বিষয়বস্তুতে চলুন

লিউকেমিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লিউকেমিয়া রক্তকণিকাসমূহ
প্রতিশব্দLeukaemia
বি-সেল তীব্র লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়াযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে সংগৃহিত রাইটের দাগযুক্ত অ্যাসপিরেট স্মিয়ার অস্থি মজ্জা।
উচ্চারণ
বিশেষত্বরক্তবিদ্যাক্যান্সারবিজ্ঞান
লক্ষণরক্তক্ষরণ, কালশিটে, ক্লান্তি অনুভব করা, জ্বর, সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি[]
রোগের সূত্রপাতসকল বয়সের,[] ৬০ ও ৭০ বছর বয়সীদের জন্য খুবই সাধারণ[]। এটি শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সার, তবে তাদের মধ্যে নিরাময়ের হারও বেশি।
কারণবংশগত এবং পরিবেশগত কারণ[]
ঝুঁকির কারণধূমপান, পারিবারিক সূত্র, আয়নকারী বিকিরণ, কিছু রাসায়নিক, পূর্ববৎ কেমোথেরাপি, ডাউন সিনড্রোম.[][]
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতিরক্ত পরীক্ষা, অস্থি মজ্জা বায়োপসি[]
চিকিৎসাকেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি,টার্গেটেড বা লক্ষ্যযুক্ত থেরাপি, হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল প্রতিস্থাপন, লক্ষণীয় চিকিৎসা[]
আরোগ্যসম্ভাবনাপাঁচ-বছরের বেঁচে থাকার হার ৫৭% (ইউএসএ)[]
সংঘটনের হার২.৩ মিলিয়ন (২০১৫)
মৃতের সংখ্যা৩৫৩,৫০০ (২০১৫)

লিউকেমিয়া বা লিউকিমিয়া রক্ত বা অস্থিমজ্জার ক্যান্সার [][]। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর প্রধান লক্ষণ রক্তকণিকার, সাধারণত শ্বেত রক্তকণিকার অস্বাভাবিক সংখ্যাবৃদ্ধি। রোগটির নামই হয়েছে এর থেকে- লিউক~ অর্থাৎ সাদা, হিমো~ অর্থাৎ রক্ত। রক্তে ভ্রাম্যমাণ এই শ্বেত রক্ত কণিকাগুলি অপরিণত ও অকার্যকর। রক্ত উৎপাদনকারী অস্থিমজ্জার মধ্যে এদের সংখ্যাধিক্যের ফলে স্থানাভাবে স্বাভাবিক রক্তকণিকা উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে সব লিউকেমিয়াতেই যে শ্বেত কণিকার সংখ্যাধিক্যই দেখা যাবে তা নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে অ্যালিউকিমিয়া অর্থাৎ শ্বেত কণিকার স্বল্পতা বা সাব-লিউকিমিয়া অর্থাৎ প্রায় স্বাভাবিক সংখ্যার শ্বেত কণিকা দেখা যেতে পারে (যেমন "হেয়ারি সেল লিউকেমিয়া" নামের একটি লিউকেমিয়াতে বহুল ভাবে দেখা যায়)। কাজেই সংখ্যা দিয়ে নয়, রক্তকণিকার অস্বাভাবিকতার ফলেই এই রোগ হয়।

লিউকেমিয়ার প্রকৃত কারণ অজানা। বিভিন্ন লিউকেমিয়ার কারণ বিভিন্ন হতে পারে। বংশগত এবং পরিবেশগত উভয় কারণই এর সাথে সংশ্লিষ্ট হতে পারে।[] ঝুকির কারণের মধ্যে রয়েছে ধূমপান,তেজস্ক্রিয়তা,কিছু কেমিক্যাল যেমন বেনজিন ইত্যাদি। [][] যেসকল ব্যক্তির লিউকেমিয়ার পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে,তারাও উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।[] লিউকেমিয়ার চারটি প্রধান প্রকারভেদ রয়েছে : অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (ALL), অ্যাকিউট মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (AML), ক্রনিক লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (CLL) এবং ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (CML)।[][] এটি নিওপ্লাজমের একটি অংশ।[][]

কেমোথেরাপি,তেজস্ক্রিয় থেরাপি,অস্থিমজ্জা স্থানান্তর ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। কিছু লিউকেমিয়া সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।[] লিউকেমিয়ার ধরন এবং আক্রান্ত ব্যক্তির বয়সের উপর চিকিৎসার সাফল্য নির্ভর করে। যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ বছর বেঁচে থাকা রোগীর গড় ৫৭%। [] লিউকেমিয়ার ধরনের উপর ১৫ বছরের নিচের বাচ্চাদের বেঁচে থাকার গড় ৬০-৮৫% এর বেশি। [১০] যে সকল অ্যাকিউট লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি পাঁচ বছরের পর ক্যান্সার মুক্ত হয়েছেন,তাদের পুনরায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নেই। [১০]

২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী ৩,৫২,০০০ ব্যক্তি লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২,৬৫,০০০।[] শিশুদের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে,যার মধ্যে তিন চতুর্থাংশের ALL হয়।[] লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৯০% চিহ্নিত হোন যার মধ্যে AML এবং CLL প্রধান।[]

প্রকারভেদ

[সম্পাদনা]
চারটি প্রধান লিউকেমিয়া
কোষের ধরন অ্যাকিউট ক্রনিক
লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া
(অথবা "লসিকাকোষীয়")
অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া
(ALL)
ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া
(CLL)
মায়েলজেনাস লিউকেমিয়া
("মায়েলয়েড" বা "অ-লসিকাকোষীয়")
অ্যাকিউট মায়েলয়েড লিউকেমিয়া
(AML or myeloblastic)
ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া
(CML)

লিউকেমিয়ার অনেক প্রকারভেদ আছে। প্রথমটি হল অ্যাকিউট এবং ক্রনিক।

  • অ্যাকিউট লিউকেমিয়া-অপূর্ণাঙ্গ রক্তকণিকার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি।এর ফলে অস্থি মজ্জা পূর্ণ রক্তকণিকা উৎপন্ন করতে পারে না। অ্যাকিউট লিউকেমিয়ায় ত্বরিত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত,কারণ ম্যালিগন্যান্ট কোষের দ্রুত আধিক্য এবং রক্তস্রোতের মাধ্যমে দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়া।এটি শিশুদের লিউকেমিয়ার সবচেয়ে প্রচলিত ধরন।
  • ক্রনিক লিউকেমিয়া-প্রায় পূর্ণাঙ্গ,কিন্তু অস্বাভাবিক শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি। কোষগুলি স্বাভাবিকের তুলনায় সংখ্যায় অনেক উচ্চহারে উৎপন্ন হতে থাকে,ফলে অস্বাভাবিক শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি হয়।এমন পর্যায়ে যেতে প্রায় মাস থেকে বছর লেগে যায়।অ্যাকিউট লিউকেমিয়ায় ত্বরিত চিকিৎসা গ্রহণ করলেও ক্রনিক লিউকেমিয়ায় সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে পর্যবেক্ষণ করা হয়।অধিকাংশ ক্রনিক লিউকেমিয়া প্রাপ্ত বয়স্কদের হয়।

এর পাশাপাশি কোন ধরনের রক্তকণিকা আক্রান্ত হচ্ছে,তার উপর ভিত্তি করে লিউকেমিয়াকে আরও ভাগ করা হয়,যথা লিম্ফোসাইটিক বা লসিকাকোষীয় লিউকেমিয়া এবং মায়েলজেনাস লিউকেমিয়া।

এই দুইটি প্রকরণকে মিলিয়ে সর্বমোট চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়,যাদের উপভাগ রয়েছে।কিছু দুর্লভ লিউকেমিয়াকে অন্য শ্রেণিবিভাগ করা হয়

  • ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া (CLL) ৫৫ বছরের উপরের ব্যক্তিদের বেশি হয়।এটি কম বয়স্কদের হতে পারে,কিন্তু শিশুদের প্রায় হয় না বললেই চলে।আক্রান্তের দুই তৃতীয়াংশই পুরুষ। ৫ বছর বেঁচে থাকার হার ৭৫%।[১২] এটি অনিরাময়যোগ্য,কিন্তু কিছু ফলপ্রসূ চিকিৎসা রয়েছে।
  • অ্যাকিউট মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (AML) প্রধানত প্রাপ্ত বয়স্কদের হয়,খুব অল্পই শিশুদের হয়,আক্রান্তের অধিকাংশই নারী।এটি কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়,পাঁচ বছর বেঁচে থাকার হার ৪০%,ব্যতিক্রম অ্যাকিউট প্রোমায়েলেটিক লিউকেমিয়া,যা ৯০% এর উপরে।[১৩]

উপসর্গ

[সম্পাদনা]

স্বাভাবিক রক্ত উৎপাদন ব্যাহত হবার ফলে নানা রকম রক্তকণিকার অভাবজনিত উপসর্গ দেখা দেখা দেয়- যেমন:

  1. অণুচক্রিকার অভাবে রক্ত তঞ্চন ব্যাহত হয় ও স্বল্প চোটে রক্তপাত হতে থাকে:
    1. চামড়ার নিচে কালো রক্ত জমা ছোপ দেখা যেতে পারে।
    2. মাড়ি ফুলে থাকতে পারে।
    3. চোখের সাদা অংশে লাল জমাট বাঁধা রক্ত দেখা যেতে পারে।
  2. শ্বেত রক্ত কণিকার অভাবে নানা রকম সংক্রামক ব্যাধি হতে পারে:
    1. জ্বর, কাঁপুনি ইত্যাদি
    2. নানা জায়গায় পুঁজ যুক্ত ক্ষত হওয়া।
  3. লোহিত রক্তকণিকার অভাবে রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) হতে পারে:
    1. দুর্বলতা, হৃৎকম্প, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হতে পারে
  4. যকৃৎপ্লীহা বৃদ্ধি পেতে পারে।
  5. হাড়ে চাপ দিলে ব্যাথা অনুভব হতে পারে।

লিউকেমিয়া হবার জন্য আলাদা কোন একক কারণ নেই। কিছু জ্ঞাত কারণ, যা স্বাভাবিক ব্যক্তির আয়ত্তে বড় কোন বিষয় নয়,নিয়ন্ত্রণের বাহিরে গেলে ব্যতিক্রম হতে পারে।[১৭] লিউকেমিয়ার অধিকাংশ কারণই অজানা।ভিন্ন ভিন্ন লিউকেমিয়ার ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে।

অন্যান্য ক্যান্সারের মতই DNA তে মিউটেশন হলে লিউকেমিয়া হয়।এরকম মিউটেশন ক্যান্সার সক্রিয়কারি এজেন্টকে সক্রিয় করে বা টিউমার দমনকারী জিনকে অক্রিয় করে লিউকেমিয়া করে এবং কোষের স্বাভাবিক প্রক্তিয়া ব্যহত করে।এমন মিউটেশন স্বতঃস্ফূর্তভাবে কিংবা তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণের কারণে হতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে জানা কারণ প্রাকৃতিক এবং কৃত্তিম তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণ,কিছু ভাইরাস যেমন হিউম্যান T লিম্ফোট্রপিক ভাইরাস ও কিছু কেমিক্যাল,বিশেষ করে বেনজিন উল্লেখযোগ্য। [১৮][১৯][২০] তামাকের ব্যবহার অ্যাকিউট মায়েলয়েড লিউকেমিয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। [১৮] চুলের ডাই এর ব্যবহার কিছু লিউকেমিয়ার কারণ হতে পারে। [১৭]

ভাইরাস কিছু লিউকেমিয়ার জন্য দায়ী।ইঁদুর ও অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের উপর চালানো পরীক্ষায় লিউকেমিয়ার সাথে রেট্রোভাইরাসের সম্পর্ক দেখা যায় এবং মানব রেট্রোভাইরাস চিহ্নিত করা হয়।প্রথম চিহ্নিত রেট্রোভাইরাস হিউম্যান T লিম্ফোট্রপিক ভাইরাস যা T কোষ লিউকেমিয়ার জন্য দায়ী।[২১]

পারিবারিক ইতিহাস থেকে জানা যায় কিছু ব্যক্তির লিউকেমিয়া বংশগত।[১৮] আক্রান্ত ব্যক্তির এক বা একাধিক জিন একই পাওয়া যায়। কিছু ক্ষেত্রে পরিবারে অন্য সদস্যদের একই লিউকেমিয়া দেখা যায়।অন্যান্য পরিবারে আক্রান্ত ব্যক্তির ভিন্নরকম লিউকেমিয়া হতে পারে।[১৮]

এসকল জেনেটিক বিষয়ের পাশাপাশি যাদের ক্রোমোসোমে অস্বাভাবিকতা রয়েছে,তাদের লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি খুব বেশি।[১৯] উদাহরণস্বরূপ,যাদের ডাউন সিনড্রোম আছে,তাদের অ্যাকিউট লিউকেমিয়া হবার সম্ভাবনা বেশি,বিশেষ করে AML।[১৮]

তেজস্ক্রিয়তা থেকেও লিউকেমিয়া হতে পারে।[২২] উচ্চ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে উন্মুক্ত থাকলেও শিশুদের লিউকেমিয়া হতে পারে।[২২]

গর্ভাবস্থায় মায়ের লিউকেমিয়া থাকলেও শিশুর হতে পারে।[১৮]

শনাক্তকরণ

[সম্পাদনা]
সুস্থ ও অসুস্থ রক্ত এর মধে্য্য পারথক্ক

পরিপূর্ণ রক্ত পরীক্ষা এবং অস্থি মজ্জা পরীক্ষার মাধ্যমে লিউকেমিয়া শনাক্ত করা যায়,যদিও কিছু দুর্লভ কেসে রোগীর রক্ত পরীক্ষায় লিউকেমিয়া ধরা পড়ে না,কারণ লিউকেমিয়া প্রাথমিক অবস্থায় থাকে।অন্যান্য লিউকেমিয়া শনাক্ত করতে লসিকা গ্রন্থি বায়োপ্সি করা হয়।

শনাক্তের পর রোগীর উপর প্রয়োগকৃত কেমোথেরাপির প্রভাব যকৃৎ এবং বৃক্ক এর উপর কিরকম হয়,তা জানার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়। লিউকেমিয়ার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হলে চিকিৎসক এক্স রে,MRI,আল্ট্রাসনোগ্রাফি ইত্যাদি পরীক্ষা করতে দিতে পারেন। শেষে,বুকের লসিকা গ্রন্থি পরীক্ষার জন্য সিটি স্ক্যান করা যেতে পারে,তবে তা খুবই কম।

যদিও এসকল পরীক্ষার মাধ্যমে একজন রোগীর লিউকেমিয়া আছে কি না,তা দেখা হয়,তবুও অনেকেই শনাক্ত হোন না।এর কারণ অনেক লক্ষ্মণ অস্পষ্ট,সুনির্দিষ্ট নয়, যা অন্য রোগের হতে পারে।এজন্যে আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি মনে করে,কমপক্ষে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত এক-পঞ্চমাংশ শনাক্ত হোন না।[২৩]

জেনেটিক সিকুয়েন্সিং এর মাধ্যমে জিনে মিউটেশন পরীক্ষা করা হয়।[২৪]

চিকিৎসা

[সম্পাদনা]

অধিকাংশ লিউকেমিয়ার চিকিৎসা ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে হয়,সচরাচর একাধিক ঔষধ ব্যবহার করে।কিছু রোগীর চিকিৎসা কেমোথেরাপির মাধ্যমে করা হয়।আবার কিছু ক্ষেত্রে,অস্থি মজ্জা স্থানান্তর বা bone marrow transplant ফলপ্রসূ।

অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক

[সম্পাদনা]

অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকিমিয়ার চিকিৎসা অস্থি মজ্জার নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দেয়। পাশাপাশি,লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত কোষগুলিকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়া অবশ্যই রোধ করতে হয়,বিশেষ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রে(CNS)।সাধারণভাবে,এই চিকিৎসা কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

  • কেমোথেরাপি শুরু করা (Induction chemotherapy)
  • থেরাপি একীভূত করা (Consolidation therapy বা intensification therapy)যাতে অবশিষ্ট লিউকেমিয়া কোষ ধ্বংস হয়ে যায়।
  • CNS প্রোফিল্যাক্সিস যাতে লিউকেমিয়া স্নায়ু তন্ত্র এবং মস্তিষ্কে ছড়িয়ে না পড়ে।
  • রক্ষণাবেক্ষণ চিকিৎসা

ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক

[সম্পাদনা]

কখন চিকিৎসা দেওয়া যাবে

[সম্পাদনা]

সাধারণত যেসব কারণে চিকিৎসা দেওয়া হয়

  • হিমোগ্লোবিন বা অণুচক্রিকার সংখ্যা কমে যাওয়া
  • রোগ আরও বৃদ্ধি পাওয়াProgression to a later stage of disease
  • রোগের কারণে প্লীহা বা লসিকা গ্রন্থির আকার বেড়ে যাওয়া
  • লসিকা কোষ বা লিম্ফোসাইটের অত্যধিক বৃদ্ধি।[২৫]

চিকিৎসায় অগ্রসর

[সম্পাদনা]

বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় CLL প্রতিকারযোগ্য নয়।প্রাথমিক চিকিৎসায় ক্লোরামবুসিল বা সাইক্লোফসফামাইডের সাথে কর্টিকোস্টেরয়েড যেমন প্রেডনিসোন সহযোগে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।

অ্যাকিউট মায়েলোজেনাস

[সম্পাদনা]

বিভিন্ন অ্যান্টি-ক্যান্সার ঔষধ AML এর চিকিৎসার জন্য কার্যকর।AML এর ধরন এবং রোগীর বয়সের তারতম্যের উপর চিকিৎসা নির্ভর করে।এর উদ্দেশ্য হল অস্থি মজ্জা ও দেহের সামগ্রিক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা এবং সেই সাথে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের চিকিৎসা করা।[২৬]

ক্রনিক মায়েলোজেনাস

[সম্পাদনা]

রোগতত্ত্ব

[সম্পাদনা]
২০০৪ সালে প্রতি ১,০০,০০০ জনে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত মৃত্যুর হার[২৭]
  কোন তথ্য নেই
  ১ বছরের কম
  ১-২
  ২-৩
  ৩-৪
  ৪-৫
  ৫-৬
  ৬-৭
  ৭-৮
  ৮-৯
  ৯-১০
  ১০-১১
  ১১ বছরের বেশি

২০১০ সালে প্রায় ২,৮১,৫০০ মানুষ লিউকেমিয়ায় মারা গিয়েছে।[২৮] ২০০০সালে প্রায় ২,৫৬,০০০ শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্ক লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয় ও এর মধ্যে ২,০৯,০০০ জন মারা যায়। [২৯][২৯] দেহের ষোলটি জায়গা তুলনা করলে লিউকেমিয়া নিওপ্লাজম রোগের মধ্যে ১২তম সবচেয়ে কমন বা প্রচলিত রোগ এবং ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুর ১১ তম সবচেয়ে প্রচলিত রোগ। [২৯]

বাচ্চাদের ক্যান্সারের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরই লিউকেমিয়া আছে,যার অধিকাংশই ALL।[৩০] ছেলেদের মেয়েদের তুলনায় লিউকেমিয়া একটু বেশি হয়। [৩০] প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে মাত্র ৩% মানুষের লিউকেমিয়া হয়।

জাতিগত বৈশিষ্ট্য ঝুঁকির কারণ।২০ বছরের নিচের হিস্পানিকদের লিউকেমিয়া হবার ঝুঁকি অনেক বেশি।শ্বেত,নেটিভ আমেরিকান,এশিয়ান মানুষদের লিউকেমিয়া হবার ঝুঁকি কালো লোকদের তুলনায় বেশি।[৩১]

লিঙ্গ আরেকটি উচ্চ ঝুঁকির কারণ। বেশির ভাগ পুরুষ লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। নারীদের থেকে ৩০% বেশি পুরুষদের লিউকেমিয়া আছে। [৩২]

উন্নত বিশ্বেই লিউকেমিয়া বেশি হয়।[৩৩]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]
রুডলফ ভিরকাউ

১৮৪৫ সালে প্যাথোলজিস্ট রুডলফ ভিরকাউ সর্বপ্রথম লিউকেমিয়া পর্যবেক্ষণ করেন।একজন রোগীর রক্তের নমুনা থেকে অস্বাভাবিক শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা দেখে ভিরকাউ একে লিউকেমিয়া বলে আখ্যায়িত করেন।এর দশ বছর পর আরেক প্যাথোলজিস্ট ফ্রাঞ্জ আর্ন্সট ক্রিশ্চান নিউমান একজন লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর অস্থি মজ্জার স্বাভাবিক রঙ লালের বদলে সবুজাভ হলুদ দেখেন।এই পর্যবেক্ষণ নিউমানকে লিউকেমিয়া রোগীর অস্বাভাবিক রক্তের কন্য অস্থি মজ্জাকে দায়ী ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে।

১৯৬২ সালে গবেষক এমিল ফ্রেইরিচ ও এমিল ফ্রেই লিউকেমিয়া আরগ্যের জন্য যুগপৎ কেমোথেরাপি ব্যবহার করে সাফল্য পান।[৩৪]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Leukemia"Merriam-Webster। ৬ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. "What You Need To Know About™ Leukemia"National Cancer Institute। ২০১৩-১২-২৩। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৪ 
  3. "A Snapshot of Leukemia"NCI। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৪ 
  4. "SEER Stat Fact Sheets: Leukemia"। National Cancer Institute। ২০১১। 
  5. Hutter, JJ (জুন ২০১০)। "Childhood leukemia."। Pediatrics in review / American Academy of Pediatrics31 (6): 234–41। ডিওআই:10.1542/pir.31-6-234পিএমআইডি 20516235 
  6. "Leukemia"NCI। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৪ 
  7. World Cancer Report 2014.। World Health Organization। ২০১৪। পৃষ্ঠা Chapter 5.13। আইএসবিএন 9283204298 
  8. Vardiman, JW; Thiele, J; Arber, DA; Brunning, RD; Borowitz, MJ; Porwit, A; Harris, NL; Le Beau, MM; Hellström-Lindberg, E; Tefferi, A; Bloomfield, CD (জুলাই ৩০, ২০০৯)। "The 2008 revision of the World Health Organization (WHO) classification of myeloid neoplasms and acute leukemia: rationale and important changes."। Blood114 (5): 937–51। ডিওআই:10.1182/blood-2009-03-209262পিএমআইডি 19357394 
  9. Cătoi, Alecsandru Ioan Baba, Cornel (২০০৭)। Comparative oncology। Bucharest: The Publishing House of the Romanian Academy। পৃষ্ঠা Chapter 17। আইএসবিএন 973-27-1457-3 
  10. American Cancer Society (২ মার্চ ২০১৪)। "Survival rates for childhood leukemia" 
  11. Jameson, J. N. St C.; Dennis L. Kasper; Harrison, Tinsley Randolph; Braunwald, Eugene; Fauci, Anthony S.; Hauser, Stephen L; Longo, Dan L. (২০০৫)। Harrison's principles of internal medicine। New York: McGraw-Hill Medical Publishing Division। আইএসবিএন 0-07-140235-7 
  12. Finding Cancer Statistics » Cancer Stat Fact Sheets »Chronic Lymphocytic Leukemia National Cancer Institute.
  13. Colvin G. A., Elfenbein G. J. (২০০৩)। "The latest treatment advances for acute myelogenous leukemia"Medicine and Health, Rhode Island86 (8): 243–6। পিএমআইডি 14582219 
  14. Novartis
  15. Patients with Chronic Myelogenous Leukemia Continue to Do Well on Imatinib at 5-Year Follow-Up Medscape Medical News 2006.
  16. Updated Results of Tyrosine Kinase Inhibitors in CML ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে ASCO 2006 Conference Summaries.
  17. Ross JA, Kasum CM, Davies SM, Jacobs DR, Folsom AR, Potter JD (আগস্ট ২০০২)। "Diet and risk of leukemia in the Iowa Women's Health Study"Cancer Epidemiol. Biomarkers Prev.11 (8): 777–81। পিএমআইডি 12163333 
  18. Wiernik, Peter H. (২০০১)। Adult leukemias। New York: B. C. Decker। পৃষ্ঠা 3–15। আইএসবিএন 1-55009-111-5 
  19. Robinette, Martin S.; Cotter, Susan; Van de Water (২০০১)। Quick Look Series in Veterinary Medicine: Hematology। Teton NewMedia। পৃষ্ঠা 105আইএসবিএন 1-893441-36-9 
  20. Stass, Sanford A.; Schumacher, Harold R.; Rock, William R. (২০০০)। Handbook of hematologic pathology। New York, N.Y: Marcel Dekker। পৃষ্ঠা 193–194। আইএসবিএন 0-8247-0170-4 
  21. Leonard, Barry (১৯৯৮)। Leukemia: A Research Report। DIANE Publishing। পৃষ্ঠা 7আইএসবিএন 0-7881-7189-5 
  22. Non-Ionizing Radiation, Part 1: Static and Extremely Low-Frequency (ELF) Electric and Magnetic Fields (IARC Monographs on the Evaluation of the Carcinogenic Risks)। Geneva: World Health Organisation। ২০০২। পৃষ্ঠা 332–333, 338। আইএসবিএন 92-832-1280-0 
  23. American Cancer Society (২০১০)। "How is Leukemia Diagnosed?"Detailed Guide: Leukemia – Adult Chronic। American Cancer Society। ২৩ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১০ 
  24. Pasmant E, Ballerini P, Lapillonne H et al. SPRED1 disorder and predisposition to leukemia in children. Blood 2009; 114:1131.[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  25. National Cancer Institute। "Chronic Lymphocytic Leukemia (PDQ) Treatment: Stage Information"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-০৪ 
  26. American Cancer Society (২২ মার্চ ২০১২)। "Typical treatment of acute myeloid leukemia (except promyelocytic M3)"Detailed Guide: Leukemia – Acute Myeloid (AML)। American Cancer Society। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টো ২০১২ 
  27. "WHO Disease and injury country estimates"World Health Organization। ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-১১ 
  28. Lozano, R (ডিসে ১৫, ২০১২)। "Global and regional mortality from 235 causes of death for 20 age groups in 1990 and 2010: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2010"। Lancet380 (9859): 2095–128। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(12)61728-0পিএমআইডি 23245604  Authors list-এ |প্রথমাংশ2= এর |শেষাংশ2= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ3= এর |শেষাংশ3= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ4= এর |শেষাংশ4= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ5= এর |শেষাংশ5= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ6= এর |শেষাংশ6= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ7= এর |শেষাংশ7= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ8= এর |শেষাংশ8= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ9= এর |শেষাংশ9= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ10= এর |শেষাংশ10= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ11= এর |শেষাংশ11= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ12= এর |শেষাংশ12= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ13= এর |শেষাংশ13= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ14= এর |শেষাংশ14= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ15= এর |শেষাংশ15= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ16= এর |শেষাংশ16= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ17= এর |শেষাংশ17= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ18= এর |শেষাংশ18= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ19= এর |শেষাংশ19= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ20= এর |শেষাংশ20= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ21= এর |শেষাংশ21= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ22= এর |শেষাংশ22= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ23= এর |শেষাংশ23= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ24= এর |শেষাংশ24= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ25= এর |শেষাংশ25= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ26= এর |শেষাংশ26= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ27= এর |শেষাংশ27= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ28= এর |শেষাংশ28= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ29= এর |শেষাংশ29= নেই (সাহায্য); Authors list-এ |প্রথমাংশ30= এর |শেষাংশ30= নেই (সাহায্য)
  29. Mathers, Colin D, Cynthia Boschi-Pinto, Alan D Lopez and Christopher JL Murray (২০০১)। "Cancer incidence, mortality and survival by site for 14 regions of the world" (পিডিএফ)Global Programme on Evidence for Health Policy Discussion Paper No. 13। World Health Organization। 
  30. James G. Gurney, Malcolm A. Smith, Julie A. Ross (1999) Cancer Incidence and Survival among Children and Adolescents, United States SEER program 1975–1995, chapter on Leukemia Cancer Statistics Branch, National Cancer Institute, available online from the SEER web site
  31. "Childhood Blood Cancers"। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  32. "Facts 2012 from The Leukemia & Lymphoma Society" (পিডিএফ)। ১৪ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  33. World Cancer Report 2014.। World Health Organization। ২০১৪। পৃষ্ঠা Chapter 5.13। আইএসবিএন 9283204298 
  34. Patlak, Margie। "Targeting Leukemia: From Bench to Bedside" (পিডিএফ)Breakthroughs in Bioscience। The Federation of American Societies for Experimental Biology। ২৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১০ 

টেমপ্লেট:রক্তবিদ্যা