পালাটি সম্পূর্ণ করেন। একটা বন্য রাজার সঙ্গে ক্ষত্ত্রিয় রাজার বিবাহের প্রস্তাবটাও বোধ হয় শেষকালে হিন্দু সমাজে খুব সঙ্গত ব্যাপার বলিয়া পরিগৃহীত হয় নাই, বিশেষ বিবাহের পূর্ব্বে এতটা প্রেমের বাড়াবাড়ি ব্রাহ্মণ্য অনুশাসনের বিরোধী হইয়াছিল; সুতরাং পালাটি হিন্দুদের সম্বন্ধে হইলেও মুসলমান গায়কদের কৃপায় ইহা বহুকাল যাবৎ রক্ষা পাইয়া আসিয়াছিল।
আমরা বহু রূপকথায় কামাখ্যাকে সর্ব্বপ্রকার তান্ত্রিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্রভূমি-স্বরূপ বর্ণিত দেখিতে পাই। একাদশ শতাব্দীতে ভারতীয়, বিশেষতঃ বঙ্গদেশের তন্ত্রমন্ত্র ও সিদ্ধাদের অলৌকিক শক্তি-সম্বন্ধে নানা গল্পগুজব য়ুরোপে প্রবেশ করিয়াছিল। তৎসম্বন্ধে আমার Folk Literature of Bengal নামক পুস্তকে সবিশেষ আলোচনা করিয়াছি। গ্যালিক কাহিনীগুলিতে ড্রুইড পুরোহিতগণের অলৌকিক শক্তিমত্তা-সম্বন্ধে যে সকল বর্ণিত আছে, তাহা ভারতীয় সিদ্ধাদের বৃত্তান্তের অনুরূপ;―গ্যালিক প্রবাদ ও গল্পে এই ভাবের বহু কথা প্রচলিত আছে―হেস্পারিডেসের রাজকুমারীদের টুইরেনের তিন রাজপুত্রের অনুসরণকাহিনী অনেকটা আমাদের ময়নামতীর গল্পে গোদা যম ও রাণীর লড়াইএর কথা স্মরণ করাইয়া দেয়।
এই তান্ত্রিক প্রভাব দশম-একাদশ শতাব্দীতে বঙ্গদেশকে একেবারে গ্রাস করিয়া ফেলিয়াছিল। তাহারও পূর্ব্বে বিক্রমাদিত্যের বত্রিশ সিংহাসনের গল্পগুলি তান্ত্রিক সিদ্ধির আদিম প্রভাব সূচনা করিতেছে। ভারাইয়া রাজার কাহিনী এই প্রভাবের নিদর্শন, কিন্তু সম্ভবতঃ পালাটি ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষে বা চতুর্দ্দশ শতাব্দীর আদিভাগে রচিত হইয়া থাকিবে। ভাষা ও গল্প বলিবার ভঙ্গী দেখিয়া আমাদের এই ধারণা হইয়াছে।