প্রাসের গতি
কোনো একটি বস্তুকে অনুভূমিকের সাথে তির্যকভাবে উপরের দিকে নিক্ষেপ করা হলে তাকে প্রাস বলে। আর এই ধরনের গতিকে প্রাসের গতি বলে। প্রাসের গতিপথ একটি প্যারাবোলা বা পরাবৃত্ত। এ ধরনের গতি দ্বিমাত্রিক গতি। বাতাসের বাধা উপেক্ষা করলে প্রাসের গতি কেবলমাত্র অভিকর্ষ বলের ক্রিয়ায় হয়। প্রাস সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছালে এর বেগ সর্বনিম্ন হয়। আবার সর্বাধিক উচ্চতায় প্রাসের গতি একমাত্রিক হয়। প্রাস প্রক্ষেপণ বিন্দু হতে অনুভূমিক দিকে সর্বাধিক যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে প্রাসের পাল্লা (Range) বলে।
প্রাসের গতিপথে অনুভুমিকের সাথে বস্তুর সরণ হয় এর কারণে। প্রাসের গতিতে বস্তুর বেগের আনুভূমিক উপাংশ বা অক্ষের উপাংশ স্থির থাকে (বাতাসের বেগ উপেক্ষা করা হয়েছে) । কিন্তু বেগের অক্ষের উপাংশ সর্বদা পরিবর্তনশীল । প্রথমে তা কমতে থাকে মানে মন্দন ঘটে । যখন অক্ষের বেগ 0 হয় তখন বস্তুটি সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌছে গেছে।
এই মন্দনের কারণ বস্তুটি অভিকর্ষজ ত্বরণের বিরুদ্ধে গতিশীল। তাই ঋণাত্মক g এর কারণে মন্দন ঘটে । সর্বোচ্চ উচ্চতায় যাওয়ার পর অভিকর্ষজ ত্বরণ কাজ করে, তাই অক্ষের উপাংশের মানের বেগ বৃদ্ধি পায় । ভূমি স্পর্শ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ত্বরণ ঘটে।
কোনো বস্তুর বিচরণকাল বা উড্ডয়নকাল বা কতোক্ষণ হাওয়াতে ভাসবে তা আদিবেগের অক্ষের উপাংশের () উপর নির্ভরশীল।
কোনো বস্তুকে একটি নির্দিষ্ট বেগে সর্বোচ্চ পাল্লা পেতে হলে কোণে নিক্ষেপ করতে হবে।
প্রাসে বস্তুর ত্বরণ
[সম্পাদনা]প্রাসের গতিতে আনুভূমিক বরাবর বস্তুর কোনো ত্বরণ থাকে না। তবে উলম্ব বরাবর অভিকর্ষ ত্বরণ কাজ করে। তাই আমরা যদি ত্বরণকে দুইটি উপাংশে ভাগ করি তবে আমরা দেখতে পাই,
তাহলে যেকোনো নির্দিষ্ট সময়ে ত্বরণ হবে,
প্রাসে বস্তুর বেগ
[সম্পাদনা]যদি বস্তুটিকে আদিবেগে এবং আনুভূমিকের সাথে কোণে নিক্ষেপ করা হয় তবে এর বেগকে ভেক্টর আকারে লিখলে,
যেখানে,
উড্ডয়নকালে অপরিবর্তিত থাকে এবং অক্ষ বরাবর বেগের উপাংশ অভিকর্ষের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়।
তাহলে যেকোনো নির্দিষ্ট সময়ে বেগ হবে
প্রাসে বস্তুর সরণ
[সম্পাদনা]যেকোনো সময় এ বস্তুর আনুভূমিক ও উলম্ব বরাবর সরণ হবে,
তাহলে সরণ হবে,
প্রাসের গতির বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]কোনো বস্তুকে আদিবেগে অনুভূমিকের সাথে কোণে নিক্ষেপ করলে এবং যদি বস্তুটির উপর অভিকর্ষের বাধা ছাড়া অন্য কোনো বাধা ক্রিয়া না করে তবে,
সর্বাধিক উচ্চতা:
বিচরণ কাল:
পাল্লা:
সর্বাধিক পাল্লা:
বস্তুটির প্রাসের চাপের দৈর্ঘ্য:
আরো তথ্য
[সম্পাদনা]ক্রিকেট খেলায় আমরা ব্যাটসম্যানকে ছক্কা মারতে দেখি, তখন অনুভূমিকভাবে বল বাউন্ডারির বাইরে গিয়ে পড়ে। এই গতিই হচ্ছে প্রাসের গতি। [১]
দৈনন্দিন জীবনে প্রায় প্রতিদিনই আমরা প্রাসের গতি দেখতে পাই। বন্দুকের গুলি ছোড়ার ফলে যে গতির সৃষ্টি হয় তা প্রাসের গতি। কামানের গোলা কোন কোণে কত বেগে ছুড়তে হবে এবং তা কোথায় গিয়ে পড়বে তা প্রাসের সাহায্যে খুব সহজে নির্ণয় করা যায় । 90° ব্যতীত যেকোনো কোণে নিক্ষিপ্ত বস্তু প্রাসের গতি সৃষ্টি করে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ প্রামাণিক, মোঃ গোলাম হোসেন (২০১৬)। পদার্থবিজ্ঞান, প্রথম পত্র, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি। অক্ষরপত্র প্রকাশনী।