বিষয়বস্তুতে চলুন

ময়মনসিংহ জেলা

স্থানাঙ্ক: ২৪°৩৮′৩″ উত্তর ৯০°১৬′৪″ পূর্ব / ২৪.৬৩৪১৭° উত্তর ৯০.২৬৭৭৮° পূর্ব / 24.63417; 90.26778
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ময়মনসিংহ
জেলা
বাংলাদেশে ময়মনসিংহ জেলার অবস্থান
বাংলাদেশে ময়মনসিংহ জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°৩৮′৩″ উত্তর ৯০°১৬′৪″ পূর্ব / ২৪.৬৩৪১৭° উত্তর ৯০.২৬৭৭৮° পূর্ব / 24.63417; 90.26778 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগময়মনসিংহ বিভাগ
জেলা প্রতিষ্ঠা১ মে ১৭৮৭; ২৩৭ বছর আগে (1787-05-01)
আয়তন
 • মোট৪,৩৬৩.৪৮ বর্গকিমি (১,৬৮৪.৭৫ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০২২)[]
 • মোট৫৮,৯৯,০৫২
 • জনঘনত্ব১,৪০০/বর্গকিমি (৩,৫০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৭৪.০৮%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড২২০০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৬১
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

ময়মনসিংহ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। অবস্থানগত কারণে এটি বাংলাদেশের বিশেষ শ্রেণীভুক্ত জেলা।[] ময়মনসিংহ জেলার পূর্ব নাম যথাক্রমে মোমেনশাহী ও নাসিরাবাদ। এই জেলার আকার সময় সময় পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলা থেকে টাঙ্গাইল মহুকুমাকে পৃথক করে একটি জেলা করা হয় এবং ১৯৭৮ সালে জামালপুর মহকুমাকে দেশের ২০তম জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তাছাড়াও শেরপুরকে জামালপুর জেলার অন্তর্গত মহকুমায় উন্নীত করা হয়। ১৯৮৪ সালে আদি ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন মহকুমা যথা কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণাকে পৃথক পৃথক জেলায় উন্নীত করা হয়। এর আগে ব্রিটিশ আমলে ময়মনসিংহ জেলার কিছু কিছু অংশ সিলেট, ঢাকা, রংপুর ও পাবনা জেলার অঙ্গীভূত করা হয়েছিল।ময়মনসিংহ জেলা ধান উৎপাদনে দেশের শীর্ষে।এ ছাড়াও এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মাছের চাষ হয়ে থাকে। ময়মনসিংহ জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভালুকার ভাওয়াল বন, লোক‌-ঐতিহ্য এবং মুক্তাগাছার মন্ডার জন্য বিখ্যাত। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন আয়তনে দেশের ৭ম এবং জনসংখ্যায় ৮ম বৃহত্তম মহানগর।

অবস্থান ও আয়তন

[সম্পাদনা]
বঙ্গদেশের প্রাদেশিক মানচিত্রটি ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত থাকা বৃহত্তর ময়মনসিংহ জিলা (টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জের সাথে বর্তমান বিভাগ) প্রদর্শন করছে।

ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে গাজীপুর জেলা, পূর্বে নেত্রকোণা জেলাকিশোরগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে শেরপুর জেলা, জামালপুর জেলাটাঙ্গাইল জেলা

নামকরণ

[সম্পাদনা]

মোঘল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধক ছিলেন, তার নামেই মধ্যযুগে অঞ্চলটির নাম হয় মোমেনশাহী। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাঁর পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ'র জন্য এ অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন, সেই থেকেই নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি। নাসিরাবাদ নাম পরিবর্তন হয়ে ময়মনসিংহ হয় একটি ভুলের কারণে। বিশ টিন কেরোসিন বুক করা হয়েছিল বর্জনলাল অ্যান্ড কোম্পানির পক্ষ থেকে নাসিরাবাদ রেল স্টেশনে। এই মাল চলে যায় রাজপুতনার নাসিরাবাদ রেল স্টেশনে। এ নিয়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরবর্তীতে আরো কিছু বিভ্রান্তি ঘটায় রেলওয়ে স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ময়মনসিংহ রাখা হয়। সেই থেকে নাসিরাবাদের পরিবর্তে ময়মনসিংহ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে কোনো কোনো ইতিহাসবিদদের মতে, মোঘল সেনাপতি মনমোহন সিংহ ঈসা খাঁকে দমন করতে যাওয়ার পথে এখানে বেশ কয়েকদিন অবস্থান করেছিলেন। এজন্য এখানকার নাম হয়ে যায় ময়মনসিংহ। []

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ময়মনসিংহ বাংলাদেশের একটি পুরোনো জেলা। এর আগে এই এলাকার নাম ছিলো নসরৎসাহী। পরবর্তীতে এর নাম হয় নাসিরাবাদ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে রাজস্ব আদায়, প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে স্থানীয় বিদ্রোহ দমনের জন্য এই জেলা গঠন করা হয়। ১৭৮৭ সালের ১ মে তারিখে এই জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এখনকার বেগুনবাড়ির কোম্পানিকুঠিতে জেলার কাজ শুরু হয় তবে পরবর্তী সময়ে সেহড়া মৌজায় ১৭৯১ সালে তা স্থানান্তরিত হয়। আদি ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থান একে একে সিলেট, ঢাকা, রংপুরপাবনা জেলার অংশ হয়ে পড়ে। ১৮৪৫ সালে জামালপুর, ১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জ, ১৮৬৯ সালে টাঙ্গাইল ও ১৮৮২ সালে নেত্রকোণা মহকুমা গঠন করা হয়। পরে সবকটি মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়। ময়মনসিংহ শহর হয় ১৮১১ সালে। শহরের জন্য জায়গা দেন মুক্তাগাছার জমিদার রঘুনন্দন আচার্য। ১৮৮৪ সালে রাস্তায় প্রথম কেরোসিনের বাতি জ্বালানো হয়। ১৮৮৬ সালে ঢাকা‌-ময়মনসিংহ রেলপথ ও ১৮৮৭ সালে জেলা বোর্ড গঠন করা হয়।

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

[সম্পাদনা]
ময়মনসিংহ জেলার অভ্যন্তরীণ মানচিত্র

ময়মনসিংহ জেলা ৩৩ ওয়ার্ড বিশিষ্ট ১টি সিটি কর্পোরেশন, ১৩টি উপজেলা, ১৪টি থানা, ১০টি পৌরসভা, ১৪৭টি ইউনিয়ন, ২১০১টি মৌজা, ২৭০৯টি গ্রাম ও ১১টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।

ময়মনসিংহ জেলায় মোট ১৩টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল:

ক্রম নং উপজেলা আয়তন[]
(বর্গ কিলোমিটারে)
প্রশাসনিক থানা আওতাধীন এলাকাসমূহ
০১ ঈশ্বরগঞ্জ ২৮০.৪৩ ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা (১টি): ঈশ্বরগঞ্জ
ইউনিয়ন (১১টি): ঈশ্বরগঞ্জ, সোহাগী, সরিষা, আঠারবাড়ী, জাটিয়া, মাইজবাগ, মগটুলা, রাজিবপুর, উচাখিলা, তারুন্দিয়া এবং বড়হিত
০২ গফরগাঁও ৩৯৮.৩০ গফরগাঁও পৌরসভা (১টি): গফরগাঁও
ইউনিয়ন (৭টি): রসুলপুর, বারবাড়িয়া, চর আলগী, সালটিয়া, যশরা, রাওনা এবং গফরগাঁও
পাগলা ইউনিয়ন (৮টি): মশাখালী, পাঁচবাগ, উস্থি, লংগাইর, পাইথল, দত্তেরবাজার, নিগুয়ারী এবং টাংগাব
০৩ গৌরীপুর ২৭৬.৭৫ গৌরীপুর পৌরসভা (১টি): গৌরীপুর
ইউনিয়ন (১০টি): মইলাকান্দা, গৌরীপুর, অচিন্তপুর, মাওহা, সহনাটি, বোকাইনগর, রামগোপালপুর, ডৌহাখলা, ভাংনামারী এবং সিধলা
০৪ তারাকান্দা ৩১৩.৬৮ তারাকান্দা ইউনিয়ন (১০টি): তারাকান্দা, বানিহালা, কাকনী, গালাগাঁও, বালিখা, ঢাকুয়া, রামপুর, কামারিয়া, কামারগাঁও এবং বিসকা
০৫ ত্রিশাল ৩৩৮.৪৬ ত্রিশাল পৌরসভা (১টি): ত্রিশাল
ইউনিয়ন (১২টি): ধানীখোলা, বৈলর, কাঁঠাল, কানিহারী, রামপুর, ত্রিশাল, হরিরামপুর, সাখুয়া, বালিপাড়া, মঠবাড়ী, মোক্ষপুর এবং আমিরাবাড়ী
০৬ ধোবাউড়া ২৫২.২৪ ধোবাউড়া ইউনিয়ন (৭টি): দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারিতলা, ধোবাউড়া, পোড়াকান্দুলিয়া, গোয়াতলা, ঘোষগাঁও এবং বাঘবেড়
০৭ নান্দাইল ৩২৬.৩৮ নান্দাইল পৌরসভা (১টি): নান্দাইল
ইউনিয়ন (১৩টি): বীর বেতাগৈর, মোয়াজ্জেমপুর, নান্দাইল, চণ্ডীপাশা, গাংগাইল, রাজগাতী, মুশুল্লী, সিংরইল, আচারগাঁও, শেরপুর, খারুয়া, জাহাঙ্গীরপুর এবং চর বেতাগৈর
০৮ ফুলপুর ৩১২.৫৩ ফুলপুর পৌরসভা (১টি): ফুলপুর
ইউনিয়ন (১০টি): ছনধরা, রামভদ্রপুর, ভাইটকান্দি, সিংহেশ্বর, ফুলপুর, পয়ারী, রহিমগঞ্জ, রূপসী, বালিয়া এবং বওলা
০৯ ফুলবাড়ীয়া ৩৯৮.৭১ ফুলবাড়িয়া পৌরসভা (১টি): ফুলবাড়িয়া
ইউনিয়ন (১৩টি): নাওগাঁও, পুটিজানা, কুশমাইল, বালিয়ান, দেওখোলা, ফুলবাড়িয়া, বাক্তা, রাঙ্গামাটিয়া, এনায়েতপুর, কালাদহ, রাধাকানাই, আছিম পাটুলী এবং ভবানীপুর
১০ ভালুকা ৪৪৪.০৬ ভালুকা পৌরসভা (১টি): ভালুকা
ইউনিয়ন (১১টি): উথুরা, মেদুয়ারী, ভরাডোবা, ধীতপুর, বিরুনিয়া, ভালুকা, মল্লিকবাড়ী, ডাকাতিয়া, কাচিনা, হবিরবাড়ী এবং রাজৈ
১১ ময়মনসিংহ সদর ৩৮৮.৪৫ কোতোয়ালী সিটি কর্পোরেশন (১টি): ময়মনসিংহ
ইউনিয়ন (১৩টি): অষ্টধার, কুষ্টিয়া, বোররচর, পরাণগঞ্জ, সিরতা, চর ঈশ্বরদিয়া, চর নিলক্ষিয়া, আকুয়া, খাগডহর, দাপুনিয়া, ঘাগড়া, ভাবখালী এবং বয়ড়া
১২ মুক্তাগাছা ৩১৪.৭০ মুক্তাগাছা পৌরসভা (১টি): মুক্তাগাছা
ইউনিয়ন (১০টি): দুল্লা, বড়গ্রাম, তারাটি, কুমারগাতা, বাঁশাটি, মানকোন, ঘোগা, দাওগাঁও, কাশিমপুর, খেরুয়াজানী
১৩ হালুয়াঘাট ৩৫৭.৬২ হালুয়াঘাট পৌরসভা (১টি): হালুয়াঘাট
ইউনিয়ন (১২টি): ভুবনকুড়া, জুগলী, কৈচাপুর, হালুয়াঘাট, গাজিরভিটা, বিলডোরা, শাকুয়াই, নড়াইল, ধারা, ধুরাইল, আমতৈল এবং স্বদেশী

সংসদীয় আসন

[সম্পাদনা]
সংসদীয় আসন জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[] সংসদ সদস্য[][][][][১০] রাজনৈতিক দল
১৪৬ ময়মনসিংহ-১ ধোবাউড়া উপজেলা এবং হালুয়াঘাট উপজেলা শূণ্য
১৪৭ ময়মনসিংহ-২ ফুলপুর উপজেলা এবং তারাকান্দা উপজেলা শূণ্য
১৪৮ ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর উপজেলা শূণ্য
১৪৯ ময়মনসিংহ-৪ ময়মনসিংহ সদর উপজেলাময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন শূণ্য
১৫০ ময়মনসিংহ-৫ মুক্তাগাছা উপজেলা শূণ্য
১৫১ ময়মনসিংহ-৬ ফুলবাড়ীয়া উপজেলা শূণ্য
১৫২ ময়মনসিংহ-৭ ত্রিশাল উপজেলা শূণ্য
১৫৩ ময়মনসিংহ-৮ ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শূণ্য
১৫৪ ময়মনসিংহ-৯ নান্দাইল উপজেলা শূণ্য
১৫৫ ময়মনসিংহ-১০ গফরগাঁও উপজেলা শূণ্য
১৫৬ ময়মনসিংহ-১১ ভালুকা উপজেলা শূণ্য

নদীসমূহ

[সম্পাদনা]
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়া বাজার থেকে তোলা সুতিয়া নদীর দৃশ্য

ময়মনসিংহ জেলায় অনেকগুলো নদী আছে। সেগুলো হচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী, কাঁচামাটিয়া নদী, মঘা নদী, সোয়াইন নদী, বানার নদী, বাইলান নদী, দইনা নদী, পাগারিয়া নদী, সুতিয়া নদী, কাওরাইদ নদী, সুরিয়া নদী, মগড়া নদী, বাথাইল নদী, নরসুন্দা নদী, নিতাই নদী, কংস নদী, খাড়িয়া নদী, দেয়ার নদী, ভোগাই নদী, বান্দসা নদী, মালিজি নদী, ধলাই নদী, কাকুড়িয়া নদী, দেওর নদী, বাজান নদী, নাগেশ্বরী নদী, আখিলা নদী, মিয়াবুয়া নদী, কাতামদারী নদী, সিরখালি নদী, খিরু নদী, বাজুয়া নদী, লালতি নদী, চোরখাই নদী, বাড়েরা নদী, হিংরাজানি নদী, আয়মন নদী, দেওরা নদী, থাডোকুড়া নদী, মেদুয়ারি নদী, জলগভা নদী, মাহারী নদী।[১১]

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

[সম্পাদনা]

দর্শনীয় স্থান

[সম্পাদনা]

গণমাধ্যম

[সম্পাদনা]

দৈনিক ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, জাহান, বাংলার জমিন, ইনসাফ, আজকের স্মৃতি, শিপা, স্বদেশ সংবাদ; সাপ্তাহিক: ময়মনসিংহ বার্তা, আজকের মুক্তাগাছা। অবলুপ্ত: কুমার, বিজ্ঞাপনী (১৮৬৬), বাঙালী (১৮৭৪), সুহূদ (১৮৭৫), প্রমোদী (১৮৭৫), ভারত মিহির (১৮৭৫), সঞ্জীবনী (১৮৭৮), বাসনা (১৮৯৯), আবৃতি (১৯০১), স্বদেশ সম্পদ (১৯০৫), শিক্ষা সৌরভ (১৯১২), হাফেজ শক্তি (১৯২৪), গণঅভিযান (১৯৩৮), সাপ্তাহিক চারুমিহির (১৯৩৯), উত্তর আকাশ (১৯৫৯), অনির্বাণ (১৯৬৩), জাগ্রত বাংলা (১৯৭১)।[১৪]

ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ‘টান-টোন’ উচ্চারণ এবং এক্সেন্ট অথবা সংলাপ প্রক্ষেপণ। ভাটি অঞ্চলের ভাষার ক্ষেত্রে কাগজে হয়তো শব্দগুলো বানান করে লেখা যেতে পারে কিন্তু তাদের কণ্ঠস্বরের যে কারুকাজ তা কেবল কানে শুনেই উপলব্ধি করা সম্ভব, পড়ে বুঝে নেয়া কঠিন। বাংলা ভাষায় তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের প্রচুর ব্যবহার লক্ষ করা গেলেও ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় তৎসম শব্দের ব্যবহার কম, সম্ভবত উচ্চারণ জটিলতার কারণেই এ অঞ্চলের মানুষ তৎসম শব্দ পরিহার করে তদ্ভব এবং বিদেশি শব্দের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকবে। বাংলা ভাষায় তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের প্রচুর ব্যবহার লক্ষ করা গেলেও ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় তৎসম শব্দের ব্যবহার কম, সম্ভবত উচ্চারণ জটিলতার কারণেই এ অঞ্চলের মানুষ তৎসম শব্দ পরিহার করে তদ্ভব এবং বিদেশি শব্দের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকবে। বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নিজস্ব সাংকেতিক ভাষার প্রচলন থাকলেও সে সব ভাষার শব্দাবলী মূল ভাষায় একীভূত হয়ে যাওয়া সহজ নয়, সে সুযোগও খুবই ক্ষীণ; কিন্তু ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষার বহু শব্দই ইতোমধ্যে মূল ভাষার অংশ হয়ে উঠেছে এবং প্রমিত বাংলায় জায়গা করে নিয়েছে। আঞ্চলিক ভাষার শব্দ মূল ভাষায় জায়গা করে নেয়াই ভাষার একমাত্র শক্তি নয়, আঞ্চলিক কোনো শব্দে চমৎকৃত হওয়ায়-ও ভাষার সৌন্দর্য নিহিত নয়; ভাষার শক্তি তার সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডারে আর ভাষার সৌন্দর্য তার চলৎশক্তিতে- তার বোধগম্যতায় এবং নিজস্ব প্রক্ষেপণ স্বাতন্ত্র্যে।

অন্যান্য

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষার উপস্থিতি যেমন আছে তেমনি আছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পৃথক সাংকেতিক ভাষাও। ময়মনসিংহের গারো জাতির 'মান্দি' ভাষা, কোচ ও হাজং সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষা অথবা কিশোরগঞ্জের ভাটি অঞ্চল অষ্টগ্রামের স্থানীয় ভাষা, যার নাম তারা দিয়েছে ‘সুকুন’, ‘সুঅন’ বা ‘ছুহুম'।

সংস্কৃতি

[সম্পাদনা]

লোক সংস্কৃতি, লোক উৎসব, লোকসংগীত, লোকগাঁথার দিক দিয়ে ময়মনসিংহ হলো তীর্থস্থান। ময়মনসিংহে একটি সংস্কৃতি ঐতিহ্য রয়েছে যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন সংগৃহীত ও সম্পাদিত মৈমনসিংহ গীতিকা ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনুদিত হয়ে বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদা পেয়েছে। এই গীতিকায় মহুয়া, চন্দ্রাবতী, দেওয়ানা মদিনা ইত্যাদি পালার কথা কে না শুনেছে। এছাড়াও রয়েছে মলুয়া, কমলা, দেওয়ান ভাবনা, দস্যু কেনারামের পালা, রূপবতী, কঙ্ক ও লীলা, কাজলরেখা ইত্যাদি পালা। কয়েকটি উদ্ধৃতি দেয়া হলো :

এছাড়াও রয়েছে,

তাছাড়া যাত্রাগান, গ্রামীণ কাহিনীর উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত নাটক ও যাত্রা ময়মনসিংহের ঐতিহ্য। ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত লোকসঙ্গীতগুলোর অন্যতম হলো বাউলগান, ভাটিয়ালী, কিস্সাপালা, কবিগান, কীর্তন, ঘাটুগান, জারিগান, সারিগান, মুর্শিদী, ঢপযাত্রা, বিয়ের গান, মেয়েলিগান, বিচ্ছেদী গান, বারমাসী, পুঁথিগান, পালকির গান, ধানকাটার গান, ধানভানার গান, হাইট্টারা গান, গাইনের গীত, বৃষ্টির গান, ধোয়া গান, শিবগৌরীর নৃত্য গীত, গাজীর গান, পটগান, আদিবাসীদের গান ইত্যাদি ।

সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য

[সম্পাদনা]
নিজস্ব পোশাকে দুজন গারো আদিবাসী

এ জেলায় বসবাসরত বাঙালি, গারো, হাজং, কোচসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা পালন করে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতন এ জেলার আদিবাসীরাও বৈশাখী মেলা, ঈদ উৎসব, দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য উৎসব জাকজমকের সাথে উদ্‌যাপন করে থাকেন। এসব অনুষ্ঠানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, নির্মল ভ্রাতৃত্ববোধ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অন্যকে জানার স্পৃহা ও আগ্রহভরা অংশগ্রহণ।

ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাবার

[সম্পাদনা]

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। "এক নজরে জেলা"জেলা বাতায়ন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০২২ 
  2. "জেলাগুলোর শ্রেণি হালনাগাদ করেছে সরকার"। বাংলানিউজ২৪। ১৭ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২০ 
  3. এক নজরে ময়মনসিংহ জেলা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ জুলাই ২০১৪ তারিখে,দৈনিক ময়মনসিংহ বার্তা।
  4. "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (পিডিএফ)web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২১ 
  5. "Election Commission Bangladesh - Home page"www.ecs.org.bd 
  6. "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)ecs.gov.bdবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯ 
  7. "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  8. "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  9. "জয় পেলেন যারা"দৈনিক আমাদের সময়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  10. "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"সমকাল। ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  11. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯৯-৪০০, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯
  12. https://www.bd-pratidin.com/last-page/2015/03/24/70374
  13. https://www.bd-pratidin.com/first-page/2017/10/01/268445
  14. "ময়মনসিংহ জেলা"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  15. Pratidin, Bangladesh (২০১৭-০৬-১০)। "ময়মনসিংহে শীর্ষে জাকির মিয়ার 'টক মিষ্টি জিলাপি'"বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২২ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]