গোপাল ভাঁড়
গোপাল ভাঁড় | |
---|---|
জন্ম | গোপাল চন্দ্র প্রামাণিক ১৭০১ কৃষ্ণনগর, নদিয়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
মৃত্যু | ১৭৬৭ নদিয়া, ভারত |
দাম্পত্য সঙ্গী | পার্বতী |
ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
পেশা | রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় এর রাজসভার রম্য গল্পকার ভাঁড় ও মনোরঞ্জনকারী |
গোপাল ভাঁড় ছিলেন মধ্যযুগে নদিয়া অঞ্চলের একজন প্রখ্যাত রম্য গল্পকার, ভাঁড় ও মনোরঞ্জনকারী।[১] তাঁর আসল নাম গোপাল চন্দ্র প্রামাণিক। তিনি অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়া জেলার প্রখ্যাত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় নিযুক্ত ছিলেন।[২] তিনি ছিলেন সৎ ও বুদ্ধিমান। বুদ্ধি ও সৎসাহস থাকার কারণে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁকে তাঁর সভাসদদের মধ্যকার নবরত্নদের একজন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
জীবনী ও সত্যতা
[সম্পাদনা]ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলা সাহিত্যে গোপাল ভাঁড়ের নাম সর্বপ্রথম উচ্চারিত হয়। বলা হয়ে থাকে, গোপাল যখন ছোট ছিলেন তখন তাঁর বাবা মারা যান এবং তাঁর মাও স্বামীর চিতায় সহমরণে আত্মাহুতি দেয়। তার বড় ভাইকে দাসত্বে বাধ্য করা হয় এবং তাকে একটি ডাকাতদল অপহরণ করে। অবশেষে, একজন ভদ্রমহিলা তাকে লালন-পালন করেন এবং যৌবনে গোপাল পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরের রাজদরবারে ভাঁড় হিসেবে নিযুক্ত হন। গোপাল ভাঁড় ছিলেন হিন্দু ধর্মের অনুসারী। তার অসামান্য অবদানের জন্য রাজা ও রাণী উভয়েই তাকে পছন্দ করতেন। সেই আমলে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রাসাদের সামনে নির্মিত তাঁর একটি ভাস্কর্য এখনো সেখানে অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। পরবর্তীতে কৃষ্ণনগর পৌরসভার সীমানায় ঘূর্ণীতে গোপাল ভাঁড়ের নতুন মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। তবে গোপাল ভাঁড়ের নাম ইতিহাসের কোথাও উল্লেখ নেই। তার অস্তিত্ব আদৌ ছিল কিনা এই বিষয়ে কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। কিন্তু, একটি উৎসে পাওয়া গেছে যে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং শহরের সুরক্ষা ইনচার্জ শঙ্কর তরঙ্গের একজন সম্মানিত এবং পুরানো দেহরক্ষী ছিল যাকে তার সাহস এবং জ্ঞানের জন্য রাজা বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিলেন এবং সম্ভবত এটিই গোপাল ভাঁড়ের কিংবদন্তির জন্ম দিয়েছিল। গোপাল ভাঁড়ের অস্তিত্ব ছিল কি না, সে সম্পর্কে অনেক পরস্পরবিরোধী মতামত রয়েছে। আচার্য সুকুমার সেন অভিমত দেন যে গোপাল চরিত্রটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। তবে কিছু সূত্র দাবি করেছে যে গোপাল একজন সত্যিকারের চরিত্র ছিল।
গল্পসমূহ
[সম্পাদনা]প্রায় দুইশত বছরেরও অধিক আবহমানকাল ধরে প্রচলিত তার জীবন-রস সমৃদ্ধ গল্পগুলো পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাঝে, লোককথায় এখনো স্বমহিমায় টিকে আছে। কতগুলি গল্প প্রায় প্রবাদের ন্যায় ব্যবহৃত হয়। তাকে মোল্লা নাসিরুদ্দিন ও বীরবলের সমতুল্য হিসাবে পরিগণনা করা হয়।
ঐতিহাসিক বিতর্ক
[সম্পাদনা]গোপাল ভাঁড় চরিত্রটি ঐতিহাসিক, গবেষক ও ভাষাবিদদের কাছে বিতর্কের বিষয় বহুকাল থেকে। গোপালের গল্পগুলি সমাজে চূড়ান্ত জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত হলেও গোপাল ভাঁড় বাস্তবে ছিলেন কিনা সে নিয়ে মতভেদ আছে। অনেকেই মনে করেন গোপাল ভাঁড় নামে নির্দিষ্ট কেউ ছিলেন না। তবে কোনো না কোনো বিদূষক রাজার প্রিয়পাত্র হন। সেরকম গোপাল নাম্নী নাপিত বংশীয় কোনো ব্যক্তি ছিলেন। গোপালের জন্ম কত বঙ্গাব্দে তা কোথাও লেখা নেই। তার জন্মস্থানের পক্ষেও কোনো নথি নেই, কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা হিসেবে তার সম্পত্তির কিংবা জায়গা-জমির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। গোপালের বাবার নাম জানা গেলেও তার মা ও স্ত্রী সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। নগেন্দ্রনাথ দাসের মতে গোপালের পদবী ছিল 'নাই'। মহারাজ তাকে হাস্যার্ণব উপাধী দান করেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ও ভাষাবিদ সুকুমার সেন বলেছেন ‘গোপাল ভাঁড় সম্পর্কে আধুনিক বাঙালির কৌতূহল থাকার ফলে বাস্তব অথবা কল্পিত ব্যক্তিটির সম্পর্কে যে জনশ্রুতি জাতীয় ঐতিহ্য গজিয়ে উঠেছে ও উঠছে তার বীজ হচ্ছে ভাঁড় নামের অংশটি, গোপাল ভাঁড়ের ভাঁড়টুকু সংস্কৃত শব্দ ভাণ্ডারের ‘ভাণ্ড’-জাত মনে করে অনেক গোপালের জাতি নির্ণয় করেছেন। পক্ষের ও বিপক্ষের যুক্তি যাই হোক, গোপাল ভাঁড় বাঙালি রসিক ও লৌকিক সংস্কৃতিতে অমলিন হয়ে আছেন।[৩]
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
[সম্পাদনা]- গোপাল ভাঁড় (চলচ্চিত্র) - অমল সুর পরিচালিত একটি বাংলা কমেডি চলচ্চিত্র ১৯৮০ সালে মুক্তি পায়। সেই ছবিতে সন্তোষ দত্ত গোপাল ভাঁড়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।[৪]
- গোপাল ভাঁড়ের জীবনীকে কেন্দ্র করে সনি আট টিভিতে গোপাল ভাঁড় নামে একটি এনিমেশন কার্টুন নির্মিত হয়ে সম্প্রচারিত হচ্ছে।[৫]
- 'স্টার জলসা' চ্যানেলে গোপাল ভাঁড়কে নিয়ে একটি ধারাবাহিক নাটক ২০১৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সম্প্রচারিত হয়েছিল।[৬]
- এছাড়া বিভিন্ন সময় গোপাল ভাঁড়কে নিয়ে বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছিল।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ সিরাজুল ইসলাম (২০১২)। "গোপাল ভাঁড়"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ Siegel, Lee (1987). Laughing Matters: Comic Tradition in India. University of Chicago Press, United States. আইএসবিএন ০-২২৬-৭৫৬৯১-২. pp. 314-318.
- ↑ শোয়েব সর্বনাম (১৩ মে ২০১৬)। "গোপাল ভাঁড়ের খোঁজে"। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Baba never got his due: Santosh Dutta"। The Times of India। ২০১৭-০১-১১। আইএসএসএন 0971-8257। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২৭।
- ↑ "Gopal Bhar - গোপাল ভার - (Bengali) | Sony Aath - YouTube"। www.youtube.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২৭।
- ↑ "Raktim Samanta gets nostalgic as 'Gopal Bhar' comes to an end"। The Times of India। ২০১৮-০৮-২০। আইএসএসএন 0971-8257। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২৭।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Dutta, Swapna (২০০৪)। Tales of Gopal the Jester। আইএসবিএন 81-7806-059-0।
- Sinha, Seema (২০০৫)। Gopal Bhand। আইএসবিএন 81-7011-975-8।