ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ
ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ | |
---|---|
বাংলাদেশের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ৬ সেপ্টেম্বর ২০০২ – ১২ ফেব্রুয়ারী ২০০৯ | |
প্রধানমন্ত্রী | খালেদা জিয়া ফজলুল হক (বিচারপতি)(তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে) ফখরুদ্দীন আহমদ (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে) শেখ হাসিনা |
পূর্বসূরী | জমিরুদ্দিন সরকার |
উত্তরসূরী | জিল্লুর রহমান |
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা | |
কাজের মেয়াদ ২৯ অক্টোবর ২০০৬ – ১১ জানুয়ারি ২০০৭ | |
পূর্বসূরী | খালেদা জিয়া (প্রধানমন্ত্রী হিসেবে) |
উত্তরসূরী | ফজলুল হক (বিচারপতি) |
৫ম চেয়ারম্যান বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন | |
কাজের মেয়াদ ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ – ৩১ জানুয়ারি ১৯৯৩ | |
পূর্বসূরী | এস. এম. আল হোসেনী |
উত্তরসূরী | প্রফেসর ড. মো. মুস্তফা চৌধুরী |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ঢাকা জেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলা, বাংলাদেশ) | ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১
মৃত্যু | ১০ ডিসেম্বর ২০১২ ব্যাংকক, থাইল্যান্ড | (বয়স ৮১)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
ধর্ম | ইসলাম |
অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ (১লা ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ - ১০ই ডিসেম্বর ২০১২) ছিলেন বাংলাদেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত হবার জন্য শপথ গ্রহণ করেন। পরে জরুরী আইন জারি করে ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি এই পদ ছেড়ে দেন। এই পদে তার স্থলাভিষিক্ত হন বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের কার্যকাল সমাপ্ত হয়।
জন্ম ও পরিবার
[সম্পাদনা]ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলার নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলভি মুহাম্মদ ইব্রাহিম। অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের স্ত্রী অধ্যাপিকা আনোয়ারা বেগম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা, যিনি ঐ বিভাগের প্রধান ও শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ এবং আনোয়ারা বেগমের এক মেয়ে ও ইমতিয়াজ আহমেদ বাবু-সহ দুই ছেলে রয়েছে। আনোয়ারা বেগম অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসাবে কর্মরত ছিলেন।[১]
শিক্ষা
[সম্পাদনা]১৯৪৮ সালে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ মুন্সীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন এবং ১৯৫০ সালে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫০ ও ১৯৫২ সালে যথাক্রমে বি.এস.সি ও এম.এস.সি পাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকোন্সিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে যথাক্রমে এম.এস. ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।[২]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৪ সালে সহযোগী অধ্যাপক ও ১৯৭৩ সালে অধ্যাপক হন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন। অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ১৯৬৮-৬৯ ও ১৯৭৬-৭৯-এ দুই মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ছিলেন। তিনি ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ নাগাদ পর পর দুই বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন নির্বাচিত হন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল এবং বোর্ড অফ এডভান্স স্টাডিস এর সদস্য ছিলেন।
এছাড়াও অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধ্যায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তখন তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১-৯৩ সময়ে তিনি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ও ১৯৯৫-৯৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেবার আগ পর্যন্ত তিনি স্টেট ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪৯তম সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন। সেখানে তিনি প্যালেস্টাইন শরণার্থী এবং বিশ্ব-বাণিজ্য ও উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত। তার মধ্যে অন্যতম হল ফেডারেশন অফ ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সম্মিলিত শিক্ষক আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন।
রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ
[সম্পাদনা]ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ২০০২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ-এর রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি এই পদ ত্যাগ করেন এবং তার পরদিন বাংলাদেশ ব্যাংক-এর সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেন। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ পর্যন্ত ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
গবেষণা
[সম্পাদনা]এ যাবৎ অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের দেশ ও বিদেশে মোট প্রকাশনার সংখ্যা ১২৫ টি। তিনি ধান গাছের উপর লবণাক্ততার প্রভাব ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে উচ্চ ফলনশীল ধান নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান মাটিতে জমা করে রাখা এবং তা প্রয়োজন মত উদ্ভিদকে সরবরাহ করার পদ্ধতির উপর সফল গবেষণা চালান। এই কাজের ফলে যুক্তরাজ্যে তিনি ব্যাপক সাড়া জাগান। অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তার শিক্ষকতা জীবনে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে যুক্তরাজ্যের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৪ সালে বার্লিনে জার্মান টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানের গ্যাটিঞ্জেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছিলেন।
পুরস্কার
[সম্পাদনা]তিনি ইব্রাহিম মেমোরিয়াল স্বর্ণ পদক (১৯৮৭-৮৮), শ্রীজ্ঞান অতীশ দিপঙ্কর স্বর্ণ পদক (১৯৯০), ক্রেস্ট (১৯৯১) এবং শিক্ষার জন্য একুশে পদক (১৯৯৫) লাভ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বিজ্ঞানী সমিতি, ভারতীয় মৃত্তিকা বিজ্ঞানী সমিতি, বাংলাদেশ মৃত্তিকা বিজ্ঞান সমিতি এবং এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য ছিলেন।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]২৮ অক্টোবর ২০১২ সালের তার একটি অতিরিক্ত হার্ট সার্জারি করানো হয়।[৩] কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা কিছুটা উন্নতির লাইফ সাপোর্টে এক মাসের বেশি অতিবাহিত করেন। ১০ ডিসেম্বর ২০১২ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বামরুনগ্রাদ আন্তর্জাতিক হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৪][৫]
তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া, রাষ্ট্রপতির সাবেক উপদেষ্টা মোখলেসুর রহমানসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ শোক প্রকাশ করেন। ১২ ডিসেম্বর তার মৃতদেহ ব্যাংকক থেকে ঢাকায় আনা হয়।
তার চারটি নামজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি ১১ ডিসেম্বর ব্যাংককে, দ্বিতীয়টি ১৩ ডিসেম্বর তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জে, তৃতীয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে ও সর্বশেষটি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে বনানীর কবরস্থানে দাফন করা হয়।[৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ কালের কণ্ঠ, মুদ্রিত সংস্করণ, ৯ জানুয়ারী, ২০১২ইং, পৃষ্ঠা-শেষের পাতা
- ↑ "President's Life Sketch"। mofa.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। Ministry of Foreign Affairs। ১০ আগস্ট ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ"। মুন্সীগঞ্জ.কম।
- ↑ "সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আর নেই"। বিডিনিউজ.কম। ১১ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের ইন্তেকাল"। প্রথম আলো। ২০১৫-০৮-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-০৫।
- ↑ "সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে বনানীতে দাফন"। আমার দেশ। ২০১২-১২-১৩। ২০১৫-০২-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-০৫।
রাজনৈতিক দপ্তর | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী জমিরুদ্দিন সরকার |
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ২০০৪–২০০৯ |
উত্তরসূরী জিল্লুর রহমান |
পূর্বসূরী খালেদা জিয়া |
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী Acting ২০০৬–২০০৭ |
উত্তরসূরী ফজলুল হক Acting |
পূর্বসূরী মোরশেদ খান |
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ২০০৬–২০০৭ |
উত্তরসূরী ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী |
- ১৯৩১-এ জন্ম
- ২০১২-এ মৃত্যু
- বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
- বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ
- বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান
- মুন্সীগঞ্জ জেলার ব্যক্তি
- শিক্ষা ও গবেষণায় একুশে পদক বিজয়ী
- বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান
- বনানী কবরস্থানে সমাধিস্থ
- শাহাবুদ্দিন আহমেদের মন্ত্রিসভার সদস্য
- বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান
- বিক্রমপুরের ব্যক্তি
- বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তি
- বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
- বাংলাদেশের খাদ্যমন্ত্রী