এশীয় বসন্তবৌরি
এশীয় বসন্তবৌরি সময়গত পরিসীমা: প্লেইস্টোসিন থেকে রিসেন্ট | |
---|---|
দাগি বসন্ত
Psilopogon lineatus | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী /এভিস |
বর্গ: | পিসিফর্মিস |
পরিবার: | মেগালাইমিডি |
গণ: | স্লিপোগোন |
দ্বিপদী নাম | |
ব্লাইদ, ১৮৫২ | |
উপবর্গ | |
এশীয় বসন্তবৌরি হলো মেগালাইমিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এক দল পাখি। এরা তিব্বত ও ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ইন্দোমালায়াম রিম বনের স্থানীয়। এদের সেখান ৩০টি জাত ও ২ টি গণ রয়েছে। দাদের এক সময় সকল বসন্তবৌরি পাখির সাথে কেপসোনাইডি পরিকারের অন্তর্ভুক্ত গিসেবে গণ্য তরা হতো। কিন্তু আগের পৃধিবীর জাতগুলোর সাথে পার্থক্য দেখা যায়। তাই তাদেরকে লিবিডি এবং রামফাস্টিডি গণের সাথে গণ হাত হিসেবে ধরা হয়।
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]অতীতে শুধু তিনটি ক্যালোরামফাস, মেগালাইমা এবং স্লিপোগোন -এ তিনটি গণে প্রাণিসমূহকে বিভক্ত করা হতাে।[১] কিন্তু গবেষণা করে দেখা যায় যে, স্লিপোগোন মেগালাইমা এর পূর্বরুপ হিসেবে জায়গা পায়। মেগালাইমা এর এই পূর্বরুপ একক গণে অধিক উপযোগী হওয়ায় এরা স্লিপোগোন গণে স্থানান্তরিত হয়, যা মেগালাইমার পূর্বে গঠিত, যারা ট্যাকসোনমিক অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো দ্বারা বাছাই করা হয়। মেগাইলামার প্রায় সকল সদস্য স্লিপোগোন গণের অন্তর্ভুক্ত। ক্যালোরামফাস এর সদস্যরা তাদের পূর্ব পুরুষদের থেকে ২১.৩২ মিলিয়ন বছর আগে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য লাভ করে। এর পরবর্তী প্রজাতিগুলো এতটাই স্বতন্ত্র যে তাদের ক্যালোরাফিনে উপ-পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। মাগালাইমা পরিবারের নামটি গ্রিক শব্দ মাগা (অর্থ: বড়) এবং লাইমোস (অর্থ: গলা) থেকে আসছে।[২]
মালয় উপদ্বীপ এবং সুমাত্রা এর মধ্যে বৈচিত্র্য কেন্দ্রীভূত হয়। তাই ধারণা করা যায় যে, পরিবারটি রসখান থেকে বা তার নিকটবর্তী স্থান থেকে গঠিত। এরা সাধারণত দ্বিধাহীনভাবে সুদর্শন, এদের মাথার আকার বড় এবং এদের ঠোঁট সংবেদনশীল রোম (bristle) দ্বারা বেষ্টিত। দ্যা গ্রেট বসন্তবৌরি (স্লিপোগোন ভাইরেন) ২১০ গ্রাম (৭.৪ আউন্স) এবং ৩৩ সে.মি. (১৩ ইঞ্চি) হয়। এরাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রজাতি এবং আকারের দিক থেকে সমজাতীয়দের মধ্যে শুধু কিছু টোউকান এর চেয়ে ছোট।
এশীয় বসন্তবৌরি সাধারণত বনের ভেতরের দিকে বাসা তৈরি করে। আফ্রিকার বা উষ্ণমন্ডলীয় আমেরিকার বসন্তবৌরি দের থেকে এশীয় উষ্ণমন্ডলীয় বসন্তবৌরি আকারে খানিকটা বড় এবং এদের ঠোঁট ও মাথা মোটা, লেজ খাটো। এদের অধিকাংশই মেগালাইমা গণভুক্ত এবং নিঃসঙ্গচর, কিন্তু উচ্চকণ্ঠ। এরা অধিকাংশ সময়ই টউপ’, ‘ছোক’, বা ‘পপ’ শব্দ করে ডাকে। অবিরাম ডাকাডাকির জন্য একটি প্রজাতির নাম রাখা হয়েছে ‘কাঁসারি’ (coppersmith)। একঘেয়ে অবিরাম ডাকার কারণে এরা ‘ব্রেইনফিভার’ নামের বিভিন্ন জাতের একদল পাখির দলে পড়ে। ‘কাঁসারি’ (coppersmith) নামক এ প্রজাতি বনের প্রান্তে এবং ছোটে ঝোপে বাসা বাঁধে। এরা সাধারণত নির্জন এবং ফল ও পোকামাকড় খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ডুমুর গণের ফিগ এশীয় বসন্তবৌরির খাদ্যাভাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফল। বড় ফিগ গাছ বনমানুষদের পাশাপাশি নানা প্রজাতির বসন্তবৌরিকে আকর্ষণ করে। এছাড়া তখন তারা অন্যান্য অসংখ্য ফলগাছ এবং ঝোপেও আসা যাওয়া করে। একেকটি বসন্তবৌরি তার পরিসীমায় থাকা ৬০ প্রজাতির ফল খেতে পারে। তারা বাগানে গিয়ে সেখানে উৎপাদিত ফল, শাক-সবজিও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। পুরো পেট ভরে তারা খায় এবং বীজ গর্ত সহ নানা অপচনশীল পদার্থ গিলে নেয় (সাধারণত তাদের ডাকাডাকি শুরু করার আগেই)। এই প্রক্রিয়াটি তারা বাসায় সম্পন্ন করে না (যেমনটা টোউকান প্রজাতির ক্ষেত্রে করতে দেখা যায়)। বসন্তবৌরি দের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনে বীজ ছড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ফলের পাশাপাশি তারা গাছের শাখা এবং কাণ্ড থেকে আর্থ্রোপোড পর্বের প্রাণিদের শিকার করে। এর মধ্যে রয়েছে: পিপড়া, ঘুঘড়ে পোকা, ফড়িং, ঝিঁঝিঁ পোকা, পঙ্গপাল, গুবরে - পোকা, মথ এবং মানটিড। বিছে এবং বৃশ্চিক ও কাঁকড়াবিছে এদের শিকার। এদের কিছু প্রজাতি ছোট সরীসৃপ যেমন টিকটিকি, ব্যাঙ ও গিরগিটি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
অনেক প্রজাতির বাসা বাঁধার যথাযথ খুঁটিনাটি এখনও জানা যায় নি। পিসিফর্মিস বর্গের অনেক সদস্যের মতো তারা গাছের গর্তে বাসা তৈরি করে। তারা ২-৪ টি ডিম পারে এবং ১৩-১৫ দিন ডিমে তা দেয়।
সাধারণত এশীয় বসন্তবৌরি এবং মানুষের তেমন মিথষ্ক্রিয়া নেই। বৃহৎ বসন্তবৌরি এবং দাগি বসন্ত শষ্যক্ষেতে আক্রমণ করে, বিশেষ করে ভারতে। কিছু মানুষ তাদের আকর্ষণীয় রঙের জন্য ব্যবসার উদ্দেশ্যে বন্দি করে।
তাদের কোনোটি ক্ষতিকর না হলেও তাদের কিছু প্রজাতি বন নিধনের প্রতি অসহিষ্ণু, এদের বড় হতে বহু বছর ধরে সংরক্ষিতভাবে বেড়ে ওঠা বিশেষ প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পন্ন বন প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, সিঙ্গাপুরে শুধুমাত্র মাধ্যমিক বন-উপযোগী রেড ক্রাউনড বসন্তবৌরি প্রজাতি এখানকার স্থানীয় এবং কাঁসারি ষাটের দশকে সেখানে বাসস্থান স্থাপন করে।
এরা কাঠঠোকরা পাখির সাথে সম্পর্কিত এক দল উষ্ণমন্ডলীয় ছোট পাখি। এদের মোট ৮৪ টি হাত আছে। এদের অধিকাংশ প্রজাতিই গাছে বাস করে ও ফল খায়। এদের পালক ঝলমলে, প্রধানত সবুজ রঙের। এদের মজবুত ঠোঁটের চারপাশে লম্বা এবং সংবেদনশীল রোম (bristle) রয়েছে। ঠোঁট বড়সড়, মজবুত এবং প্রায় সকল প্রজাতির চঞ্চুতেই অল্পবিস্তর রোম থাকে এদের অধিকাংশ ঠোঁট ব্যবহার করে খাদ্য গ্রহণ করে। উঞ্চমন্ডলীয় পাখি হলেও অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায় না। আফ্রিকায় কয়েকটি প্রজাতির বসন্তবৌরি আছে। এদের কোনো কোনো প্রজাতি অত্যন্ত সামাজিক যে একটি মরা গাছে ৫০ বা আরো বেশি জোড়া বাসা বাঁধে। কিছু প্রজাতি আবার মাটিতে বা উইয়ের ঢিবিতে খাড়া গর্ত খুঁড়ে বাসা বাঁধে। আবার কিছু প্রজাতি গাছের গুঁড়ি বা শাখায় অথবা ভেতরের দিকের ঢালুতে বাসার জন্য গর্ত খোঁড়ে ও তাতে ডিম পাড়ে।
সিস্টেমেটিক্স
[সম্পাদনা]উপ-পরিবার: মাগালাইমিনে
- গণ: Psilopogon
- Psilopogon pyrolophus, ফায়ার টাফড বসন্তবৌরি
- Psilopogon viren, বৃহৎ বসন্তবৌরি
- Psilopogon lagrandieri, লাল-শিকারী বসন্তবৌরি
- Psilopogon zeylanicus, খয়েরিমাথা বসন্তবৌরি
- Psilopogon lineatus, দাগি বসন্ত
- Psilopogon viridis, সাদা গাল বসন্তবৌরি
- Psilopogon faiostrictus, সবুজ কান বসন্তবৌরি
- Psilopogon corvinus, বাদামী গলা বসন্তবৌরি
- Psilopogon chrysopogon, সোনালী গুঁফো বসন্তবৌরি
- Psilopogon rafflesii, লাল মুকুট বসন্তেবৌরি
- Psilopogon mystacophanos, লাল গলা বসন্তবৌরি
- Psilopogon javensis, ব্লাক ব্যাণ্ডেড বসন্তবৌরি
- Psilopogon flavifrons, হলুদ মুখওয়ালা বসন্তবৌরি
- Psilopogon franklinii, সোনালী গলাওয়ালা বসন্তবৌরি
- Psilopogon auricularis, নেকলেসড বসন্তবৌরি
- Psilopogon oorti, কালো ভুরুওয়ালা বসন্তবৌরি
- Psilopogon annamensis, ইন্দো-চীনা বসন্তবৌরি
- Psilopogon faber, চীনা বসন্তবৌরি
- Psilopogon nuchalis, তাইওয়ান বসন্তবৌরি
- Psilopogon asiaticus, বড় বসন্ত বৌরি
- Psilopogon chersonesus, নীলকান্তমণি গলা বসন্তবৌরি
- Psilopogon monticola, পাহাড়ি বসন্তবৌরি
- Psilopogon incognitus, গুঁফো বসন্তবৌরি
- Psilopogon henricii, হলুদ মুকুটওয়ালা বসন্তবৌরি
- Psilopogon armillaris, অগ্নিমুখ বসন্তবৌরি
- Psilopogon pulcherrim, সোনালী ঘাড়ওয়ালা বসন্তবৌরি
- Psilopogon cyanotis, নীলকান বসন্তবৌরি
- Psilopogon australis, হলুদ কান বসন্তবৌরি
- Psilopogon eximius, Bornean barbet
- Psilopogon rubricapillus, গাঢ় লাল মখ্য়িালা বসন্তবৌরি
- Psilopogon malabaricus, মালাবার বসন্তবৌরি
- Psilopogon haemacephalus, ছোট বসন্তবৌরি
- Psilopogon duvaucelii, কালো কানওয়ালা বসন্তবৌরি
"উপ-পরিবার: ক্যালোরামফিন
- গণ: ক্যালোরামফাস
- Caloramphus fuliginosus, বাদামী বসন্তবৌরি
- Caloramphus hayii, সুটি বসন্তবৌরি
মধ্য মিয়সিন এর আগের (২৩-১২ মিলিয়ন বছর পূর্বে) ইউরোপের ক্যাপসোনাইড গণ এই পরিবারের অথবা আফ্রিকান বসন্তবৌরিদের (লিবিডে) মধ্যে স্থান পায় কিনা। প্রকৃতপক্ষে, এই প্রাগ-ঐতিহাাসক পাখিদের আদি টৌকানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করা হয়েছে। এই পাখিতে বিদ্যমান অটাপোমোর্ফি না থাকলে পাখিটি যৌথভাবে বসন্তবৌরি এবং টৌকান ক্লেডদের মধ্যে আরো মৌলিক অবস্থান লাভ করত।
বাংলাদেশে এশীয় বসন্তবৌরি
[সম্পাদনা]বাংলাদেশে ৫ টি জাত বিদ্যমান। সেগুলো হচ্ছে: ১। নীল-গলা বসন্তবৌরি (Blue-throated Barbet, Megalaima asiatica)- এদের শরীরের রং ঘন সবুজ, মাথার টোপর এবং কপাল গাঢ় লাল। চোখের উপর কালো ডোরা আছে এবয় মাথার পাশ, চিবুক, গলা, ঘাড়ের সামনের দিকে এদের রং ফ্যাকাশে নীল। এদের ঘাড়ের দুপাশে ও ঠোঁটের গোড়ায় গাঢ় লাল ফোঁটা থাকে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Short, L. L.; Horne, J.F.M. (২০০৪)। "Family Capitonidae (barbets)"। del Hoyo J.; Elliott A.; Christie D. A.। Handbook of the Birds of the World. Volume 7. Jamacars to Woodpeckers। Barcelona: Lynx Edicions। আইএসবিএন 978-8487334375।
- ↑ David, N. (২০০৮)। "Megalaiminae: the correct subfamily-group name for the Asian barbets"। Bulletin of the British Ornithologists' Club। 128 (1): 72।