ইসলাম ও সঙ্গীত
ইসলাম ও সঙ্গীতের মাঝে সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলমান একটি জটিল ও বিতর্কিত বিষয়।[১][২][৩][৪][৫] অনেক মুসলিম বিশ্বাস করেন যে, কুরআন ও সুন্নাহ সঙ্গীত (বাদ্যযন্ত্র ও গান গাওয়া) নিষিদ্ধ করে;[৬][৭] তবে অন্যান্য মুসলিমরা এই বিষয়ে একমত নন এবং বিশ্বাস করেন যে, সঙ্গীতের কিছু ধরন অনুমোদিত।[২][৮][৯] বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও, বিভিন্ন সময় ও ইসলামী বিশ্বের স্থানে সঙ্গীত জনপ্রিয়তা ও সমৃদ্ধি লাভ করে। যা বিবাচন এড়াতে প্রায়ই প্রাসাদে ও ব্যক্তিগত বাড়িতে সঙ্গীত পরিবেশন করা হতো।[১০]
মুসলিম বিশ্বে অনেকাংশে ভক্তিমূলক/ধর্মীয় সঙ্গীত ও ধর্মনিরপেক্ষ সঙ্গীত ভালোভাবে বিকশিত ও জনপ্রিয় হয়। যাইহোক, গান গাওয়া অনুমোদিত, অথবা কিছু যন্ত্র যেমন ঢোল অনুমোদিত, অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি এর শ্রোতাদের প্রলোভনে না নিয়ে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত অনুমোদিত। তবে নিজেদের সিদ্ধান্ত বিবেচনায় এটি পরিবর্তন হতে পারে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে, নিজেদের "কর্ম ও বিশ্বাসকে একত্রিত করার চেষ্টায় মগ্ন একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্মের মুসলিম সঙ্গীতজ্ঞের আবির্ভাবে" বিতর্কটি "অতিরিক্ত গুরুত্ব" পায়।[১১]
ঐতিহাসিকভাবে ইসলামি স্বর্ণযুগে ইসলামি শিল্প ও সঙ্গীতের বিকাশ ঘটে।[১২][১৩][১৪]
কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিভঙ্গি
[সম্পাদনা]গান-বাজনার প্রতি আগ্রহী ব্যক্তির শাস্তি খুবই ভয়াবহ। এসব কাজের ভালো-মন্দ বিবেচনা করা হয় চোখ ও কানের মাধ্যমে। তাই আল্লাহ তাআলা তার জন্য এমন শাস্তি নির্ধারণ করেছেন, যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক ও অপমানজনক।[১৫]
গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন
[সম্পাদনা]মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
বাংলা অনুবাদ:
একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।
— সূরা লোকমান, আয়াত : ৬
উক্ত আয়াতের শানে নুযূলে বলা হয়েছে যে,
নযর ইবনে হারিস বিদেশ থেকে একটি গায়িকা বাঁদী খরিদ করে এনে তাকে গান-বাজনায় নিয়োজিত করল। কেউ কুরআন শ্রবণের ইচ্ছা করলে তাকে গান শোনানোর জন্য সে গায়িকাকে আদেশ করত এবং বলত মুহাম্মদ তোমাদেরকে কুরআন শুনিয়ে নামায, রোযা এবং ধর্মের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কথা বলে। এতে শুধু কষ্টই কষ্ট। তার চেয়ে বরং গান শোন এবং জীবনকে উপভোগ কর।
— মাআরিফুল কুরআন ৭/৪
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াত নাযিল করেন।[১৬][১৭][১৮]বেশীর ভাগ তাফসীরকারকগণ এই আয়াতে ব্যবহৃত আরবী শব্দ লাহওয়াল হাদীস বলতে গানকে বুঝিয়েছেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে উক্ত আয়াতের ‘লাহওয়াল হাদীস’-এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তা হল গান।’আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. একই কথা বলেন। তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে যুবাইর থেকেও অনুরূপ মত বর্ণিত হয়েছে। বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রাহ. বলেন, উক্ত আয়াত গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যা বান্দাকে কুরআন থেকে গাফেল করে দেয়।
— তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৪১, আল-তাবারী ২১/৪০
ইবলিস- শয়তান আদম সন্তানকে ধোঁকা দেওয়ার আরজী পেশ করলে আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে বললেন,
وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ
বাংলা অনুবাদ:
তোর কন্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারিস প্ররোচিত কর।
— সূরা ইসরা ১৭: ৬৪ আয়াত
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন,
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেসব বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তার মধ্যে গান-বাদ্যই সেরা। এজন্যই একে ইবলিসের আওয়াজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।[১৯]
— ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৯
গান-বাজনা সম্পর্কিত অপর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেনঃ
وَأَنتُمْ سَامِدُونَ
বাংলা অনুবাদঃ
তোমরা ক্রীড়া-কৌতুক করছো বা তোমরা কি এ কথার (কুরআন মাজীদ-এর) উপর আশ্চর্য্যান্বিত হচ্ছো ও হাস্য করছো এবং ক্রন্দন করছো না, অথচ তোমরা সঙ্গীত বা গান-বাজনা করছো ?
— সূরা আন-নাজম, আয়াতঃ ৫৩:৬১
গান বাজনা সম্পর্কে হাদিস
[সম্পাদনা]ইসলামের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন,
عَنْ أَبِيْ مَالِكِ الأَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ.
বাংলা অনুবাদ:[২০]
‘অবশ্যই অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা যেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’।
— সহীহ বুখারী হা/৫৫৯০
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى حَرَّمَ الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ والكُوْبَةَ.
বাংলা অনুবাদ:[২১]
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মদ, জুয়া ও সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন’।
— বায়হাক্বী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৫০৩ ; বাংলা ৮ম খন্ড হা/৪৩০৪
আবু উমামাহ (রা.) বলেন, মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন,
عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ تَبِيْعُوا الْقَيْنَاتِ وَلاَ تَشْتَرُوْهُنَّ وَلاَ تُعَلِّمُوْهُنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ.
তোমরা গায়িকা নর্তকীদের বিক্রয় কর না, তাদের ক্রয় কর না, তাদের গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র শিখিয়ে দিয়ো না, তাদের উপার্জন হারাম।
— ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/২৭৮০
নাফে‘ (রা.) বলেন,
عَنْ نَافِعٍ قَالَ سَمِعَ ابْنُ عُمَرَ مِزْمَارًا قَالَ فَوَضَعَ إِصْبَعَيْهِ عَلَى أُذُنَيْهِ وَنَأَى عَنْ الطَّرِيقِ وَقَالَ لِي يَا نَافِعُ هَلْ تَسْمَعُ شَيْئًا قَالَ فَقُلْتُ لاَ قَالَ فَرَفَعَ إِصْبَعَيْهِ مِنْ أُذُنَيْهِ وَقَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعَ مِثْلَ هَذَا فَصَنَعَ مِثْلَ هَذَا.
একদা ইবনু ওমর (রা.) বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনতে পেলে তিনি তাঁর দুই কানে দুই আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গেলেন। তারপর তিনি আমাকে বললেন, নাফে‘ তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছ কি? আমি বললাম, না। তিনি তার দুই আঙ্গুল দুই কান হতে বের করে বললেন, আমি একদা রাসূল (সা.)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনে কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গিয়েছিলেন এবং আমাকে এভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন যেভাবে আজ তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম।
— ছহীহ আবূদাঊদ হা/ ৪৯২৪, সনদ ছহীহ
আবু মালিক আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন,
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا مَعْنُ بْنُ عِيسَى، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ صَالِحٍ، عَنْ حَاتِمِ بْنِ حُرَيْثٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَبِي مَرْيَمَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ غَنْمٍ الأَشْعَرِيِّ، عَنْ أَبِي مَالِكٍ الأَشْعَرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " لَيَشْرَبَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي الْخَمْرَ يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا يُعْزَفُ عَلَى رُءُوسِهِمْ بِالْمَعَازِفِ وَالْمُغَنِّيَاتِ يَخْسِفُ اللَّهُ بِهِمُ الأَرْضَ وَيَجْعَلُ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ
বাংলা অনুবাদ:[২৬]
আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমণীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জমিনে ধসিয়ে দিবেন। আর তাদের কিছুকে বানর ও শূকর বানিয়ে দিবেন।
— ইবন মাজাহ হা/৪০২০, সহিহ ইবনে হিব্বান হা/৬৭৫৮, আবূ দাউদ হা/৩৬৮৮, আহমাদ হা/২২৩৯৩
দৃষ্টিপাত
[সম্পাদনা]কঠোরভাবে বলতে গেলে, 'ইসলামি ধর্মীয় সঙ্গীত' শব্দগুচ্ছটি পরিভাষায় একটি বৈপরীত্য উপস্থাপন করে। গোঁড়াপন্থী সুন্নি ও শিয়া ইসলামের অনুশীলন মুসলিম সংস্কৃতির মধ্যে 'সঙ্গীত' হিসেবে স্বীকৃত কোনো কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয়। পবিত্র কুরআনের সুরেলা তিলাওয়াত এবং নামাজের আহ্বান (আযান) ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু, কিন্তু সঙ্গীতের জন্য [ব্যবহৃত] সাধারণ পরিভাষাগুলো কখনোই তাদের জন্য প্রয়োগ করা হয়নি। এর পরিবর্তে বিশেষ পদবী ব্যবহার করা হয়েছে। যাইহোক, বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ঘরানা রয়েছে যেখানে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়, সাধারণত গোঁড়াপন্থী ক্ষেত্রের বাইরে বিভিন্ন সরকারি ও ব্যক্তিগত সমাবেশে সঞ্চালিত হয়।
— একহার্ট নয়বাউয়ের, ভেরোনিকা ডাবলডে, ইসলামিক রিলিজিয়াস মিউজিক [ইসলামি ধর্মীয় সঙ্গীত], নিউ গ্রোভ ডিকশনারি অফ মিউজিক অনলাইন[২৭]
সঙ্গীত ও ইসলামি আইনের ব্যাখ্যাসমূহ
[সম্পাদনা]ইসলামে সঙ্গীত অনুমোদিত নাকি নিষিদ্ধ এই প্রশ্নটি নিয়ে পণ্ডিতদের মাঝে বিতর্ক রয়েছে।[১১] কুরআনে বিশেষভাবে সঙ্গীতের কথা উল্লেখ করা হয় নি। তবে কিছু পণ্ডিত কুরআনে বর্ণিত "অলস কথা" বাক্যাংশটির ব্যাখ্যায় সঙ্গীতকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যেটিকে কুরআনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।[১১]
বেশ কয়েকটি হাদিসে সঙ্গীতকে প্রতিকূলভাবে দেখা যায়, যার একটি উদাহরণ হলো: "গান গাওয়া হৃদয়ে কপটতাকে ফুটিয়ে তোলে যেমন করে বৃষ্টিতে গাছপালা অঙ্কুরিত হয়।"[১১] কিন্তু এসব বর্ণনার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে: "আমার উম্মতদের মধ্যে এমন কিছু লোক থাকবে যাঁরা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে অনুমোদিত মনে করবে।"[২৮] তবে অনেকে এই হাদিসটির নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, বিশেষ করে ইবনে হাযম আল-যাহরি।[২৯]
জ্যাকব এম. ল্যান্ডাউ নামক এক পণ্ডিত সঙ্গীত হারাম কি-না তা নিয়ে বিবাদমান "চারটি প্রধান দল" সনাক্ত করেছেন:
- যেকোনো প্রকার সঙ্গীতের অভিব্যক্তির বিরোধিতাকারী আপোষহীন বিশুদ্ধতাবাদীরা;[৩০]
- শুধুমাত্র কুরআন ও প্রার্থনার জন্য আহ্বান বা আযানকে স্বীকৃতি প্রদানকারী ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ;[৩০]
- সঙ্গীতের পক্ষপাতী পণ্ডিত ও সঙ্গীতজ্ঞরা, যাঁরা বিশ্বাস করেন যে ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মীয় সঙ্গীতের মধ্যে কোনো সঙ্গীতগত পার্থক্য নেই;[৩০] এবং
- গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক সংঘ, যাঁদের নিকট সঙ্গীত ও নৃত্য হচ্ছে ঈশ্বরের সাথে ঐক্যের একটি মাধ্যম।[৩০]
যে দলগুলো কুরআন ও ইসলামের ঐতিহ্যে "কঠোরভাবে" সঙ্গীত নিষিদ্ধ বলে বিশ্বাস করেন তাঁদের মধ্যে রয়েছে সালাফি,[৩১] ওয়াহাবি ও দেওবন্দি সম্প্রদায়।[১১]
ইসলামি আইন অনুসারে "যা ভালো তাতে আদেশ এবং যা খারাপ তাতে নিষেধ"-এর ইসলামি বিদ্যাবত্তার জরিপে, ঐতিহাসিক মাইকেল কুক খুঁজে পেয়েছেন যে
"[জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, পন্ডিতদের কথাবার্তায় খারাপ কাজে নিষেধের মধ্যে] আপত্তিকর বস্তুর উপর আক্রমণ একটি সর্বব্যাপী প্রকরণ ... উদাহরণস্বরূপ, দাবা-বোর্ড বিলোপ করা, কথিত পবিত্র গাছ কেটে ফেলা এবং আলংকারিক প্রতিকৃতি ধ্বংস বা বিকৃত করা [ইত্যাদি খারাপ কাজে বাঁধা দেওয়ার শামিল] ... তবে [পন্ডিতদের কথায় খারাপ কাজ] বারবার উল্লিখিত টার্গেটগুলো হলো মদ ও বাদ্যযন্ত্র [যেগুলোতে নিষেধ করা প্রয়োজন]। (কিছু ক্ষেত্রে খঞ্জনীর ব্যবহার একটি ব্যতিক্রম ছিল যা বিবাহ ঘোষণা করতে ব্যবহৃত হত)।"[৩২]
সৌদি আরবে মুহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠ-মুসলিম রাষ্ট্রসমূহে সঙ্গীতের নিষেধাজ্ঞা বিরল বা অস্তিত্বহীন, কিন্তু প্রায়শই সেসব জায়গায় সঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেখানে ইসলামপন্থী বিদ্রোহীরা ক্ষমতা লাভ করেছে – তালেবান শাসনাধীন আফগানিস্তানে;[৩৩] এবং অন্ততপক্ষে জানুয়ারি ২০১৩ পর্যন্ত, "মালির দুই-তৃতীয়াংশের বেশির অঞ্চল জুড়ে... ইসলামি বিদ্রোহী গোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত" এলাকায়।[৩৪]
মতের ভিন্নতা
[সম্পাদনা]সঙ্গীতের উপর নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে কী কী ব্যতিক্রম থাকতে পারে তা নিয়ে মোটামুটি বিস্তৃত মতপার্থক্য রয়েছে। যেগুল অনুমোদিত তার উদাহরণের মধ্যে রয়েছে: কণ্ঠসঙ্গীত কিন্তু যন্ত্র নয়; কণ্ঠসঙ্গীত কিন্তু কেবলমাত্র যদি গায়ক ও শ্রোতা একই লিঙ্গ হয়; কণ্ঠসঙ্গীত ও ঢোল, অথবা কণ্ঠ ও ঐতিহ্যবাহী একপিঠে ড্রাম ও খঞ্জনী, কিন্তু অন্য কোনো যন্ত্র নয়; এমন যেকোনো ধরনের সঙ্গীত যদি তা আবেগপ্রবণ, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ অথবা ইসলাম লঙ্ঘনকারী গানের কথা না হয়।
- কিছু মুসলিম বিশ্বাস করেন যে বাদ্যযন্ত্র হারাম এবং কেবলমাত্র কণ্ঠসঙ্গীত অনুমোদিত, তবে গায়ককে অবশ্যই শ্রোতাদের মতো একই লিঙ্গের হতে হবে।[৩৫]
- বাদ্যযন্ত্রবিহীন সঙ্গীত (শ্রোতা যেই লিঙ্গেরই হোক না কেন) ইসলামে ভক্তিমূলক গানের একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের দিকে পরিচালিত করেছে।[১১] গান গাওয়া হালাল হওয়ার সমর্থনে, আইনবিদ আবু বকর ইবনে আল-আরাবি বলেন, "গান গাওয়ার নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কোনো সঠিক হাদীস পাওয়া যায় নি", অন্যদিকে ইবনে হাযম বলেন, "এই বিষয়ে যা কিছু বলা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।"[৩৬]
- কিছু মুসলিম আছেন যাঁরা বিশ্বাস করেন ঢোল অনুমোদিত, কিন্তু অন্য কোনো বাদ্যযন্ত্র নয়।[১১]
- জাকির নায়েক মনে করেন দুটি ছাড়া বাদ বাকি সব বাদ্যযন্ত্র হারাম - দাফ (একটি ঐতিহ্যবাহী একপিঠে ঢোল) এবং খঞ্জনী, যার কথা হাদিসেও উল্লেখ করা হয়েছে।[৩৭]
- সুন্নি ইসলামের একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং শিয়াদের অন্য একটি গোষ্ঠীর মতে, অনুষ্ঠান ও উৎসবগুলোতে মহিলাদের জন্য দাফ বাজিয়ে সঙ্গীতের নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যেতে পারে৷[৩৮] এই ব্যতিক্রমটি একটি সুপরিচিত হাদিস থেকে এসেছে যেখানে দুটি ছোট মেয়ে একজন মহিলার কাছে গান গাইছিল এবং আবু বকর এতে বাঁধা দিতে চাইলে ইসলামের পয়গম্বর মুহাম্মদ তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন, এই বলে যে, "ওদের ছেড়ে দাও আবু বকর, কারণ প্রতিটি জাতির একটি ঈদ (অর্থাৎ উৎসব) রয়েছে এবং এই দিনটি হলো আমাদের ঈদ।"[৩৯]
- তবুও অন্যান্য মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে সকল বাদ্যযন্ত্র অনুমোদিত, এই শর্তে যে সেগুলো গ্রহণযোগ্য বা হালাল জাতের সঙ্গীতের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং যৌন উত্তেজক বা অনৈসলামিক না হয়।[৩৬] তাই ভক্তিমূলক গানে যন্ত্রসঙ্গীতের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, বিশেষ করে শিয়া ও সুফি ঐতিহ্যে।[৪০] অনেক সুফি তরিকায় উপাসনার অংশ হিসাবে সঙ্গীতের ব্যবহার করে।
- আইরিশ টাইমসের মতে, "মুসলিমদের একটি বৃহৎ অংশ" আধুনিক পণ্ডিত যেমন ইউসুফ কারযাভীর গৃহীত মত অনুসরণ করে যে সঙ্গীত নিষিদ্ধ "কেবলমাত্র যদি এটি মুমিনকে এমন কার্যকলাপের দিকে নিয়ে যায় যা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যেমন মদ্যপান ও অবৈধ যৌনতা"।[১১]
ইমাম আল-গাজ্জালি বেশ কয়েকটি হাদিস বর্ণনা করেন এবং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে সঙ্গীত নিজে থেকেই অনুমোদিত, তিনি বলেছেন: "এই সকল আহাদিস আল-বুখারি দ্বারা বর্ণিত এবং গান করা ও বাজানো হারাম নয়।" তিনি খিযিরের একটি বর্ণনাও উল্লেখ করেছেন, যেখানে সঙ্গীতের প্রতি অনুকূল মতামত প্রকাশ করা হয়েছে।[৪১][৩৫]
হুসেইন রশিদের মতে, "শায়েখ আল-আজহার মাহমুদ শালতুত, শায়েখ ইউসুফ কারাযাভী এবং আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনীসহ সমসাময়িক পণ্ডিতরা সকলেই আইনি আদেশ জারি করেছেন যে অডিও আর্টগুলো [সঙ্গীতসহ] যা মানুষকে ঈমানের বিরুদ্ধে যেতে উৎসাহিত করে না তা অনুমোদিত।"[৪২] উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা যাঁরা সঙ্গীতকে হালাল বলে বিশ্বাস করেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আবু বকর ইবনে আল-আরাবি, ইবনে আল-কায়সারানি, ইবনে সিনা, আবু হামিদ আল-গাজ্জালি, আবদুল গনি আল-নাবুলসি, রুমি, ইবনে রুশদ এবং ইবনে হাযম।
ইউসুফ কারযাভী তাঁর বই "দ্য লফুল এন্ড দ্য প্রোহাইবিটেড ইন ইসলাম"-এ বলেছেন, গান/গাওয়া ততক্ষণ পর্যন্ত হারাম নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না:
- গানের বিষয়বস্তু "ইসলামের শিক্ষার বিরুদ্ধে" চলে যায়, যেমন ওয়াইনের প্রশংসা করা;
- গান গাওয়ার "পদ্ধতি"টি হারাম হয়, যেমন "উদ্দেশ্যমূলক যৌন চালচলনের সঙ্গে থাকা";
- গানটি "বিনোদনের সঙ্গে অত্যধিক সম্পৃক্ততার" দিকে পরিচালিত করে, যেমন অযথা সময় নষ্ট করা যা ধর্মীয় কাজে ব্যয় করা উচিত;
- গানটি "কারো আবেগকে জাগিয়ে তোলে, তাঁকে পাপের দিকে পরিচালিত, পশু প্রবৃত্তিকে উত্তেজিত করে এবং আধ্যাত্মিকতাকে নিস্তেজ করে";
- গানটি করা হয় "হারাম কার্যকলাপের সাথে - উদাহরণস্বরূপ, একটি মদ্যপান পার্টিতে"।[৩৬]
শিয়া ব্যাখ্যা ও ইরান
[সম্পাদনা]আহাদিসের উপর ভিত্তি করে, অসংখ্য ইরানি গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ; সাদিক হুসাইনি শিরাজি, মোহাম্মদ-রেজা গোলপায়গনি, লুতফুল্লাহ শফি গোলপায়গনি, মোহাম্মদ-তকি মেসবাহ-ইয়াজদি, আহমদ জান্নাতি এবং অন্যান্যরা রায় দিয়েছেন যে সকল সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো হারাম, উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন।[৪৩][৪৪][৪৫] গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনীও একই ধরনের ধর্মীয় অবস্থানে ছিলেন, ২৩ জুলাই ১৯৭৯ তারিখে তিনি বলেছিলেন: "আপনি যদি আপনার দেশের স্বাধীনতা চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সঙ্গীতকে দমন করতে হবে এবং একে সেকেলে বলা হতে ভয় পাবেন না। সঙ্গীত একটি জাতির সঙ্গে ও তারুণ্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।"[৪৬] ইরানি বিপ্লবের সময়, খোমেইনী বলেছিলেন: "...সঙ্গীত হলো একটি মাদকের মতো, যে ব্যক্তি এই অভ্যাসটিকে রপ্ত করে সে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে নিজেকে আর নিয়োজিত করতে পারে না। আমাদের অবশ্যই এটি সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে।"[৪৭] ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত, বেতার ও টেলিভিশনে শক্তিশালী সামরিক শৈলীতে পরিবেশিত নৈমিত্তিক "বিপ্লবী গান" ব্যতীত সকল সঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।[৪৮] খোমেইনীর মৃত্যুর পর, সংস্কারবাদী রাফসানজানি ও খাতামি প্রশাসন ধীরে ধীরে সঙ্গীতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ২০১৪ সালে ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনেয়ী সালে পশ্চিমা সঙ্গীতের জন্য তাঁর প্রশংসা ব্যক্ত করেছেন,[৪৯] এবং আজকাল সরকার ইরানে সঙ্গীতকে সরকারিভাবে অনুমতি দেওয়া হয় যতক্ষণ না পর্যন্ত এটি জাতে ইরানি হয় -- ইরানি লোকসংগীত, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং পপ সঙ্গীত অনুমোদিত।[৫০]
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সন্দেহ
[সম্পাদনা]অন্তত কিছু সূত্র মতে সঙ্গীতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি শাস্ত্রের কঠোর ব্যাখ্যার উপর নয় বরং "ফ্যাশনেবল" ধর্মনিরপেক্ষ সঙ্গীতের উপর যা "কামোত্তেজক নৃত্য এবং মদ্যপানের সঙ্গে" পরিবেশন হয়ে থাকে (জ্যাকব এম. ল্যান্ডাউ),[৫১] অথবা নিষেধাজ্ঞা সরাসরি "সঙ্গীতের উপর নয়, [বরং] সঙ্গীতের সঙ্গে আবদ্ধ অবৈধ আচরণের" উপর (হুসাইন রশিদ)।[৪২] রশিদের মতে, কুরআনে "সঙ্গীতের সরাসরি কোনো উল্লেখ নেই", এবং হাদিসে এ বিষয়ে "সাংঘর্ষিক ইঙ্গিত" রয়েছে;[৪২] ল্যান্ডাউ বলেছেন যে সঙ্গীতের বিরোধিতাকারী পণ্ডিতরা "কুরআন ও হাদিসের কয়েকটি অস্পষ্ট উদ্দীপকের জোরপূর্বক ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করে আছেন।"[৫১]
ইসলামি সঙ্গীত
[সম্পাদনা]ইসলামি পন্ডিতদের দ্বারা সঙ্গীতের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, মুসলিম বিশ্বের অনেক স্থানে ভক্তিমূলক/ধর্মীয় সঙ্গীত ও ধর্মনিরপেক্ষ সঙ্গীত ভালোভাবে বিকশিত ও জনপ্রিয় হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে, ইসলামি স্বর্ণযুগে ইসলামি শিল্প ও সঙ্গীতের বিকাশ ঘটেছিল।[১২][১৩][১৪] ধর্মনিরপেক্ষ ও লোকসঙ্গীত শৈলী মধ্যপ্রাচ্যে আরবি সঙ্গীত, ইরানি সঙ্গীত, তুর্কি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও মিশরীয় সঙ্গীত এবং উত্তর আফ্রিকায় আলজেরীয় ও মরক্কি সঙ্গীতের মধ্যে পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় স্বতন্ত্র সঙ্গীত শৈলী রয়েছে – আফগান, পাকিস্তানি, বাংলাদেশি, মালদ্বীপীয় সঙ্গীত।
নাশিদ হলো এক প্রকার মুসলিম ভক্তিমূলক আবৃত্তি সঙ্গীত যা আজকালকার কিছু মুসলিম কোনো ধরনের বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই অথবা সম্ভবত তাল দিয়ে বিভিন্ন সুরে আবৃত্তি করে থাকে।
সার্বজনীন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত সঙ্গীত:
- তাজিয়া (শিয়া) – ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের চিত্রিত একটি আবেগময় নাট্যসঙ্গীত, খণ্ড নাট্যসঙ্গীত, আংশিক ধর্মীয় নাট্যসঙ্গীত, ইরানের বাইরে খুব কমই পরিবেশিত হয়;
- আশুরা সঙ্গীত (শিয়া) – মুহররমের শোকের সময় গাওয়া হয়, ইমাম হুসাইন ও তাঁর অনুসারীদের মৃত্যু স্মরণে;
- থিকিরি – আরবি শব্দ যিকির থেকে আগত, যার অর্থ আল্লাহকে স্মরণ, পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার (তানজানিয়া, মোজাম্বিক, মালাউই, জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) ওয়াইয়াও বা ইয়াও জনগণের কাদিরিয়া সুফি তরিকা কর্তৃক গীত;
- মানজুমা – ইথিওপিয়ায় পরিবেশিত নৈতিক গান;
- মাদিহ নববী – মুহাম্মদের প্রশংসা করে গাওয়া আরবি স্তব।
অন্তত একজন পণ্ডিত জ্যাকব এম. ল্যান্ডাউ-এর মতে, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলগুলোতে কেবল ধর্মনিরপেক্ষ ও লোকসঙ্গীতই পাওয়া যায় না, তবে সঙ্গীত নিয়ে ইসলামের নিজস্ব স্বতন্ত্র শ্রেণি রয়েছে -- "ইসলামি সঙ্গীত" বা "শাস্ত্রীয় ইসলামি সঙ্গীত" - যেটি "৬১০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ইসলামের আবির্ভাবের সঙ্গে" একটি "নতুন শিল্প" হিসেবে বিকশিত হতে শুরু করে।[৫১] এটি পারস্য, বাইজেন্টাইন, তুর্কি, আমাজিগ (বারবার) ও মুরদের "গুরুত্বপূর্ণ অবদান"সহ প্রাক-ইসলামি আরবীয় সঙ্গীত থেকে গঠিত হয়েছিল। এই জাতের সঙ্গীত "সুর ও তালের একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম মিশ্রণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়", যেখানে "বাদ্যযন্ত্রের উপর কণ্ঠসঙ্গীতের উপাদান প্রাধান্য পায়"। এখানে কোনো ছন্দ নেই, কেবলমাত্র "একটি সুরের লাইন" রয়েছে এবং একজন স্বতন্ত্র সঙ্গীতশিল্পীকে গাইতে দেওয়া হয় "এবং প্রকৃতপক্ষে অনুপ্রাণিত, উন্নতি করতে"। মূল এলাকা যেখানে এটি পাওয়া যায় তা "নীলনদ উপত্যকা থেকে পারস্য পর্যন্ত" বিস্তৃত, এবং যত দূরে কেউ ভ্রমণ করে, "তত কম ইসলামি সঙ্গীত খুঁজে পায়।"[৫১]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Reynolds, Dwight F. (এপ্রিল ২০১৫)। The Cambridge Companion to Modern Arab Culture। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 140। আইএসবিএন 978-0-521-89807-2। ডিওআই:10.1017/CCO9781139021708.010।
Besides celebrating the past tradition of slave girls who were bought and sold on the basis of the beauty of their voices and the depth of their song repertoire, the song also brings to the fore contentious issues concerning the permissibility of music in Muslim society. Since the birth of Islam, many have considered music to be an unacceptable distraction from a proper religious life: music, they declare, is haram (unlawful, impermissible). Others, however, have celebrated music's ability to foster aesthetic pleasure, communal celebration, and even, if properly employed, a means of achieving union with the Almighty here and now, the latter a belief of Sufi mystics. In Ghanni li shwayya, music is unabashedly celebrated, lauded for its ability to affect nature, cure illness, soothe the heart, and bring girls to dance.
- ↑ ক খ
Salhi, Kamal (ডিসেম্বর ২০১৩)। Music, Culture and Identity in the Muslim World: Performance, Politics and Piety। Routledge। পৃষ্ঠা 5। আইএসবিএন 978-1-317-96310-3।
The attitude toward music [in the Muslim world] has always been ambivalent, as expressed in a series of contradictory feelings and concepts: predilection and mistrust; divine-devilish; exalting-disruptive; admissible-prohibited' (Shiloah nd). Views about the admissibility of music, or the art of sound, in the Muslim world, range from complete negation to complete acceptance, even of dance and other bodily expressions.
- ↑
Sumarsam (২০১১)। "Past and Present Issues of Islam within the Central Javanese Gamelan and Wayang Kulit"। Harnish, David D.; Rasmussen, Anne K.। Divine Inspirations: Music and Islam in Indonesia। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 45–79। আইএসবিএন 978-0-19-538542-7। ডিওআই:10.1093/acprof:oso/9780195385410.003.0002।
The consideration of religious singing and instrumental music in the context of Islam is fraught with complexity and ambiguity (Neubauer & Doubleday 2001/12, 599)
- ↑
Rasmussen, Anne (আগস্ট ২০১০)। Women, the Recited Qur'an, and Islamic Music in Indonesia। University of California Press। পৃষ্ঠা 170। আইএসবিএন 978-0-520-25549-4।
Much has been written about the permissibility of music in Islamic contexts, particularly among scholars of Arab music, for whom the topic seems to be re- quired (see, for example, al-Faruqi 1985, 1986; Nasr 2000; Nelson 1985; Racy 1984; Rasmussen 2008; Frishkopf 1999; Sawa 1985, 1989; Farmer 1985; Otterbeck n.d.; and Danielson and Fisher 2002). The eminent musicologist Amnon Shiloah describes the "interminable" debate regarding the permissibility of music as already apparent during the first centuries of Islam in the Arabian Peninsula: "In all the major centers of Islam extending from India, Indonesia and Central Asia to Africa, legalists, theologians, spiritual leaders, urban custodians of morality, the literati and leaders of mystic confraternities, all took part in this debate which elicited views that vary from complete negation to full admittance of all musical forms and means including the controversial dance. Between the two extremes, one can find all possible nuances."(Shiloah 1997, 144)
- This quote from Shiloah is also quoted (a bit more fully) in: Østebø, Terje (ডিসেম্বর ২০২১)। Routledge Handbook of Islam in Africa। Routledge। পৃষ্ঠা 358। আইএসবিএন 978-1-000-47172-4।
- ↑
Shiloah, Amnon (১৯৯৫)। Music in the World of Islam: A Socio-cultural Study। Wayne State University Press। পৃষ্ঠা 60। আইএসবিএন 978-0-8143-2970-2।
In sum, the attitude toward music has always been ambivalent, as expressed in a series of contradictory feelings and concepts: predilection and mistrust; divine-devilish; exalting-disruptive; admissible-prohibited.
- ↑ Harris, Diana (২০০৬)। Music Education and Muslims। Trentham Books। পৃষ্ঠা 10। আইএসবিএন 978-1-85856-356-5।
Raza (1991, p60) wrote 'the community misinterprets Islam according to their needs, and there are many passages in the hadith which descry music. Those often quoted include : ' Singing sprouts hypocrisy in the heart as rain sprouts plants' (al Baihaqi, in Lambat, 1998) ; 'Musical instruments are amongst the most powerful means by which the devil seduces human beings' ( Farmer , 1973 , p . 24-5). Probably the most important is a hadith narrated by al - Bukhari in which the Prophet (p.b.u.h.) is reported as saying that at some future time there will be people from my umma (the Muslim community) who will seek to make lawful fornication, the wearing of silk by men, wine drinking and the use of musical instruments.
- ↑ "Is Music Haram? - Islam Question & Answer"। islamqa.info।
- ↑
Baker, Raymond William (জুন ২০০৯)। Islam Without Fear: Egypt and the New Islamists। Harvard University Press। পৃষ্ঠা 63। আইএসবিএন 978-0-674-02045-0।
Ghazzaly also clarified the essential premise of New Islamist thinking that saw the arts as one among many powerful instruments given to Man by God... Ghazzaly rejected the idea put forward by the amirs that singing is haram, and in particular he objected strongly to the further notion advanced by many Islamists, both conservative and extremist, that a woman's voice is haram and should not be heard. On the other hand, Ghazzaly also refused to countenance the secularists' view that all lyrics set to music were appropriate for an Islamic society...
- ↑ Cook, Michael (জানুয়ারি ২০০১)। Commanding Right and Forbidding Wrong in Islamic Thought। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-1-139-43160-6।
An early statement of the contrary view, that music is permitted, is found in Mufaddal ibn Salama fi. later third/ninth century)
- ↑ van Nieuwkerk, Karin (১৯৯৮)। "'"An Hour for God and an Hour for the Heart": Islam, Gender and Female Entertainment in Egypt'"। Journal of Musical Anthropology of the Mediterranean। 3। আইএসএসএন 1825-621X।
Since the birth of Islam the permissibility of music and singing has been debated. Not only the lawfulness of the performer but also of the audience was discussed. Advocates and opponents alike traced the legitimacy of their position back to the Quran and the hadiths, the sayings of the Prophet. As in present day Egypt, these debates on the lawfulness of music did not prevent the art from flourishing in palaces and private homes (Sawa 1989; Stigelbauer 1975).
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ "Scholars and musicians hotly debate whether music is permissible or not"। Irish Times। ২১ জুলাই ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০২১।
- ↑ ক খ Bhattacharyya, Prasanta; Ghosh, Tapan Kumar (১৪ ডিসেম্বর ২০১৬)। Mapping out the Rushdie Republic: Some Recent Surveys। আইএসবিএন 9781443855624।
- ↑ ক খ Bohlman, Philip V. (জুন ২০১৩)। Revival and Reconciliation: Sacred Music in the Making of European Modernity। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা 12–14। আইএসবিএন 978-0-8108-8269-0।
- ↑ ক খ LIFE Aladdin। ২৪ মে ২০১৯। আইএসবিএন 9781547849031।
- ↑ https://al-itisam.com/article_details/1951
- ↑ https://archive.org/details/EnglishMaarifulQuranMuftiShafiUsmanir.aVol7/page/n12/mode/1up
- ↑ https://muslimbangla.com/sura/31/verse/6
- ↑ https://www.alkawsar.com/bn/article/57/
- ↑ https://m.dailyinqilab.com/article/347642/%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%93-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%80-%E0%A6%A6%E0%A7%83%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%A3
- ↑ https://sunnah.com/bukhari:5590
- ↑ https://www.hadithbd.com/books/detail/?book=56§ion=637
- ↑ https://www.islamicalo.com/hadis/18/7/0
- ↑ https://www.prophetmuhammad.com/mishkat/chapters/11
- ↑ https://hadith.one/bn/upodesh/hadith/98
- ↑ https://hamariweb.com/islam/hadith/sunan-abu-dawood-4924/
- ↑ https://www.somoynews.tv/news/2024-07-27/SGv99WX1
- ↑ Neubauer, Eckhard; Doubleday, Veronica (২০০১)। "Islamic religious music"। Grove Music Online (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসবিএন 978-1-56159-263-0। ডিওআই:10.1093/gmo/9781561592630.article.52787। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১২।
- ↑ Sahih al-Bukhari, 5590.
- ↑ ibn Hazm, Abu Muhammad Ali। Al-Muhalla।
- ↑ ক খ গ ঘ Landau, Jacob M.। "Islamic Arts. Music and religion"। Britannica। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ Shavit, Uriya (২০১৫)। Sharī'a and Muslim Minorities: The Wasaṭī and Salafī Approaches to Fiqh Al-aqalliyyāt Al-Muslima। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-875723-8।
Music is one example: while permitted by wasațis, it is strongly prohibited by salafīs, who draw from lbn Taymiyya's depiction of it as strengthening satanic states. Salafīs hold that decisions that legitimize music deviate from the ways of the salaf, and those who promote them have no knowledge of Islam." The prohibition on music is strict... There are no exceptions...
- ↑ Cook, Forbidding Wrong, 2003, p.32
- ↑ Armangue, Bernat (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "Under Taliban, thriving music scene heads to silence"। Associated Press। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ Denselow, Robin (১৫ জানুয়ারি ২০১৩)। "Mali music ban by Islamists 'crushing culture to impose rule'"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ ক খ Magrini, Tullia (২০০৫)। Music and Gender: Perspectives from the Mediterranean। University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 270। আইএসবিএন 0-226-50165-5।
- ↑ ক খ গ AL-QARADAWI, YUSUF (১৩ ডিসেম্বর ২০০৬)। "Singing and Music in Islam"। Islamicity। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১।
- ↑ Is Music Permitted in Islaam? – Dr Zakir Naik (ইংরেজি ভাষায়), ২০২১-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৬
- ↑ "Music and Singing: A Detailed Fatwa"। SunniPath। ২০০৮-০৪-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-০১।
- ↑ Sahih Bukhari: "Sahih Bukhari Volume 005, Book 058, Hadith Number 268" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৯-০১-১৬ তারিখে retrieved October 27, 2016
- ↑ "Is there room for music in Islam?"। BBC। ২০০৭-০৮-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-০১।
- ↑ Shahbaz Center for Sufism & Islamic Studies" retrieved October 27, 2016
- ↑ ক খ গ Rashid, Hussein। "Music and Islam: A Deeper Look"। Asia Society। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ "Islamic Love Dua Music and Islam » FAQ Topics » Music"। www.islamiclovedua.com। ২৪ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০২৩।
- ↑ "Ayatollah Sayed Sadiq Hussaini al-Shirazi » FAQ Topics » Music"। www.english.shirazi.ir। ২০২১-০১-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-০৩।
- ↑ Bureau, Gareth Smyth for Tehran (২০১৫-০৩-১৩)। "Iran's ayatollahs spring a surprise"। The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৪।
- ↑ Kifner, John (১৯৭৯-০৭-২৪)। "Khomeini Bans Broadcast Music, Saying It Corrupts Iranian Youth"। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৪।
- ↑ "Music and power in Iran: An instrument of propaganda and control – Qantara.de"। Qantara.de – Dialogue with the Islamic World (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-২৪।
- ↑ Baily, John (2016). War, Exile and the Music of Afghanistan: The Ethnographer’s Tale. Taylor & Francis, p. 109.
- ↑ The Telegraph: "Iran's Ayatollah Khamenei reveals surprising taste for Western music" retrieved October 27, 2016
- ↑ The Guardian (Tehran Bureau): "Iranians pump up the volume for banned tunes" retrieved October 27, 2016
- ↑ ক খ গ ঘ Landau, Jacob M.। "Islamic Arts. Music"। Britannica। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০২২।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Islamic Arts, Music Britannica.com