ভুটানের ইতিহাস
ভুটানের প্রাথমিক ইতিহাস বেশ অস্পষ্ট এবং পৌরাণিক কাহিনীতে ভরা। কিছু অবয়ব এটা প্রমাণ করে যে, খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ এর পূর্বেও এর অস্তিত্ব ছিল। একটা কিংবদন্তি মতে, এই দেশটি কুচ-বিহার এর রাজা সঙ্গলদ্বীপ ৭ম শতাব্দী সময়টায় রাজত্ব করতেন।[১] কিন্তু ৯ম শতাব্দীতে তিব্বতী বৌদ্ধ সন্যাসীদের পালিয়ে আসার পূর্বে এ সম্পর্কে খুব একটা স্পষ্ট ধরনা পাওয়া যায় না। ১২তম শতকে ড্রুকপা কাগিউপা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আজ পর্যন্ত ভুটানে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের প্রাধান্য রয়েছে। দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাস তাদের ধর্মীয় ইতিহাসের সাথে কঠিন বন্ধনে আবদ্ধ এবং বিভিন্ন মঠ ও মঠের স্কুলের সাথে সম্পর্কযুক্ত।[২]
ভুটান হচ্ছে সেই অল্পসংখ্যক দেশগুলোর একটি যারা তাদের ইতিহাস জুড়ে স্বাধীন। ভুটানকে জয় করা, দখল করা বা বাইরের কারও দ্বারা শাসন করা কখনো সম্ভব হয়নি (তবে সাময়িক উপজাতীয় শাসন ব্যতীত)। ৭ম থেকে ৯ম শতাব্দীতে কামরুপ রাজত্ব বা তিব্বতীয় সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল এমন ধারণা থাকলেও তা পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে কখনো প্রমাণ করা যায়নি। ঐতিহাসিক বিবরণে এটা স্পষ্ট যে, ভুটান ক্রমাগতভাবে এবং সফলভাবে তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে চলেছে।[৩]
ভুটানের একত্রীকরণ ঘটে ১৬১৬ সালে যখন পশ্চিমা তিব্বতের গায়াঙ নামগিয়াল নামক একজন লামা যিনি কিনা ঝাবধ্রুং রিনপোচে নামেও পরিচিত, প্রতিদ্বন্দী ধর্মীয় বিদ্যালয়গুলোকে পরাস্ত করে, ধমীয় আইন ব্যবস্থার প্রয়োগ করে সাংস্কৃতিক ও নাগরিক প্রশাসক পদ্ধতি সমর্থিত একজন শাসক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার মৃত্যুর পর, পরবর্তী ২০০ বছরের জন্য ঝাবধ্রুনের সাম্রাজ্য গৃহযুদ্ধের পাকে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। ১৮৮৫ সালে উজিয়েন ওয়াংচুক ক্ষমতা দখলে সক্ষম হন এবং উপমহাদেশে ব্রিটিশদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।[২]
১৯০৭ সালে, উজিয়েন ওয়াংচুক ভুটানের উত্তরাধিকারী শাসক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি মুকুট পড়েন এবং রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে ড্রেক গিয়ালপো (ড্রাগন কিং) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১০ সালে রাজা উগিযেন এবং ব্রিটিশদের মধ্যে পুনাখা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যেখানে উল্লেখ থাকে যে, যদি বহিরাগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভুটান তাদের পরামর্শ গ্রহণ করে তবে ভুটানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ব্রিটিশ ভারত হস্তক্ষেপ করবে না। ১৯২৬ সালে ইউজেন ওয়াংচুক মারা গেলে তার ছেলে জিগমে ওয়াংচুক শাসনকর্তা হয় এবং ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর নতুন ভারতীয় সরকার স্বতন্ত্র দেশ হিসাবে ভুটানকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৪৯ সালে ভারত ও ভুটান শান্তি ও সম্প্রীতির চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে উল্লেখ থাকে যে, ভারত ভুটানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না, তবে তাদের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবে। ১৯৫২ সালে জিগমে দর্জি ওয়াংচুক ভুটানকে তার বিচ্ছিন্নতা থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসা এবং পরিকল্পিত উন্নয়নের একটি নকশা বাস্তাবায়নে সফল হন। নতুন একটি আইনের সাথে সাথে ভুটানের জাতীয় পরিষদ, রয়্যাল ভুটানিজ আর্মি এবং রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিস প্রতিষ্ঠিত হয়।[২] ১৯৭১ সালে ভুটান জাতিসংঘের সদস্য হন।
১৯৭২ সালে, জিগমে সিংয়ে ওয়াংচাক সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি আধুনিক শিক্ষা, শাসনের বিকেন্দ্রীকরণ, জলবিদ্যুৎ ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন এবং গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নের ওপর জোর দেন। তিনি সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি যিনি "সর্বজনীন জাতীয় সুখ" এর বিস্তৃত উন্নয়ন দর্শনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ছিলেন। এটা অনস্বীকার্য যে উন্নয়নের অনেক মাত্রা আছে এবং শুধুমাত্র অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রাই যথেষ্ট নয়। ভুটানের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট হয়ে ২০০৮ এ নতুন সংবিধান প্রবর্তনের অপেক্ষায় না থেকে তিনি ২০০৬ এর ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন। তার পদ্যাগের পর পুত্র জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভুটানের রাজা হন।[২]
পূর্ব ইতিহাস
[সম্পাদনা]ভুটানে পাওয়া নিওলিথিক সরঞ্জাম এই ইঙ্গিত দেয় যে, হিমালয় অঞ্চলে মানুষ অন্তত ১১০০০ বছর ধরে বসবাস করছে। ভুটান এবং দক্ষিণ এশিয়ার নিকটবর্তী হিমালয়বেষ্টিত এলাকার প্রাচীনতম অধিবাসীরা সিন্ধু উপত্যকায় গড়ে ওঠা সভ্যতা হতে আগত।
উৎপত্তি এবং শুরুর দিকের উপনিবেশ, ৬০০-১৬০০
[সম্পাদনা]খুব সম্ভব তিব্বতের একটি অংশে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী অস্পষ্ট শিক্ষালয়ের পেছনে লৌমন (সোজাসুজিভাবে, দক্ষিণের অন্ধকার) বা মনিউল (অন্ধকার ভূমি, তিব্বত-বর্মণ ভুটানের মানুষদের মনপা একটি তথ্যসূত্র) নামক রাজ্য ছিল। ধারণা করা হয় ১০০ থেকে ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মনিউল এর অস্তিত্ব ছিল। ভুটানের কিছু কিছু পণ্ডিত তাদের মাতৃভূমির ক্ষেত্রে যে তথ্যসূত্র ব্যবহার করেছেন তাতে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, প্রাচীন ভুটানিজ ও তিব্বতের ইতিহাসে পাওয়া লৌমন সেনডেনজং (দক্ষিণী মন চন্দনের দেশ) এবং লৌমন খাসি (দক্ষিণী মন চার পন্থার দেশ) নামের অস্তিত্বও থাকতে পারে। সংস্কৃতের রূপান্তরিত শব্দ ভোতা-এন্ত (ভোত এর শেষ) অথবা ভূ-উত্তান (মানে পর্বতমালা)- ঐতিহাসিকদের দ্বারা ভুটানের নামের উৎস হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছে এভাবে, যা ১৯ শতকের শেষের দিকে সাধারণ বিদেশী ব্যবহারের মাধ্যমে শুরু হয় এবং ভুটানে শুধুমাত্র দাপ্তরিক কার্যে ব্যবহৃত হয়। ১৭শ শতাব্দী থেকে দেশটির ঐতিহ্যবাহী নাম ছিল ড্রুকপা- দেশটির প্রধান বৌদ্ধ সম্প্রাদয়ের তথ্যসূত্র মতে ড্রুকপার দেশ, ড্রাগন মানুষ বা বজ্র ড্রাগনের দেশ।[৪]
কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে, প্রাক ঐতিহাসিক যুগে দেশটির অধিবাসীরা হিংস্র পাহাড়ী আদিবাসী ছিল। মনপা উত্তর ভুটানে বিস্তৃতি লাভ করে, যে না ছিল তিব্বতীয় না ছিল মঙ্গলীয় বংশের। মনিউলের জনগণ শামাননিস্টিক বা ওঝাতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিল, যা প্রকৃতির পূজা এবং ঈশ্বর এর অস্তিত্ব ও শয়তানী শক্তির প্রতি গুরুত্ব বহন করত। এই সময়ের শেষ দিকে, ঐতিহাসিক কিংবদন্তীগুলো উল্লেখ করে যে, মনিউলের পরাক্রমশালী রাজা ডুয়ার্স নামে পরিচিত দক্ষিণ ভারতের নব্য আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের অধীনস্থ অঞ্চলগুলো দখল করে নেয়।[৪]
বৌদ্ধদের আগমন
[সম্পাদনা]সপ্তম শতাব্দীতে বৌদ্ধরা প্রথম ভুটানে আসে। তিব্বতী রাজা সংস্তান গাম্পো[৫] (রাজত্বকাল ৬২৭-৪৯), একজন ধর্মান্তরিত বৌদ্ধ, মধ্য ভুটানের বুমথাঙ-এ এবং পারো উপত্যকার কিইচু’তে (পারো’র কাছাকাছি) দুইটি মন্দির নির্মাণের আদেশ দেন।[৬] ৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে[৭] নির্বাসিত ভারতীয় অধিপতি সিন্ধু রাজা[৮] (এছাড়াও কুনজম, সেন্ধা গিয়াব, চাখার গিয়ালপো) চাখার গুথো প্রাসাদে বসে বুমথাঙে সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৯]:৩৫[১০]:১৩
বৌদ্ধধর্ম প্রতিস্থাপিত হলেও ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত তিব্বতে বন ধর্ম চর্চা অব্যাহত ছিল। পরে, বৌদ্ধ ধর্ম বন ধর্ম এবং এর বিশ্বাসীদের দলে ভিড়িয়ে নিতে সমর্থ হয়। দেশের অনেক উর্বর উপত্যকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগায় বৌদ্ধ ধর্ম পাকাপোক্ত স্থান করে নেয় এবং ঐক্যবদ্ধ সংঘে রূপ নেয়। বৌদ্ধ ধমীয় সাহিত্য ও পুস্তকসমূহ ভুটানের নথিভূক্ত ইতিহাসের আরম্ভ করেছিল।
৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দে, পদ্মসম্ভাবা নামক এক বৌদ্ধ সন্যাসী (গুরু রিমপোচে নামে ভুটানে পরিচিত এবং কখনও কখনও দ্বিতীয় বুদ্ধ হিসাবে উল্লেখ করা হয়) স্থানীয় রাজাদের আমন্ত্রণে ভারত থেকে ভুটানে আসেন। জনশ্রুতি আছে, আট শ্রেণীর দেবতার বশে এনে রাজাকে ধর্মান্তরিত করে গুরু রিমপোচে তিব্বতে চলে যান। তিব্বত থেকে ফিরে আসার পর, তিনি পারো উপত্যকায় নতুন মঠ নির্মাণের দায়িত্ব পালন করেন এবং বামথং তার সদর দফতর স্থাপন করেন। ঐতিহ্য অনুসারে, তিনি নিংগমাপা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যারা “প্রাচীন সম্প্রদায়” লাল টুপি সম্প্রদায়ের মহায়ানা বৌদ্ধধর্ম নামেও পরিচিত ছিল, যা কিনা একসময় ভুটানের প্রভাবশালী ধর্মে পরিণত হয়েছিল। গুরু রিমপোচে মহান ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় ভূমিকা পালন করেন যা কিনা ভুটানের কাছে তাকে তন্ত্রের সারগ্রন্থ বর্ণনাকারী প্রাকৃতিক শক্তি হিসাবে এক ঋষিরূপে তুলে ধরে। গুরুর আশ্রমে, তিব্বতী অভিবাসনে নতুন সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অবদানে ভারতীয় প্রভাব বৃদ্ধিতে একটি অস্থায়ী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
এই সময়ে কোন কেন্দ্রীয় সরকার ছিল না। তবে, নবম শতাব্দীর প্রথমার্ধে ছোট স্বাধীন রাজতন্ত্রগুলি বিকাশ লাভ করে। প্রত্যেকটি একজন দেব (রাজা) দ্বারা শাসিত হতো, যাদের মধ্যে কয়েকজন নিজেদেরকে ঐশ্বরিক জাতি হিসাবে দাবি করতেন। বামথাং রাজত্ব এই ছোট জাতিসত্ত্বাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল। তিব্বতের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা (ভুটানের দাপ্তরিক জাতীয় ভাষা Dzongkha-তে lam) ভুটানে তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল এবং যৌথ তিব্বতী-মঙ্গলীয় সামরিক অভিযাত্রাগুলোয় সদস্যরূপে উর্বর উপত্যকাগুলোতে বসতি স্থাপন করে। ১১তম শতব্দীর মধ্যে সমগ্ ভুটান তিব্বতী-মঙ্গলীয় সামরিক বাহিনী দখল করে নিয়েছিল।[১১]
সাংস্কৃতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা
[সম্পাদনা]১০ম শতাব্দীতে, ভুটানের রাজনৈতিক উন্নয়ন তার ধর্মীয় ইতিহাসে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। ১১তম শতাব্দীতে তিব্বতের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পতনের পর কিছুসংখ্যক উপসম্প্রদায়ের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। ১৪তম শতাব্দীতে তিব্বতে এবং ভুটানের মঙ্গোল ভূপতিরা তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক পতন না হওয়া পর্যন্ত উপসম্প্রদায়ের পরম্পরাকে সমর্থন করে চলে। এই সময়ে, তিব্বতের অরাজকতার পর গেলুগপা বা হলুদ টুপি বিদ্যালয় একটি শক্তিশালী বাহিনী হয়ে ওঠে, যার ফলে ভুটানে বিভিন্ন বিরোধী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভিক্ষুদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই ভিক্ষুদের মধ্যে ছিলেন লৌপা উপসম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কারগিউপা বিদ্যালয়, যেটাকে ভূমিকা আরোপে কৌশলগত কারণে জং হিসাবে প্রবর্তন করা হয়। যদিও লৌপা উপসম্প্রদায়টিকে ১২তম শতাব্দীতে তিব্বতী বৌদ্ধ ভিক্ষু ফাজো ড্রুগম শিগপো’র নেতৃত্বে অন্য উপসম্প্রদায় ড্রুকপা সফলভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয় এবং ১৭ শতাব্দী পর্যন্ত এটি ধর্মান্তরিতর কাজ চালিয়ে যায়। ড্রুকপা ভুটান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং অবশেষে এটি ধর্মীয় অনুশীলনের একটি প্রভাবশালী মাধ্যম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১২তম ও ১৭তম শতকের মাঝামাঝি সময়ে, নিংগমাপা বৌদ্ধধর্মের পুরাতন রূপ রাহুগ্রস্থ হওয়ায় দুটি কারগিউপা উপসম্প্রদায় নিজ নিজ জং থেকে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দীতায় নামে।
দিব্যতান্ত্রিক সরকার, ১৬১৬-১৯০৭
[সম্পাদনা]তিব্বতীয় আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে সংহতি এবং পরাজয়, ১৬১৬-৫১
[সম্পাদনা]১৭ শতকে তিব্বতীয় রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হয়ে একটি ধর্মভিত্তিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রাক-আধুনিক ভুটানের আবির্ভাব ঘটে। এই ধর্ম ভিত্তিক সরকার নির্বাসিত ড্রুকপা ভিক্ষু গাওয়াং নামগিয়াল এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়, যিনি ১৬১৬ সালে ভুটানে এসে পৌছেন। Lhasa-তে দালাই লামার (মহাসাগর লামা) নেতৃত্বে গেলুগপা উপসম্প্রদায়ের নিকট হতে স্বাধীনতা চান। প্রতিদ্বন্দ্বী উপসম্প্রদায়ের নেতা এবং তিব্বতী আক্রমণকারীদের উপর ধারাবাহিক জয়লাভের পর গাওয়াং নামগিয়াল ভুটানের আঞ্চলিক ও আধ্যাত্মিক নেতা হিসাবে ঝাবদ্রুং পদবী (যার চরণযুগলে সমর্পন বা পশ্চিমা নানান উৎস মতে ধর্মের রাজা) গ্রহণ করেন। ভুটানে প্রথম মহান ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে তাকে বিবেচনা করা হয়, তিনি ড্রুকুল নামে একটি জায়াগায় শক্তিশালী ভুটানি নেতাদের পরিবারগুলোকে একত্রিত করেন। তিনি দূর্ভেদ্য জং (Dzong) এর একটি জাল তৈরি করেন এবং বিধিবদ্ধ আইন এর এমন একটি পদ্ধতি প্রচার করতে থাকেন যা স্থানীয় ভূপতিদের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ এর অধীনে আনে এবং তিব্বতী আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ভুটানকে জোরদার ভূমিকায় অবতীর্ণ করে। বিংশ শতাব্দীর শেষে দিকেও অনেক জং বিদ্যমান ছিল।
১৬২৭ সালে তিব্বতের সাথে প্রথম যুদ্ধের সময় পর্তুগিজ জেসুইটস এসটডভাও সাসেল্লা ও জোয়াও ক্যাব্রাল প্রথম নথিভূক্ত ইউরোপীয় হিসাবে তিব্বত যাওয়ার পথে ভুটানে পৌছান। তারা গুয়াং নামগিয়াল এর সাথে সাক্ষাত করেন, তাকে আগ্নেয়াস্ত্র, বারুদ ও একটি টেলিস্কোপ উপহার দেন এবং তাকে তিব্বতের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে তাদের নেয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু ঝাবড্রুং তাদের সেই আহ্বানে সাড়া দেননি। আট মাসব্যাপী অবস্থানের পর সাসেল্লা তাদের ভ্রমণের বিশদ রিপোর্ট এর উপর ভিত্তি করে একটি সুদীর্ঘ চিঠি লেখেন চাগরি মঠে বসে। বিরল এই রিপোর্টটি ঝাবড্রুং-এর শেষ রিপোর্ট ছিল।
তিব্বতী সেনাবাহিনী ভুটানকে ১৬২৯ সালের দিকে আক্রমণ করে, ১৬৩১ এবং ১৬৩৯ সালে পুনরায় আক্রমণ করে গাওয়াং নামগিয়েল এর জনপ্রিয়তা ঠেকানোর আশায়। ১৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে গাওয়াং নামগিয়াল কারমা টেনকিয়ং-এর সেনাবাহিনীকে পঞ্চ লামার যুদ্ধে পরাজিত করেন। আক্রমণগুলি ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় পশ্চিম ও মধ্য ভুটানে ড্রুকপা উপসম্প্রদায়ের আরও শক্ত অবস্থান তৈরি হয় যা গাওয়াং নামগিয়ালকে করে তোলে অদ্বিতীয়। ক্ষমতায়নে স্বীকৃতি পেতে, কুচবিহার থেকে ডুয়ার্স(বর্তমানে উত্তরপূর্ব পশ্চিমবঙ্গে) পশ্চিম নেপাল ও পশ্চিমা তিব্বতের লাদাখে বিভিন্ন শুভেচ্ছা দূত পাঠান। লাদাখের শাসকও গাওয়াং নামগিয়ালের রাজ্যে কয়েকটি গ্রাম ছেড়ে দেন।
ভুটানের ঝামেলার শেষ ছিল না। যাইহোক, ১৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দে একটি যৌথ মঙ্গোলীয়-তিব্বতী বাহিনী ভুটান, সিকিম ও নেপাল থেকে পালিয়ে যাওয়া নিংমাপা উদ্বাস্তুদের ধ্বংস করতে চায়। ১৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে মঙ্গোলীয়ানরা তিব্বতে ধর্মীয় ও বেসামরিক শাসনভার গ্রহণ করে এবং গেলুগপা ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করে। ভুটানি প্রতিদ্বন্দ্বী গাওয়াং নামগিয়াল মোঙ্গলে অনাধিকার প্রবেশকে অনুপ্রাণিত করেন, তবে মঙ্গল বাহিনী দক্ষিণী ভুটানের নিম্ন জলাভূমিতে তাদের সহজেই পরাজিত করে। ১৬৪৭ সালে আরেকটি তিব্বতী আক্রমণও ব্যর্থ হয়।
গাওয়াং নামগিয়ালের শাসনামলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে প্রধান হিসাবে আর মঠের প্রতিনিধিকে সহযোগী হিসাবে প্রশা্সনে অন্তভূর্ক্ত করা হতো। সেই মতে, জে খেনপো (ভূপতি এ্যাবট) সহায়ক এবং দিব্যতান্ত্রিক বেসামরিক সরকারের প্রধান হিসাবে ড্রুক দেশি (ভুটান এর প্রতিনিধি, পশ্চিমা উৎসমতে দেব রাজা) দ্বারা পরিচালিত হতো। ড্রুক দেশী একজন ভিক্ষুর পাশাপাশি গণমানুষের নেতাও ছিলেন। ১৯ শতকে, সাধারণত শেষের দিকে তিনি তিন বছর মেয়াদে নির্বাচিত হন, প্রাথমিক ভাবে একটি মঠ পরিষদ দ্বারা এবং পরবর্তীতে রাজ্য পরিষদ (Lhengye Tshokdu) কর্তৃক নির্বাচিত হন। রাজ্য কাউন্সিল ছিল একটি কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক অঙ্গ, যা ছিল আঞ্চলিক শাসক গৃহাধ্যক্ষ ঝাবড্রুং এবং ড্রুক দেশী এর আওতাধীন। সময়ের সাথে সাথে, ড্রুক দেশি আঞ্চলিক প্রশাসকদের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলের সবচেয়ে শক্তিশালী দলটির রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে আসেন। ঝাবড্রুং রাষ্ট্রের প্রধান এবং ধর্মীয় ও নাগরিক বিষয়ে চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ ছিলেন। ১৩তম শতাব্দীর জং-এ, বসন্ত, গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে সরকারী আসন ছিল থিম্ফুতে, শীতকালীন রাজধানী অবশ্য পুনাখা জং এ। ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দে থিম্ফুর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জায়গায় একটি জং স্থাপিত হয়। রাজ্যটি তিনটি অঞ্চলে (পূর্ব, মধ্য ও পশ্চিমে) বিভক্ত করা হয়, প্রতিটি অঞ্চলে একজন পেনলপ বা রাজ্যপাল নিযুক্ত ছির যারা প্রধান জং-এ একটি আসন পেতেন। জেলাগুলো জংপন বা জেলা কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত হতো, যাদের প্রধান কার্যালয় ছিল ক্ষুদ্রতম জংগুলোতে। পনলপ কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য সংযোজন কর, বিচারক, সেনা অধিনায়ক এবং গুপ্তচরদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতেন। তিব্বত ও ভারতের মধ্যকার বাণিজ্য এবং ভূমি খাজনা হতে বেশিরভাগ শুল্ক পাওয়া যেত।
গুয়াং নামগিয়াল এর আমলে Tsa Yig নামক আইনি বিধান মেনে চলা হতো, যা কিনা আধ্যাত্মিক ও নাগরিক শাসন এর বর্ণনা করত এবং সরকারের প্রশাসনকে তদানুযায়ী সামাজিক ও নৈতিক আচরণের জন্য বিধান প্রদান করে। বৌদ্ধ ধর্ম (ধর্মীয় আইন) অন্তর্নিহিত সহজাত কর্তব্য ও গুণাবলী নতুন আইনি বিধানের ক্ষেত্রে একটি সুবিশাল ভূমিকা পালন করে, যা ১৯৬০ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল।
প্রশাসনিক একত্রীকরণ এবং তিব্বতের সাথে লড়াই, ১৬৫১-১৭২৮
[সম্পাদনা]ভুটানকে অবিভক্ত রাখতে, ১৬৫১ সালে মারা গেলেও গাওয়াং নামগিয়ালের মৃত্যুর খবর পরবর্তী চুয়ান্ন বছর খুব সতর্ককতার সাথে গোপন করে রাখা হয়। প্রথম দিকে, গাওয়াং নামগিয়াল ধর্মীয় পশ্চাদপসরণ এর কথা বলেছিলেন। সেই সময়ে ভুটান, সিকিম বা তিব্বতের পরিস্থিতি ততটা অভূতপূর্ব ছিল না। গাওয়াং নামগিয়ালের অনুমিত ধর্মীয় পশ্চাদপসরণের সময়টাতে দাপ্তরিক নিয়োগের ক্ষেত্রে তার নাম ব্যবহার করা হতো এবং রোজকার খাবার তার বদ্ধ দরজার পাশে রেখে দেয়া হতো।
১৬৫১ সাল থেকে ১৬৮০ পর্যন্ত যথাক্রমে গাওয়াং নামগিয়ালের পুত্র এবং সৎ ভাই নামগিয়ালকে সফলভাবে অনুসরণ করেন। তারা ধর্মীয় এবং বেসামরিক শাসকদের অধীনে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে রাজত্ব শুরু করেন এবং নিজেদের নামে খুব কমই কর্তৃত্ব করেন। আরও ধারাবাহিকতা অর্জনের জন্য, প্রথম ঝাবড্রুং-এর দেহরূপে, বাণীরূপে বা তার চিন্তারূপে একাধিক পুনর্জন্মের ধারণা কে নতুন করে প্রচলন করেন জে খেম্পু এবং ড্রুক দেশি, যারা কিনা দ্বৈত সরকার পদ্ধতির মাধমে প্রবর্তিত পন্থায় ক্ষমতা বজায় রাখতে চান। শেষেরজনকে গাওংয়াং ১৮ শতকের মধ্যভাগে মারা যাওয়া নামগিয়ালের শারীরিক পুনর্জন্মকারী হিসাবে ধারণা করা হতো, তবে বাণী এবং আত্মার পুনর্জন্ম- ঝাবড্রুং রিনপোচের সাথে সংযুক্ত ব্যক্তিদের ধারণা করা হতো ২০শ শতকের প্রথম দিকে। ১৯৯০’র শুরুতে রাষ্ট্রীয় ধর্মের শক্তিও নতুন মঠস্থ বিধানের সাথে বৃদ্ধি পায়। ১৭ শতকের শেষের দিকে তিন বা ততোধিক ছেলেমেয়ে আছে এমন পরিবার থেকে অন্তত এক ছেলেকে মঠের জীবনযাত্রায় অন্তর্ভুক্ত হওয়াটা বাধ্যতামূলক ছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে, রাজ্য পরিষদ ড্রুক দেশি, পনলপ এবং জংপনদ-এর ধারাবাহিকতায় ক্রমেই ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে উঠেছিল এবং টংসার পনলপ ও পারো এবং পুনাখার জংপন, থিমফু, এবং ওয়াংদুই ফোড্রাং এর ডজংপনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠেছিল।
ধারাবাহিকভাবে প্রথমবারের মতো এবং ড্রুক দেশী সরকারের অধীনে আরও অভ্যন্তরীণ সংহতকরণের সময় তিব্বত ও সিকিমের সাথে লড়াই চলছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের অভ্যন্তরীণ বিরোধীতার ফলে তিব্বত এবং সিকিম থেকে ড্রুক দেশী বিরোধীদের দ্বারা প্রথম প্রস্তাব পায়। ১৬৮০-এর দশকে ভুটান একটি অবাধ্য স্থানীয় ভূপতিকে খুঁজতে গিয়ে সিকিম আক্রমণ করে বসে। ১৭০০ সালে ভুটানআবার সিকিম আক্রমণ করে এবং ১৭১৪ সালে মঙ্গোলিয় সাহায্যপ্রাপ্ত তিব্বতী বাহিনীকে ভুটান আক্রমণ করেছিল কিন্তু নিয়ন্ত্রণ লাভে ব্যর্থ হয়।
পশ্চিমা চৌকি
[সম্পাদনা]১৭ শতকে ভুটান লাদাখের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে এবং তিব্বতের সাথে ১৬৮৪ সালের যুদ্ধে লাদাখকে সহায়তা করে। ইতিপূর্বে লাদাখ তিব্বতের পশ্চিমে কৈলাশ পর্বতের কাছে ভুটানকে কয়েকটি ছিটমহল দিয়েছিল; এগুলো ড্রুকপা সম্প্রদায়ের মঠ এবং তদানুযায়ী ভুটানিজ জে খেম্পো এবং ঝাবড্রুং কর্তৃপক্ষের অধীনে ছিল। পশ্চিমা তিব্বতের বাকি অংশ দালাই লামা এবং তার গেলুগপা সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণে আসার পরও এই ছিটমহলগুলো ভুটানের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ১৯৫৯ সালে চীন কর্তৃক দখল হওয়ার আগ পর্যন্ত।[১২] তীব্বতের এই চৌকিগুলো ছাড়াও, ভুটান একটি সময় পর্যন্ত লো মানথাং এবং ডলপো (এখন নেপালের অংশ) এর পাশাপাশি লাদাখ, জানসকর এবং লাহুল (এখন ভারতের অংশ)-এ মঠের অধীনে চৌকি ছিল।[১৩][১৪]
বেসামরিক যুদ্ধ, ১৭২৮-৭২
[সম্পাদনা]যদিও আক্রমণকারীরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছিল অস্থির। প্রথম ব্রিটিশ গুপ্তচরের দল আসার সময়ে ভুটানের ক্রমবর্ধমান বিভক্তিতে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা অবদান রাখেন।
১৮ শতকের শুরুর দিকে, ভুটান সফলভাবে কুচবিহার রাজত্বের উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে। কুচবিহারের রাজা ১৭৩০ সালে ভারতীয় মুঘলদের বিরুদ্ধে ভুটানের কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছিলেন এবং ভুটানের রাজনৈতিক প্রভাব দীর্ঘ সময় ধরে ছিল না। ১৭৬০ এর মাঝামাঝি নাগাদ থিমফুকে কুচবিহারের উপনিবেশ বলে মনে করা হতো, সেখানে একদল সেনা অবস্থান করে এবং তারা বেসামরিক প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। ১৭৭০ সালে যখন ড্রুক দেশি সিকিম আক্রমণ করে, তখন কুচবিহারী বাহিনী ভুটানের সাথে তাল মিলিয়ে আক্রমণ চালায়। দুই বছর পরে ধারাবাহিক সংঘাতের পর, সিংহাসনের জন্য ড্রুক দেশির মনোনীতকে এক প্রতিপক্ষ বিরোধিতা করেন যিনি কিনা ব্রিটিশ সৈন্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং ফলশ্রুতিতে, কুচ বিহার ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর উপনিবেশ হয়ে পড়ে।
ব্রিটিশ অনুপ্রবেশ, ১৭৭২-১৯০৬
[সম্পাদনা]ব্রিটিশদের সঙ্গে কুচ বিহারী চুক্তির অধীনে, ব্রিটিশ অভিযাত্রী দল কুচবিহারে অবস্থারত ভুটানি সেনাবাহিনীকে তাড়িয়ে দেয় এবং ১৭৭২-৭৩ সালে ভুটান আক্রমণ করে। ড্রুক দেশি পানচেন লামার কাছে Lhasa-য় সাহায্যের জন্য আবেদন করে, যিনি তরুণ দালাই লামার তরফ থেকে প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেলের সাথে পত্র বিনিময়ের সময়ে, যেভা্বেই হোক, পানচেন লামার জায়গায় ড্রুক দেশিকে সাজা দেয়া হয় এবং তিব্বত কর্তৃক ভুটানের সার্বভৌমত্বের উপর দখল জারী হয়।
তিব্বতের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায়, ২৫ এপ্রিল ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে ড্রুক দেশী একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ভুটান ১৭৩০ সালের পূর্বে নির্ধারিত সীমানায় ফিরে যেতে রাজী হয়। প্রতীকি কর স্বরূপ ব্রিটিশদের পাঁচটি ঘোড়া প্রদান করে এবং অন্যান্য ছাড়ের মধ্যে ভুটানে বৃটিশদের কাঠ কাটার অনুমতি দেয়। ১৭৭৬, ১৭৭৭ এবং ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ভুটানে ব্রিটিশদের পরবর্তী অভিযানগুলো পরিচালিত হয় এবং বিৃটিশ ইন্ডিয়া ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, অল্প সময়ের জন্য তিব্বতের সাথেও। ১৭৮৪-তে, ব্রিটিশরা ভুটানের নিয়ন্ত্রিত বেঙ্গল ডুয়ার্স অঞ্চলে চলে আসে, যেখানে সীমান্ত নেই বললেই চলে। অন্যান্য বিদেশি অঞ্চলগুলির মতো, ভুটান স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে বেঙ্গল ডুয়ার্স এর প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করে এবং তাদের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করে। যদিও প্রধান বাণিজ্য ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ভুটান ও ব্রিটেনের মধ্যে বিকাশে ব্যর্থ হয়, তিব্বতিদের প্রধান বিদেশি হুমকি হিসেবে প্রতিস্থাপন করে।
সীমান্ত বিরোধ ভুটান-ব্রিটিশ সম্পর্ককে জর্জরিত করে তোলে। তাদের পার্থক্যগুলির সমন্বয় সাধন করার জন্য ভুটান ১৭৮৭ সালে কলকাতায় একজন দূত পাঠায় এবং ১৮১৫ ও ১৮৩৮ সালে ব্রিটিশরা থিম্ফুতে মিশন প্রেরণ করে। ১৮১৫ সালের মিশনটি অসম্পূর্ণ ছিল। ১৮৩৮ সালের মিশনটির মধ্যস্থতায় আসামে বহিৎআক্রমণের জন্য দায়ী ভুটানের আধিকারিকদের ফেরত পাঠানোর একটি চুক্তি, যা ভারত ও ভুটানের মধ্যে স্বাধীন ও অবাধ বাণিজ্যের জন্য সুবিধা করে দেবে এবং ভুটানের দায় ব্রিটিশদের কাছে হস্তান্তর করবে- এরকম একটি প্রস্তাব দেয়। স্বাধীনতা রক্ষার একটি প্রচেষ্টা স্বরুপ ভুটান ব্রিটিশদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। আভ্যন্তরীণ গোলযোগ বৃদ্ধি সত্বেও, ১৭৬০- এ কুচবিহারে উপনিবেশ হওয়ার আগে বা পর মুহুর্ত পর্যন্ত ভুটান আসামের ডুয়ার্সের একটি অংশে নিয়ন্ত্রণ রাখে। ১৮২৬ সালে ব্রিটেন আসামের নিচু অংশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর ব্রিটেনের জোর বৃদ্ধি হওয়ায় দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। আসাম ডুয়ার্সের জন্য ব্রিটিশদের বার্ষিক কর এর বকেয়া ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ১৮৩৪ এবং ১৮৩৫ সালে ভুটানের সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে ব্রিটেনের ভরণপোষণের ফলে ভুটানের সেনাবাহিনী এবং ভূখন্ডে সাময়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
১৮৪১ সালে ব্রিটিশরা ভুটানের নিয়ন্ত্রিত আসাম ডুয়ার্সের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য ভুটানকে বছরে ১০,০০০ রুপি ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। ১৮৪২ সালে ভুটান ১৭৮৪ সাল থেকে বাংলায় যেসব ঝামেলাপূর্ণ অঞ্চল শাসন পরিচালনা করে আসছিল, সেগুলির নিয়ন্ত্রণ ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেয়।
বংশগত রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ১৯০৭
[সম্পাদনা]কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন, ১৯২৬-৫২
[সম্পাদনা]জিগমে ডোরজি এর অধীনে আধুনিকীকরণ, ১৯৫২-৭২
[সম্পাদনা]আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ১৯৭২-বর্তমান
[সম্পাদনা]আসামীজ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা
[সম্পাদনা]২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আসামীজ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]শরনার্থী সম্প্রদায়
[সম্পাদনা]বিধিবদ্ধ গণতন্ত্র
[সম্পাদনা]সংবিধান
[সম্পাদনা]জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক
[সম্পাদনা]অধিকতর পঠন
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Fraser, Neil; Bhattacharya, Anima (২০০১)। Geography of a Himalayan Kingdom: Bhutan (ইংরেজি ভাষায়)। Concept Publishing Company। আইএসবিএন 978-81-7022-887-5।
- ↑ ক খ গ ঘ "Bhutan"। U.S. Department of State। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৪।
- ↑ Rose, Leo E. (১৯৭৭)। The politics of Bhutan। Ithaca: Cornell University Press। পৃষ্ঠা ১২৪। আইএসবিএন 0-8014-0909-8। ওসিএলসি 2929280।
- ↑ ক খ Worden, Robert L. "Origins and Early Settlement, AD 600–1600". In Savada
- ↑ Padel, Ruth (২০০৯-০৫-২৬)। Tigers In Red Weather: A Quest for the Last Wild Tigers (ইংরেজি ভাষায়)। Bloomsbury Publishing USA। পৃষ্ঠা ১৩৯–৪০। আইএসবিএন 978-0-8027-1854-9।
- ↑ Worden, Robert L.. "Arrival of Buddhism". Bhutan: A country study (Savada, Andrea Matles, ed.). Library of Congress Federal Research Division (September 1991). এই উৎস থেকে এই নিবন্ধে লেখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পাবলিক ডোমেইনে রয়েছে।
- ↑ Hattaway, Paul (২০০৪)। Peoples of the Buddhist World: A Christian Prayer Diary (ইংরেজি ভাষায়)। William Carey Library। পৃষ্ঠা ৩০। আইএসবিএন 978-0-87808-361-9।
- ↑ Rennie, Frank., Mason, Robin. (২০০৮)। Bhutan : ways of knowing। Charlotte, NC: Information Age Pub। পৃষ্ঠা ১৮,৫৮। আইএসবিএন 978-1-60752-824-1। ওসিএলসি 694147221।
- ↑ Dorji, C. T. (১৯৯৪)। History of Bhutan based on Buddhism (ইংরেজি ভাষায়)। Sangay Xam in collaboration with Prominent Publishers। আইএসবিএন 978-81-86239-01-8।
- ↑ Harding, Sarah (২০০৩-০৭-৩১)। The Life and Revelations of Pema Lingpa (ইংরেজি ভাষায়)। Shambhala Publications, Incorporated। আইএসবিএন 978-1-55939-967-8।
- ↑ Bowman, John Stewart (২০০০)। Columbia chronologies of Asian history and culture। New York : Columbia University Press। পৃষ্ঠা 385।
- ↑ Rose, Leo E. (১৯৭৭)। The politics of Bhutan। Ithaca: Cornell University Press। পৃষ্ঠা ৭০,৮০। আইএসবিএন 0-8014-0909-8। ওসিএলসি 2929280।
- ↑ Aris, Michael. (১৯৯৮)। The raven crown : the origins of Buddhist monarchy in Bhutan (Reprinted with corrections সংস্করণ)। Chicago: Serindia Publications। পৃষ্ঠা ৪২। আইএসবিএন 1-932476-21-0। ওসিএলসি 68722738।
- ↑ Aris, Michael. (১৯৭৯)। Bhutan, the early history of a Himalayan kingdom। Warminster, England: Aris & Phillips। পৃষ্ঠা ২৪৯। আইএসবিএন 0-85668-199-7। ওসিএলসি 7946205।