হিযবুত তাহরীর
হিযবুত তাহরীর حِزْبُ التَحْرِير | |
---|---|
নেতা | শায়খ আতা আবু রাশতা |
প্রতিষ্ঠাতা | শায়েখ তাকিউদ্দীন আন-নাবহানী |
প্রতিষ্ঠা | ১৪ মার্চ ১৯৫৩ |
সদর দপ্তর | বৈরুত, লেবানন |
সদস্যপদ | আনু.১০ লক্ষ[১] |
ভাবাদর্শ |
|
দলীয় পতাকা | |
ওয়েবসাইট | |
www.hizb-ut-tahrir.org |
হিযবুত তাহরীর (আরবি: حِزْبُ التَحرِير) (বাংলা ভাষায়: মুক্তির দল) একটি ইসলামি মতাদর্শ ভিত্তিক রাজনৈতিক দল, যার বিবৃত লক্ষ্য হল ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠা, মুসলিম সম্প্রদায়কে একত্রিত করা এবং বিশ্বব্যাপী শরিয়া বাস্তবায়ন করা। হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশ,[২] চীন,[৩] রাশিয়া,[৪] পাকিস্তান,[৫] জার্মানি,[৬][৭] তুরস্ক,[৮] যুক্তরাজ্য,[৯] কাজাখস্তান[১০] এবং সমস্ত মধ্য এশিয়া,[১১][১২] ইন্দোনেশিয়া[১৩][১৪] এবং সমস্ত মধ্যপ্রাচ্যে (লেবানন, ইয়েমেন, দুবাই ব্যতীত) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ইন্দোনেশিয়া সরকারি বিধি ও জাতীয় মতাদর্শের সঙ্গে অমিলের কারণে হিযবুত তাহরীরের আইনগত স্বীকৃতি বাতিল করে।[১৫]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]মুসলমান উম্মাহর মধ্যে ইসলামি খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৫৩ সালে এ দল প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলামি খিলাফত হচ্ছে সে ব্যবস্থা যা পৃথিবীতে ইসলামি শরীয়াহ-র বাস্তবায়ন করে থাকে এবং 'দাওয়াত ও যুদ্ধের' মাধ্যমে ইসলাম-কে পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতার নিকট উপস্থাপন করে থাকে। হিযবুত তাহরীর মনে করে মুসলমান বিশ্বের সকল সমস্যার মূলে রয়েছে উম্মাহর মধ্যে খিলাফত ব্যবস্থার অনুপস্থিতি এবং খিলাফত ব্যবস্থাই হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শক্তির প্রতীক। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ফিলিস্তিনের জেরুজালেমের শরীয়াহ আদালতের বিচারপতি শায়েখ তাকিউদ্দীন আন-নাবহানী কর্তৃক ১৯৫৩ সালে এ দলের প্রতিষ্ঠা হয়। শায়েখ তাকিউদ্দীন আন-নাবহানী মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় হতে শিক্ষিত একজন স্বয়ংসম্পূর্ন ইসলামি গবেষক (মুজতাহিদ মুতলাক) ছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর মধ্যপ্রাচ্য হতে এ দল ধীরে ধীরে আফ্রিকা, ইউরোপ, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে।
কর্মপদ্ধতি
[সম্পাদনা]খিলাফত প্রতিষ্ঠার ইসলামি ফরয দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে হিযবুত তাহরীর সমগ্র বিশ্বে কাজ করে থাকে। এবং এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পবিত্র জীবন থেকে হিযবুত তাহরীর তাদের কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছে। হিযবুত তাহরীর খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কোনো ধরনের সশস্ত্র পন্থায় বিশ্বাস করে না। বরং তারা একমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক পদ্ধতিতেই কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিশ্বাসী। হিযবুত তাহরীর মনে করে যে যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার মক্কী জীবনে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের মাধ্যমে মদিনায় একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক সে কর্মপদ্ধতিতেই আবার খিলাফত ব্যবস্থা ফিরে আসবে এবং এটাই এ কাজের ক্ষেত্রে একমাত্র সঠিক কর্মপদ্ধতি। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] রাসূলাল্লাহ (সা.) খিলাফত প্রতিষ্ঠায় ৩টি স্তর অতিক্রম করেন। যথা: ১. গোপন দাওয়াত পর্যায় (০-৩ বছর), ২. প্রকাশ্য দাওয়াত পর্যায় (৩-১০ বছর) এবং ৩. নুসরাহ (সামরিক সমর্থন) খোঁজা পর্যায় (১০-১৩ বছর)। হিযবুত তাহরীর এই ৩ টি পর্যায়-এ কাজ করে। বর্তমানে এরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নুসরাহ (সামরিক সহায়তা) খুজছে। তারা বিশ্বাস করে, পৃথিবীর কোনও-না-কোনও মুসলিম দেশের সেনা-বাহিনী তাদের নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় বসাবে।
বিভিন্ন দেশে হিযবুত তাহরীর
[সম্পাদনা]বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। [১৬] বেশ কিছু আরব দেশে এটি নিষিদ্ধ। এছাড়া রাশিয়া ও তুরস্কেও এটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মিশরে ১৯৭৪ সালে সরকার উৎখাতের চেষ্টার দায়ে এ দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়।[১৭]
সন্ত্রাস বিষয়ে হিযবুত তাহরীরের অবস্থান
[সম্পাদনা]২০০৭ এর ১২ই সেপ্টেম্বর তারিখে নিউ ইয়র্ক টাইমসে উল্লেখ করা হয়েছে, হিযবুত তাহরীর স্পষ্টভাবে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে থাকে। [১৮] কিন্তু বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ানে ডেনমার্কের হিযবুত তাহরীরের সদস্য ফাদি আবদেল লতিফের কর্মকান্ডের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা ফিলিস্তিনিদের আত্মঘাতী বোমা হামলাকে ন্যায্য কাজ বলে মনে করে। [১৯][২০]
ডেইলি টেলিগ্রাফে টম হার্পার হিযবুত তাহরীরের লিফলেটের উদাহরণ দিয়েছেন, এসব লিফলেটে বলা হয়েছে,
"আপনার পূর্বপুরুষেরা প্রথম ক্রুসেডার অভিযানগুলি ধ্বংস করে দিয়েছিল। আপনার কি তাদের মতো এগিয়ে গিয়ে নতুন ক্রুসেডারদের ধ্বংস করা উচিত নয়?... "সেনাবাহিনীকে ইরাকের মুসলমানদের সাহায্য করার জন্য যেতে দিন, কারণ তারা আপনার সাহায্য চায়।"[২১]
বিবিসি টিভির প্যানোরামা টিভি সিরিজে দেখানো হয়েছে, আগস্ট ২০০৬ সালে হিযবুত তাহরীরের আন্তর্জাতিক নেতা শায়েখ আতা আবু রাশতা কাশ্মীরের হিন্দু ধর্মাবলম্বী, চেচনিয়ার রুশ, এবং ইসরাইলে ইহুদিদের হত্যা ও ধ্বংস করার জন্য হিযবুত তাহরীর সদস্যদের আহবান জানাচ্ছেন। [২১]
অন্যান্য সমালোচকদের মতে হিযবুত তাহরীরের মুখে সন্ত্রাসের বিরোধিতা করলেও গোপনে সন্ত্রাসের উপযুক্ত সময় আসার জন্য অপেক্ষা করছে, এবং এই দলটির প্রচারণার কারণে সশস্ত্র সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। লেখক অলিভিয়ের রয় এর মতে, "জিহাদ শুরু করার বিরুদ্ধে হিযবুত তাহরীরের অবস্থান সম্পূর্ণরূপে কৌশলগত। সংগঠনটি বিশ্বাস করে যে জিহাদের সময় এখনও আসেনি, তবে এটা যেকোনো মুসলিমের জন্য একটা বাধ্যতামূলক কর্তব্য।"[২২] গ্লোবাল সিকিউরিটি ডট অর্গ নামের বিশ্লেষক সংস্থার মতে, হিযবুত তাহরীর হলো একটি মৌলবাদী গুপ্ত সংস্থা যা সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক। আপাতত সন্ত্রাসের বিরোধী হলেও এরা জিহাদ বা ধর্মযুদ্ধের প্রচারণা চালাচ্ছে। [২৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Malik, Shiv. For Allah and the caliphate ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে, New Statesman, 13 September 2004
- ↑ Khan, Mohammad Jamil (৪ জুলাই ২০১৫)। "Banned Hizb ut-Tahrir now prefers direct action"। Dhaka Tribune। ২০২৩-০২-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
- ↑ Emont, Jon (২০১৭-০৭-১৯)। "As Indonesia Targets Islamist Hard-Liners, Even Rights Groups Object"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-১৫।
- ↑ Radio Free Europe (২০২৩-০১-১১)। "More Crimean Tatars Handed Lengthy Prison Terms In Russia"। Radio Free Europe/Radio Liberty। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-১৫।
- ↑ "Pakistan issues list of 68 proscribed organizations"। The News। ৫ মার্চ ২০১৯।
- ↑ Finn, Peter (২০০৩-০১-১৬)। "Germany Bans Islamic Group"। Washington Post (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0190-8286। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-১৩।
- ↑ (:Unkn) Unknown (২০০৪)। "Verfassungsschutzbericht 2003"। Bundesministerium des Innern (জার্মান ভাষায়)। আইএসএসএন 0177-0357। ডিওআই:10.15496/publikation-4267।
- ↑ Hizb ut-Tahrir – Prepared for the CPT Terrorist Organization Dossier ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ মার্চ ২০০৯ তারিখে Center for Policing Terrorism (Madeleine Gruen).
- ↑ Cleverly, James; Tugendhat, Tom (২০২৪-০১-১৯)। "Hizb ut-Tahrir proscribed as terrorist organisation"। GOV.UK। Home Office। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-১৯।
- ↑ "The list of prohibited foreign organizations in Kazakhstan"। eGov Kazakhstan। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৪।
- ↑ "Uzbek Officials Detain Alleged Hizb Ut-Tahrir Members"। Radio Free Europe/Radio Liberty। অক্টোবর ২৯, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৪।
- ↑ "Hizb ut-Tahrir'e yasaklama"। OdaTV (তুর্কি ভাষায়)। ১ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৪।
- ↑ Feri Agus Setyawan (১৯ জুন ২০১৭)। "Pemerintah Resmi Cabut SK Badan Hukum HTI"।
- ↑ "Hizb-ut Tahir Indonesia banned 'to protect unity'"। Al Jazeera। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭।
- ↑ Feri Agus Setyawan (১৯ জুন ২০১৭)। "Pemerintah Resmi Cabut SK Badan Hukum HTI"।
- ↑ [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Muslim girl's brother linked to Islam radicals ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ এপ্রিল ২০০৫ তারিখে British Helsinki Human Rights Group
- ↑ New York Times
- ↑ "Hizb ut-Tahrir", BBC News, August 27, 2003.
- ↑ PM shelves Islamic group ban
- ↑ ক খ ""Islamists 'urge young Muslims to use violence,'" By Tom Harper, 19 April 2008"। ২৩ জুন ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০০৯।
- ↑ Globalized Islam: the Search for a New Ummah, by Olivier Roy, Columbia University Press, 2004 p.256
- ↑ Hizb ut-Tahrir al-Islami
- জিহাদি সংগঠন
- নিষিদ্ধ সংগঠন
- রাজনৈতিক আন্দোলন
- ১৯৫৩-এ প্রতিষ্ঠিত
- সর্ব-ইসলামবাদ
- পাকিস্তান কর্তৃক সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত সংগঠন
- সমাজতন্ত্র বিরোধী
- ১৯৫৩-এ প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল
- এশিয়া ভিত্তিক সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত সংগঠন
- ইসলামপন্থী দল
- সুন্নি ইসলামি রাজনৈতিক দল
- রাশিয়া কর্তৃক সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত সংগঠন
- তুরস্ক কর্তৃক সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত সংগঠন
- আফগানিস্তানের রাজনৈতিক দল
- হিযবুত তাহরির