কিছুকালের জন্যে তোমার মুক্তি। আপাতত আমার উপযুক্ত অভিভাবকের অভাব রইল না, অতএব এই সুযোগে তুমি তীর্থভ্রমণ করে নাও গে। অমিয়া থাকে কলেজের হস্টেলে; বাড়িতেও দেখবার-শোনবার লোক আছে; অতএব, এখন তুমি দেবসেবায় ষোলো-আনা মন দিলে দেব মানব কারও কোনো আপত্তির কথা থাকবে না।”
জেলখানাকে জেলখানা বলেই গণ্য করে নিয়েছিলেম। সেখানে কোনোরকম দাবিদাওয়া আবদার উৎপাত করি নি। সেখানে সুখ সম্মান সৌজন্য বৃহৎ ও সুখাদ্যের অভাবে অত্যন্ত বেশি বিস্মিত হই নি। কঠোর নিয়মগুলোকে কঠোরভাবেই মেনে নিয়েছিলেম। কোনোরকম আপত্তি করাটাই লজ্জার বিষয় ব’লে মনে করতেন।
মেয়াদ পুরো হবার কিছু পূর্বেই ছুটি পাওয়া গেল। চারি দিকে খুব হাততালি। মনে হল যেন বাংলাদেশের হাওয়ায় বাজতে লাগল, ‘এন্কোর! এক্সেলেণ্ট!’ মনটা খারাপ হল। ভাবলেম, যে ভুগল সেই কেবল ভুগল— আর, মিষ্টান্নমিতরে জনাঃ, রস পেলে দশে মিলে। সেও বেশিক্ষণ নয়; নাট্যমঞ্চের পর্দা পড়ে যায়, আলো নেভে, তার পরে ভোলবার পালা। কেবল বেড়ি-হাতকড়ার দাগ যার হাড়ে গিয়ে লেগেছে তারই চিরদিন মনে থাকে।
পিসিমা এখনো তীর্থে। কোথায়, তার ঠিকানাও জানি নে। ইতিমধ্যে পূজোর সময় কাছে এল। একদিন সকালবেলায় আমার সম্পাদক-বন্ধু এসে উপস্থিত। বললেন, “ওহে, পূজোর সংখ্যার জন্যে একটা লেখা চাই।”
জিজ্ঞাসা করলেম, “কবিতা?”
“আরে, না। তোমার জীবনবৃত্তান্ত।”
“সে তো তোমার এক সংখ্যায় ধরবে না।”
“এক সংখ্যায় কেন। ক্রমে ক্রমে বেরোবে।”
“সতীর মৃতদেহ সুদর্শনচক্রে টুক্রো টুক্রো ক’রে ছড়ানো হয়েছিল। আমার জীবনচরিত সম্পাদকি চক্রে তেমনি টুকরো টুকরো ক’রে সংখ্যায় সংখ্যায় ছড়িয়ে দেবে, এটা আমার পছন্দসই নয়। জীবনী যদি লিখি গোটা আকারে বের করে দেব।”
“নাহয় তোমার জীবনের কোনো একটা বিশেষ ঘটনা লিখে দাও-না।”
“কিরকম ঘটনা।”
“তোমার সব চেয়ে কঠোর অভিজ্ঞতা, খুব যাতে ঝাঁজ।”
“কী হবে লিখে।”
“লোকে জানতে চায় হে।”
“এত কৌতূহল? আচ্ছা, বেশ, লিখব।”
“মনে থাকে যেন, সব চেয়ে যেটাতে তোমার কঠোর অভিজ্ঞতা।”
“অর্থাৎ, সব চেয়ে যেটাতে দঃখ পেয়েছি লোকের তাতেই সব চেয়ে মজা। আচ্ছা, বেশ। কিন্তু, নামটামগুলো অনেকখানি বানাতে হবে।”
“তা তো হবেই। যেগুলো একেবারে মারাত্মক কথা তার ইতিহাসের চিহ্ন বদল না করলে বিপদ আছে। আমি সেইরকম মরিয়া-গোছের জিনিসই চাই। পেজ প্রতি তোমাকে—”
“আগে লেখাটা দেখো, তার পরে দরদস্তুর হবে।”
“কিন্তু, আর-কাউকে দিতে পারবে না বলে রাখছি।” যিনি যত দর হাঁকুন, আমি