চাগাস রোগ
চাগাস রোগ | |
---|---|
বিশেষত্ব | সংক্রামক রোগ, পরজীবীবিজ্ঞান |
চাগাস রোগ /ˈtʃɑːɡəs/, বা আমেরিকান ট্রাইপানোসোমিয়াসিস, একটি প্রোটোজোয়া ট্রাইপানোসোমাক্রুজি দ্বারা সংক্রামিত ক্রান্তীয় পরজীবীঘটিত রোগ। [১] কিসিং বাগসনামক এক প্রকারের পোকার মাধ্যমে এটি বিস্তার লাভ করে। [১] সংক্রমণের বিভিন্ন পর্যায়ে লক্ষণসমূহ পরিবর্তিত হয়। প্রারম্ভিক পর্যায়ে, লক্ষণগুলি সাধারণতঃ থাকে না অথবা সামান্য থাকে, যেমন জ্বর, ফোলালিম্ফ নোডস,মাথাব্যথা, অথবা কামড়ানোর জায়গায় সাধারণ ফোলা।[১] ৮-১২ সপ্তাহের পর রোগী অসুখের ক্রনিক পর্যায়ে প্রবেশ করে এবং ৬০-৭০% ক্ষেত্রে আর কখনও কোন অতিরিক্ত লক্ষণের জন্ম হয় না।[২][৩] অন্য ৩০-৪০% লোকেদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক সংক্রমণের ১০ থেকে ৩০ বছর পর অতিরিক্ত লক্ষণ দেখা দেয়। [৩] ২০ থেকে ৩০%-এর ক্ষেত্রে হার্টের ভেন্ট্রিকলসের বৃদ্ধি ঘটে যার কারণে হার্ট ফেলিওর হয়।[১] ১০% লোকের ক্ষেত্রে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত খাদ্যনালী অথবা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কোলন-ও দেখা যেতে পারে।[১]
T. cruzi সাধারণতঃ মানুষ ও অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে Triatominae সাবফ্যামিলির রক্তপায়ী “কিসিং বাগস”-এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। [৪] এই পতঙ্গগুলি অসংখ্য স্থানীয় নামে পরিচিত, যেমন: আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলি ও প্যারাগুয়েতে “ভিনচুকা”, ব্রাজিলে “বার্বেইরোনাপিত, কলম্বিয়ায় “পিটো”, মধ্য আমেরিকায় “চিনচে”, এবং ভেনিজুয়েলায় “চিপো”। এই অসুখটি ব্লাড ট্রান্সফিউশন, অং প্রতিস্থাপন, পরজীবী সংক্রমিত খাদ্যগ্রহণ, এবং উল্লম্ব পরিবহণেরমাধ্যমেও ঘটে।[১] মাইক্রোস্কোপ দ্বারা রক্তে পরজীবীর উপস্থিতি অনুসন্ধানের মাধ্যমে রোগের প্রাথমিক নিরূপণ হয়।[৩] রক্তে T. cruzi -র অ্যান্টিবডিজ অনুসন্ধানের মাধ্যমে ক্রনিক রোগের নিরূপণ হয়।[৩]
কিসিং বাগসদের বিচ্ছিন্ন করে তাদের কামড় থেকে নিষ্কৃতি পাবার মধ্যেই সর্বাপেক্ষা রোগ প্রতিরোধ নিহিত আছে।[১] অন্যান্য প্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে আছে ট্রান্সফিউশ্নের জন্য ব্যবহৃত রক্তের পরীক্ষা।[১] ২০১৩ সাল পর্যন্ত কোন ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি।[১] প্রাথমিক সংক্রমণ বেঞ্জনিডাজোলবা নিফার্টিমক্সনামক ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসাযোগ্য।[১] যদি আগেই এগুলি প্রয়োগ করা হয় তাহলে প্রায় সবক্ষেত্রেই নিরাময় সম্ভব, তবে কেউ যদি বহুদিন ধরে চাগাস রোগে ভোগে তাহলে ওষুধের কার্যকারিতা কম হয়। [১] ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রে এগুলির ব্যবহার শেষ পর্যায়ের লক্ষণগুলির বিকশিত হওয়া আটকে দেয় অথবা ধীরগতি করে দেয়।[১] বেঞ্জনিডাজোল এবং নিফার্টিমক্স-এর কারণে ৪০% রোগীর ক্ষেত্রে সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়,[১] যার মধ্যে আছে ত্বকের সমস্যা, ব্রেন টক্সিসিটি এবং খাদ্যতন্ত্রে জ্বলন।[২][৫][৬]
হিসাবে দেখা গেছে যে ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ লোকের চাগাস রোগ আছে যাদের বেশির ভাগ মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা-য় বসবাস করে।[১] এর ফলে ২০০৬ সালে মাত্র এক বছরে প্রায় ১২৫০০ লোকের মৃত্যু হয়।[২] এই রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগ লোক গরিব[২] এবং এই রোগাক্রান্ত বেশির ভাগ লোক বুঝতে পারেনা যে তাদের সংক্রমণ হয়েছে।[৭] যে সব এলাকায় চাগাস রোগ পাওয়া গেছে, বড় আকারের জনসংখ্যার সঞ্চালনের কারণে সে সব এলাকার বৃদ্ধি ঘটেছে এবং তাতে এখন অনেক ইউরোপিয় দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রেরও অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে।[১] এটাও দেখা গেছে যে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই এলাকাগুলির বৃদ্ধি ঘটেছে।[৮] ১৯০৯ সালে কার্লোস চাগাস প্রথম এই রোগটির কথা জানান এবং তারপর তার নামেই এ রোগের নামকরণ করা হয়। [১] ১৫০টির বেশি অন্যান্য প্রাণী এতে আক্রান্ত হয়।[২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত "Chagas disease (American trypanosomiasis) Fact sheet N°340"। World Health Organization। মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Rassi A, Rassi A, Marin-Neto JA (এপ্রিল ২০১০)। "Chagas disease"। Lancet। 375 (9723): 1388–402। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(10)60061-X। পিএমআইডি 20399979।
- ↑ ক খ গ ঘ RassiA, Jr; Rassi, A; Marcondes de Rezende, J (জুন ২০১২)। "American trypanosomiasis (Chagas disease)."। Infectious disease clinics of North America। 26 (2): 275–91। ডিওআই:10.1016/j.idc.2012.03.002। পিএমআইডি 22632639।
- ↑ "DPDx – Trypanosomiasis, American. Fact Sheet"। Centers for Disease Control (CDC)। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১০।
- ↑ Bern C, Montgomery SP, Herwaldt BL; ও অন্যান্য (নভেম্বর ২০০৭)। "Evaluation and treatment of chagas disease in the United States: a systematic review"। JAMA। 298 (18): 2171–81। ডিওআই:10.1001/jama.298.18.2171। পিএমআইডি 18000201।
- ↑ Rassi A, Dias JC, Marin-Neto JA, Rassi A (এপ্রিল ২০০৯)। "Challenges and opportunities for primary, secondary, and tertiary prevention of Chagas' disease"। Heart। 95 (7): 524–34। ডিওআই:10.1136/hrt.2008.159624। পিএমআইডি 19131444।
- ↑ Capinera, John L., সম্পাদক (২০০৮)। Encyclopedia of entomology (2nd ed. সংস্করণ)। Dordrecht: Springer। পৃষ্ঠা 824। আইএসবিএন 9781402062421।
- ↑ Bonney, KM (২০১৪)। "Chagas disease in the 21st Century: a public health success or an emerging threat?"। Parasite। 21: 11। ডিওআই:10.1051/parasite/2014012। পিএমআইডি 24626257। পিএমসি 3952655 ।