মুহাম্মদ দাউদ খান
মুহাম্মদ দাউদ খান | |
---|---|
আফগানিস্তানের ১ম রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ১৭ জুলাই ১৯৭৩ – ২৮ এপ্রিল ১৯৭৮ | |
পূর্বসূরী | বাদশাহ মুহাম্মদ জহির শাহ |
উত্তরসূরী | আবদুল কাদির (ভারপ্রাপ্ত) নূর মুহাম্মদ তারাকি |
আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫৩ – ১০ মার্চ ১৯৬৩ | |
সার্বভৌম শাসক | মুহাম্মদ জহির শাহ |
পূর্বসূরী | শাহ মাহমুদ খান |
উত্তরসূরী | মুহাম্মদ ইউসুফ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | কাবুল, আফগানিস্তান | ১৮ জুলাই ১৯০৯
মৃত্যু | ২৮ এপ্রিল ১৯৭৮ কাবুল, আফগানিস্তান | (বয়স ৬৮)
রাজনৈতিক দল | ন্যাশনাল রেভলুশনারি পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | জামিনা বেগম |
ধর্ম | ইসলাম (সুন্নি) |
মুহাম্মদ দাউদ খান (১৮ জুলাই ১৯০৯ – ২৮ এপ্রিল ১৯৭৮) ছিলেন আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্বপালন করেছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বাদশাহ মুহাম্মদ জহির শাহকে উৎখাতের মাধ্যমে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করেন এবং আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৭৮ সালে পিপল'স ডেমোক্রেটিক পার্টি অব আফগানিস্তানের (পিডিপিএ) নেতৃত্বে সংঘটিত সাওর বিপ্লবের সময় নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন।[১]
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]দাউদ খান ১৯০৯ সালের ১৮ জুলাই আফগানিস্তানের রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুহাম্মদ আজিজ খান ও মা খুরশিদ বেগম। তার বাবা জার্মানিতে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বপালন করার সময় ১৯৩৩ সালে বার্লিনে নিহত হন। এরপর তিনি ও তার ভাই নাইম খান তাদের চাচা হাশিম খানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। দাউদ খান ফ্রান্সে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৩৪-৩৫ ও ১৯৩৮-৩৯ সাল সময়কালে তিনি পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের এ গভর্নর ছিলেন। ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তিনি কান্দাহার প্রদেশের গভর্নর ছিলেন।
১৯৩৯ সালে দাউদ খান লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হন। ১৯৪৬ সালে তিনি কাবুল আর্মি কর্পসের কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ফ্রান্সে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন। ১৯৫১ সালে তিনি জেনারেল পদে উন্নীত হন এবং ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত কাবুলে আফগান সশস্ত্র বাহিনীর কেন্দ্রীয় কর্পসের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[২][৩][৪]
প্রধানমন্ত্রী
[সম্পাদনা]১৯৫৩ সালের সেপ্টেম্বরে দাউদ খান প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। দায়িত্বকালে তার বৈদেশিক নীতি সোভিয়েতমুখী ছিল। ১৯৬১ সাল থেকে আফগানিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে অনেক কম মূল্যে বিমান, ট্যাংক, অস্ত্র সরবরাহ করা হয়।
১৯৬০ সালে পাকিস্তানের সাথে সীমান্ত ইস্যুকে কেন্দ্র করে তিনি ডুরান্ড রেখায় সেনা প্রেরণ করেন। তবে তা সফল হয়নি। এসময় আফগান বেতার ব্যাপক প্রপাগান্ডা চালায়।[৫] ১৯৬৩ সালে দাউদ খানের পদত্যাগের পর সংকট মীমাংসা হয় এবং মে মাসে সীমান্ত খুলে দেয়া হয়।
১৯৬৪ সালে জহির শাহ নতুন সংবিধান চালু করেন। এসময় প্রথমবারের মত মন্ত্রীসভাআ থেকে রাজপরিবারের সকল সদস্যকে বাইরে রাখা হয়। দাউদ খান ইতিমধ্যেই সরে দাড়িয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি তিনি প্রতিরক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন।[৬]
রাষ্ট্রপতি
[সম্পাদনা]১৯৭৩ সালের ১৭ জুলাই দাউদ খান একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জহির শাহকে উৎখাত করেন। তিনি আফগানিস্তানকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন এবং রাষ্ট্রপতি হন। জহির শাহর সংবিধানে উল্লেখিত নির্বাচিত সদস্যদের বদলে মনোনীত লয়া জিরগার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন প্রণীত হয়েছিল তবে তা রাজনৈতিকভাবে সফল হয়নি।
১৯৭৬ সালে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রক্সি যুদ্ধের কারণে আফগানিস্তানের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ফাটল ধরে এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের অবনতি হয়। এই সময় আফগানিস্তানের ইসলামি আন্দোলনের নেতারা পাকিস্তানে আশ্রয় নিলে দাউদ খানের বিরুদ্ধে জুলফিকার আলি ভুট্টো তাদের সমর্থন দেন। ১৯৭৮ সালে দুই পক্ষ সাময়িক সমঝোতায় উপনীত হয়।
১৯৭৭ সালে প্রণীত সংবিধানে বেশ কিছু নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয় এবং পূর্বের অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। ১৯৭৮ সালে পিডিপিএর সাথে তার সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়। তার বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে মস্কো তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়। সোভিয়েতদের আশঙ্কা ছিল যে আফগানিস্তান পশ্চিমা বিশ্বের সাথে এবং বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠতা স্থাপন করবে। দাউদ খান সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে চেয়েছিলেন। তিনি এই উদ্দেশ্যে সহায়তার জন্য মিশর, ভারত, সৌদি আরব ও ইরান সফর করেন।
পরবর্তীতে দাউদ খান নিজের রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল রেভলুশনারি পার্টি গঠন করেছিলেন। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি লয়া জিরগায় রাষ্ট্রপতিশাসিত একদলীয় সরকারের বিধান সংবলিত সংবিধান অনুমোদন দেয়।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক
[সম্পাদনা]১৯৭৭ সালের ১২ থেকে ১৫ এপ্রিল দাউদ খান মস্কো সফরের সময় লিওনিদ ব্রেজনেভের সাথে সাক্ষাতা করেন। পিডিপিএর খালক ও পারচাম গ্রুপের মধ্যে ঐক্যের জন্য সোভিয়েত প্রচেষ্টা নিয়ে তিনি মস্কোয় আলাপ করেন।[৭] ব্রেজনেভ আফগানিস্তানের জোট নিরপেক্ষতাকে এশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করলেও ন্যাটো বিশেষজ্ঞদের আফগানিস্তানে উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানান। দাউদ তাকে জানান যে আফগানিস্তান স্বাধীন দেশ হিসেবে থাকবে এবং কীভাবে দেশ চলবে সে বিষয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নকে নির্দেশ দিতে দেওয়া হবে না।[৮]
দেশে ফেরার পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক হ্রাস করে পশ্চিমা বিশ্ব এবং তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরব ও ইরানের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেন। মিশরের সাথে আফগানিস্তানের সামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং আফগান সামরিক ও পুলিশ বাহিনীকে মিশরীয়রা প্রশিক্ষণ প্রদান করা শুরু করেন। এর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ক্ষুব্ধ হয়।
অভ্যুত্থান
[সম্পাদনা]১৯৭৮ সালের ১৯ এপ্রিল নিহত পিডিপিএ নেতা মীর আকবর খাইবারের শেষকৃত্যে কয়েক হাজার জনতা জড়ো হয়। ব্যাপক প্রতিবাদের মুখর অবস্থার কারণে দাউদ খান পিডিপিএ নেতাদের গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। তবে এতে তিনি দীর্ঘ সময় নিয়েছিলেন। গ্রেপ্তারের জন্য এক সপ্তাহ সময় লেগে গিয়েছিল। নূর মুহাম্মদ তারাকি ও বাবরাক কারমাল সোভিয়েত ইউনিয়নে পালিয়ে যান এবং হাফিজউল্লাহ আমিন গৃহবন্দী হন। পিডিপিএর দলিল অনুসারে গৃহবন্দী অবস্থায় আমিন অভ্যুত্থানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর ২৭ এপ্রিল সংঘটিত সাওর বিপ্লবে দাউদ খান ক্ষমতাচ্যুত হন।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]অভ্যুত্থান শুরুর পরদিন ২৮ এপ্রিল দাউদ খান তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।[৯] তবে অভ্যুত্থানের পর তার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করা হয়নি। নতুন সরকারের তরফ থেকে জানানো হয় যে দাউদ খান স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেছেন।
২০০৮ সালের ২৮ জুন দাউদ খান ও তার পরিবারের নিহত সদস্যদের লাশ কাবুলের পুল-এ-চারখি এলাকার দুইটি পৃথক গণকবরে পাওয়া যায়। প্রাথমিক রিপোর্টে জানা যায় যে প্রথম কবরে ১৬টি ও দ্বিতীয় কবরে ২টি লাশ ছিল।[১০] ২০০৮ সালের ৪ ডিসেম্বর আফগান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায় যে দাঁত ও লাশের কাছে পাওয়া ছোট সোনালি কুরআনের মাধ্যমে দাউদ খানের দেহাবশেষ সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সৌদি আরবের বাদশাহ তাকে এই কুরআন উপহার দিয়েছিলেন।[১১] ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ দাউদ খানকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।[১০]
ব্যক্তিগত জীবন
[সম্পাদনা]দাউদ খান ১৯৩৪ সালে শাহজাদি জামিনা বেগমকে বিয়ে করেন। জামিনা বেগম জহির শাহর বোন ছিলেন। এই দম্পতির চার ছেলে ও চার মেয়ে ছিল।[১২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Rubin, Barnett। "DĀWŪD KHAN, MOḤAMMAD"। Ehsan Yarshater। Encyclopædia Iranica (Online সংস্করণ)। United States: Columbia University। সংগ্রহের তারিখ January 2008। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Tomsen, Wars of Afghanistan,' 90.
- ↑ Dupree, Louis (১৯৮০)। Afghanistan। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 475, 498।
- ↑ "The Royal Ark"।
- ↑ "Afghanistan - Daoud as Prime Minister, 1953-63"। Countrystudies.us। ১৯৬১-০৯-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৯।
- ↑ "The Royal Ark"। The Royal Ark। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৯।
- ↑ Wolny, Philip (২০০৭)। Hamid Karzai: President of Afghanistan। The Rosen Publishing Group। পৃষ্ঠা 8। আইএসবিএন 1-4042-1902-1।
- ↑ Pazira, Nelofer (২০০৫)। A Bed of Red Flowers: In Search of My Afghanistan। Simon and Schuster। পৃষ্ঠা 70। আইএসবিএন 0-7432-9000-3।
- ↑ "There was, therefore, little to hinder the assault mounted by the rebel 4th Armored Brigade, led by Major Mohammed Aslam Watanjar, who had also been prominent in Daoud's own coup five years before. Watanjar first secured the airport, where the other coup leader, Colonel Abdul Qadir, left by helicopter for the Bagram air base. There he took charge and organized air strikes on the royal palace, where Daoud and the presidential guard were conducting a desperate defense. Fighting continued the whole day and into the night, when the defenders were finally overwhelmed. Daoud and almost all of his family members, including women and children, died in the fighting. Altogether there were possibly as many as two thousand fatalities, both military and civilian." p. 88 of Ewans, Martin (2002) Afghanistan: A Short History of Its People and Politics HarperCollins, New York, Page 88 আইএসবিএন ০-০৬-০৫০৫০৭-৯
- ↑ ক খ "South Asia | Remains of Afghan leader buried"। BBC News। ২০০৯-০৩-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-২৯।
- ↑ "Body of Afghan leader identified"। BBC News। ডিসেম্বর ৪, ২০০৮।
- ↑ The Royal Ark
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]রাজনৈতিক দপ্তর | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী শাহ মাহমুদ খান |
আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ১৯৫৩-১৯৬৩ |
উত্তরসূরী মুহাম্মদ ইউসুফ |
পূর্বসূরী মুহাম্মদ জহির শাহ (বাদশাহ) |
আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান ১৯৭৩-১৯৭৮ |
উত্তরসূরী আবদুল কাদির |
- আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
- অভ্যুত্থানে ক্ষমতাসীন নেতা
- পশতু ব্যক্তি
- ১৯০৯-এ জন্ম
- ১৯৭৮-এ মৃত্যু
- নিহত আফগান রাজনীতিবিদ
- নিহত রাষ্ট্রপ্রধান
- আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি
- কাবুলের ব্যক্তিত্ব
- গুপ্তহত্যার শিকার রাষ্ট্রপ্রধান
- অভ্যুত্থানে ক্ষমতা গ্রহণকারী নেতা
- আফগানিস্তানে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা মৃত্যু
- কাবুলের ব্যক্তি
- পশতু জাতীয়তাবাদী