ময়মনসিংহ জেলা
ময়মনসিংহ | |
---|---|
জেলা | |
বাংলাদেশে ময়মনসিংহ জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৩৮′৩″ উত্তর ৯০°১৬′৪″ পূর্ব / ২৪.৬৩৪১৭° উত্তর ৯০.২৬৭৭৮° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ময়মনসিংহ বিভাগ |
জেলা প্রতিষ্ঠা | ১ মে ১৭৮৭ |
আয়তন | |
• মোট | ৪,৩৬৩.৪৮ বর্গকিমি (১,৬৮৪.৭৫ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০২২)[১] | |
• মোট | ৫৮,৯৯,০৫২ |
• জনঘনত্ব | ১,৪০০/বর্গকিমি (৩,৫০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৭৪.০৮% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ২২০০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৬১ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
ময়মনসিংহ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। অবস্থানগত কারণে এটি বাংলাদেশের বিশেষ শ্রেণীভুক্ত জেলা।[২] ময়মনসিংহ জেলার পূর্ব নাম যথাক্রমে মোমেনশাহী ও নাসিরাবাদ। এই জেলার আকার সময় সময় পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলা থেকে টাঙ্গাইল মহুকুমাকে পৃথক করে একটি জেলা করা হয় এবং ১৯৭৮ সালে জামালপুর মহকুমাকে দেশের ২০তম জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তাছাড়াও শেরপুরকে জামালপুর জেলার অন্তর্গত মহকুমায় উন্নীত করা হয়। ১৯৮৪ সালে আদি ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন মহকুমা যথা কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণাকে পৃথক পৃথক জেলায় উন্নীত করা হয়। এর আগে ব্রিটিশ আমলে ময়মনসিংহ জেলার কিছু কিছু অংশ সিলেট, ঢাকা, রংপুর ও পাবনা জেলার অঙ্গীভূত করা হয়েছিল।ময়মনসিংহ জেলা ধান উৎপাদনে দেশের শীর্ষে।এ ছাড়াও এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মাছের চাষ হয়ে থাকে। ময়মনসিংহ জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভালুকার ভাওয়াল বন, লোক-ঐতিহ্য এবং মুক্তাগাছার মন্ডার জন্য বিখ্যাত। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন আয়তনে দেশের ৭ম এবং জনসংখ্যায় ৮ম বৃহত্তম মহানগর।
অবস্থান ও আয়তন
[সম্পাদনা]ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে গাজীপুর জেলা, পূর্বে নেত্রকোণা জেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে শেরপুর জেলা, জামালপুর জেলা ও টাঙ্গাইল জেলা।
নামকরণ
[সম্পাদনা]মোঘল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধক ছিলেন, তার নামেই মধ্যযুগে অঞ্চলটির নাম হয় মোমেনশাহী। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাঁর পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ'র জন্য এ অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন, সেই থেকেই নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি। নাসিরাবাদ নাম পরিবর্তন হয়ে ময়মনসিংহ হয় একটি ভুলের কারণে। বিশ টিন কেরোসিন বুক করা হয়েছিল বর্জনলাল অ্যান্ড কোম্পানির পক্ষ থেকে নাসিরাবাদ রেল স্টেশনে। এই মাল চলে যায় রাজপুতনার নাসিরাবাদ রেল স্টেশনে। এ নিয়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরবর্তীতে আরো কিছু বিভ্রান্তি ঘটায় রেলওয়ে স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ময়মনসিংহ রাখা হয়। সেই থেকে নাসিরাবাদের পরিবর্তে ময়মনসিংহ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে কোনো কোনো ইতিহাসবিদদের মতে, মোঘল সেনাপতি মনমোহন সিংহ ঈসা খাঁকে দমন করতে যাওয়ার পথে এখানে বেশ কয়েকদিন অবস্থান করেছিলেন। এজন্য এখানকার নাম হয়ে যায় ময়মনসিংহ। [৩]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ময়মনসিংহ বাংলাদেশের একটি পুরোনো জেলা। এর আগে এই এলাকার নাম ছিলো নসরৎসাহী। পরবর্তীতে এর নাম হয় নাসিরাবাদ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে রাজস্ব আদায়, প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে স্থানীয় বিদ্রোহ দমনের জন্য এই জেলা গঠন করা হয়। ১৭৮৭ সালের ১ মে তারিখে এই জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এখনকার বেগুনবাড়ির কোম্পানিকুঠিতে জেলার কাজ শুরু হয় তবে পরবর্তী সময়ে সেহড়া মৌজায় ১৭৯১ সালে তা স্থানান্তরিত হয়। আদি ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থান একে একে সিলেট, ঢাকা, রংপুর ও পাবনা জেলার অংশ হয়ে পড়ে। ১৮৪৫ সালে জামালপুর, ১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জ, ১৮৬৯ সালে টাঙ্গাইল ও ১৮৮২ সালে নেত্রকোণা মহকুমা গঠন করা হয়। পরে সবকটি মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়। ময়মনসিংহ শহর হয় ১৮১১ সালে। শহরের জন্য জায়গা দেন মুক্তাগাছার জমিদার রঘুনন্দন আচার্য। ১৮৮৪ সালে রাস্তায় প্রথম কেরোসিনের বাতি জ্বালানো হয়। ১৮৮৬ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ ও ১৮৮৭ সালে জেলা বোর্ড গঠন করা হয়।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
[সম্পাদনা]ময়মনসিংহ জেলা ৩৩ ওয়ার্ড বিশিষ্ট ১টি সিটি কর্পোরেশন, ১৩টি উপজেলা, ১৪টি থানা, ১০টি পৌরসভা, ১৪৭টি ইউনিয়ন, ২১০১টি মৌজা, ২৭০৯টি গ্রাম ও ১১টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
ময়মনসিংহ জেলায় মোট ১৩টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল:
সংসদীয় আসন
[সম্পাদনা]সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[৫] | সংসদ সদস্য[৬][৭][৮][৯][১০] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
১৪৬ ময়মনসিংহ-১ | ধোবাউড়া উপজেলা এবং হালুয়াঘাট উপজেলা | শূণ্য | |
১৪৭ ময়মনসিংহ-২ | ফুলপুর উপজেলা এবং তারাকান্দা উপজেলা | শূণ্য | |
১৪৮ ময়মনসিংহ-৩ | গৌরীপুর উপজেলা | শূণ্য | |
১৪৯ ময়মনসিংহ-৪ | ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন | শূণ্য | |
১৫০ ময়মনসিংহ-৫ | মুক্তাগাছা উপজেলা | শূণ্য | |
১৫১ ময়মনসিংহ-৬ | ফুলবাড়ীয়া উপজেলা | শূণ্য | |
১৫২ ময়মনসিংহ-৭ | ত্রিশাল উপজেলা | শূণ্য | |
১৫৩ ময়মনসিংহ-৮ | ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা | শূণ্য | |
১৫৪ ময়মনসিংহ-৯ | নান্দাইল উপজেলা | শূণ্য | |
১৫৫ ময়মনসিংহ-১০ | গফরগাঁও উপজেলা | শূণ্য | |
১৫৬ ময়মনসিংহ-১১ | ভালুকা উপজেলা | শূণ্য |
নদীসমূহ
[সম্পাদনা]ময়মনসিংহ জেলায় অনেকগুলো নদী আছে। সেগুলো হচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী, কাঁচামাটিয়া নদী, মঘা নদী, সোয়াইন নদী, বানার নদী, বাইলান নদী, দইনা নদী, পাগারিয়া নদী, সুতিয়া নদী, কাওরাইদ নদী, সুরিয়া নদী, মগড়া নদী, বাথাইল নদী, নরসুন্দা নদী, নিতাই নদী, কংস নদী, খাড়িয়া নদী, দেয়ার নদী, ভোগাই নদী, বান্দসা নদী, মালিজি নদী, ধলাই নদী, কাকুড়িয়া নদী, দেওর নদী, বাজান নদী, নাগেশ্বরী নদী, আখিলা নদী, মিয়াবুয়া নদী, কাতামদারী নদী, সিরখালি নদী, খিরু নদী, বাজুয়া নদী, লালতি নদী, চোরখাই নদী, বাড়েরা নদী, হিংরাজানি নদী, আয়মন নদী, দেওরা নদী, থাডোকুড়া নদী, মেদুয়ারি নদী, জলগভা নদী, মাহারী নদী।[১১]
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
[সম্পাদনা]- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল
- ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ
- আনন্দ মোহন কলেজ
- শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ
- মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ
- কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
- ময়মনসিংহ জিলা স্কুল
- বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
- ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ
- ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়
- ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
- ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ
- নটর ডেম কলেজ
- মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
- নাসিরাবাদ কলেজ
- আলমগীর মনসুর (মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজ
- ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
- গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী হাই স্কুল
- ময়মনসিংহ কলেজ
- পুলিশ লাইন্স উচ্চ বিদ্যালয়
- মহাখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
- ময়মনসিংহ সরকারি কলেজ
- সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ, মুক্তাগাছা
- বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ
- ময়মনসিংহ আইডিয়া কলেজ
- হুমায়ূন কবির ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
- ময়মনসিংহ কমার্স কলেজ
- শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন চারুকলা ইনস্টিটিউট
- রুমডো ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
- ময়মনসিংহ নার্সিং কলেজ
- কমিউনিটি বেজড নার্সিং কলেজ
- ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট
- টিচার ট্রেনিং কলেজ (পুরুষ ও মহিলা)
- আফরোজা খান মডেল স্কুল
- প্রগ্রেসিভ মডেল স্কুল
- মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়
- প্রিমিয়ার আইডিয়া স্কুল
- মনতলা উচ্চ বিদ্যালয়, মুক্তাগাছা
দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
- ময়মনসিংহ জিলা স্কুল
- মুক্তাগাছার রাজবাড়ী
- আলেকজান্ডার ক্যাসল
- শশী লজ
- ময়মনসিংহ জাদুঘর
- বৈলর জমিদার বাড়ি, বৈলর ইউনিয়ন
- শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা
- পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী
- সার্কিট হাউজ
- সিলভার ক্যাসল
- বিপিন পার্ক
- রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি
- কাদিগড় জাতীয় উদ্যান
- বোটানিক্যাল গার্ডেন
- ময়মনসিংহ টাউন হল
- দূর্গাবাড়ী
- গৌরীপুর লজ
- কেল্লা তাজপুর
- আলাদীন'স পার্ক
- তেপান্তর সুটিং স্পট
- কুমির খামার [১২][১৩]
- গারো পাহাড়
- চীনা মাটির টিলা
- কালু শাহ্ কালশার দিঘী
- নজরুল স্মৃতি যাদুঘর
- শহীদ আব্দুল জব্বার জাদুঘর
- রাজ রাজেশ্বরী ওয়াটার ওয়ার্ক
- গৌরীপুর জমিদার বাড়ি
- আঠারো বাড়ি জমিদার বাড়ি
- রাজিবপুর জমিদার বাড়ি
গণমাধ্যম
[সম্পাদনা]দৈনিক ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, জাহান, বাংলার জমিন, ইনসাফ, আজকের স্মৃতি, শিপা, স্বদেশ সংবাদ; সাপ্তাহিক: ময়মনসিংহ বার্তা, আজকের মুক্তাগাছা। অবলুপ্ত: কুমার, বিজ্ঞাপনী (১৮৬৬), বাঙালী (১৮৭৪), সুহূদ (১৮৭৫), প্রমোদী (১৮৭৫), ভারত মিহির (১৮৭৫), সঞ্জীবনী (১৮৭৮), বাসনা (১৮৯৯), আবৃতি (১৯০১), স্বদেশ সম্পদ (১৯০৫), শিক্ষা সৌরভ (১৯১২), হাফেজ শক্তি (১৯২৪), গণঅভিযান (১৯৩৮), সাপ্তাহিক চারুমিহির (১৯৩৯), উত্তর আকাশ (১৯৫৯), অনির্বাণ (১৯৬৩), জাগ্রত বাংলা (১৯৭১)।[১৪]
ভাষা
[সম্পাদনা]ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ‘টান-টোন’ উচ্চারণ এবং এক্সেন্ট অথবা সংলাপ প্রক্ষেপণ। ভাটি অঞ্চলের ভাষার ক্ষেত্রে কাগজে হয়তো শব্দগুলো বানান করে লেখা যেতে পারে কিন্তু তাদের কণ্ঠস্বরের যে কারুকাজ তা কেবল কানে শুনেই উপলব্ধি করা সম্ভব, পড়ে বুঝে নেয়া কঠিন। বাংলা ভাষায় তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের প্রচুর ব্যবহার লক্ষ করা গেলেও ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় তৎসম শব্দের ব্যবহার কম, সম্ভবত উচ্চারণ জটিলতার কারণেই এ অঞ্চলের মানুষ তৎসম শব্দ পরিহার করে তদ্ভব এবং বিদেশি শব্দের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকবে। বাংলা ভাষায় তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের প্রচুর ব্যবহার লক্ষ করা গেলেও ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় তৎসম শব্দের ব্যবহার কম, সম্ভবত উচ্চারণ জটিলতার কারণেই এ অঞ্চলের মানুষ তৎসম শব্দ পরিহার করে তদ্ভব এবং বিদেশি শব্দের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকবে। বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নিজস্ব সাংকেতিক ভাষার প্রচলন থাকলেও সে সব ভাষার শব্দাবলী মূল ভাষায় একীভূত হয়ে যাওয়া সহজ নয়, সে সুযোগও খুবই ক্ষীণ; কিন্তু ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষার বহু শব্দই ইতোমধ্যে মূল ভাষার অংশ হয়ে উঠেছে এবং প্রমিত বাংলায় জায়গা করে নিয়েছে। আঞ্চলিক ভাষার শব্দ মূল ভাষায় জায়গা করে নেয়াই ভাষার একমাত্র শক্তি নয়, আঞ্চলিক কোনো শব্দে চমৎকৃত হওয়ায়-ও ভাষার সৌন্দর্য নিহিত নয়; ভাষার শক্তি তার সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডারে আর ভাষার সৌন্দর্য তার চলৎশক্তিতে- তার বোধগম্যতায় এবং নিজস্ব প্রক্ষেপণ স্বাতন্ত্র্যে।
অন্যান্য
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষার উপস্থিতি যেমন আছে তেমনি আছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পৃথক সাংকেতিক ভাষাও। ময়মনসিংহের গারো জাতির 'মান্দি' ভাষা, কোচ ও হাজং সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষা অথবা কিশোরগঞ্জের ভাটি অঞ্চল অষ্টগ্রামের স্থানীয় ভাষা, যার নাম তারা দিয়েছে ‘সুকুন’, ‘সুঅন’ বা ‘ছুহুম'।
সংস্কৃতি
[সম্পাদনা]লোক সংস্কৃতি, লোক উৎসব, লোকসংগীত, লোকগাঁথার দিক দিয়ে ময়মনসিংহ হলো তীর্থস্থান। ময়মনসিংহে একটি সংস্কৃতি ঐতিহ্য রয়েছে যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন সংগৃহীত ও সম্পাদিত মৈমনসিংহ গীতিকা ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনুদিত হয়ে বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদা পেয়েছে। এই গীতিকায় মহুয়া, চন্দ্রাবতী, দেওয়ানা মদিনা ইত্যাদি পালার কথা কে না শুনেছে। এছাড়াও রয়েছে মলুয়া, কমলা, দেওয়ান ভাবনা, দস্যু কেনারামের পালা, রূপবতী, কঙ্ক ও লীলা, কাজলরেখা ইত্যাদি পালা। কয়েকটি উদ্ধৃতি দেয়া হলো :
“ | জেঠ মাসের ছোট রাইত ঘুমের আরি না মিটে।
কদমতলায় শুইয়া বিনোদ দিনের দুপুর কাটে॥ |
” |
এছাড়াও রয়েছে,
“ | ইরাধরের বাড়ীৎ সাধু ধান না কিনিয়া।
আলাল দুলালে কিম্মত দিল দাম ধরিয়া॥ |
” |
তাছাড়া যাত্রাগান, গ্রামীণ কাহিনীর উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত নাটক ও যাত্রা ময়মনসিংহের ঐতিহ্য। ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত লোকসঙ্গীতগুলোর অন্যতম হলো বাউলগান, ভাটিয়ালী, কিস্সাপালা, কবিগান, কীর্তন, ঘাটুগান, জারিগান, সারিগান, মুর্শিদী, ঢপযাত্রা, বিয়ের গান, মেয়েলিগান, বিচ্ছেদী গান, বারমাসী, পুঁথিগান, পালকির গান, ধানকাটার গান, ধানভানার গান, হাইট্টারা গান, গাইনের গীত, বৃষ্টির গান, ধোয়া গান, শিবগৌরীর নৃত্য গীত, গাজীর গান, পটগান, আদিবাসীদের গান ইত্যাদি ।
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
[সম্পাদনা]এ জেলায় বসবাসরত বাঙালি, গারো, হাজং, কোচসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা পালন করে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতন এ জেলার আদিবাসীরাও বৈশাখী মেলা, ঈদ উৎসব, দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য উৎসব জাকজমকের সাথে উদ্যাপন করে থাকেন। এসব অনুষ্ঠানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, নির্মল ভ্রাতৃত্ববোধ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অন্যকে জানার স্পৃহা ও আগ্রহভরা অংশগ্রহণ।
ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাবার
[সম্পাদনা]উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। "এক নজরে জেলা"। জেলা বাতায়ন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০২২।
- ↑ "জেলাগুলোর শ্রেণি হালনাগাদ করেছে সরকার"। বাংলানিউজ২৪। ১৭ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২০।
- ↑ এক নজরে ময়মনসিংহ জেলা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ জুলাই ২০১৪ তারিখে,দৈনিক ময়মনসিংহ বার্তা।
- ↑ "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (পিডিএফ)। web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ "Election Commission Bangladesh - Home page"। www.ecs.org.bd।
- ↑ "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)। ecs.gov.bd। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"। বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"। প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "জয় পেলেন যারা"। দৈনিক আমাদের সময়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"। সমকাল। ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯৯-৪০০, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
- ↑ https://www.bd-pratidin.com/last-page/2015/03/24/70374
- ↑ https://www.bd-pratidin.com/first-page/2017/10/01/268445
- ↑ "ময়মনসিংহ জেলা"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯।
- ↑ Pratidin, Bangladesh (২০১৭-০৬-১০)। "ময়মনসিংহে শীর্ষে জাকির মিয়ার 'টক মিষ্টি জিলাপি'"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২২।