সতীশ। তোমাকে আর-এক কাজ করতে হবে,— জেঠাইমা—আমাদের নন্দকে তুমি যেমন করে পার এখানে ঠেকিয়ে রেখো। সে আমার কথা শুনবে না, খালি গায়ে ফস করে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হবে।
জেঠাইমা। তাকে যেন ঠেকালেম, কিন্তু তোমার বাবা যখন খালি গায়ে—
সতীশ। সে আমি আগেই মাসিমাকে গিয়ে ধরেছিলেম, তিনি বাবাকে আজ পিঠে খাবার নিমন্ত্রণ করেছেন, বাবা এ-সমস্ত কিছুই জানেন না।
জেঠাইমা। বাবা সতীশ, যা মন হয় করিস, কিন্তু আমার ঘরটাতে তোদের ঐ খানাটানাগুলো—
সতীশ। সে ভালো করে সাফ করিয়ে দেব এখন।
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
সতীশ। মা, এমন করে তো চলে না।
বিধু। কেন, কী হয়েছে।
সতীশ। চাঁদনির কোট ট্রাউজার পরে আমার বার হতে লজ্জা করে। সেদিন ভাদুড়িসাহেবের বাড়ি ইভনিং পার্টি ছিল, কয়েকজন বাবু ছাড়া আর সকলেই ড্রেস সুট পরে গিয়েছিল, আমি সেখানে এই কাপড়ে গিয়ে ভারি অপ্রস্তুতে পড়েছিলাম। বাবা কাপড়ের জন্য যে সামান্য টাকা দিতে চান তাতে ভদ্রতা রক্ষা হয় না।
বিধ। জান তো সতীশ, তিনি যা ধরেন তা কিছুতেই ছাড়েন না। কত টাকা হলে তোমার মনের মতো পোশাক হয়, শুনি।
সতীশ। একটা মর্নিং সুট আর একটা লাউঞ্জ সুটে এক-শ টাকার কাছাকাছি লাগবে। একটা চলনসই ইভনিং ড্রেস দেড়শ টাকার কমে কিছুতেই হবে না।
বিধু। বল কী, সতীশ। এ তো তিন-শ টাকার ধাক্কা, এত টাকা—
সতীশ। মা, ঐ তোমাদের দোষ। এক ফকিরি করতে চাও সে ভালো, আর যদি ভদ্রসমাজে মিশতে হয় তবে অমন টানাটানি করে চলে না। ভদ্রতা রাখতে গেলে তো খরচ করতে হবে, তার তো কোনো উপায় নেই। সুন্দরবনে পাঠিয়ে দাওনা কেন, সেখানে ড্রেস কোটের দরকার হবে না।
বিধু। তা তো জানি, কিন্তু—আচ্ছা, তোমার মেসো তো তোমাকে জন্মদিনের উপহার দিয়ে থাকেন, এবারকার জন্য একটা নিমন্ত্রণের পোশাক তাঁর কাছ হতে জোগাড় করে নাও-না। কথায় কথায় তোমার মাসির কাছে একট, আভাস দিলেই হয়।
সতীশ। সে তো অনায়াসেই পারি, কিন্তু বাবা যদি টের পান আমি মেসোর কাছ হতে কাপড় আদায় করেছি, তা হলে রক্ষা থাকবে না।
বিধু। আচ্ছা, সে আমি সামলাতে পারব।
সতীশের প্রস্থান
ভাদুড়িসাহেবের মেয়ের সঙ্গে যদি সতীশের কোনো মতে বিবাহের জোগাড় হয় তা হলেও আমি সতীশের জন্য অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি। ভাদুড়িসাহেব ব্যারিস্টার মানুষ, বেশ দু-দশ টাকা রোজগার করে। ছেলেবেলা হতেই সতীশ তো ওদের বাড়ি আনাগোনা করে, মেয়েটি তো আর পাষাণ নয়, নিশ্চয় আমার সতীশকে