বিষয়বস্তুতে চলুন

ক্রিস্টা ওল্ফ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ক্রিস্টা ওল্ফ
ক্রিস্টা ওল্ফ
১৯৬৩ সালে ওল্ফ
জন্মক্রিস্টা আইলেনফেল্ড
(১৯২৯-০৩-১৮)১৮ মার্চ ১৯২৯
ল্যান্ডসবার্গ অ্যান ডার ওয়ার্থ, জার্মানি
মৃত্যু১ ডিসেম্বর ২০১১(2011-12-01) (বয়স ৮২)
বার্লিন, জার্মানি
পেশালেখক
ভাষাজার্মান
জাতীয়তাজার্মান
দাম্পত্যসঙ্গীজেরহার্ড ওল্ফ [ডি]
বার্লিনে ওল্ফ, মার্চ ২০০৭

ক্রিস্টা ওল্ফ (বিবাহপূর্ব নাম আইলেনফেল্ড; ১৮ই মার্চ ১৯২৯–১লা ডিসেম্বর ২০১১) ছিলেন জার্মান সাহিত্য সমালোচক, ঔপন্যাসিক এবং প্রাবন্ধিক।[][] তিনি সাবেক পূর্ব জার্মানির সেরা লেখকদের মধ্যে একজন।[][]

জীবনী

[সম্পাদনা]

ওল্ফ ল্যান্ডসবার্গ অ্যান ডার ওয়ার্থে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাতার নাম অটো এবং হার্টা আইলেনফেল্ড। তখন এই স্থানটি ছিল ব্র্যান্ডেনবার্গ প্রদেশে;[] শহরটি এখন পোল্যান্ডের গর্জো ইয়েলকপোস্কি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, তার পরিবার, জার্মান হবার জন্য, তাদের বাড়ি থেকে বহিষ্কৃত হন। কারণ জায়গাটি তখন পোলিশ অঞ্চল হয়ে গেছে। ১৯৪৫ সালে তারা নতুন ওডার-নাইসা সীমান্ত অতিক্রম করেন এবং ম্যাকলেনবুর্গ এ বসতি করেন, পরে জায়গাটি জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, বা পূর্ব জার্মানি হয়ে যায়। তিনি জেনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য অধ্যয়ন করেছিলেন। স্নাতক হবার পর, তিনি জার্মান লেখক ইউনিয়নের হয়ে কাজ করেছিলেন এবং একটি প্রকাশনা সংস্থার সম্পাদক হয়েছিলেন। প্রকাশনা সংস্থা ভার্লাগ নইয়াস লেবেন এবং মিটেলডশার ভার্লাগ এর সম্পাদক হিসাবে এবং নইয়া ডয়চে লিটারাতুয়াজার্নালের সাহিত্য সমালোচক হিসাবে কাজ করার সময়, ওল্ফকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী এবং কমিউনিস্টদের সাথে যোগাযোগ দেওয়া হয়েছিল, তাদের অনেকেই হয় নির্বাসন থেকে বা কনসেন্ট্রেশন শিবিরে বন্দি থেকে ফিরে এসেছিলেন। তার লেখাগুলিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং বৈজ্ঞানিক শক্তি নিয়ে আলোচনা থাকত, এবং এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে শিল্পসমৃদ্ধ ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মধ্যে ব্যক্তির ক্ষমতায়নে সক্রিয় হওয়ার জন্য তিনি পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানিতে প্রভাবশালী মুখপাত্র হয়ে গিয়েছিলেন।[]

তিনি ১৯৪৯ সালে সোশালিস্ট ইউনিটি পার্টি অফ জার্মানি (এসইডি) তে যোগ দিয়েছিলেন এবং কমিউনিস্ট শাসনের পতনের ছয় মাস আগে ১৯৮৯ সালের জুনে এটি ছেড়ে দেন। তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এসইডির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রার্থী ছিলেন। ১৯৯৩-এ পাওয়া স্ট্যাসির নথি থেকে জানা যায় যে তিনি ১৯৫৯-৬১ সালের মধ্যে একজন সংবাদদাতা (ইনঅফিজিলার মিটারবেইটার (বেসরকারী সহযোগী)) হিসাবে কাজ করেছিলেন।[] স্ট্যাসি আধিকারিকেরা তাকে "স্বল্পভাষী" বলে সমালোচনা করেছিলেন, এবং তারা তার সহযোগিতা নিয়ে অনাগ্রহী হয়ে পড়েন। তাকে এরপর প্রায় ৩০ বছর নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময়, ওল্ফ প্রকাশ্যে জিডিআর নেতৃত্বের সমালোচনা করেছিলেন, তবে তিনি সমাজতন্ত্রের মূল্যবোধের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছিলেন এবং জার্মান পুনঃএকত্রীকরণের বিরোধিতা করেছিলেন।[]

১৯৬১ সালে, তিনি মুসকাউয়ার নোভেলা (মস্কো নোভেলা) প্রকাশ করেছিলেন। যাইহোক, লেখক হিসাবে ওল্ফের বিরাট সাফল্য এসেছিল ১৯৬৩ সালে ডের গেটিল্টি হিমেল (ডিভাইডেড হেভেন , তারা আকাশকে বিভক্ত করেছিল) প্রকাশের মাধ্যমে।[] তার পরবর্তী রচনাগুলির মধ্যে রয়েছে নাশদেনকেন উবার ক্রিস্টা টি. (দ্য কোয়েস্ট ফর ক্রিস্টা টি.) (১৯৬৮), কিন্ডহাইটসমুস্টার (প্যাটার্নস অফ চাইল্ডহুড) (১৯৭৬), কাইন ওর্ট. নিরগেন্ডস (নো প্লেস অন আর্থ) (১৯৭৯), কাসান্ড্রা (কাসান্ড্রা) (১৯৮৩), স্টরফল (অ্যাক্সিডেন্ট) (১৯৮৭), মেডিয়া (১৯৯৬), আওফ ডেম ওয়েগ নাখ টেবু (অন দ্য ওয়ে টু ট্যাবু) (১৯৯৪), এবং স্টাডট ডেয়া এঞ্জেল ওডার দ্য ওভারকোট অফ ড. ফ্রয়েড (২০১০) (সিটি অফ অ্যাঞ্জেলস অর দ্য ওভারকোট অফ ড. ফ্রয়েড)। ক্রিস্টা টি তে তিনি দেখিয়েছেন—নিজের পরিবারের পৈতৃক বাড়ির সঙ্গে বিচ্ছিন্ন সংযোগকে সংক্ষিপ্তভাবে ছুঁয়ে গিয়ে একজন মহিলার অত্যধিক সামাজিক চাপের মুখোমুখি হওয়া।

কাসান্ড্রা সম্ভবত ওল্ফের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই, যেখানে ট্রয়ের যুদ্ধ কে অর্থনৈতিক শক্তির যুদ্ধ এবং মাতৃতান্ত্রিক সমাজ থেকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে স্থানান্তর হিসাবে পুনরায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ওয়জ ব্লিট (হোয়াট রিমেইনস) উপন্যাসে, স্ট্যাসি নজরদারির অধীনে তিনি নিজের জীবন বর্ণনা করেছেন। তিনি এটি ১৯৭৯ সালে লেখেন, কিন্তু ১৯৯০ পর্যন্ত এটি প্রকাশিত হয় নি। আউফ ডেম ওয়েগ নাখ টাবু (১৯৯৫; অনুবাদের পর পার্টিং ফ্রম ফ্যান্টমস) জার্মান পুনঃএকত্রীকরণের পর চার বছর ধরে লেখা প্রবন্ধ, বক্তৃতা এবং চিঠিপত্রের সংগ্রহ। তিনি লাইভাফটিগ (২০০২) উপন্যাসে ১৯৮০ এর দশকে পূর্ব-জার্মান হাসপাতালে পশ্চিম থেকে আসা ওষুধের অপেক্ষায় জীবন-মৃত্যুর সাথে লড়াই করা এক মহিলাকে বর্ণনা করেছেন। তার রচনার মূল বিষয় হ'ল জার্মান ফ্যাসিবাদ, মানবতা, নারীবাদ এবং আত্ম-আবিষ্কার। নিজের বেশিরভাগ রচনায়, ওল্ফ অসুস্থতাকে রূপক হিসাবে ব্যবহার করেছেন। ডয়চে ক্রেবজেসেলসশাফট (জার্মান ক্যান্সার সোসাইটি) কে উদ্দেশ্য করে এক ভাষণে তিনি বলেছেন, "ক্যান্সারের মতো অসুস্থতা সম্পর্কে আমরা কীভাবে কথা বলিউ বা বলিনা, তা সমাজ সম্পর্কে আমাদের বিভ্রান্তির পরিচয় দেয়।" "নাশদেনকেন উবার ক্রিস্টা টি." (দ্য কোয়েস্ট ফর ক্রিস্টা টি.) গল্পে নায়ক লিউকেমিয়ায় মারা যায়। এই লেখাটিতে, একজন ব্যক্তি যখন সমাজের অসঙ্গতিকে অন্তরীণ করে নেয়, তখন তার ঘটে যাওয়া বিপদ এবং পরিণতিকে দেখানো হয়েছে। অ্যাক্সিডেন্ট গল্পে, বর্ণনাকারীর ভাইয়ের চেরনোবিল পারমাণবিক বিপর্যয়ের পরে মস্তিষ্কের টিউমার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করা হচ্ছিল।[] ২০০৪ সালে তিনি শার্লট ওল্ফের সঙ্গে ১৯৮৩–১৯৮৬ পর্যন্ত তার যোগাযোগের পত্রাবলীর সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন (ওল্ফ, ক্রিস্টা এবং ওল্ফ, শার্লট (২০০৪) জা, উনজেরে ক্রিয়েস বেরহুরেন জিস: ব্রিফ, লুখটারহ্যান্ড মিউনিখ)।

১লা ডিসেম্বর ২০১১ সালে, বার্লিনে ওল্ফ মারা যান, সেখানে তিনি তার স্বামী, জেরহার্ড ওল্ফ [ডি]এর সঙ্গে থাকতেন।[] ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর তাকে বার্লিনের ডোরোথেনস্ট্যাড্টে সমাধি দেওয়া হয়েছিল।[] 2018 সালে, বার্লিন শহর তার সমাধিকে এয়াহানগ্রাব (সম্মানের সমাধি) হিসাবে মনোনীত করেছে।[]

অন্তর্ভূক্তি ও পুরস্কার

[সম্পাদনা]

যদিও ওল্ফের লেখাগুলি ১৯৭০ এর দশক এবং ১৯৮০ এর দশকে উভয় জার্মানিতে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিল, জার্মান পুনঃএকত্রীকরণের পর থেকে ওল্ফের লেখাগুলি কখনও কখনও বিতর্কিত মনে করা হত।[১০][১১] উইলিয়াম ডাল্রিম্পল লিখেছেন যে পূর্ব জার্মানিতে "বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলার পরে ক্রিস্টা ওল্ফের মতো লেখকরা রাতারাতি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছিলেন"।[১২] ওয়জ ব্লিট প্রকাশের পরে, পশ্চিম জার্মান সমালোচক যেমন ফ্র্যাঙ্ক শিরমাখের যুক্তি দিয়েছিলেন যে ওল্ফ পূর্ব জার্মান কমিউনিস্ট শাসনের কর্তৃত্ববাদবাদের সমালোচনা করতে পারেননি, অন্যরা তার রচনাগুলিকে "নৈতিকতাবাদী" বলে অভিহিত করেছেন। প্রতিবাদীরা পূর্ব জার্মান সাহিত্যকে বিশেষভাবে তুলে ধরার কাজে ওল্ফের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।[১৩] ওল্ফের আগের উপন্যাস এবং তার পরবর্তী রচনাগুলি নিয়ে ফাউস্টো সারসিগনানির পর্যালোচনা, তার রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত উত্থান-পতন নির্বিশেষে তার বর্ণনামূলক রচনাগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। ক্রিস্টা ওল্ফের বীরত্বের উপরে সারসিগনানি যে জোর দিয়েছিলেন তা এই দিকে পড়াশোনার ক্ষেত্রে নতুন রাস্তা খুলে দিয়েছে।[১৪]

ওল্ফ ১৯৬৩ সালে হাইনরিশ মান পুরস্কার, ১৯৮০ সালে জর্জ বুশনার পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে শিলার স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে গেসউইস্টার-শোল-প্রেইস পেয়েছিলেন, এর সাথে তিনি অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছিলেন। জার্মান পুনর্মিলনের পরে, ওল্ফ আরও পুরস্কার পেয়েছিলেন: ১৯৯৯ সালে তাকে এলিজাবেথ ল্যাংগাসার পুরস্কার এবং নেলি শ্যাকস সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন, এবং ওল্ফ তার জীবদ্দশায় কৃতিত্বের জন্য ২০০২ সালে ডোয়েচার বাচারপ্রেইস (জার্মান পুস্তক পুরস্কার) এর প্রথম প্রাপক হয়েছিলেন। ২০১০ সালে, ওল্ফকে গোওসা লিটারাটউরপায়েস ডায়ার বেয়ারিশচেন আকাদেমি ডেয়া বাইয়াসা আকাডেমি ডেয়া শুনা কুন্স্ত পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. A writer who spanned Germany's East-West divide dies in Berlin (obituary), Barbara Garde, Deutsche Welle, 1 December 2011
  2. Acclaimed Author Christa Wolf Dies at 82 (obituary), Der Spiegel, 1 December 2011.
  3. Christa Wolf obituary, Kate Webb, The Guardian, 1 December 2011
  4. Christa Wolf obituary, The Telegraph, 2 December 2011.
  5. Frederiksen, Elke P.; Ametsbichler, Elizabeth G. (১৯৯৮)। Women Writers in German-Speaking Countries: A Bio-Bibliographical Critical Sourcebook। Greenwood Press। পৃষ্ঠা 485, 486। 
  6. Costabile-Heming, Carol Anne (সেপ্টেম্বর ১, ২০১০)। "Illness as Metaphor: Christa Wolf, the GDR, and Beyond"। Symposium64: 203। ডিওআই:10.1080/00397709.2010.502485 
  7. "Schriftstellerin Christa Wolf ist tot"Der Tagesspiegel। ১ ডিসেম্বর ২০১১। 
  8. Braun, Volker (১৫ ডিসেম্বর ২০১১)। "Ein Schutzengelgeschwader"Die Zeit। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১১ 
  9. "Ehrengräber für Klaus Schütz und Christa Wolf"Süddeutsche Zeitung। dpa। ১৪ আগস্ট ২০১৮। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  10. Myra N. Love. Christa Wolf and the Conscience of History. Peter Lang, 1991. p. i.
  11. Gail Finney. Christa Wolf. Twayne, 1999. p. 9
  12. Dalrymple, William"Novel explosives of the Cold War"The Spectator। Archived from the original on ২০১৯-০৮-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৮ 
  13. Augustine, Dolores L. (২০০৪)। "The Impact of Two Reunification-Era Debates on the East German Sense of Identity"। German Studies Review। German Studies Association। 27 (3): 569–571। জেস্টোর 4140983 .
  14. Fausto Cercignani, Existenz und Heldentum bei Christa Wolf. "Der geteilte Himmel" und "Kassandra" (Existence and Heroism in Christa Wolf. "Divided Heaven" and "Cassandra"), Würzburg, Königshausen & Neumann, 1988. For subsequent essays see http://en.scientificcommons.org/fausto_cercignani.

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]