আর-রাহীকুল মাখতূম
এই নিবন্ধটি বিজ্ঞাপনের মত করে লেখা হয়েছে। |
লেখক | সফিউর রহমান মোবারকপুরী |
---|---|
দেশ | ভারত |
ভাষা | আরবি ও উর্দু |
ধরন | জীবনী |
প্রকাশিত | ১৯৭৯ (দারুস-সালাম প্রকাশনী) |
মিডিয়া ধরন | মুদ্রণ |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ৪৪০ |
আইএসবিএন | ১-৫৯১৪৪-০৭০-X |
আর্-রাহীকুল মাখতূম (আরবি/উর্দূতে: الرحيق المختوم ; অর্থ: মোহরাঙ্কিত জান্নাতী সুধা) আরবি এবং উর্দু ভাষায় সফিউর রহমান মোবারকপুরী রচিত মুসলমানদের নবী মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনীগ্রন্থ। আধুনিক যুগে ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী নিয়ে আরবি ভাষায় লেখা অন্যতম একটি সিরাত গ্রন্থ। আরবি বইটি ১৯৭৯ সালে রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী কর্তৃক আয়োজিত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনীর উপর আয়োজিত প্রথম উন্মুক্ত সিরাত গ্রন্থ প্রতিযোগিতায় ১১৮২টি পাণ্ডুলিপির মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে।[১][২] এ গ্রন্থটি মূলতঃ সিরাতের ওপর রচিত অতীতের শত শত গ্রন্থের মৌলিক ও নির্ভরযোগ্য উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এক কথায় সিরাত সংক্রান্ত বিশাল সংগ্রহশালার একটি নির্যাস গ্রন্থ।
তারই ধারাবাহিকতায় হিজরী ১৩৯৬ সনে রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী সীরাতুন্নবী সম্পর্কিত গ্রন্থ রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বিশ্বব্যাপী এ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দেশের বহু লেখক আগ্রহসহ অংশগ্রহণ করেন। ১১৮২টি পাণ্ডুলিপির মধ্যে ‘আর রাহীকুল মাখতূম’ গ্রন্থটিকে প্রথম পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে এক বিরল সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। আর এ দুর্লভ সম্মানের কৃতিত্ব, অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তার সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র তারই প্রাপ্য যাঁর আদর্শকে কেন্দ্র করে এ গ্রন্থ রচিত হয়েছে।
সাহিত্যকর্মের রূপ-রস, সৌন্দর্য, মাধুর্য, শোভনতা, সাবলীলতা ও প্রাঞ্জলতার মধ্যেই নিহিত রয়েছে উক্ত সাহিত্যকর্মের প্রকৃত মূল্য। ‘আর রাহীকুল মাখতূম’ গ্রন্থের সুন্দর ও সাবলীল প্রকাশ ভঙ্গি এবং লেখকের মোহনীয় শক্তি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের অন্তরে। পাঠকের কথা বিবেচনায় রেখে লেখক গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে গ্রন্থের কলেবর অস্বাভাবিক দীর্ঘ করেননি, আবার খুব বেশি সংক্ষিপ্তও করেননি। অথচ এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সীরাত গ্রন্থও বটে।
গ্রন্থ রচনায় লেখক ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহের ধারাবাহিক বর্ণনা করেছেন এবং সেগুলোর বর্ণনায় তিনি বিভিন্ন অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়ে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিন্যস্ত করেছেন। যেসব ঘটনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রন্থে মত পার্থক্য রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে লেখক সবকিছু পর্যালোচনা করে যেটি সঠিক মনে করেছেন সেটির উল্লেখ করেছেন। যেসব ক্ষেত্রে ভিন্ন মত পোষণকারীদের তথ্য লেখকের কাছে সঠিক মনে হয়নি সেসব ক্ষেত্রে তিনি যুক্তি প্রমাণের ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। আবার, তথ্যের উৎস হিসেবে গ্রন্থটিতে লেখক অসংখ্য গ্রন্থের নাম ও পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করেছেন।
গ্রন্থের শুরুতে লেখক রাসূল এর আবির্ভাবের পূর্বে পৃথিবীতে বিরাজমান বিভিন্ন অবস্থা ও পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন। আরবের ভৌগোলিক পরিচয়, তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন জাতির অবস্থান, আরবের নেতৃত্ব ও শাসন ব্যবস্থা, আরবদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মতবাদ, জাহেলী সমাজের চারিত্রিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে লেখক এ পৃথিবীতে রাসূল এর আবির্ভাবের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অতঃপর রাসূল এর পবিত্র ও সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবির এক অনবদ্য উপস্থাপনা গ্রন্থটিকে করেছে প্রাণবন্ত।
রাসূল এর দাওয়াতের বিভিন্ন কৌশল ও পর্যায় বর্ণনা হতে শুরু করে, বদর, ওহুদসহ বিভিন্ন যুদ্ধ, মক্কা বিজয়, বিদায় হজ্জ, রাসূল এর ওফাত পর্যন্ত সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনার পর রাসূল এর পরিবারের পরিচিতি, রাসূল এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও শারীরিক সৌন্দর্য বর্ণনার এক ব্যতিক্রমী উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে লেখক গ্রন্থটির পরিসমাপ্তি টানেন।
এই জীবনীগ্রন্থে মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। রিয়াদভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য কুরআন পাবলিশিং এন্ড প্রিন্টিং এর তত্ত্বাবধানে এর সম্পাদনা সম্পন্ন হয়। ১৯৯৪ বা ১৯৯৬ সালে তাওহীদ পাবলিকেশন্স বইটির বাংলা অনুবাদ বের করে। এ প্রকাশনী থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুল খালেক রাহমানী। বইটির নাম রাহীকুল মাখতূম এর অর্থ হল ছিপি আটা বোতল। লেখক এই জীবনীগ্রন্থের নামকরণ করেছেন পবিত্র কুরআনের সূরা মুতাফ্ফিফীনের আয়াত ২৫ থেকে। মূল বইটি প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠা হলেও বাংলা অনুবাদে ৫৫৯
বিশ্ব সীরাতুন্নাবী প্রতিযোগিতা
[সম্পাদনা]১৯৭৬ সালের মার্চ মাসে করাচীতে প্রথম বিশ্ব মুসলিম সীরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মক্কার রাবেতায়ে আলাম আল ইসলামি এ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে বিশ্বের সকল লেখকের প্রতি এক অভিনব আহবান জানানো হয়। রাবেতার পক্ষ থেকে প্রচারিত এই আহবানে বিশ্বের জীবন্ত ভাষাসমূহে রসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের জীবনী রচনার কথা বলা হয়। এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের প্রথম পাঁচজনকে পুরস্কার দেয়া হবে বলেও জানানো হয়। পুরস্কারের পরিমাণ যথাক্রমে ৫০, ৪০, ৩০, ২০ ও ১০ হাজার সৌদি রিয়াল। রাবেতায়ে আলামে ইসলামির সরকারি মুখপত্র আখতার আল আলামুল ইসলামি পত্রিকার কয়েকটি সংখ্যায় প্রতিযোগিতার ঘোষণা প্রকাশ করা হয়। রাবেতার ঘোষণার পর ১১৮২টি পাণ্ডুলিপি জমা পড়ে। চূড়ান্ত বাছাইয়ের জন্য সুনির্বাচিত একটি কমিটির ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়। এ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী শেখ হাসান ইবনে আবদুল্লাহ আল শেখ। কমিটির সদস্যরা ছিলেন জেদ্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়ত বিভাগের শিক্ষক সীরাতুন্নবী ও ইসলামের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ। তাদের নাম নিম্নরূপ, ডক্টর ইব্রাহীম আলী সউত, ডক্টর আবদুর রহমান ফাহমি মোহাম্মদ, ডক্টর মোহাম্মদ সাঈদ সিদ্দিকী, ডক্টর ফিকরি আহমদ ওকায, ডক্টর আহমদ সাইয়েদ দারাজ, ডক্টর ফায়েক বকর সওয়াফ, ডক্টর শাকের মাহমুদ আবদুল মোনয়েম, ডক্টর আবদুল ফাত্তাহ মনসুর। এ কমিটির বিশেষজ্ঞরা পর্যায়ক্রমিক বাছাইয়ের পর এই ৫টি পান্ডুলিপির্ জন্য পাঁচজনকে পুরস্কার পাওয়ার উপযুক্ত ঘোষণা করেন। ১. আর রাহীকুল মাখতুম, (আরবি) ছফিউর রহমান মোবারকপুরী, জামেয়া সালাফিয়া, বেনারস, ভারত-প্রথম ২. খাতামুন নবীইঈন (ইংরেজি) ডক্টর মাজেদ আলী খান, জামেয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া-দিল্লী, ভারত-দ্বিতীয়, ৩. পয়গাম্বরে আযম ওয়া আখের (উর্দু) ডক্টর নাসির আহমদ নাসের, ভাইস চ্যান্সেলর জামেয়া ইসলামিয়া, ভাওয়ালপুর, পাকিস্তান-তৃতীয়, ৪. মোনতাকাউন নকুল ফী সিরাতে আযামির রসূল (আরবি) শেখ হামেদ মাহমুদ ইবনে মোহাম্মদ মনসুর লেমুদ, জিজাহ মিসর-চতুর্থ, ৫. সীরাতুন নবীইল হাদীইর রহমত (আরবি) ওস্তাদ আবদুস সালাম হাসেম হাফেজ, মদিনা মুনাওয়ারা সউদী আরব-পঞ্চম।[৩][৪]
প্রকাশনা এবং অনুবাদ
[সম্পাদনা]‘আর রাহীকুল মাখতূম’ গ্রন্থটির বিশ্বব্যাপী আলোচিত ও প্রশংসিত হওয়া এবং অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তার কথা বিবেচনা করে মূল লেখকের তত্ত্বাবধানে ১৯৯৬ সালে বইটির বাংলা অনুবাদ বের করে 'তাওহীদ পাবলিকেশন্স'।
দারুস সালাম পাবলিকেশন্স লেখকের সম্মতিক্রমে বইটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে। [১] এই জীবনীগ্রন্হের সকল ভাষার সংষ্করণ লেখকের উত্তরাধিকার কর্তৃক সংরক্ষিত।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- সীরাতুল মুস্তফা — মুহাম্মদ ইদ্রিস কান্ধলভি
- নবীয়ে রহমত — আবুল হাসান আলী নদভী
- সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া — মুহাম্মদ শফী উসমানী
- যে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা — আশরাফ আলী থানভী
- ফিকহুস সিরাহ — মুহাম্মদ সাঈদ রামাদান আল-বুতি
- সীরাতে ইবনে হিশাম — আবূ মুহাম্মদ আব্দুল মালিক ইবনে হিশাম
- সীরাতুন নবী — শিবলী নোমানী ও সুলাইমান নদভী
- সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) – মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "দারুস সালাম পাবলিকেশন্স ওয়েবসাইট"। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৩।
- ↑ "আর রাহীকুল মাখতূম"। দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ http://muslimwiki.com/mw/index.php/1976
- ↑ "আর রাহীকুল মাখতূম | Shibir Online Library"। Shibir Online Library (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০৫-০৮। ২০১৬-১২-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-০১।