বিষয়বস্তুতে চলুন

ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৯৬

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৯৬

← ১৯৯১ ১৯৯৬-এর
২৭ এপ্রিল, ২ মে, ৭ মে
১৯৯৮ →

লোকসভার কয়টি আসন (৫৪৫টি)
নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন ছিল ২৭৩টি আসন
  প্রথম দল দ্বিতীয় দল তৃতীয় দল
  110x110px
নেতা/নেত্রী এইচ ডি দেবে গৌড়া অটল বিহারী বাজপায়ী পি ভি নরসিংহ রাও
দল জেডি বিজেপি কংগ্রেস
জোট সংযুক্ত মোর্চা (ভারত) ভারতীয় জনতা পার্টি মোর্চা কংগ্রেস মোর্চা
নেতার আসন কর্ণাটকের রাজ্যসভার সদস্য লক্ষ্নৌ লোকসভা আসনের সদস্য বেহরামপুর লোকসভা আসনের সদস্য
আসন লাভ ১৯৯২ ১৮৭ ১৪০
আসন পরিবর্তন প্রযোজ্য নহয় বৃদ্ধি ৬৭ -৯২
জনপ্রিয় ভোট ৯৭,১১৩,২৫২ ৬৭,৯৪৫,৭৯০ ৯৬,৪৪৩,৫০৬
শতকরা ২৯% ২০.২৯% ২৮.৮০
সুইং প্রযোজ্য নয় +০.১৮ -৭.৪৬

নির্বাচনের পূর্বে প্রধান মন্ত্রী

পি ভি নরসিংহরাও
কংগ্রেস মোর্চা

১১শ ও ১২শ প্রধান মন্ত্রী

অটল বিহারী বাজপায়ী (ভারতীয় জনতা পার্টি)
এইচ ডি দেবে গৌড়া
সংযুক্ত মোর্চা

ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৯৬ ১১শ লোকসভার সদস্যদের নির্বাচন করতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচনের ফলাফল এক ওলমা সংসদ দিতে সক্ষম হয়েছিল ও ফলস্বরূপ ১৯৯৮ সালে ভারতবর্ষে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হয়েছিল। মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে দেশটি ৩জন প্রধান মন্ত্রী লাভ করেছিল। মোট ৫৪৫টি লোকসভার আসনের ভিতরে ৩৩২জন সদস্যের সমর্থন পেয়ে সংযু্ক্ত মোর্চার নেতা এইচ ডি দেবে গৌড়া ভারতের ১৪তম প্রধান মন্ত্রী হয়েছিলেন।

পটভূমি

[সম্পাদনা]

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সরকারের প্রধান মন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও বিভিন্ন কেলেংকারী ও সরকারি কাজ সুচারুরূপে পরিচালনা করতে না পারার দোষে অভিযুক্ত হয়ে পরবর্তী নির্বাচনের মুখোমুখি হয়েছিল। তাঁর কার্যকালে ৭জন কেবিনেট সদস্যই পদত্যাগ করেছিল। স্বয়ং রাওর বিপক্ষেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ১৯৯৫ত কংগ্রেস থেকে চলে গিয়ে অর্জুন সিং ও নারায়ণ দত্ত তিওয়ারী অখিল ভারতীয় ইন্দিরা কংগ্রেস (তিওয়ারী) দল গঠন করেছিল।

ফলাফল

[সম্পাদনা]

এই নির্বাচনটিতে জন-সাধারণ এক অস্পষ্টরায় দিয়েছিল ও যার ফল ছিল এক ওলমা সংসদ। সমীক্ষকরা কংগ্রেসের এরকম শোচনীয় ফলাফলের জন্য প্রধানমন্ত্রী রাওর ব্যক্তিগত অজনপ্রিয়তা ও দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করেছিল। বিজেপি লোকসভার বৃহত্তম দল ছিল যদিও এই দলটির লাভ করা জনপ্রিয় ভোটের কোনো হার বৃদ্ধি হওয়া ছিল না বা নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাও পাওয়াও ছিল না।[]

ওয়েষ্টমিনিষ্টার দস্তুর মতে, রাষ্ট্রপতি শংকর দয়াল শর্মাবিজেপির নেতা অটল বিহারী বাজপায়ীকে সরকার গঠন করতে আহ্বান জানান।শপথ গ্রহণ করা নতুন প্রধান মন্ত্রীকে ২ সপ্তাহর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে দেওয়া হয়। এই সময়সীমার মধ্যে বিজেপি এক মোর্চা সরকার গঠনের উদ্দেশ্যে আঞ্চলিক ও মুসলমান দলগুলির সমর্থন লাভ করার প্রচেষ্টা চলালে যদিও দলটির কিছু নীতি-আদর্শের প্রতি শঙ্কা থাকার জন্যই এই কাজে সফল হয়নি৷ ২৮ মে তারিখে বাজপেয়ী বুঝতে পারেন যে, বিজেপি লোকসভার ৫৪৫জন সদস্যর মধ্যে ২০০র অধিক সদস্যের সমর্থন লাভ করা সম্ভব নয়। তাই আস্থা ভোটের মুখোমুখি হওয়ার সাথে বাজপায়ী পদত্যাগ করেন ও তারপর ১৩ দিনে সরকারের পতন ঘটে।[]

দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সরকার গঠন করতে মন করেনি। তার সাথে দলটি জনতা দল প্রমুখ্য বহু ছোট ছোট দলকে একত্রিত করে গঠিত করা সংযুক্ত মোর্চাকে সমর্থন জানাতে সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধান মন্ত্রীরূপে শপত নেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি দেবে গৌড়াই[] কিন্তু এবছর কংগ্রেস সমর্থন উঠিয়ে নেয়, যার ফলে সরকারটি সংকটের মুখে পড়ে। অবশেষে পুনর্নিবাচন এড়িয়ে চলতে দু'পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া হয়। এই বোঝাপড়া শেষে কংগ্রেস একজন নতুন নেতা ইন্দের কুমার গুজরাল-এর অধীনে গঠন হওয়া সংযুক্ত মোর্চা সরকারটিকে সমর্থন করতে রাজী হয়। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি কংগ্রেসের সাথে আলোচনা না করে গ্রহণ করতে বাধা আরোপ করা হয়। ১৯৯৭র ২১ এপ্রিলে গুজরাল প্রধান মন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করেন।

গুজরাল যদিও কংগ্রেসের থেকে তিক্ত ব্যবহার পেয়েছিলেন, তথাপি দলটির সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গুজরাল কংগ্রেস থেকে নয়, তাঁর নিজের দল 'জনতা দল'-এর থেকেই অসুবিধা পান। 'সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন' বা সি.বি.আই বিহারের রাজ্যপাল এ. আর. কিডওয়াই থেকে পশুখাদ্য ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব-এর বিরুদ্ধে গোচর তেরার জন্য অনুমতি চাইলেন। রাজ্যপাল গোচর তেরার অনুমতি দিলেন। সংযুক্ত মোর্চার ভিতর থেকে তথা বাহির থেকেও যাদবের পদত্যাগের জন্য দাবী উঠল। যাদব এই দাবী মানি নেন নি। পশুখাদ্য কেলেংকারীর তদন্তের দায়িত্বে থাকা সি.বি.আইর সঞ্চালক যোগীন্দর সিংকে বদলি করা হয়। ফলস্বরূপ যাদবকে সরকারি রক্ষণাবেক্ষণ দিতে বলে বহু প্রধান মন্ত্রী আঙুল তুললেন। এরফলে লালু প্রসাদ যাদব জনতা দলের মধ্যে তাঁর আধিপত্য কমে আসছে বলে অনুভব করাতে দলটিকে বিভাজন ঘটান ৩ জুলাই ১৯৯৭এ রাষ্ট্রীয় জনতা দল বলে নতুন একটা গঠন করে। জনতা দলের ৪৫জন সাংসদের ১৭জন নতুন দলটিতে যোগদান করে। অবশ্য যাদবের এই নতুন দলটি সংযুক্ত মোর্চার অংশীদার হয়। ২৮ আগস্ট ১৯৯৭তে জৈন কমিশনের প্রতিবেদন সরকারের হাতে জমা দেওয়া হয়। ১৬ নভেম্বর ১৯৯৭এ এই প্রতিবেদন সংবাদ মাধ্যে প্রকাশ করি দেয়। জৈন কমিশনের প্রতিবেদনে রাজীব গান্ধীর হত্যা ষড়যন্ত্রে দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাঝাগম (ডি এম কে) জড়িত থাকা বলে উল্লেখ থাকার অভিযোগ উঠে। সেই অছিলাতে কংগ্রেস মোর্চা সরকার থেকে ডি এম কে দলের মন্ত্রীদেরকে অত্যন্ত হেঁচা প্রয়োগ করে। সংযুক্ত মোর্চা এই হেঁচাতে সহমত হয় নি ও ২৮ নভেম্বর ১৯৯৭এ গুজরাল রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ পত্র দাখিল করেন।[] ৪ ডিসেম্বর ১৯৯৭এ ১১শ লোকসভা ভঙ্গ করে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গুজরাল ১১ মাস প্রধান মন্ত্রী হয়েছিলেন। এর মধ্যে ৩ মাস তিনি তদারকী প্রধান মন্ত্রী হয়েছিলেন।[][]

প্রাক-নির্বাচনী মোর্চার ফলাফল

[সম্পাদনা]
এপ্রিল-মে ১৯৯৬, লোকসভা নির্বাচনের সারাংশ
দল ও মোর্চা ভোট প্রাপ্ত ভোটর % পরিবর্তন আসন পরিবর্তন
   ভারতীয় জনতা পার্টি 67,950,851 20.29 +0.18 161 +41
   ভারতীয় জনতা পার্টির সহযোগী দল 13,402,4027,256,086
4,989,994
1,156,322
4.012.17
1.49
0.35
——
+0.69
+0.23
268
15
3
——
+11
+2
   ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস 96,455,493 28.80 -7.46 140 -92
   রাষ্ট্রীয় মোর্চা 47,991,40727,070,340
10,989,241
9,931,826
14.338.08
3.28
2.97
—-3.76

-0.02
7946
17
16
—-13

+3
   বাম মোর্চা 30,464,03420,496,810
6,582,263
2,105,469
1,279,492
9.106.12
1.97
0.63
0.38
—-0.04
-0.52
-0.01
-0.04
5232
12
5
3
—-3
-2
+1

   তামিল মানিলা কংগ্রেস 7,339,982 2.19 20
   দ্রাবিড়া মুন্নেত্রা কড়গম 7,151,381 2.14 +0.05 17 +17
   বহুজন সমাজ পার্টি 13,453,235 4.02 +2.41 11 +9
   অন্যান্য বিজয়ী দল 14,227,6352,534,979
2,560,506
4,903,070
757,316
340,070
180,112
337,539
124,218
109,346
382,319
1,287,072
581,868
129,220
4.230.76
0.76
1.46
0.23
0.10
0.05
0.10
0.04
0.03
0.11
0.38
0.17
0.04
—+0.46
+0.22

-0.08
-0.06
-0.45




-0.16

+0.02
288
5
4
2
1
1
1
1
1
1
1
1
1
—+8
+4




+1
+1
+1
+1
-5

+1
   থেকেজিত দল 15,395,309 4.61 0
   নির্দলীয় 21,041,557 6.28 +2.12 9 +8
   মনোনীত আসন(ইংগ-ভারতীয়) 2
মোট 334,873,286 100% 545

Source: Electoral Commission of India, Statistical Report on General Elections, 1996 to the 11th Lok Sabha[]

নির্বাচনোত্তের সংযুক্ত মোর্চা

[সম্পাদনা]
মোর্চা দল আসন ভোটর %
সংযুক্ত মোর্চা
আসন: 192
ভোটর %:~28.52%
রাষ্ট্রীয় মোর্চা 79 14.33
বাম মোর্চা 52 9.10
তামিল মানিলা কংগ্রেস 20 2.19
দ্রাবিড়া মুন্নেত্রা কড়গম 17 2.14
অসম গণ পরিষদ 5 0.76
অন্যান্য ক্ষুদ্র দল 19 প্রযোজ্য নয়

Source: Muse Journal[]

দেবে গৌড়ার নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত মোর্চা সরকারের সমর্থন

[সম্পাদনা]
সরকারের সমর্থন বাড়ানো মোর্চা/দল
সংযুক্ত মোর্চা (192)
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (140)
মোট: 332 ভোট (61.1%)

ইন্দের কুমার গুজরালর নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত মোর্চা সরকারের সমর্থন

[সম্পাদনা]
সরকারের সমর্থন বাড়ানো মোর্চা/দল
সংযুক্ত মোর্চা (178)
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (140)
মোট: 318 ভোট (58.7%)

St. Petersburg Times[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]