আনন্দলহরী
আনন্দলহরী | |
---|---|
তথ্যসমূহ | |
অন্য নাম | গাব গুবাগুব, গুবগুবি,খমক |
শ্রেণিবিভাগ | আচ্ছাদনযন্ত্র ততযন্ত্র |
হর্নবোস্টেল-শ্যাস শ্রেণিবিন্যাস | ২২ (পিপা আকৃতির শরীর, এক পাশে খোলা, তারগুলি অন্যপাশের নীচে যুক্ত।) |
সম্পর্কিত যন্ত্র | |
পুলুভান কুদাম, ভাপাং, গুবগুবা, খমক |
আনন্দলহরী (সংস্কৃত: आनन्दलहरी) ভারত ও বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতে ব্যবহৃত ততযন্ত্র।[১] মূলত বাংলা ভাষাভাষি অঞ্চল, ওড়িশার লোক সঙ্গীতে এ যন্ত্রের ব্যবহার হয়, এছাড়াও দক্ষিণ ভারতে ভিন্ন নামে অনুরূপ যন্ত্রের ব্যবহার রয়েছে। যন্ত্রটি সুর এবং তাল দিয়ে প্রায়শই নাচের সাথে বাজানো হয়।[২] বাউল বিশ্বাসের গায়করা বেশি ব্যবহার করেন।
নাম
[সম্পাদনা]আনন্দলহরী নামের অর্থ "আনন্দ তরঙ্গ"; এটি মূলত শাস্ত্রীয় নাম।[৩] যন্ত্রটিকে ‘গাব গুবাগুব’ বা ‘গুবগুবি’ নামেও ডাকা হয়।[৩] 'খমক' নামেও জনপ্রিয়।[২]
বর্ণনা
[সম্পাদনা]আনন্দলহরীর মূল অংশটি একটি পিপা-আকৃতির শূন্যগর্ভ খোল, যার একপাশে খোলা, অন্যপ্রান্ত চামড়া দিয়ে আবৃত ও আবদ্ধ থাকে, মধ্যখানে কাঠি বা ধাতব চাকতি দিয়ে একগাছি অথবা একটি সুতা আটকানো থাকে, এই সুতা চামড়ার আবরণ ভেদ করে বের করা থাকে।[৪][১] যন্ত্রের খোল সাধারণত মাটি অথবা কাঠের তৈরী হয়, প্রাথমিকভাবে দুই পাশে খোলা থাকে; এক পাশে ঝিল্লিটি চামড়ার হুপ এবং দড়ি দিয়ে নীচের এবং উপরের অংশে স্থির করা হয়।[২] কিছু যন্ত্রের উপরের ডায়াফ্রামে ছিদ্র থাকে, সবযন্ত্রে নেই; পুরানো যন্ত্রগুলিতে এটি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত হতে পারে।[২] মূল তার, বাঁশ বা অন্যান্য উপাদানের একটি টুকরা দিয়ে নীচে যুক্ত করা হয়।[২] তার বা সূতার গাছির অন্য প্রান্তটি একটি তামার পাত্রের আটকানো হয়।[২] খমকের সাথে আনন্দলহরীর পার্থ্যক্য হচ্ছে, এটির তারের উম্মুক্ত প্রান্তে তামার পাত্র থাকে, খমকে থাকে না।[৫]
বাদন
[সম্পাদনা]আনন্দলহরীর মূলখোল বাম বগলে চেপে ধরা হয়, সূতা বা তার যুক্ত পাত্রটি বাম হাতে নেওয়া হয়। সূতার মাথা বাম হাত দিয়ে টেনে ধরে খুটনি অথবা শলাকা ব্যবহার করে ডান হাতে বাজানো হয়।[২] দক্ষিণ ভারতেরপুলুভান কুদাম বাদনের ধরন অনুয়ায়ী অনুরূপ একটি যন্ত্র [১] গোপীযন্ত্র কেন্দ্র নামে পরিচিত আরেকটি অনুরূপ যন্ত্র পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার মুন্ডা উপজাতি ব্যবহার করে। গোপীযন্ত্র এবং আনন্দলহরি উভয়ই সাধু ঘরানার ধর্মীয় ভিক্ষাজীবী সন্যাসী এবং বিশেষ করে ভিন্নধর্মী বাউল বিশ্বাসের গায়করা ব্যবহার করেন।[৬][৭]
শ্রেণিবিভাগ
[সম্পাদনা]জার্মান সঙ্গীতজ্ঞ কার্ট শ্যাক্স বিশ্বাস করতেন যে আনন্দলহরী এবং সংশ্লিষ্ট যন্ত্রগুলি সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় আচ্ছাদনযন্ত্রের একটি পৃথক শ্রেণী[৮] তবে নৃতাত্ত্বিক সঙ্গীতবিদ, লরেন্স পিকেন এবং অন্যান্যরা দেখিয়েছেন যে যন্ত্রটি দেখতে ঢোলের মত হলেও এটি স্পষ্টতই একটি ততযন্ত্র।[৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ Arnold, Alison (২০১৭)। The Garland Encyclopedia of World Music: South Asia: The Indian Subcontinent (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা 300। আইএসবিএন 978-1-351-54438-2। ১৫ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২২।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ Dick, Alastair; Montagu, Jeremy (২০১৪)। "Ānandalaharī"। Grove Music Online (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। ডিওআই:10.1093/gmo/9781561592630.article.L2261310। ১০ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২২।
- ↑ ক খ "আনন্দলহরী"। বাংলাপিডিয়া। ২০১৪-০৫-০৫। ২০২২-০৩-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-০৯।
- ↑ Lorea, Carola (২০১৬)। Folklore, Religion and the Songs of a Bengali Madman: A Journey Between Performance and the Politics of Cultural Representation (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা vii। আইএসবিএন 978-90-04-32471-8। ১৫ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২২।
- ↑ Dilip Ranjan Barthakur (২০০৩)। The Music And Musical Instruments Of North Eastern India। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 130–। আইএসবিএন 978-81-7099-881-5। ১ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৩।
- ↑ Ray, Sukumar (১৯৭৩)। Music of Eastern India: Vocal Music in Bengali, Oriya, Assamese, and Manipuri, with Special Emphasis on Bengali (ইংরেজি ভাষায়)। Firma K. L. Mukhopadhyay। পৃষ্ঠা 106–107। আইএসবিএন 9780883862612। ১৫ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২২।
- ↑ Barthakur, Dilip Ranjan (২০০৩)। The Music and Musical Instruments of North Eastern India (ইংরেজি ভাষায়)। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 129–130। আইএসবিএন 978-81-7099-881-5। ২০ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২২।
- ↑ Sachs, Curt (১৯২৩)। Die Musikinstrumente Indiens und Indonesiens: zugleich eine Einführung in die Instrumentenkunde (জার্মান ভাষায়)। Vereinigung Wissenschaftlicher Verleger। পৃষ্ঠা 78। আইএসবিএন 9783112132302। ১৫ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২২।
- ↑ L.E.R. Picken (1981): The 'Plucked Drums': Gopīyantra and Ānandalaharī’, Musica asiatica, iii, p 29–33