বিষয়বস্তুতে চলুন

সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
"সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে"
লালন কর্তৃক বাউল সঙ্গীত
ভাষাবাংলা
মুক্তিপ্রাপ্ত১৮৯০ (প্রথম মূদ্রণ)
লেখকলালন
সুরকারলালন

'সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে' লালন শাহ রচিত একটি বাউল সঙ্গীত। এইগানের মাধ্যমে লালন জাতিভেদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।[] লালনের জীবদ্দশায় গানটির কোন মূদ্রণ হয়নি। মৃত্যুর ১৫ দিন পর ১৮৯০ সালে হিতকরী পত্রিকায় জীবনীসহ এই গানটির প্রাথমিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়।[] এটি মূদ্রণ মাধ্যমে প্রকাশিত দ্বিতীয় লালন সঙ্গীত। ইতোপূর্বে ১২৯২ বঙ্গাব্দে হরিনাথ মজুমদার তার 'ব্রহ্মাণ্ডবেদ' সাময়িকীতে “কে বোঝে সাঁইয়ের লীলাখেলা” গানটি প্রকাশ করেছিলেন।[][] বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অষ্টম শ্রেনির পাঠ্যসূচীতে গানটি 'মানবধর্ম' শিরোনামে পদ্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত ও সংকলিত হয়েছে।[]

১৮৯০ সালের ৩১শে অক্টোবর (বঙ্গাব্দ ১৫ই কার্তিক ১২৯৭) হিতকরী পত্রিকায় প্রকাশিত মুদ্রণে লালনকে ‘মহাত্মা লালন ফকির’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়।[]

প্রথম মূদ্রণ বিবর্তিত গীতি
লালন সাধারণত মুখে মুখে গান রচনা করতেন, দিন তারিখ সহ লিপিবদ্ধ হতো না;

তাই এইগানের প্রথম রচনাকাল অজানা।[] ১৮৯০ সালে প্রথম প্রকাশিত মূদ্রণে গানটির গীতি নিম্নরূপ-[]

সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।
লালন বলে জাতের কি রূপ
দেখলাম না এই নজরে।।
কেউ মালায় কেউ তসবি গলায়,
তাইতে যে জাত ভিন্ন বলায়।
যাওয়া কিম্বা আসার বেলায়,
জাতের চিহ্ন রয় কার রে।।
যদি ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান,
নারীর তবে কি হয় বিধান?
বামন চিনি পৈতা প্রমাণ,
বামনী চিনি কিসে রে।।
জগত্‌ বেড়ে জেতের কথা,
লোকে গৌরব করে যথা তথা।
লালন সে জেতের ফাতা
ঘুচিয়াছে সাধ বাজারে।।

২০২১ সালে বাংলাদেশের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত গীতি[]-

সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।
লালন বলে জাতের কি রূপ,
দেখলাম না এই নজরে।।
কেউ মালায় কেউ তসবি গলায়,
তাইতে যে জাত ভিন্ন বলায়,
যাওয়া কিম্বা আসার বেলায়
জেতের চিহ্ন রয় কার রে।।
যদি ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান,
নারীর তবে কি হয় বিধান?
বামন চিনি পৈতা প্রমাণ,
বামনী চিনি কিসে রে।।
জগৎ বেড়ে জেতের কথা,
লোকে গৌরব করে যথা তথা।
লালন সে জেতের ফাতা
বিকিয়েছে সাধ বাজারে।।

ভাবার্থ

[সম্পাদনা]

লালন জাতবিভেদ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। মুসলমান পুরুষকে খাতনা দিলে মুসলমান হয় কিন্তু নারীদের তো খাতনা দেয়া হয়না। তেমনি হিন্দু ব্রাহ্মণ গলায় পৈতা থাকায় চেনা যায় কিন্তু বামুনীকে চেনা যায়না। লালন এই গানের মাধ্যমে বাইরের আচার-ব্যবহার বা পোশাক-আশাকে এই মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ে ভেদাভেদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. করীম, আনোয়ারুল (২০১৫-০৩-১১)। "লালন শাহ"বাংলাপিডিয়া। ২০২২-০৭-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-০৯ 
  2. ‘মহাত্মা লালন ফকির’ হিতকরী, সম্পাদক : মীর মশাররফ হোসেন [পাক্ষিক,কুষ্টিয়া], ১৫ কার্তিক ১২৯৭/৩১ অক্টোবর ১৮৯০ Scanned Copy
  3. মজুমদার, হরিনাথ (১৮৮৫)। ব্রহ্মাণ্ডবেদ: ১ম ভাগ (১ম (বঙ্গাব্দ ১২৯২) সংস্করণ)। 
  4. "লালনসাঁই"আনন্দবাজার পত্রিকা। ২০১৬-০২-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-১০ 
  5. মানব ধর্ম "সাহিত্য কণিকা" - শ্রেণী: অষ্টম ; প্রকাশক : জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ। ২০২১। পৃষ্ঠা- ৮০
  6. চৌধুরী, আবুল আহসান (২০১৬-১০-১৩)। "তিন পাগলের মেলা"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-১০ 
  7. "লালনগীতির প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৮৮"আগামী নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-১১