মোহনানন্দ ব্রহ্মচারী
শ্রীশ্রীমোহনানন্দ ব্রহ্মচারী | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | মনোমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ১৭ ডিসেম্বর ১৯০৪ |
মৃত্যু | ২৯ আগস্ট ১৯৯৯ | (বয়স ৯৫)
ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
দর্শন | নৈষ্টিক ব্রহ্মচারী |
ধর্মীয় জীবন | |
গুরু | শ্রীশ্রী বালানন্দ ব্রহ্মচারী |
মোহনানন্দ ব্রহ্মচারী (১৭ ডিসেম্বর ১৯০৪ - ২৯ আগস্ট ১৯৯৯) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি ধর্মগুরু ও যোগী পুরুষ, যিনি তিনি রাম নিবাস ব্রহ্মচর্য আশ্রমের দ্বিতীয় মোহন্ত বা প্রধান ছিলেন।[১]
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]মোহনানন্দ ব্রহ্মচারীর পূর্বাশ্রমের নাম ছিল মনোমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। তার জন্ম ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর শনিবার পিতার কর্মস্থল তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার কর্ণগড়ে এক ধার্মিক পরিবারে। পিতা হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। মাতা বিনয়নী দেবী। পৈতৃক নিবাস ছিল অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার শিবনিবাসে। ধর্মপ্রাণ ব্রাহ্মণ দম্পতি দেওঘর আশ্রমের শ্রীশ্রীবালানন্দ ব্রহ্মচারীর শিষ্য ছিলেন। মনোমোহনের জন্মের সময় গুরু শ্রী বালানন্দ ব্রহ্মচারী স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। তবে গুরু-শিষ্যের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল শিষ্যের জন্মের দেড় বছর পরে দেওঘর আশ্রমে যখন তার মাতাপিতা গুরুমহারাজের দর্শনে যান। শৈশব হতেই তার মধ্যেই ব্যাখ্যাতীত ঐশ্বরিক ভাব ছিল। সমবয়সীরা যখন স্বভাবসিদ্ধ ভাবে খেলা ও মজার মধ্যে লিপ্ত থাকত, মনোমোহন কিন্তু পড়াশোনা বা রবীন্দ্র সংগীতে মগ্ন থাকতেন। সঙ্গীতানুরাগী ও সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন মনোমোহন। পিতার বদলির চাকরির সূত্রে তিনি বাল্যকালে মজঃফরপুর, ভাগলপুর, পুরুলিয়া, ধানবাদ সহ বিভিন্ন জায়গায় থকেছেন। ধানবাদ ইংলিশ হাই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে ভরতি হন। পরের বছর তিনি তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র হিসাবে যোগ দেন। থাকতেন ওগিলভি হোস্টেলে। এই সময়ে তিনি স্বামী বিবেকানন্দ এবং শ্রী অরবিন্দের মতো বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের জীবন ও চিন্তা অধ্যয়নের পাশাপাশি তপস্যার অনুশীলন শুরু করেন। পরে সহসাই ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর সতেরো বৎসর বয়সে দেওঘরে শ্রীশ্রীবালানন্দ মহারাজের কাছে চলে যান। সমস্ত পার্থিব বাসনা ত্যাগ করে নৈষ্টিক ব্রহ্মচারী জীবনযাপনে মনস্থির করেন।
শ্রীশ্রীবালানন্দ ব্রহ্মচারী যুবক মনোমোহনের সংকল্প পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করেন এবং তার পিতামাতার সম্মতি নিয়ে অবশেষে একুশ দিন পর দুর্গা মহাষ্টমীর দিন তাকে সন্ন্যাস জীবনের দীক্ষা প্রদান করেন। মোহনানন্দ ব্রহ্মচারী নামে পরিচিত হয়ে দেশে এবং বিদেশে শ্রদ্ধেয় সাধুদের একজন হয়ে ওঠেন।
গুরু শ্রীশ্রী বালানন্দ ব্রহ্মচারী মোহনানন্দকে ঐশ্বরিক স্নেহে একাত্ম করে নিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে দেবী মার (শ্রীশ্রী বালা ত্রিপুরা সুন্দরী মা বা বলেশ্বরী মার) সেবায়ত করা সহ আশ্রমের সমস্ত দায়িত্ব অর্পণ করতে থাকেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুন গুরু শ্রীবালানন্দ ব্রহ্মচারীর প্রয়াণের পর দেওঘর আশ্রমের প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
তিনি দেওঘর ছাড়াও বদ্রীনাথ ধাম, হৃষিকেশ, হরিদ্বার, বারাণসী, দুর্গাপুর, বাঁকুড়া, বহরমপুর, হাজারিবাগ প্রভৃতি স্থানে আশ্রম গড়ে তোলেন। দেশ-বিদেশে তার বহু ভক্ত শিষ্য আছে।
জীবনাবসান
[সম্পাদনা]শ্রীশ্রীমোহনানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির রিভার পার্ক হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩২৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬