কুমেরু জীবভৌগোলিক অঞ্চল
কুমেরু বা অ্যান্টার্কটিক জীবভৌগোলিক অঞ্চল পৃথিবীর আটটি জীবভৌগোলিক অঞ্চলের অন্যতম। এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত এলাকার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ এবং দক্ষিণ আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগর। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ এতটাই ঠাণ্ডা যে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এখানে মাত্র ২ ধরনের সংবাহী উদ্ভিদ (ভাস্কুলার উদ্ভিদ) জন্মাতে পেরেছে। বর্তমানে এখানকার উদ্ভিদকূলের মধ্যে রয়েছে প্রায় ২৫০ ধরনের লাইকেন, ১০০ ধরনের মস, ২৫-৩০ ধরনের লিভারওয়ার্ট এবং প্রায় ৭০০ ধরনের স্থলজ ও জলজ শৈবাল প্রজাতি, যারা উন্মুক্ত পাথর ও মহাদেশীয় উপকূলের ভূমিতে জন্মায়। অ্যান্টার্কটিকার দুটি পুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতি, অ্যান্টার্কটিক হেয়ার গ্রাস (Deschampsia antarctica) ও অ্যান্টার্কটিক পার্লওয়ার্ট (Colobanthus quitensis) প্রধানত অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে পাওয়া যায়। এছাড়া পেঙ্গুইন, সিল, তিমিসহ প্রাণিবৈচিত্র্যের এক অনন্য আধার এই অ্যান্টার্কটিকা।
কুমেরু জীবভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু অ্যান্টার্কটিক দ্বীপগুচ্ছ, যেমন- দক্ষিণ জর্জিয়া ও দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ অর্কনি দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ, বোভেত দ্বীপ, ক্রোজেট দ্বীপপুঞ্জ, প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জ, হার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপ, কার্গুয়েলেন দ্বীপপুঞ্জ এবং ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপপুঞ্জ। অ্যান্টার্কটিকার মূল ভূখণ্ডের চেয়ে এসব দ্বীপের জলবায়ু কিছুটা মৃদু, তাই বেশিরভাগ প্রজাতির তুন্দ্রা গাছ এখানেই জন্মে। তবে এখানকার অতিরিক্ত ঝোড়ো আবহাওয়া ও ঠাণ্ডার তীব্রতা বড় ধরনের বৃক্ষ জন্মানোর পক্ষে অনুকূল নয়। দীর্ঘ শীতকালে এখানে বরফ জমা হয়ে থাকে। সূর্যের আলো তির্যকভাবে পড়ায় গ্রীষ্মের উপস্থিতি বোঝা দুষ্কর। বার্ষিক বৃষ্টিপাত খুবই কম, বরং তুষারঝড়ের প্রকোপ দেখা যায়।
দক্ষিণ মহাসাগরের বাস্তুতন্ত্রের প্রধান নিয়ামক হলো অ্যান্টার্কটিক ক্রিল যা তিমি, সিল, লিওপার্ড সিল, লোমশ সিল, কাঁকড়াখেকো সীল, স্কুইড, আইসফিশ, পেঙ্গুইন, আলবাট্রসসহ আরও অনেক পাখির গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। এই মহাসাগরে প্রচুর ফাইটোপ্লাঙ্কটন (ভাসমান ক্ষুদ্র উদ্ভিদ) বিদ্যমান, এর কারণ বরফে ঢাকা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের চারপাশের পানির স্রোত সমুদ্রের গভীর থেকে পুষ্টি উপাদান ওপরের স্তরে (ফোটিক জোন) নিয়ে আসে যেখানে সূর্যের আলো পড়ে।
২০১৪ সালের ২০ আগস্ট বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার বরফের ৮০০ মিটার (২,৬০০ ফুট) নিচেও আণুবীক্ষণিক জীবের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেন।[১][২]
ইতিহাস
[উৎস সম্পাদনা]লক্ষ লক্ষ বছর আগে অ্যান্টার্কটিকার জলবায়ু আরও উষ্ণ ও আর্দ্র ছিল এবং অ্যান্টার্কটিক উদ্ভিদকূল, পোডোকার্পের বন ও দক্ষিণ তীরের নানা প্রজাতির উদ্ভিদের জন্ম ও বৃদ্ধির জন্য অনুকূলে ছিল। প্রাচীনকালে অ্যান্টার্কটিকা গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামক অতিমহাদেশের অংশ ছিল, যা ১১০ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হওয়া মহাদেশীয় প্রবাহে ক্রমশ ভেঙে যায়। প্রায় ৩০-৩৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে দক্ষিণ আমেরিকা অ্যান্টার্কটিকা থেকে আলাদা হয়ে যায় যা অ্যান্টার্কটিক সার্কাম্পোলার প্রবাহ সৃষ্টি করে। এর ফলে অ্যান্টার্কটিকা পরিবেশগতভাবে বিচ্ছিন্ন ও অনেক শীতল হয়ে পড়ে এবং অ্যান্টার্কটিক উদ্ভিদকূল অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে প্রায় বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু প্রাচীন গন্ডোয়ানার অন্যান্য অংশ- দক্ষিণ নিওট্রপিক্যাল (দক্ষিণ আমেরিকা) ও অস্ট্রেলেশিয়ান জীবভৌগোলিক অঞ্চলে অ্যান্টার্কটিক উদ্ভিদকূল এখনও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিদ্যমান।
কিছু উদ্ভিদতত্ত্ববিদ অ্যান্টার্কটিকা, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশের সমন্বয়ে অ্যান্টার্কটিক উদ্ভিদজগতের অস্তিত্ব লক্ষ্য করেন, যেখানে অ্যান্টার্কটিক উদ্ভিদকূল এখনও একটি প্রধান উপাদান।
বাস্তুঅঞ্চল
[উৎস সম্পাদনা]কুমেরু জীবভৌগোলিক অঞ্চল ১৭টি তুন্দ্রা বাস্তুঅঞ্চলে (ইকোরিজিয়ন) বিভক্ত।[৩]
তথ্যসূত্র
[উৎস সম্পাদনা]- ↑ Fox, Douglas (আগস্ট ২০, ২০১৪)। "Lakes under the ice: Antarctica's secret garden"। Nature। 512 (7514): 244–246। ডিওআই:10.1038/512244a । পিএমআইডি 25143097। বিবকোড:2014Natur.512..244F।
- ↑ Mack, Eric (আগস্ট ২০, ২০১৪)। "Life Confirmed Under Antarctic Ice; Is Space Next?"। Forbes। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২১, ২০১৪।
- ↑ Eric Dinerstein, David Olson et al. (2017). An Ecoregion-Based Approach to Protecting Half the Terrestrial Realm, BioScience, Volume 67, Issue 6, June 2017, Pages 534–545, https://doi.org/10.1093/biosci/bix014
আরও পড়ুন
[উৎস সম্পাদনা]- Terauds, A; Chown, SL; Morgan, F; Peat, HJ; Watts, D; ও অন্যান্য (২০১২)। "Conservation biogeography of the Antarctic"। Divers Distrib। 18 (7): 726–741। ডিওআই:10.1111/j.1472-4642.2012.00925.x।
- Life in the Freezer, a BBC television series on life on and around Antarctica
- Biodiversity at Ardley Island, South Shetland archipelago, Antarctica
- Deep Sea Foraminifera – Deep Sea Foraminifera from 4400m depth, Weddell Sea - an image gallery of hundreds of specimens and description
- Aliens in Antarctica; Visitors carry unwelcome species into a once pristine environment ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ মে ২০১২ তারিখে May 5, 2012 Science News
বহিঃসংযোগ
[উৎস সম্পাদনা]