আর্তেম আলিখানিয়ান
আর্তেম আইজাকোভিচ আলিখানিয়ান (২৪ জুন ১৯০৮-২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮) একজন নামজাদা সোভিয়েত আর্মেনীয় পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি ইয়েরেভান পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রথম পরিচালক ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি ১৯৪৬ সালে সোভিয়েত বিজ্ঞান একাডেমির একজন সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি আর্মেনীয় বিজ্ঞান একাডেমির একজন একাডেমিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পিয়োতোর কাপিৎসা, লেভ ল্যান্ডাউ, ইগর কুর্চাতভ, আব্রাম আলিখানভদের মত বিজ্ঞানীদের ন্যায় তিনি-ও সোভিয়েত ইউনিয়নে নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি "আর্মেনীয় পদার্থবিজ্ঞানের পিতা" হিসেবে পরিচিত।[১]
জীবনী
[সম্পাদনা]আর্তেম আলিখানিয়ান তৎকালীন রুশ সাম্রাজ্যের এলিজাবেথপুলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা রেলপথ প্রকৌশলী ও মা গৃহিণী ছিলেন। তাঁদের চার সন্তান ছিল - দুই ছেলে (বড় ছেলে আব্রাম আলিখানভ-ও একজন প্রথিতযশা পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন) ও দুই মেয়ে। ১৯১২ সালে পরিবারটি সেবাস্তোপুল চলে যায়। আলিখানিন রেস্তোরাঁয় খাদ্য পরিবেশন ও সংবাদপত্র বিক্রির মাধ্যমে পরিবারের জীবিকা নির্বাহে অবদান রাখতেন। আলিখানিয়ান নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতেন না;অধিকাংশ সময় ঘরে বসেই তিনি লেখাপড়া করেছেন। পরবর্তীতে তিনি তিফলিসের (বর্তমান তিবলিসি) ১০০ নং স্কুল থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩০ সালে লেনিনগ্রাদ স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক হওয়ার পূর্বে তিনি বড় ভাই আব্রাম আলিখানভের সঙ্গে লেনিনগ্রাদের ভৌত প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে কিছুদিন কাজ করেন। তাঁরা যুগল উৎপাদন বা পেয়ার প্রোডাকশন (নিরপেক্ষ বোসন কণা থেকে একটি অতিপারমাণবিক কণা ও তার প্রতিকণা সৃষ্টির প্রক্রিয়া) ও এর ফলে সৃষ্ট পজিট্রন বর্ণালি নিয়ে গবেষণা করেন। এ কাজে আলিখানভ, আলিখানভের ছাত্র এম.কোজোদায়েভ ও আলিখানিয়ান চৌম্বকীয় বর্ণালিমিতিক যন্ত্র ও দুইটি পরস্পর সংলগ্ন গাইগার-মুলার কাউন্টার ব্যবহার করেন। এর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানে রেডিওপ্রকৌশল ব্যবহারের সূচনা হয়। [২]দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে তাঁরা বিটা রশ্মির ক্ষয়, গামা রশ্মির অভ্যন্তরীণ রূপান্তর এবং পজিট্রন ধ্বংসের ফলে সঞ্চিত শক্তি নিয়ে গবেষণা করেন। ১৯৩৪ সালে আর্তেম আলিখানভ, আব্রাম আলিখানিয়ান ও বি জেলেপভের সমন্বয়ে গঠিত একটি গবেষণাদল তেজস্ক্রিয় ক্ষয় পর্যবেক্ষণ করেন। তেজস্ক্রিয় ক্ষয় পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে তাঁদের অন্যতম পথিকৃৎ বিবেচনা করা হয়।[৩] ১৯৩৮ সালে আলিখানভ ও আলিখানিয়ান বেরিলিয়ামের নিউক্লিয়াস ক্ষয়ের মাধ্যমে নিউট্রিনোর স্থির ভর নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি বের করেন। উভয় ভাইকেই এজন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেওয়া হয়।
১৯৪২ সালে ভ্রাতৃদ্বয় আরাগাত পর্বতে বৈজ্ঞানিক অভিযাত্রা চালান, যার উদ্দেশ্য ছিল মহাজাগতিক রশ্মির তৃতীয় উপাদান আবিষ্কার। [৪] তাঁরা প্রথম প্রমাণ করেন, ভরযুক্ত কণায় প্রোটন ও মিউওনের মাঝে মহাজাগতিক রশ্মি অবস্থিত। লেনিনগ্রাদ অবরোধের সময় তাঁদের সিনকোসাইক্লোট্রন (বিশেষ ধরনের কণা ত্বরক) তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। শেষাবধি ১৯৫৫ সালে দুবনায় যন্ত্রটি তৈরি হয়। ১৯৪৮ সালে মহাজাগতিক রশ্মি বিষয়ে আলিখানিন ও আলিখানভের পর্যবেক্ষণের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের পুনরায় রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। অতঃপর ভ্রাতৃদ্বয় আরাগাত পর্বতের ৩২৫০ মিটার উচ্চতায় মহাজাগতিক রশ্মি স্টেশন স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তাঁরা আর্মেনীয় বিজ্ঞান একাডেমিতে যোগদান করেন ও ১৯৪৩ সালে ইয়েরেভান পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী ৩০ বছর আলিখানিয়ান এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ সালে আলিখানিয়ান, আলিখানভ ও ভিক্তর হাম্বার্তজুমিয়ান ছয় ইলেক্ট্রােভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন সিঙ্কোট্রন তৈরি করেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ https://web.archive.org/web/20150121145714/http://cerncourier.com/cws/article/cern/34941/6
- ↑ "Alikhanov, Abram Isaakovich - Encyclopedia.com"। www.encyclopedia.com।
- ↑ "Журнал "Санкт-Петербургский университет" » Blog Archive » Воспоминания об Учителе. К 100-летию со дня рождения Б.С.Джелепова"। web.archive.org। ৪ জুন ২০১৬। Archived from the original on ৪ জুন ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ http://download.springer.com/static/pdf/329/art%3A10.3103%2FS106833720905003X.pdf?originUrl=http://link.springer.com/article/10.3103/S106833720905003X&token2=exp=1459107825~acl=/static/pdf/329/art%253A10.3103%252FS106833720905003X.pdf?originUrl=http%3A%2F%2Flink.springer.com%2Farticle%2F10.3103%2FS106833720905003X*~hmac=8ee3b421969a215e55ef6f8a80cc566ccc203b849afe6778fafc2eb79de18a18[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]