আসনে বসিয়ে পুষ্প ও উপাচার দিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ পূজা করেন তাকে। অন্য সকল নারীর মতো সারদা দেবীকেও তিনি দেবীর অবতার বলে মনে করতেন। এই কারণে তাদের বৈবাহিক জীবনও ছিল এক শুদ্ধ আধ্যাত্মিক সঙ্গত।[১৩][১৪][১৫] স্বামী সারদানন্দের মতে, তাদের বিবাহ হয়েছিল বিশ্বে আদর্শ দাম্পত্য সম্পর্কের এক নজির স্থাপনের উদ্দেশ্যেই।[১৬]
সারদা দেবীর কথা থেকে জানা যায়, বিবাহিত জীবনে শ্রীরামকৃষ্ণ কখনই তাকে ‘তুই’ সম্বোধন করেননি। রূঢ় ব্যবহার দূরে থাক, কখনই কোনো রূঢ় বাক্য নিজের স্ত্রীর সম্মুখে উচ্চারণ করেননি তিনি।[১৭] সারদা দেবীকেই মনে করা হয় তার প্রথম শিষ্য।
শ্রীরামকৃষ্ণ তাকে আধ্যাত্মিক জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দান করেন। এগুলির মধ্যে প্রধান ছিল জপ ও ধ্যানের নির্দেশিকা। প্রতিদিন রাত তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠতেন এবং সর্বদা ‘লজ্জাপটাবৃতা’ ছিলেন বলে সূর্যোদয়ের পূর্বেই নির্জনে গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করতেন।[১৮] বেলা একটার আগে যতক্ষণ না লোকজনের আনাগোনা বন্ধ হত, তিনি বাইরে বের হতেন না। তিনি এতটাই নিঃশব্দে এবং অলক্ষিত হয়ে বাস করতেন যে মন্দিরের ম্যানেজার একবার বলেছিলেন, “আমরা জানতাম তিনি এখানে বাস করেন। কিন্তু কোনোদিন চোখে দেখিনি” [১৯] কথিত আছে, শ্রীরামকৃষ্ণ দিব্যদৃষ্টিতে দেখেছিলেন যে তার আধ্যাত্মিক প্রচারকার্য পরবর্তীকালে চালিয়ে নিয়ে যাবেন সারদা দেবী। সেই কারণে তিনি তাকে মন্ত্রশিক্ষা দেন এবং মানুষকে দীক্ষিত করে আধ্যাত্মিক পথে পরিচালিত করতে পারার শিক্ষাও দান করেন।[২০] শেষ জীবনে যখন শ্রীরামকৃষ্ণ গলার ক্যানসারে আক্রান্ত তখন সারদা দেবীই স্বামীর সেবা এবং স্বামী ও তার শিষ্যদের জন্য রন্ধনকার্য করতেন। কথিত আছে, ১৮৮৬ সালের অগস্ট মাসে শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর বৈধব্যের চিহ্ন হিসেবে হাতের বালা খুলে ফেলতে গেলে তিনি স্বামীর দিব্যদর্শন পান। এই দর্শনে শ্রীরামকৃষ্ণ তাকে বলেন, তিনি মারা যাননি, কেবল এক ঘর থেকে আর এক ঘরে গেছেন।[২১] সারদা দেবী বলেছিলেন, যতবারই তিনি বিধবার বেশ ধারণ করতে গিয়েছিলেন, ততবারই দিব্যদর্শনে শ্রীরামকৃষ্ণ তাকে নিরস্ত করেন।[২২] যাই হোক, শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর তাকে কেন্দ্র করে অঙ্কুরিত ধর্ম আন্দোলনে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন সারদা দেবী।[২৩]
তীর্থযাত্রা
[সম্পাদনা]শ্রীরামকৃষ্ণের প্রয়াণের দুই সপ্তাহ পর লক্ষ্মী দেবী, গোপাল মা প্রমুখ শ্রীরামকৃষ্ণের গৃহস্থ ও সন্ন্যাসী শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে সারদা দেবী উত্তর ভারতের তীর্থ পর্যটনে যাত্রা করেন। রামচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত অযোধ্যা ও কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন করেন তারা। পরে তিনি দর্শন করেন কৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র বৃন্দাবন। কথিত আছে, এই বৃন্দাবনেই সারদা দেবীর নির্বিকল্প সমাধি লাভ হয়েছিল। এবং এই বৃন্দাবন থেকেই গুরু রূপে তার জীবনের সূত্রপাত হয়। মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত, যোগেন মহারাজ প্রমুখ শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যদের তিনি মন্ত্রদীক্ষা দান করেন।[২৪] বৃন্দাবনেই শ্রীশ্রীমা রূপে তার সত্তার সূচনা ঘটে।[২৫] তার জীবনীকার ও শিষ্যদের মতে, তাকে মা বলে ডাকা কেবলমাত্র সম্মানপ্রদর্শনের বিষয়ই ছিল না। যাঁরাই তার সাক্ষাতে আসতেন, তারাই তার মধ্যে মাতৃত্বের গুণটি আবিষ্কার করতেন।[২৫]
কলকাতায়
[সম্পাদনা]তীর্থযাত্রার শেষে সারদা দেবী কয়েকমাস কামারপুকুরে বাস করেন। এই সময় একাকী অত্যন্ত দুঃখকষ্টের মধ্যে দিয়ে তার জীবন অতিবাহিত হতে থাকে। ১৮৮৮ সালে এই খবর শ্রীরামকৃষ্ণের ত্যাগী শিষ্যদের কানে পৌঁছলে তারা তাকে কলকাতায় নিয়ে এসে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। স্বামী সারদানন্দ কলকাতায় তার জন্য স্থায়ী বাসভবন নির্মাণ করান। ‘মায়ের বাটী’ নামে পরিচিত বাগবাজারের এই বাড়িটিতেই জয়রামবাটীর পর সারদা দেবী জীবনের দীর্ঘতম সময় অতিবাহিত করেছিলেন।[২৪] এই বাড়িটিতে স্থাপিত হয়েছিল রামকৃষ্ণ মিশনের বাংলা মাসিক মুখপত্র উদ্বোধন পত্রিকা তথা মিশনের বাংলা প্রকাশনা উদ্বোধন কার্যালয়ের প্রধান অফিস। প্রতিদিন অগণিত ভক্ত এই বাড়িতে তার দর্শন, উপদেশ ও দীক্ষালাভের আশায় ভিড় জমাতেন।[২৬][২৭] তার মাতৃসমা মূর্তি ও মাতৃসুলভ ব্যবহার সকলকে মানসিক শান্তি দিত। তার নিজের সন্তানাদি না থাকলেও, শিষ্য ও ভক্তদের তিনি মনে করতেন তার আধ্যাত্মিক সন্তান।[২৮][২৯]
১৯০৬ সালে মা শ্যামাসুন্দরী দেবীর মৃত্যুর পর সারদা দেবী কার্যত পরিবারের প্রধান ব্যক্তি হয়ে উঠলেন। বিধবা ভাতৃজায়া সুরবালার ভার গ্রহণ করলেন নিজের হাতে। সুরবালা সেই সময় রাধারানি নামে একটি সন্তানের জন্ম দেন। রাধু নামে সর্বাধিক পরিচিত রাধারানী ছিল একগুঁয়ে এবং মানসিক বিকারগ্রস্থ। তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না সারদা দেবীর। রাধুর কাছে তিনিই ছিলেন মা। আর মায়ের মতোই ধৈর্য সহকারে তার দেখভাল করতেন তিনি।[৩০]
শ্রীমা রামকৃষ্ণ সংঘ ও ভক্তসমাজে সর্বাধিক শ্রদ্ধার আসনটি লাভ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ স্বয়ং তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন নিজের প্রয়াণের পর রামকৃষ্ণ আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং ভক্তদের বলেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদা দেবীর সত্তায় কোনো পার্থক্য আরোপ না করতে। বলা হয়, কয়েকজন শিষ্যও তার দর্শন লাভের পর আধ্যাত্মিক অনুভূতি প্রাপ্ত হন। কেউ কেউ তার সাক্ষাৎ দর্শনের পূর্বেই দেবী রূপে তার দর্শন লাভ করেন। আবার কেউ কেউ স্বপ্নে তার থেকে দীক্ষা লাভ করেন বলেও কথিত আছে। এইরকমই একটি উদাহরণ হল, বাংলা নাটকের জনক গিরিশচন্দ্র ঘোষ, যিনি মাত্র উনিশ বছর বয়সে স্বপ্নে তার কাছে থেকে মন্ত্র লাভ করেছিলেন। অনেক বছর পরে যখন তিনি সারদা দেবীর সাক্ষাৎ লাভ করেন, তখন অবাক হয়ে দেখেন তার স্বপ্নে দেখা দেবী আসলে ইনিই।[৩১]
উদ্বোধন ভবনে শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যারা তার সঙ্গ দিতেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন গোপাল মা, যোগিন মা, গৌরী দিদি ও লক্ষ্মী মা।
শেষের দিনগুলি
[সম্পাদনা]১৯১৯ সালের জানুয়ারি মাসে শ্রীমা জয়রামবাটী যাত্রা করেন এবং সেখানেই এক বছর কাটান। জয়রামবাটীতে অবস্থানের শেষ তিন মাস তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। ১৯২০ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি অশক্ত অবস্থায় তাকে কলকাতায় আনা হয়। পরের পাঁচ মাস তিনি রোগযন্ত্রণায় অত্যন্ত কষ্ট পান। মৃত্যুর পূর্বে এক শোকাতুরা শিষ্যাকে তিনি উপদেশ দিয়েছিলেন,যদি শান্তি চাও, মা, কারও দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপন করে নিতে শেখ। কেউ পর নয়, মা, জগৎ তোমার। মনে করা হয় এই উপদেশটিই বিশ্বের উদ্দেশ্যে তার শেষ বার্তা। ১৯২০ সালের ২০ জুলাই রাত দেড়টায় কলকাতার উদ্বোধন ভবনে তার প্রয়াণ ঘটে। বেলুড় মঠে গঙ্গার তীরে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এই স্থানটিতেই বর্তমানে গড়ে উঠেছে শ্রীমা সারদা দেবীর সমাধিমন্দির।[২৭]
উপদেশ ও উক্তি
[সম্পাদনা]- "যদি শান্তি চাও, মা, কারো দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার ক'রে নিতে শেখ, কেউ পর নয়, মা; জগৎ তোমার।"
- “আমি সত্যিকারের মা; গুরুপত্নী নয়, পাতানো মা নয়, কথার কথা মা নয় – সত্য জননী।”
- “মানুষ তো ভগবানকে ভুলেই আছে। তাই যখন যখন দরকার, তিনি নিজে এক একবার এসে সাধন করে পথ দেখিয়ে দেন। এবার দেখালেন ত্যাগ।”
- “যেমন ফুল নাড়তে-চাড়তে ঘ্রাণ বের হয়, চন্দন ঘষতে ঘষতে গন্ধ বের হয়, তেমনি ভগবত্তত্ত্বের আলোচনা করতে করতে তত্ত্বজ্ঞানের উদয় হয়।
- ভালবাসায় সবকিছু হয়, জোর করে কায়দায় ফেলে কাউকে দিয়ে কিছু করানো যায় না।”
- “সৎসঙ্গে মেশো, ভাল হতে চেষ্টা কর, ক্রমে সব হবে।”
- “কাজ করা চাই বইকি, কর্ম করতে করতে কর্মের বন্ধন কেটে যায়, তবে নিষ্কাম ভাব আসে। একদণ্ডও কাজ ছেড়ে থাকা উচিত নয়।”
- “মনটাকে বসিয়ে আলগা না দিয়ে কাজ করা ঢের ভাল। মন আলগা হলেই যত গোল বাধায়।”
- “আমি সতেরও মা, অসতেরও মা।”
- “ভাঙতে সবাই পারে, গড়তে পারে কজনে? নিন্দা ঠাট্টা করতে পারে সব্বাই, কিন্তু কি করে যে তাকে ভাল করতে হবে, তা বলতে পারে কজনে?”
- “যারা এসেছে, যারা আসেনি, যারা আসবে, আমার সকল সন্তানদের জানিয়ে দিও, মা, আমার ভালবাসা, আমার আশীর্বাদ সকলের ওপর আছে।”
- “শোন মা, যত বড় মহাপুরুষই হোক, দেহধারণ ক'রে এলে দেহের ভোগটি সবই নিতে হয়। তবে তফাৎ এই, সাধারণ লোক যায় কাঁদতে কাঁদতে, আর ওঁরা যান হেসে হেসে--মৃত্যুটা যেন খেলা।”
- “কত সৌভাগ্য, মা এই জন্ম, খুব ক'রে ভগবান্কে ডেকে যাও। খাটতে হয়, না খাটলে কি কিছু হয়? সংসারে কাজকর্মের মধ্যেও একটি সময় ক'রে নিতে হয়।”
- “মা--মানুষের আর কতটুকু বুদ্ধি? কি চাইবে কি চাইবে। শেষে কি শিব গড়তে বানর হ'য়ে যাবে। তার শরণাগত হ'য়ে থাকা ভাল। তিনি যখন যেমন দরকার, তেমন দিবেন। তবে ভক্তি ও নির্বাসনা কামনা করতে হয়--এ কামনা কামনার মধ্যে নয়। আমি--ঠাকুর বলেছেন, 'এখানে যাঁরা আসবে তাদের শেষ জন্ম।' আবার স্বামীজী বলেছেন, 'সন্ন্যাস না হ'লে কারও মুক্তি নেই।' গৃহীদের তবে উপায়? মা--হ্যাঁ, ঠাকুর যা বলেছেন তাও ঠিক, আবার স্বামীজী যা বলেছেন তাও ঠিক। গৃহীদের বহিঃ-সন্ন্যাসের দরকার নেই। তাদের অন্তর-সন্ন্যাস আপনা হতে হবে। তবে বহিঃ-সন্ন্যাস আবার কারো কারো দরকার।”
- একদিন জিজ্ঞাসা করিলাম, "মা, ভগবানের নাম করলেও কি প্রারব্ধ ক্ষয় হয় না?" মা বলিলেন, "প্রারব্ধের ভোগ ভুগতেই হয়। তবে ভগবানের নাম করলে এই হয়--যেমন একজনের পা কেটে যাবার কথা ছিল, সেখানে একটা কাঁটা ফুটে ভোগ হ'ল।
- পরের একটি ছেলে নিয়ে মানুষ করতে চেয়েছিলুম। তার উত্তরে রাধুর জন্য নিজের অবস্থা দেখিয়ে মা বলেছিলেন, ``অমন কাজও করো না। যার উপর যেমন কর্তব্য ক'রে যাবে, কিন্তু ভাল এক ভগবান্ ছাড়া আর কাউকে বেসো না। ভালবাসলে অনেক দুঃখ পেতে হয়।"
- “দয়া যার শরীরে নাই, সে কি মানুষ? সে তো পশু। আমি কখনও কখনও দয়ায় আত্মহারা হয়ে যাই, ভুলে যাই যে আমি কে।”
- ঘরের বারান্দায় বসিয়াছিলেন, প্রভাত হইলে তিনি তাঁহার সম্মুখের লণ্ঠনটি নিবাইলেন; বলিতে লাগিলেন, "গঙ্গা, গীতা, গায়ত্রী, ভাগবত, ভক্ত, ভগবান, শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীরামকৃষ্ণ।"
- “বাসনা থাকতে জীবের যাতায়াত ফুরায় না, বাসনাতেই দেহ হতে দেহান্তর হয়। একটু সন্দেশ খাবার বাসনা থাকলেও পুনর্জন্ম হয়।... বাসনাটি সূক্ষ্ম বীজ-যেমন বিন্দুপরিমাণ বটবীজ হতে কালে প্রকাণ্ড বৃক্ষ হয়, তেমনই। বাসনা থাকলে পুনর্জন্ম হবেই, যেন এক খোল থেকে নিয়ে আর এক খোলে ঢুকিয়ে দিলে। একেবারে বাসনাশূন্য হয় দু-একটি। তবে বাসনায় দেহান্তর হলেও পূর্বজ্ন্মের সুকৃতি থাকলে চৈতন্য একেবারে হারায় না।”
- আমি--ছবিতে কি ঠাকুর আছেন? মা--আছেন না? ছায়া কায়া সমান। ছবি তো তার ছায়া। মা--হাঁ, ডাকতে ডাকতে ছবিতে তার আবির্ভাব হয়। স্থানটি যেন পীঠ হয়। যেমন এই জায়গায় (উদ্বোধনের উত্তরদিকে মাঠ দেখাইয়া) কেউ তার পূজা দিলে। ঐটি তার একটি স্থান হ'ল। আমি--তা, ও সব স্থানের সঙ্গে ঐ সব ভাল স্মৃতি জড়িত আছে ব'লে অমন মনে হয়। মা--তা নয়, ও স্থানটিতে তার দৃষ্টি থাকে।
- আমি--মা, এই অনন্ত সৃষ্টিতে কোথায় কি হচ্ছে কে জানে? এই যে অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র, ওতে কোন জীবের বাস আছে কি না কে বলবে? মা--মায়ার রাজ্যে সর্বজ্ঞ হওয়া একমাত্র ঈশ্বরেই সম্ভবে। ওসব গ্রহ-নক্ষত্রে কোন জীবের বাস নেই।
- গতরাত্রে গিরিশবাবু দেহত্যাগ করিয়াছেন, সেই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করিলাম, "মা, যারা মৃত্যুর পূর্বে অজ্ঞান হয়ে দেহত্যাগ করে, তাদের কি ক'রে সদ্গতি হয়?" মা--অজ্ঞান হবার পূর্বে যে চিন্তাটি ছিল, যে চিন্তাটি নিয়ে অজ্ঞান হয়েছে। সেই চিন্তাটি অনুসারে গতি হয়।
- “কর্মফল ভুগতে হবেই। তবে ঈশ্বরের নাম করলে যেখানে ফাল সেঁধুত, সেখানে সুঁচ ফুটবে। জপ তপ করলে কর্ম অনেকটা খণ্ডণ হয়। যেমন সুরথ রাজা লক্ষ বলি দিয়ে দেবীর আরাধনা করেছিল ব'লে লক্ষ পাঁঠায় মিলে তাঁকে এক কোপে কাটলে। তার আর পৃথক লক্ষ বার জন্ম নিতে হ'ল না। দেবীর আরাধনা করেছিল কিনা। ভগবানের নামে কমে যায়।”
- “অনেক সাধন তপস্যা করলে, পূর্বজন্মের অনেক তপস্যা থাকলে, তবে এ জন্মে মনটি শুদ্ধ হয়।”
- “এ কলিতে শুধু সত্যের আঁট থাকলেই ভগবানলাভ হয়। ঠাকুর বলতেন, 'যে সত্যকথাটি ধরে আছে সে ভগবানের কোলে শুয়ে আছে।'”
- কথাপ্রসঙ্গে মা বলিলেন, "ঠাকুরের আবির্ভাব থেকে সত্য যুগ আরম্ভ হয়েছে। বিশেষ বিশেষ লোক তার সঙ্গে এসেছেন। এই নরেন সপ্ত ঋষির মধ্যে প্রধান ঋষি। তিনি তো শত ঋষির মধ্যে বলতে পারতেন; তা না ব'লে সেই বড় সাতজনের মধ্যে একজন বললেন। অর্জুন যোগীন হয়ে এলেন। তেমন প্রধান প্রধান কটি থাকে? অনেক থাকে কি? টোকো আম অনেক পাওয়া যায়, ফজলি আম কি বেশি পাওয়া যায়? সাধারণ লোক কত জন্মাচ্ছে, মরছে। এই সব সর্ব-প্রধান যাঁরা, তারাই ভগবানের কার্যের জন্য সঙ্গে সঙ্গে আসেন।" আমি--স্বামীজীও বলেছেন, ঠাকুরের আবির্ভাব থেকে সত্যযুগ আরম্ভ। মা--তাই তো।
- একদিন সন্ধ্যায় মা কথাপ্রসঙ্গে বলিতেছেন, "আমি আর কারও দোষ দেখতে শুনতে পারিনে, বাবা, প্রারব্ধ কর্ম যার যা আছে। যেখানে ফালটি যেত সেখানে ছুঁচটি তো যাবে? আমার কাছে--র দোষের কথা বললে। তখন এরা সব কোথায় ছিল? সে আমার কত সেবা করেছে। আমি তো তখন ভাইদের ঘরে ধান সিদ্ধ করি। বউরা সব ছোট। সে শীত বর্ষা গ্রাহ্য না ক'রে সকাল থেকে গায়ে কালি মেখে আমার সঙ্গে বড় বড় ধানের হাঁড়ি নামাত। এখন তো অনেকে ভক্ত হয়ে আসে। তখন আমার কে ছিল! আমরা কি সেগুলো সব ভুলে যাব? তা লোকেরই বা দোষ কি? আমারও আগে লোকের কত দোষ চোখে ঠেকত। তারপর ঠাকুরের কাছে কেঁদে কেঁদে, `ঠাকুর, আর দোষ দেখতে পারি নে' ব'লে কত প্রার্থনা ক'রে তবে দোষ-দেখাটা গেছে। মানুষের হাজার উপকার ক'রে একটু দোষ কর, মুখটি তখনই বেঁকে যাবে। লোক কেবল দোষটি দেখে। গুণটি দেখা চাই।"
- এই কথা বলিয়া মা বলিতেছেন, "এ তো হলো। আচ্ছা, তোরা বল্ দেখি কোন্ জিনিসটা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে হয়?" নলিনীদিদি বলিতেছেন, "কেন, পিসিমা, জ্ঞান, ভক্তি, মানুষ যাতে সংসারে সুখে থাকে, এই সব প্রার্থনা করতে হয়।" মা বলিতেছেন, "এক কথায় বলতে গেলে, নির্বাসনা প্রার্থনা করতে হয়। কেন না বাসনাই সকল দুঃখের মূল, বার বার জন্ম-মৃত্যুর কারণ, আর মুক্তিপথের অন্তরায়।"
- কেদার মহারাজ একদিন সকালে জয়রামবাটীতে মায়ের নিকট বসিয়া বলিতেছেন, "মা, আমাদের দাতব্য চিকিৎসালয়ে যাদের অবস্থা ভাল তারাও সব ওষুধ নিতে আসে। আমরা তো গরীবদের জন্যেই করেছি। ঐ সমস্ত লোককে ওষুধ দেওয়া কি উচিত?" মা একটু থামিয়া বলিলেন, "বাবা, এদেশের সকলেই গরীব। তবে ওরা এইসব জেনেশুনেও যদি প্রার্থী হয়ে এসে দাঁড়ায়, সামর্থ্য থাকলে দেবে বইকি। যে প্রার্থী সেই গরীব।"
- “ওকি গো, মানুষের মনে আঘাত দিয়ে কি কথা বলতে আছে? কথা সত্য হলেও অপ্রিয় করে বলতে নেই। শেষে ঐরূপ স্বভাব হয়ে যায়। মানুষের চক্ষুলজ্জা ভেঙে গেলে আর মুখে কিছু আটকায় না। ঠাকুর বলতেন, 'একজন খোঁড়াকে যদি জিজ্ঞাসা করতে হয়, তুমি খোঁড়া হ'লে কি করে?--তাহলে বলতে হয়, তোমার পা-টি অমন মোড়া হ'ল কি করে?'”
- আর একদিন জয়রামবাটীতে আমি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম, "কি করে ভগবান লাভ হয়? পূজা, জপ, ধ্যান--এসবে হয়?" মা--কিছুতেই না। আমি--কিছুতেই না? মা--কিছুতেই না। আমি--তবে কিসে হয়? মা--শুধু তার কৃপাতে হয়। তবে ধ্যানজপ করতে হয়। তাতে মনের ময়লা কাটে। পূজা, জপ, ধ্যান-এসব করতে হয়। যেমন ফুল নাড়তে চাড়তে ঘ্রাণ বের হয়, চন্দন ঘষতে ঘষতে গন্ধ বের হয়। তেমনি ভগবৎতত্ত্ব আলোচনা করতে করতে তত্ত্বজ্ঞানের উদয় হয়। নির্বাসনা যদি হতে পার, এক্ষুণি হয়।
- “জানবে এই তিনটির সম্বন্ধে খুব সাবধানে চলতে হয়--প্রথম নদীর তীরে বাসস্থান; কোন্ সময়ে নদী হুস্ করে এসে বাসস্থান ভেঙে নিয়ে চলে যাবে। দ্বিতীয়, সাপ; দেখলেই খুব সাবধানে থাকতে হয়--কখন এসে কামড়ে দেবে তার ঠিক নেই। তৃতীয়, সাধু; তাঁদের কোন্ কথায় বা মনের ভাবে গৃহস্থের অমঙ্গল হতে পারে তা তুমি জান না। তাঁদের দেখলে ভক্তি করতে হয়; কোনও জবাব করে অবজ্ঞা দেখান উচিত নয়।”
- শেষবার জয়রামবাটীতে রাঁধুনী ব্রাহ্মণী রাত্রি নয়টার সময় আসিয়া বলিল, "কুকুর ছুঁয়েছি, স্নান ক'রে আসি।" মা বলিলেন, "এত রাত্রে স্নান ক'রো না, হাত পা ধুয়ে এসে কাপড় ছাড়।" রাঁধুনী বলিল, "তাতে কি হয়?" মা বলিলেন, "তবে গঙ্গাজল নাও।" তাহাতেও তাঁহার মন উঠিল না। তারপর মা বলিলেন, "তবে আমাকে স্পর্শ কর।"
প্রধান শিষ্যগণ
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
[সম্পাদনা]পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ Brahmacharini Usha (১৯৯০)। A Brief Dictionary of Hinduism। Vedanta Press। পৃষ্ঠা 68–69।
- ↑ ক খ শ্রীশ্রীসারদাদেবী, ব্রহ্মচারী অক্ষয়চৈতন্য, ক্যালকাটা বুক হাউস প্রাইভেট লিমিটেড, একাদশ সংস্করণ, ১৩৯৬ বঙ্গাব্দ, পৃ. ৫
- ↑ ক খ শ্রীমা সারদা দেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, নবম সংস্করণ, ২০০৪, পৃ. ১৪
- ↑ ক খ
Ghanananda, Swami। "Sri Sarada Devi"। Women Saints of East and West। পৃষ্ঠা 95। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ আত্মকথা, সারদা দেবী, সংকলন: অভয়া দাশগুপ্ত, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার, কলকাতা, ১৯৭৯, পৃ. ৪
- ↑ শ্রীমা সারদা দেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, নবম সংস্করণ, ২০০৪, পৃ. ১৬
- ↑ Saradeshananda, Swami। "Introduction"। The Mother As I Saw Her। ১৫ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০০৯।
- ↑ ক খ
Ghanananda, Swami। "Sri Sarada Devi"। Women Saints of East and West। পৃষ্ঠা 97। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ ক খ Women Saints of East and West, p.98
- ↑ Muller, Max (১৮৯৮)। "Râmakrishna's Life"। Râmakrishna his Life and Sayings। পৃষ্ঠা 52–53।
- ↑ Women Saints of East and West, p.99
- ↑ ক খ Ibid., 99
- ↑ Karel Werner। "Yoga in the Modern World"। Yoga and Indian Philosophy। পৃষ্ঠা 156।
- ↑ Rolland, Romain (১৯২৯)। "The Return to Man"। The Life of Ramakrishna। পৃষ্ঠা 59।
- ↑ Isherwood, Ramakrishna and His Disciples, pp. 144-146.
- ↑ Lisa Lassell Hallstrom। Mother of Bliss। পৃষ্ঠা 69।
- ↑ Sri Ramakrishna Math (১৯৮৪)। "Her Devotee-Children"। The Gospel of The Holy Mother Sri Sarada Devi। পৃষ্ঠা xx।
- ↑ Women Saints of East and West, p.102
- ↑ "The Mother as I saw Her"। ২০০৮-০৫-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০৬।
- ↑ Women Saints of East and West, p.103
- ↑ Women Saints of East and West, p.105
- ↑ Women Saints of East and West, p.107
- ↑
Leo Schneiderman (Spring, 1969)। "Ramakrishna: Personality and Social Factors in the Growth of a Religious Movement"। Journal for the Scientific Study of Religion। London: Blackwell Publishing। 8: 60–71। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ Women Saints of East and West, p.107-108
- ↑ ক খ Christopher Isherwood (১৯৬৪)। "The Story Continues"। Ramakrishna and his Disciples। পৃষ্ঠা 314।
- ↑ Women Saints of East and West, p.109
- ↑ ক খ Women Saints of East and West, p.115-116
- ↑ Swami Nikhilananda। "Sarada Devi: The Holy Mother"। Living Wisdom। পৃষ্ঠা 252।
- ↑ Swami Nikhilananda। "Sarada Devi: The Holy Mother"। Living Wisdom। পৃষ্ঠা 255।
- ↑ Women Saints of East and West, p.110
- ↑ Women Saints of East and West, p.115
তথ্যপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Babaji Bob Kindler (২০০০)। Sri Sarada Vijnanagita: Her Teachings, Selected and Arranged in Verse Form। SRV Associations। আইএসবিএন 978-1891893063।
- Swami Gambhirananda (১৯৫৫)। Holy Mother Shri Sarada Devi।
- Swami Nikhilananda (১৯৮৪)। Gospel of the Holy Mother Sri Sarada Devi। Sri Ramakrishna Math Printing Press। আইএসবিএন 978-8171204007।
- Swami Nikhilananda (১৯৮২)। Holy Mother : Being the Life of Sri Sarada Devi, Wife of Sri Ramakrishna and Helpmate in His Mission। Ramakrishna-Vivekananda Center। আইএসবিএন 978-0911206203।
- Swami Saradeshananda। The Holy Mother as I Saw Her।
- Swami Tapasyananda (১৯৫৮)। Sri Sarada Devi ; The Holy Mother। Sri Ramakrishna Math। আইএসবিএন 978-8171204878।
- Sri Sarada Devi : a Biography in pictures। Advaita Ashrama। ১৯৮৮।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Sri Maa Sarada Devi:Life and Teachings ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ জুলাই ২০১২ তারিখে
- "Two Reminiscences of Sarada Devi, The Holy Mother"। ২০০৮-১২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-১০।
- Nikhilananda, Swami (১৯৬২)। "Sarada Devi : The Holy Mother"। Vedanta and the West। ২০০৮-১২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-১০।