রইস ভূঁইয়া
রইস উদ্দিন ভূঁইয়া | |
---|---|
জন্ম | রইস ভূঁইয়া সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ (বয়স ৫১) |
জাতীয়তা | বাংলাদেশ-আমেরিকান |
পেশা | প্রযুক্তিবিদ |
ওয়েবসাইট | worldwithouthate |
রইস উদ্দিন ভূঁইয়া (ইংরেজি: Rais Bhuiyan) (জন্ম: সেপ্টেম্বর ১৯৭৩) একজন বাংলাদেশী আমেরিকান যিনি টেক্সাসের ডালাসে প্রযুক্তিবিদ হিসেবে কর্মরত আছেন।[১] বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। সিলেট ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। কম্পিউটার প্রযুক্তিতে অধ্যয়ন করতে নিউ ইয়র্ক শহরে গিয়েছিলেন।[২] ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পরে মার্ক স্ট্রম্যান নামের এক মদ্যপ উন্মাদের আক্রমণের শিকার হলেন রইস ভূঁইয়া। তার আগে-পরে স্ট্রম্যানের জিঘাংসার শিকার হয়েছিলেন আরো দুজন ব্যক্তি, একজন পাকিস্তানের নাগরিক, অন্যজন ভারতের। দুজনই মারা গিয়েছিলেন। ভাগ্যটা খুব বেশি ভালো বলেই বেঁচে রইলেন এই বাংলাদেশী। কিন্তু শটগানের গুলিতে মুখমণ্ডল ঝাঝরা হয়ে গেল তার এক চোখের দৃষ্টিশক্তি একেবারেই হারিয়েছেন।[১]
এরপর সুপ্রিম কোর্ট মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে মার্ক স্ট্রোম্যানকে। সেই দণ্ড মওকুফ করে মার্ক স্ট্রোম্যানকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে তার ভুল শোধরানোর আবেদন করেন রইস ভূঁইয়া। বিষয়টি সারা আমেরিকায় তোলপাড় সৃষ্টি করে। যে ব্যক্তি তার প্রাণ-সংহারের চেষ্টা করেছিল, তাকে বাঁচানোর আকুতি কেন? এ নিয়ে আমেরিকান মিডিয়া এবং সুধীসমাজের প্রশ্নের জবাবে রইস ভূঁইয়া ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেন। ব্যর্থ হয়েছিলেন রইস। ঘাতক স্ট্রম্যানের জীবন বাঁচাতে পারেননি । কিন্ত এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, কারো জীবনে যেন এরকম বিভীষিকা নেমে না আসে, কারো পরিণতি যেন মার্ক স্ট্রম্যানের মতো না হয় সেই উদ্দেশ্যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাথে রইস উদ্দিন ভূঁইয়া গড়ে তুললেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, নাম ‘World without hate’ ক্রাইমের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করলেন।[১][৩][৪]
ঘৃণা অপরাধ শিকার
[সম্পাদনা]২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর ওই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ডালাস সিটির ১০৮১৯ এলাম রোডে ৩টি স্টোরে প্রতিশোধ নিতে ওই হামলা চালিয়ে মার্ক স্ট্রোম্যান (১৩ অক্টোবর, ১৯৬৯ - ২০ জুলাই, ২০১১) ভারতীয় ইমিগ্র্যান্ট বাসুদেব পাটেল (৪৯), পাকিস্তানি ইমিগ্র্যান্ট ওয়াকার হাসান (৪৬) এবং বাংলাদেশী রইস ভূঁইয়াকে গুলিবিদ্ধ করেন। [২][৫]
ভবিষ্যৎ ফল
[সম্পাদনা]তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে স্ট্রম্যানের সঙ্গে দেখা করতে পেরেছিলেন রইস। যে মানুষটাকে তিনি মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন, সেই ‘মুসলিম’ রইস যে তাকে বাঁচানোর জন্যে এতকিছু করছে, সেটা স্ট্রম্যান জানতে পেরেছিলেন। রইসকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। স্ট্রম্যানের মৃত্যুর পরে রইস বসে থাকেননি।
বাংলাদেশী রইস উদ্দিনের কাজটাক এবার রূপালী পর্দায় ঠাই দিতে চলেছেন পাবলো ল্যারিন। অস্কারজয়ী পরিচালক ক্যাথেরিন বিগেলো এই সিনেমাটা প্রযোজনা করছেন। স্ক্রীপ্টটা বানানো হয়েছে রইসের সেই ঘটনাটা নিয়ে লেখা ‘দ্য ট্রু আমেরিকান’ বই থেকে। রইসের চরিত্রে অভিনয় করবেন নাঞ্জিয়ানি, আর মার্ক স্ট্রম্যানের চরিত্রে থাকবেন রাফেলো। মহানুভবতা দিয়ে রইস উদ্দিন ভূইয়া জয় করেন আমেরিকার মানুষের হৃদয়।
নিউইয়র্কের জীবনযাত্রা বেশ ব্যয়বহুল। খরচ কমানোর জন্যেই রইস নিউইয়র্ক ছাড়লেন, পাড়ি দিলেন আমেরিকার পশ্চিম দিকের রাজ্য টেক্সাসে। সেখানে একটি ফিলিং স্টেশনে কাজ নিলেন রইস। এরমধ্যে ঘটে গেল আমেরিকার ইতিহাসের আলোড়ন সৃষ্টিকারী টুইন টাওয়ার হামলা। নিহত হলেন শত শত মানুষ, আল-কায়েদা দায় স্বীকার করলো এই হামলার। আর বিপাকে পড়লো আমেরিকায় বসবাসকারী মুসলমানেরা। পুরো আমেরিকাজুড়েই হেট ক্রাইমের পরিমাণ বাড়লো আশঙ্কাজনক হারে, মুসলমানদের ওপর হামলা শুরু হলো পথে-ঘাটে, কর্মস্থলেও অপমানের শিকার হতে থাকলেন তারা, মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুঁজে খুঁজে হামলা করাও হচ্ছিল তখন।[২][৫]
কিন্ত আশার আলো ফুরিয়ে আসছিল চারদিক থেকেই। দুইবার মৃত্যুদণ্ড বাতিলের জন্যে রিট আবেদন করেন রইস, কিন্ত দুবারই তার আবেদন খারিজ করে দেয় মার্কিন আদালত। ২০শে জুলাই ইঞ্জেকশন প্রয়োগে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। তার মৃত্যুর মধ্যদিয়ে এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে ২৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো। এর আগে আইনজীবী স্ট্রমানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য ফেডারেল কোর্টে চূড়ান্ত আপিল হারিয়েছিল।[৩][৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ Huus, Kari (জুন ৩, ২০১১)। "A victim of 9/11 hate crime now fights for his attacker's life"। MSNBC। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৯, ২০১১।
- ↑ ক খ গ Cordell, Anya (২০১১)। "Close Up:Rais Bhuiyan, survivor"। executionchronicles.org। জুন ২৯, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৯, ২০১১।
- ↑ ক খ Serrano, Richard A. (অক্টোবর ২১, ২০১১)। "Finding forgiveness on death row"। Los Angeles Times। অক্টোবর ২৪, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৯, ২০১৯।
- ↑ "9/11 Hate-Crime Victim Seeks To Save His Attacker"। NPR। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৯, ২০১১।
- ↑ ক খ Williams, Timothy (জুলাই ১৮, ২০১১)। "The Hated and the Hater, Both Touched by Crime"। New York Times।
- ↑ "Texas Man Executed for Killing Middle Eastern Store Clerk"। Fox News। জুলাই ২০, ২০১১।